দেশের প্রাচীনতম শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম জুয়েলারি শিল্প। অথচ সুষ্ঠু নীতিমালা এবং ব্যবস্থাপনার অভাবে এ শিল্প বারবার মুখ থুবড়ে পড়ছে। দেশে বৈধ পথে না হচ্ছে স্বর্ণ আমদানি, না হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ। অথচ প্রতি বছর প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকার বেশি স্বর্ণ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হচ্ছে। স্বর্ণ কেন পাচার হচ্ছে, কেন-ই বা বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি হচ্ছে না— বিষয়গুলো খুঁজতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা পোস্ট। স্বর্ণ খাতে সোনার দিন ফেরাতে করণীয় কী— দুই পর্বের বিশেষ আয়োজনে আজ থাকছে শেষটি... 

স্বর্ণ খাতের সুষ্ঠু ও টেকসই বিকাশ এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সহায়ক পরিবেশ। সেই লক্ষ্যে ‘স্বর্ণ নীতিমালা- ২০১৮’ অনুমোদন করে সরকার। উদ্দেশ্য ছিল স্বর্ণ আমদানি, সরবরাহ, সংগ্রহ, মজুত ও ক্রয়-বিক্রয় এবং স্বর্ণালংকার রপ্তানিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।

কিন্তু মূল স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়নের পাঁচ বছর, এমনকি প্রথম দফায় নীতিমালা সংশোধনের তিন বছর পর বৈধ পথে আমদানি বাড়েনি অতি মূল্যবান এ ধাতুর। অনেকটা পুরোনো পথে হাঁটছে জুয়েলারি শিল্প।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের মতে, নীতিমালায় এমনভাবে কর কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে যেটি অনুসরণ করে না হচ্ছে স্বর্ণ আমদানি, না হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণ। ফলে নীতিমালা করার পরও থমকে আছে জুয়েলারি শিল্পের বিকাশ। অন্যদিকে, দেশে স্বর্ণের চোরাচালান, অর্থপাচার ও কালো টাকার বিস্তার কমেনি, উল্টো দিনদিন তা আগ্রাসী হয়েছে।

জানা যায়, স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় ২০১৯ সালে স্বর্ণ আমদানির জন্য ১৮টি প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংককে লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০৬.৭৬ কেজি স্বর্ণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত স্বর্ণ নীতিমালা অনুসরণ করে দেশে আমদানি হয়েছে মাত্র ৬০ কেজি স্বর্ণ। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কোনো স্বর্ণ আমদানি হয়নি।

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৯৯ হাজার ৭৯১ কেজি স্বর্ণ দেশে এনেছে। এর মধ্যে শুধু ২০২২ সালেই এসেছে ৫২ হাজার ১৯৫ কেজি স্বর্ণ। যার মূল্য ৪৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে সরকার শুল্ক-কর বাবদ পেয়েছে মাত্র এক হাজার ৭১৪ কোটি টাকা, তা-ও ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায়। এ ছাড়া কিছুটা আমদানি ও জরিমানা বাবদ এ অর্থ এসেছে। কিন্তু ওই সময়ে দেশে স্বর্ণের চাহিদা ছিল এক লাখ কেজি

২০১৯ ও ২০২০ সালের পরিসংখ্যান বিবেচনায় আনলেও আমদানি করা সোনার পরিমাণ ২০০ কেজি পার হবে না।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্বর্ণ নীতিমালা হওয়ার পরও কেন অতি মূল্যবান এ ধাতু বৈধ পথে আমদানি হচ্ছে না। এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বর্ণ আমদানিতে সবমিলিয়ে ১৫.৫০ শতাংশ শুল্ক-কর প্রযোজ্য। যদিও বাজুসের মতে, ওই হার দাঁড়ায় ১৮-১৯ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ শুল্ক-করের কারণেই আমদানি হচ্ছে না স্বর্ণ।

অন্যদিকে, ব্যাগেজ বিধিমালা অনুসরণ করে ক্যারিয়ারের মাধ্যমে আসছে টনে টনে স্বর্ণ। তা-ও মাত্র ৪ শতাংশ করের বিনিময়ে। এনবিআর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাগেজ রুলের আওতায় যাত্রীদের মাধ্যমে ২০২৩ সালে ৫২ টন এবং ২০২২ সালে ৫৪ টনের মতো স্বর্ণ দেশে এসেছে। যেখানে বছরে চাহিদা ২০ থেকে ৪০ টন।

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, বছরে দেশের চাহিদা পূরণে ১৮ থেকে ২০ টন নতুন স্বর্ণের দরকার। অর্থাৎ দেশের স্বর্ণালংকার তৈরিতে বর্তমান চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি। যদিও অফিসিয়াল পরিসংখ্যানের বাইরে ৫-১০ গুণ স্বর্ণ আসছে চোরাচালানের মাধ্যমে, সেটি ভিন্ন বিতর্ক। ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় নামমাত্র করের বিনিময়ে আসা স্বর্ণে যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায় তাহলে কেন বেশি শুল্ক-কর দিয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি করবেন?

