বছরজুড়ে রাজধানীতে ছিল মশার উপদ্রব। দিন নেই রাত নেই, ঘরে কিংবা বাইরে, বাসা কিংবা অফিস— সব জায়গাতে ছিল মশার তাণ্ডব। ক্ষুদ্র এ পতঙ্গের যন্ত্রণায় রীতিমতো অতিষ্ঠ নগরবাসী। শুধু রাত নয়, দিনেও কয়েল জ্বালাতে হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। ওষুধ বা স্প্রে, কিছুতেই ঠেকানো যায়নি মশার উপদ্রব।

নতুন করে বাড়ছে আতঙ্ক, বাড়ছে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব। ফলে নতুন করে চোখ রাঙানোর অপেক্ষায় ডেঙ্গু। এ চিন্তায় যেন ঘুম হারাম সবার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ, এ সময়ে বর্ষাকালের শুরু। বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। এর প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এ সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীতে মৌসুম শুরুর আগেই বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রভাব। বর্ষার মাঝামাঝি সময় এসে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে এডিস মশাবাহিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এ রোগ।

নতুন করে বাড়ছে আতঙ্ক, বাড়ছে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব। ফলে নতুন করে চোখ রাঙানোর অপেক্ষায় ডেঙ্গু। এ চিন্তায় যেন ঘুম হারাম সবার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য বলছে, সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ, এ সময়ে বর্ষাকালের শুরু। বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। এর প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই এ সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি। এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। অথচ ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের কার্যক্রম। প্রতি বছরে শত কোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারছে না স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা দুটি। নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তার হচ্ছে এডিস মশার।

বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলার দুর্ভোগ, আর বছরজুড়ে যানজটের ভোগান্তি যেন রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এসব ভোগান্তির সঙ্গে মশার উপদ্রবে রীতিমতো অতিষ্ঠ দুই কোটির অধিক জনগণ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগ, অভিযানসহ নিত্যনতুন কার্যপরিচালনা করেও হার মানতে হচ্ছে মশার কাছে। মশার অত্যাচার থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারেনি সংস্থা দুটি।

বিগত বছরগুলোতে মশা বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এ বছর গতানুগতিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে তারা। দুই বছর আগে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছিল ডিএনসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন যখন ড্রোন ব্যবহারের সার্বিক দিক নিয়ে আরও বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে, তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মশা মারতে অভিনব এক পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছিল। মশা মারতে দুই বছর আগে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ ছেড়েছিল সংস্থাটি। 

ওই সময় ডিএসসিসি মনে করেছিল, জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য কাজে লাগিয়ে ব্যাঙগুলো পানিতে ভাসতে থাকা মশার লার্ভা খেয়ে ফেলবে। ফলে সেসব স্থানে মশা আর বংশবিস্তার করতে পারবে না। এ ছাড়া জিঙ্গেল বাজিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে তারা। এমন নানা উদ্যোগ নিয়েও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীকে মশার অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পারেনি।

বিগত বছরগুলোতে মশা বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু এ বছর গতানুগতিক প্রস্তুতিতে সীমাবদ্ধ রয়েছে তারা। দুই বছর আগে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছিল ডিএনসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন যখন ড্রোন ব্যবহারের সার্বিক দিক নিয়ে আরও বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে, তখন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) মশা মারতে অভিনব এক পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছিল। মশা মারতে দুই বছর আগে খাল, নালা, ড্রেনসহ বিভিন্ন জলাশয়ে ব্যাঙ ছেড়েছিল সংস্থাটি

দুই বছর আগে মশার উৎপত্তিস্থল খুঁজতে আধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ব্যবহার করেছিল ডিএনসিসি। তবে, এবার ডেঙ্গু মোকাবিলায় শহরজুড়ে যত্রতত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এডিস মশার প্রজননস্থল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় সংস্থাটি। যদিও এটি তেমন কোনো কাজে আসেনি। 

ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ড 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা যায়, রাজধানী ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি।

সেখানে বলা হয়, দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতে ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর হার বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ ও ২০নং ওয়ার্ড। এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ ও ৩৩নং ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো– ১২, ১৩, ২০, ৩৬, ৩১, ৩২, ১৭ ও ৩৩। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো– ৪, ১৩, ৫২, ৫৪, ১৬, ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ ও ২০নং ওয়ার্ড। এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। এ ছাড়া ৩৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ ও ৩৩নং ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি, ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৪নং ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪নং ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। 

সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী 

প্রতি বছর মশার উপদ্রব আর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বারবার ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ দুই সিটির বাসিন্দারা। রাজধানীর বাসাবো এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আসাদুজ্জামান রতন। তিনি বলেন, বছরজুড়ে মশার উপদ্রব ছিল। দিন নেই, রাত নেই মশার অত্যাচার চলছেই। এক জায়গায় ১০ মিনিট বসে থাকা যায় না, ছেঁকে ধরে মশা। দিনের বেলাও বাড়িতে হয় মশারি টানিয়ে না হয় কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি, ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ৪নং ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪নং ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬নং ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ৩, ৫, ১৫, ১৭ ও ২৩নং ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে

‘বছরজুড়েই শুনতে পাই সিটি কর্পোরেশন এই করছে, সেই করছে। কিন্তু আমরা মশা থেকে মুক্তি পাই না। গতবার আমাদের এলাকার অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। আর যদি গোটা ঢাকা শহরের কথা বলি তাহলে তো নির্দিষ্ট মৌসুমে ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। এত এত টাকা-পয়সা খরচ করে পুরো বছর সিটি কর্পোরেশন কী করে, এটাই বুঝতে পারি না!’

মিরপুর শেওড়াপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সচরাচর সিটি কর্পোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণকর্মীদের দেখা যায় না। তারা কখন এসে মশার ওষুধ ছিটাই, কিছুই বুঝতে পারি না। খালি এতটুকু বুঝতে পারি মশার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। বছরজুড়ে মশা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারেনি ঢাকার সিটি কর্পোরেশন। আমার আত্মীয়-স্বজনসহ আশেপাশের এলাকার অনেককে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে দেখেছি। কিন্তু দেখিনি এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের তৎপরতা। তাদের তৎপরতা শুধু মিডিয়াতে দেখা যায়। বাস্তবে আমরা, সাধারণ এলাকাবাসী ডেঙ্গু বা মশা নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো কার্যক্রম দেখতে পাই না। 

মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটির খরচ কত 

প্রতি বছরে শত কোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য থেকে যাচ্ছে মশা।

যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, যন্ত্রপাতি কেনা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারকাজে এ টাকা ব্যয় করার কথা।

ঘোষিত ১৬৮ কোটি টাকার মধ্যে ডিএনসিসির মশা নিধনে ১২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে মশা নিধনে বরাদ্দ কম রাখা হয়। ডিএসসিসি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা মারতে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছিল। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক কেনার কথা। বাকি আট কোটি ২৫ লাখ টাকা যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহন খাতে ব্যয় করার কথা। 

মশক নিধনে উত্তর সিটির ব্যয় 

ডিএনসিসির ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মশক নিধনকাজ পরিচালনার জন্য ৮৪ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে মশার ওষুধ কেনার পেছনে ব্যয় হয় ৪৫ কোটি টাকা। ৩০ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয় বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োজিত মশককর্মীদের দিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায়। 

এ ছাড়া মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ৭ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয় ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারণায়। সবমিলিয়ে যা ১২১ দশমিক ৮৪ কোটি টাকায় ঠেকে। 

মশক নিধনে দক্ষিণ সিটির ব্যয় 

মশা মারতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে কীটনাশক কেনা হয়। বাকি আট কোটি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবহন খাতে ব্যয় দেখানো হয়। গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) এ খাতে সংস্থাটি খরচ করে প্রায় ৩১ কোটি টাকা।

ডিএসসিসির খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংস্থাটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কীটনাশক কেনায় ব্যয় দেখাচ্ছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ খাতে গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া ফগার, হুইল, স্প্রে-মেশিন ও পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে যা ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রপাতির পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল তিন লাখ টাকা। সবমিলিয়ে মশার সঙ্গে যুদ্ধে মোট ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখাচ্ছে ডিএসসিসি। 

যা বলছে সিটি কর্পোরেশন 

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দাবি, তারা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিদিনই চলছে তাদের অভিযান। অসচেতন ভবন মালিকদের জরিমানাও করা হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত চার বছরে ডিএসসিসিতে নতুন আরও ৫৩৫টি ফগার মেশিন, ৬০০টি হস্তচালিত মেশিন ও ২৯টি হুইলব্যারো মেশিন ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার আলোকে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময়, কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (১০৮৬টি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা), মসজিদ-মন্দির, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িসহ সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালনা, কোনো ওয়ার্ডে সপ্তাহে ১০ জনের বেশি ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হলে সে ওয়ার্ডকে লাল চিহ্নিত এলাকা (রেড জোন) ঘোষণা করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা এবং কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। 

