আধুনিক বিশ্বের বাহিনীর আদলে হবে পুলিশের নতুন পোশাক / ছবি- ঢাকা পোস্ট

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আন্দোলন চলার সময় অতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় ৪৪ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়। এরপর বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল পুলিশি কার্যক্রম, বন্ধ ছিল থানার কার্যক্রমও। ইমেজ ফেরাতে পুলিশের পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের নতুন পোশাকের জন্য এখন পর্যন্ত ৬টি রং সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। এছাড়া ২০টি লোগোও বাছাই করা হয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে চূড়ান্ত করা হবে পোশাকের রং ও লোগো। তবে হালকা ধূসর (লাইট গ্রে) বা হালকা নীল (লাইট ব্লু) নির্ধারণের সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পোশাক পরিবর্তন ও লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে গঠিত কমিটি এখন পর্যন্ত তিনটি সভা করেছে। সর্বশেষ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) পুলিশ সদরদপ্তরে। কমিটির সব সদস্য সেদিন উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান লোগো / ঢাকা পোস্ট

সভা সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পোশাকের রং কী হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনেকগুলো রঙের বিষয়ে আলোচনা করলেও শেষ পর্যন্ত ৬টি রং শর্টলিস্টেড করা হয়েছে। রং চূড়ান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে অন্য বাহিনীর পোশাকের রংও। যেন পুলিশের নতুন পোশাকের রং দেশে থাকা অন্য সব বাহিনীর পোশাকের রঙের সঙ্গে যেন না মিলে যায় সেটি দেখা হচ্ছে। এছাড়া অন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করে রং চূড়ান্ত করার কাজ চলমান রয়েছে।

কমিটি সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পোশাকের জন্য বাছাই করা রঙের মধ্যে রয়েছে হালকা নীল, হালকা ধূসর ও হালকা সবুজ। অনেকগুলো ডিজাইনে নীলের মতো বেশ কয়েকটি রং দেখা হয়েছে। রং চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে হালকা রঙের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে কমিটি।

জানা গেছে, রং চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সেই অনুযায়ী কাপড় বানানো হবে। কাপড় বানানোর পর সেটি পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই কি না তা পরীক্ষা করা দেখা হবে। সেইসঙ্গে কাপড়ের মানও দেখা হবে। এছাড়া কাপড় পরীক্ষায় নতুন পোশাকের রং বাহিনীর জন্য উপযুক্ত কি না এবং সদস্যরা সেই পোশাক পরে আরামদায়ক অনুভব করছেন কি না এসবও দেখা হবে। পোশাকের রং চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যাজ ডিজাইন করা হবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ব্যাজ রং চূড়ান্ত করা হবে।

রং চূড়ান্তের পর ঠিক করা হবে ডিজাইন

কমিটি সূত্রে জানা যায়, যেহেতু পোশাকের রং এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি সেক্ষেত্রে কমিটি এখনই পোশাকের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে পারছে না। তবে ইতোমধ্যে পুলিশের পোশাকের জন্য বেশ কয়েকটি ডিজাইন দেখা হয়েছে। এসব ডিজাইন এখনই চূড়ান্ত করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। রং চূড়ান্ত হওয়ার পর ডিজাইন চূড়ান্ত করা হবে।

বাংলাদেশ পুলিশ / ঢাকা পোস্ট

পোশাক ক্যামোফ্লাজ হবে নাকি প্লেন ডিজাইনের হবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

লোগোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত

সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের পোশাক পরিবর্তনের পাশাপাশি বাহিনীর লোগো পরিবর্তনের জন্যও দাবি উঠেছে। লোগো পরিবর্তনের জন্যও কাজ করছে এই কমিটি। কমিটির দ্বিতীয় মিটিংয়ে ৪০টির মতো লোগো নিয়ে আলোচনা হয়। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এই ৪০টি লোগো কমিটির কাছে আসে। দ্বিতীয় মিটিংয়ে ৪০ লোগোর মধ্যে ২০টিকে শর্টলিস্ট করা হয়। এর মধ্য থেকে একটি লোগো চূড়ান্ত করা হবে।

পোশাক ও লোগো পরিবর্তন কমিটির সদস্য পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ চলমান রয়েছে। কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কমিটি নতুন পোশাক ও লোগো চূড়ান্ত করার পর সিনিয়র অফিসারদের দেখানো হবে। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এসব কাজ শেষ হতে এক মাসের মতো সময় লাগতে পারে। চূড়ান্ত হওয়ার পর আবার যদি পোশাক ও লোগোর বিষয়ে পরিবর্তনের সুপারিশ আসে, সেগুলো পরিবর্তন করে কাজ শেষ করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের পুলিশের পোশাক ও লোগো যেন আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের পুলিশ বাহিনীর মতো হয়।

বাংলাদেশ পুলিশ / ঢাকা পোস্ট

এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের পোশাক ও লোগো পরিবর্তনের জন্য আমরা একটা কমিটি গঠন করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। এ বিষয়ে কমিটি একাধিক প্রতিবেদন দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে নতুন পোশাক চূড়ান্ত করে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।

পোশাক পরিবর্তনের কমিটিতে যারা আছেন

গত ১৩ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে পোশাক ও লোগো পরিবর্তন করার জন্য ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসান কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (লজিস্টিকস) মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়াকে কমিটির সভাপতি করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট রেভিনিউ) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম, অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) ফারুক আহমেদ, অতিরিক্ত ডিআইজি (এপিবিএন) মোহাম্মদ শিহাব কায়সার, পুলিশ সুপার (এপিবিএন) আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লজিস্টিক) মো. নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নৌ-পুলিশ) জুয়েল রানা, পুলিশ পরিদর্শক (সিআইডি) মো. জাহিদুল ইসলাম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সান্টুর রহমান ও কনস্টেবল বরকত উল্লাহ।

এমএসি/এমজে