অন্যদিকে, নীতিমালায় দেশে স্বর্ণ পরিশোধনাগার শিল্প স্থাপনের সুযোগ রাখা হয়েছে। রাজধানীর পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের (৩০০ ফুট) পাশে ভাটারা থানার ৪৭০ শতক জমিতে হচ্ছে বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি লিমিটেড। কিন্তু পরিশোধনাগারে স্বর্ণের কাঁচামালের শুল্ক-কর আরও বেশি। শোধনাগার চালু হলে ৩০ শতাংশ শুল্ক-কর (হীরার কাঁচামালে ৬০ শতাংশ) দিয়ে স্বর্ণের কাঁচামাল আনতে হবে। তাহলে বেশি দামের পরিশোধিত ওই স্বর্ণও দেশের জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে না— মত খাত-সংশ্লিষ্টদের।

সহজ হিসাবে বলতে গেলে, ১০০ টাকার স্বর্ণ আমদানিতে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় খরচ হয় ১০৪ টাকা। অন্যদিকে, আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করে ওই পরিমাণ স্বর্ণ আমদানিতে ব্যয় হয় ১১৮-১১৯ টাকা। আর দেশের স্বর্ণ পরিশোধনাগারে স্বর্ণের ব্যয় দাঁড়াবে ১৩০ টাকার বেশি। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমান স্বর্ণ নীতিমালা অনুসরণ করে স্বর্ণ কিংবা কাঁচামাল আমদানি— দুটোই অলাভজনক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ব্যাগেজ রুল ও স্বর্ণ আমদানির পার্থক্য আকাশ-পাতাল : বাজুস

গোল্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যাগেজ রুল ও স্বর্ণ আমদানির পার্থক্য আকাশ-পাতাল। যেমন, ব্যাগেজ রুল অনুসারে ১০ ভরির একটি স্বর্ণালংকার বা সোনা আনলে ৪০ হাজার টাকা কর দিলেই তা বৈধ হয়ে যায়। আর কোনো খরচ নেই। মাত্র ৪ শতাংশ কর দিয়ে স্বর্ণ পেলে কেন আমদানি করবেন ব্যবসায়ীরা? ব্যাগেজ বিধিমালার সুবিধা এখনই বন্ধ করা উচিত। এটি বন্ধ না করলে আমদানি নীতিমালা মুখ থুবড়ে পড়বে।

‘২০২৩ সালে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় শুল্ক-কর দিয়ে স্বর্ণ এসেছে মাত্র ৫২ টন। এর চেয়ে ১০ গুণ স্বর্ণ বাংলাদেশে এসেছে, যা ধরা পড়েনি। এত স্বর্ণ কোথায় গেল? ভারতে পাচার হয়েছে। অর্থাৎ স্বর্ণের নীতিমালায় ত্রুটি রয়েছে। বাজেটের আগে আমরা এনবিআরকে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) একাধিকবার প্রস্তাবনা দিয়েছি। সেখানে গাইডলাইনও দেওয়া আছে। প্রচলিত ব্যাগেজ বিধিমালা রেখে দরজা খুলে দিলেও আমদানি হবে না। কারণ একটাই, আমদানি করা স্বর্ণের দাম বেশি, ব্যাগেজ ‍বিধিমালায় আসা স্বর্ণের দাম কম।’

‘আমরা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম। সেখানে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও ছিলেন। বাজুসের পক্ষ থেকে প্রতিটি পয়েন্ট ধরে ধরে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই একমতও হয়েছিলেন। ট্যারিফ কমিশন ব্যাগেজ বিধিমালা ও আমদানি নীতি সমন্বয় করার বিষয়ে এনবিআরকে গত মে মাসে চিঠি দিয়েছে বলেও জানি। কিন্তু এনবিআর মানেনি। এনবিআর যদি না মানে আমাদের আর কী করার আছে’— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