পাশাপাশি মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বেগবান করতে নতুন মশককর্মী নিয়োগ দিয়েছে ডিএসসিসি। আগে ৪২৪ জন মশককর্মী এ কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমানে এক হাজার ৫০ মশককর্মী ও মশক সুপারভাইজার নিয়মিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে এবং প্রয়োজনীয় যান-যন্ত্রপাতিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মশক নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, মশক নিধনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। এ কাজে মাঠপর্যায়ে আমাদের পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন কীটনাশক, সরঞ্জামাদি ও জনবল রয়েছে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ ও চারপাশে যদি মশার প্রজননস্থল সৃষ্টি হয়, সে সম্পর্কিত তথ্য আমাদের সরবরাহ করার আহ্বান রইল। আমরা যত বেশি তথ্য পাব মাঠপর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম তত বেশি কার্যকর হবে। আমরা মশক নিধন কার্যক্রম আরও বেশি ফলপ্রসূ করতে পারব। 

‘আমাদের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ডেঙ্গুরোগীর প্রাত্যহিক যে তথ্য সরবরাহ করা হয়, কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে আমাদের কাউন্সিলরগণ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ও মশককর্মীরা সেই ঠিকানা পরিদর্শন করেন এবং ডেঙ্গুরোগীর বাসস্থল ও চারপাশের ৩০০ গজ এলাকায় বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ করা তথ্যে নানাবিধ অসংগতি থাকে। ফলে এডিস মশার প্রজননস্থল নিধন কার্যক্রমে আমাদের সময়ক্ষেপণ হয় এবং প্রকৃত রোগী খুঁজে বের করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়। তারপরও গভীর তদারকির ফলে আমরা সকল রোগীর বাসাবাড়ি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করি। এমন একজন রোগীও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার বাসাবাড়িতে আমরা যাইনি এবং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা হয়নি।’

অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, ডিএনসিসির আয়তন প্রায় ১৯৬.২২ বর্গ কিলোমিটার। এখানে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। এ বিশাল এলাকার জন্য পর্যাপ্ত জনবল-যন্ত্রপাতি তাদের নেই। তবুও মশক নিধনকাজে নিয়োজিত বর্তমান জনবলের মধ্যে মোট মশককর্মী এক হাজার ১৩০ জন ও সুপারভাইজার রয়েছে ৬০ জন। মশক নিধনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে ফগার মেশিন ৭৬০টি, হস্তচালিত মেশিন ৮৫০টি, হুইলব্যারো মেশিন ৬২টি, মিস্টব্লোয়ার মেশিন ৪০টি, ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন ১৫টি এবং নৌকা রয়েছে ৩০টি। 

মশক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মশক ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। সচেতনতা কার্যক্রম হিসেবে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে নাগরিক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রতি কাউন্সিলরকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকাভিত্তিক জনসংযোগ কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। ইমাম, মুয়াজ্জিন ও শিক্ষকদের সাথে সভা, বিভিন্ন সোসাইটির সাথে মতবিনিময় সভা করছি। শিক্ষার্থীদেরও সচেতন করতে এ সংক্রান্ত বই বিতরণ কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে প্রায় চার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কিউলেক্স মশা নিধনে ডিএনসিসি এলাকার খাল, ডোবা ও জলাধারের কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি ও আবর্জনা যেমন- টায়ার, দইয়ের বাটি, আইস্ক্রিমের কাপ, কমোড, পলিথিন ইত্যাদি নগদ টাকায় কিনে নেওয়া হচ্ছে। যাতে মশা বংশবিস্তার করতে না পারে।

‘এক কথায়, আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। তবে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি নাগরিককে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। সবাই একসঙ্গে চেষ্টা না করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’

কেন নিয়ন্ত্রণে আসে না ডেঙ্গু, কেন কমে না মশার উপদ্রব 

সিটি কর্পোরেশনের এত এত পদক্ষেপ, তবুও কেন নিয়ন্ত্রণে আসে না ডেঙ্গু, কেন কমে না মশার উপদ্রব? এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা দুই ধরনের। যত দিন সাধারণ মশার সঙ্গে এডিস মশাকে মেশানো হবে, তত দিন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার, যা বছরজুড়ে চলমান থাকতে হবে। থাকতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি এ কাজে জনগণকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। 

এএসএস/এমএআর/