অপেক্ষা না আন্দোলন, ধোঁয়াশায় বিএনপি
নির্বাচন পূর্ববর্তী আশা ভঙ্গের হতাশায় এখনো অনেকটা ছন্নছাড়া পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে (বিএনপি)। তার মধ্যে গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক রদবদলের ঘটনায় আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন পদাবনতি হওয়া নেতারা।
কেউ-কেউ আবার আগামীতে দলের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির আশায় রয়েছেন। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও মুক্তির বিষয়টিও নতুন করে সামনে আসছে। সবকিছু মিলিয়ে নানা সংকটের মধ্যে থাকা ডানপন্থি রাজনৈতিক দলটি এখন ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই মুহূর্তে বিএনপির সব মনোযোগ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে। একই সঙ্গে তার স্থায়ী জামিনের জন্য আবারও উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। পাশাপাশি নতুন করে তার মুক্তির দাবিতে মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যার ফলে, সাময়িকভাবে সরকারবিরোধী ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন থেকে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে বিএনপি।
গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে শরিকদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে একাধিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। নির্বাচনের আগে আন্দোলনে কেন ব্যর্থ হয়েছে, কৌশলের কোথায় ভুল ছিল ও হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল কি না, তা পর্যালোচনা করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতা বলছেন, বর্তমান সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব নাকি তার আগে নতুন নির্বাচনের জন্য চাপ সৃষ্টি করব, আমরা এখনো সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তা ছাড়া আমরা চাইলাম আর সরকার নির্বাচন দিয়ে দেবে বিষয়টি তো এমন না। তার জন্য তো সরকারকে বাধ্য করতে হবে। গত ১৫ বছর সেই চেষ্টা করেও সরকারের কৌশলের কাছে পরাজিত হয়েছি। তারা বারবার প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। তাই এখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার আগে পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের রাস্তা বের করে নামতে হবে। সেটি না করে এসব জেলা-উপজেলা কিংবা বিভাগীয় সমাবেশ করে কোনও লাভ হবে না। বরং এসব প্রোগ্রাম করতে গিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বারবার হামলা-মামলা ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প কিছু নেই বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনা দরকার। কিন্তু কোথাও কোনও সংকটের কারণে মনে হয় সেটি আমরা করতে পারছি না। সাম্প্রতিক সময়েও সরকারি আমলাদের দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি এবং ম্যাডামের ইস্যুতেও আমরা প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারিনি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দল ও অঙ্গ-সংগঠনকে গুছিয়ে আমরা ভালো একটি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠে দেখা যাবে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে নতুন প্রোগ্রাম (কর্মসূচি) আসবে। উনার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এর পাশাপাশি ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
তিনি বলেন, আমরা একটা মুভমেন্টে আছি। সেটি অব্যাহত থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, স্থায়ী কমিটিতে এখন কোনও সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় না। আগে প্রতি সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হতো। এখন সেটি ১৫ দিন পর-পর হয়।
এই নেতা আরও বলেন, এখন বিএনপিতে অনেক সিদ্ধান্ত আলোচনা ছাড়াই হয়। সেটিকে বলা যায় চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। যার ফলে, বিভক্ত সিদ্ধান্ত আসছে, যা নেতাকর্মীদের এক পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, আরেক পক্ষ মনক্ষুণ্ন হচ্ছে। কেউ-কেউ দলের মধ্যে চাপে পড়ছেন।
বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক তরুণ নেতা বলেন, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমেরিকা দুটি বার্তা দিয়েছে। এর মধ্যে আমাদের প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশকে একটি বার্তা দিয়েছে। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ ইস্যুতে এখন আমরা আমাদের মতো করে এগোবো। আরেকটা হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতি তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হয়নি।
তিনি বলেন, এখন তারা (আমেরিকা) তো আন্দোলন করে দেবে না। আমাদের দাবি আমাদের আদায় করে নিতে হবে।
এই মুহূর্তে বিএনপির সব মনোযোগ দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে। একই সঙ্গে তার স্থায়ী জামিনের জন্য আবারও উচ্চ আদালতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। পাশাপাশি নতুন করে তার মুক্তির দাবিতে মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। যার ফলে, সাময়িকভাবে সরকার বিরোধী ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন থেকে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছে বিএনপি
চুপচাপ বিএনপি, একলা চলো নীতিতে শরিকরা
গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। বৈঠকে শরিকদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে একাধিক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। নির্বাচনের আগে আন্দোলনে কেন ব্যর্থ হয়েছে, কৌশলের কোথায় ভুল ছিল ও হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল কি না, তা পর্যালোচনা করতে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে আগামীতে আন্দোলন-সংগ্রামের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করতে লিয়াজোঁ কমিটিকে আরও শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এসব নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে কি না বা আগামী দিনে তাদের পরিকল্পনা কী, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত শরিকদের কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি। ফলে, বিএনপির কাছে থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে শরিকরা নিজেদের মতো করে কর্মসূচি পালন করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের এক নেতা বলেন, বিএনপিকে আমরা অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কথা বলেছি, কিন্তু তারা তো কোনও কিছুর জবাব দিচ্ছে না। তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে খুব কম সময়ে মধ্যে একটা বৈঠক হতে পারে। সেখানে হয়ত আলোচনা হবে।
তিনি আরও বলেন, তাদের কোনও কর্মপরিকল্পনা আছে বলেও মনে হয় না। তাদের তো কোনোকিছুর ঠিক নেই। তাদের নানা হিসাব। আমরা কী, তাদের নেতারাই এখন অনেক কিছু জানে না। সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে তারা জানতে পারে, এটা হতে যাচ্ছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, মঞ্চ নিজেদের মতো করে চলছে। নিজস্ব কর্মসূচিও চলমান রয়েছে। আগামীতেও সেটি চলমান রাখবে। এর মধ্যে বিএনপির সঙ্গে যখন যেটুকু মিলে সেটি মেলাব।
এএইচআর/এমজে