মাসুদুর রহমান বলেন, ব্যাগেজ বিধিমালা একটি বিতর্কিত পদ্ধতি। এবারের ব্যাগেজ বিধিমালায় যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে কোনো লাভ হবে না। এ দেশে জল, স্থল ও আকাশপথে চোরাচালান হয়। এটি সবাই কম বেশি জানেন। আর ওই স্বর্ণ কি দেশে থাকে? দেশে থাকে শুল্ক-কর দিয়ে আপনার আমার আত্মীয়-স্বজন যেগুলো নিয়ে আসেন। এটি বৈধ স্বর্ণ। বাজুসের জরিপে দেখানো হয়েছে, প্রতি বছর এ খাতে (স্বর্ণ খাত) অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। যার পরিমাণ প্রায় ৯০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এটি অন্তত সরকারের বোঝা উচিত।

‘সরকার আসলে কী চাচ্ছে— সেটি গুরুত্বপূর্ণ। স্বর্ণ খাত থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করার যদি উদ্দেশ্য থাকে তাহলে বাজুসের প্রস্তাব অনুসরণ করা উচিত। এ খাতে বাড়তি সুবিধা না দিলে উন্নয়ন কখনই সম্ভব নয়।’

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে কর মওকুফের ওপর জোর দিয়েছেন।

তার মতে, সরকারি নীতি এবং এনবিআর কর্মকর্তাদের মানসিকতা এ খাতের (স্বর্ণ খাত) উন্নয়নে মূল প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এটিকে দেখতে হবে পোশাক শিল্পের মতো। রপ্তানিমুখী শিল্প হতে পারে এ খাত। বড় বড় ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানকে এখানে বিনিয়োগ করতে হবে।

‘হাজার হাজার বছর ধরে বাংলাদেশে স্বর্ণের ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত— সবাই এটির সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বর্ণ এবং এ থেকে তৈরি অলংকার আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি তো অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ আমরা আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে রপ্তানিমুখী করতে পারিনি। কেন পারিনি, এর মূলে রয়েছে মানসিকতা। স্বর্ণের হাত-পা আটকে এটিকে আমরা কালোবাজারি পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এটি থেকে উত্তরণ এখনও সম্ভব। প্রয়োজন জুয়েলারি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা, পাশাপাশি সরকারের দিক থেকে এ শিল্পের বিকাশে এগিয়ে আসা।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় স্বর্ণের বাজার পুরোপুরি পুরোনো এবং ব্যাগেজ বিধিমালার অপব্যবহারের ওপর নির্ভরশীল। ব্যাগেজ বিধিমালার অপব্যবহার করে ক্যারিয়ারের (বাহক) মাধ্যমে ২০২২ সালে ৫২ টন স্বর্ণ দেশে প্রবেশ করেছে। অথচ দেশের বাজারে স্বর্ণের প্রকৃত চাহিদা ১৮ থেকে ২৬ টন। মাত্র ১০ শতাংশ আসে পুরাতন স্বর্ণ পরিশোধনের মাধ্যমে। বাকি ৯০ শতাংশের উৎস হচ্ছে চোরাচালান। অস্বাভাবিক শুল্কহার, বিভ্রান্তিকর নীতিমালা প্রণয়ন, আমদানির ক্ষেত্রে কাগজপত্রে অস্বাভাবিক সময়ক্ষেপণ এবং সিন্ডিকেট করে স্বর্ণের ব্যবসা কোণঠাসা করে রাখা চোরাচালানের অন্যতম কারণ।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম এনবিআরের এক পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ প্রায় ৯৯ হাজার ৭৯১ কেজি স্বর্ণ দেশে এনেছেন। শুধু ২০২২ সালেই এসেছে ৫২ হাজার ১৯৫ কেজি স্বর্ণ। যার আর্থিক মূল্য ৪৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। যেখান থেকে সরকার শুল্কবাবদ পেয়েছে মাত্র এক হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। ওই সময় স্বর্ণের চাহিদা ছিল এক লাখ কেজি। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বৈধভাবে আনেন ১৩৩.৩৭ কেজি। বাকি ৯৯ হাজার ৮৬৬.৬৩ কেজি স্বর্ণের প্রায় পুরোটাই দেশে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রবেশ করেছে। এ মাধ্যমে আসা স্বর্ণের বড় একটি অংশ পাচার হয়েছে ভারতে। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষতির জন্য সরকারের বিদ্যমান নীতিমালাই দায়ী। এটি কেবল সরকারের নীতিনির্ধারক ও অবৈধ স্বর্ণ কারবারিদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই সম্ভব হয়েছে।’

বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির ইতিহাস

দেশ স্বাধীনের আগে অর্থাৎ পাকিস্তান আমলে দুজন ডিলারের মাধ্যমে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ আমদানি করত। পরে সেই স্বর্ণ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করত। স্বাধীনতার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ১৯৭১ সাল থেকে প্রবাসী কোটায় ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকেই বিমানবন্দরে ঘোষণা দিয়ে ১০ কেজি পর্যন্ত স্বর্ণ আনতে পারতেন। ১৯৯৬ সালে এটি কমিয়ে পাঁচ কেজি করা হয়। ২০০০ সালে ওই সুযোগ আরও কমিয়ে দুই কেজি করা হয়। ২০১০ সালে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ওই সময় থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি কেজি স্বর্ণ আনতে শুল্ক হিসেবে সাড়ে ১২ হাজার টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হতো। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে প্রতি কেজি স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়। এ সময় স্বর্ণ খাত থেকে রাজস্ব হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা আসত। শুল্ক বাড়ানোর পর স্বর্ণের চোরাচালান বেড়ে যায়। ওই সময় ব্যাগেজ বিধিমালার বাইরে দেশের স্বর্ণের বাজারের চাহিদা মেটাতে স্বর্ণ আমদানির সুযোগ ছিল না। তবে, আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮ এর অনুচ্ছেদ ২৬ (২২) অনুযায়ী বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব অনুমতি নিতে হতো। এক্ষেত্রে যথাযথ গাইড লাইন না থাকায় ওই অনুমতি মিলত না।

সহজ হিসাবে বলতে গেলে, ১০০ টাকার স্বর্ণ আমদানিতে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় খরচ হয় ১০৪ টাকা। অন্যদিকে, আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করে ওই পরিমাণ স্বর্ণ আমদানিতে ব্যয় হয় ১১৮-১১৯ টাকা। আর দেশের স্বর্ণ পরিশোধনাগারে স্বর্ণের ব্যয় দাঁড়াবে ১৩০ টাকার বেশি। সার্বিক বিবেচনায় বর্তমান স্বর্ণ নীতিমালা অনুসরণ করে স্বর্ণ কিংবা কাঁচামাল আমদানি— দুটোই অলাভজনক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ওই অনুমতি পাওয়াও একপ্রকার অসম্ভব ছিল। তখন ব্যবসায়ীদের বৈধ উপায়ে স্বর্ণ পাওয়ার একমাত্র উৎস ছিল নিলাম থেকে সংগৃহীত স্বর্ণ, যেগুলো বিভিন্ন সময় জব্দ করা হয়েছিল। অপর মাধ্যমটি হলো পুরাতন স্বর্ণ কেনা। জব্দ হওয়া স্বর্ণের নিলামও নিয়মিত হতো না। ফলে কালোবাজার থেকে আসত স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল। ওই সময় দেশে প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ টন স্বর্ণের চাহিদা ছিল। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মহলে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দেওয়া হয়, যা ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর সংশোধন করা হয়। নীতিমালার ৩.৪ ধারা অনুসরণ করে ডিলারদের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পেতে ৪২টি ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের আবেদন পড়ে। এর মধ্যে ১৮ জন ব্যবসায়ী ও একটি ব্যাংক লাইসেন্স পায়।

স্বর্ণ আমদানির লাইসেন্স পেতেও তদবির-বাণিজ্য হয়েছে— উল্লেখ করে বাজুসের সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কারা লাইসেন্স পেয়েছেন, প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচজন। বাকিগুলো তদবিরবাজরা নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও রয়েছেন। ওই তদবিরবাজরা কি সোনা আমদানি করবে, তারা স্বর্ণ ব্যবসার কিছু বোঝে? যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী তাদের লাইসেন্স দিতে হবে। আর একটি বিষয়, স্বর্ণ আনার প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পেতেই ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। এরপর বিমানবন্দর থেকে স্বর্ণ ছাড়াতে হয়। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে যদি আবার স্বর্ণে দাম পড়ে যায়, তাহলে ওই ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হয়। একবার-দুবার লোকসান দেওয়ার পর কেউ কি স্বর্ণ আমদানি করবে? ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা স্বর্ণ আমদানি করেছেন, তারা লাভবান হতে পারেননি। তাহলে কেন আমদানি করবেন?’

যা বলা আছে স্বর্ণ নীতিমালায়

২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ (সংশোধিত-২০২১)’ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। নীতিমালা সংশোধন করে অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক, আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি এবং শোধনাগার স্থাপনের পথ তৈরি করা হয়। নীতিমালায় ব্যবসায়ীদের স্বর্ণ রপ্তানিরও সুযোগ দেওয়া হয়।

নীতিমালার উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের বার ও কয়েন রপ্তানিতে উৎসাহ ও নীতি-সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি করা এবং এগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক/বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ করা।’ অথচ এগুলো এখনও প্রতিপালন করা হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।

বাংলাদেশে স্বর্ণ আমদানির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালার ৩ ধারায়। নীতিমালার ৩.১ ধারা অনুসারে, দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণবারের চাহিদা পূরণে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার, স্বর্ণালংকার, অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি করা যাবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচনের কার্যক্রম নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নীতিমালার ৩.২ অনুসারে, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্বর্ণবার, স্বর্ণালংকার আমদানি করবে। ওই ধারার ‘ক’ উপধারায় পরিশোধনাগার/পরিশোধনাগারসমূহ পরিশোধনে আমদানি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অপরিশোধিত স্বর্ণ/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত ডিলার হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। আর অনুমোদিত ডিলার ৩.৩ ধারা অনুসারে বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন।

স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণে ডিলারদের স্বর্ণ আমদানির সুযোগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে ৩.৪ ধারায়। বৈধ ব্যবসায়ী এবং মূসক বা ভ্যাট নিবন্ধিত প্রকৃত স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান/ব্যবসায়ী অনুমোদিত ডিলারের নিকট হতে স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার ক্রয় করা যাবে বলে নীতিমালার ৩.৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ধারা ৩.১০ ও ৩.১১ অনুযায়ী, অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণবার ও স্বর্ণালংকার এবং অপরিশোধিত স্বর্ণ আকরিক/আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণ আমদানি ও বিক্রয়ের সময়ে প্রযোজ্য শুল্ক-কর আইনানুগভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা প্রদান করতে হবে এবং অনুমোদিত ডিলারের কার্যক্রম কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূসক কর্তৃপক্ষ বিধি-বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণ করতে পারবে।

প্রণোদনা ও বিশেষ সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নীতিমালার ৯.৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বৈধভাবে স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের বার ও কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারকদের স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের বার ও কয়েন তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা প্রদান করা হবে।’ অথচ স্বর্ণ পরিশোধনাগারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির শুল্ক-কর নেওয়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

নীতিমালার ৯.৩ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানিকৃত স্বর্ণের ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক সুবিধা প্রদান করা হবে।’ ৯.৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রপ্তানির জন্য প্রস্তুতকৃত স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের বার ও কয়েনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদনযোগ্য ধাতু অবচয়ের পরিসীমা প্রতিপালন করতে হবে।’ ৯.৭ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের বার ও কয়েন রপ্তানির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা দেওয়া হবে।’

৯.৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হস্তনির্মিত ও মেশিনে তৈরি অলংকার রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা প্রদান করা হবে।’ এসব সুপারিশ থাকলেও কবে নাগাদ তা বাস্তবায়ন করা হবেসে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা নেই নীতিমালায়। 

নীতিমালার ৯.৯ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘স্বর্ণালংকার রপ্তানিকারকগণের অনুকূলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দের বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে বিবেচনা করবে।’ কিন্তু বারবার আশ্বাস দিলেও এখনও জমি বরাদ্দ দেয়নি সরকার।

৯.১১ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রপ্তানি নীতিতে বিশেষ উন্নয়নমূলক ও রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের অনুকূলে প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা স্বর্ণালংকার, স্বর্নের বার ও কয়েন রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রদানের সুপারিশ প্রেরণ করা হবে।’

অথচ এ ধরনের কোনো সরকারি উদ্যোগ এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। স্বর্ণের কাঁচামাল ও মেশিনারিজ আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রদানসহ ১০ বছরের জন্য কর-অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে প্রদানের প্রস্তাব বিভিন্ন সময়ে বাজুস দিয়ে আসলেও তা এখন পর্যন্ত আমলে নেয়নি সরকার— অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।

ব্যাগেজ বিধিমালায় যা বলা হয়েছে

যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা- ২০১২ বাতিল করে ২০১৬ সালের ২ জুন যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা-২০১৬ প্রবর্তন করা হয়। এ বিধিমালার আওতায় আকাশ ও জলপথে আসা যাত্রীরা শুল্ক ও কর সুবিধা পেয়ে থাকেন।

বিধিমালার ৩ ধারায় বলা হয়েছে, আকাশ ও জলপথে আসা ১২ (বার) বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের যাত্রীর সঙ্গে আনা হাতব্যাগ, কেবিনব্যাগ বা অন্যবিধ উপায়ে মোট ৬৫ কিলোগ্রাম ওজনের অতিরিক্ত নয় এরূপ ব্যাগেজ সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া খালাসযোগ্য হবে। অন্যদিকে, বিদেশে অবস্থানের মেয়াদ নির্বিশেষে স্থলপথে আসা একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ৪০০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্যাগেজ সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া আমদানি করতে পারবেন, যা বিধিমালা ৪ ধারায় বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্বর্ণ ও রুপা আনার বিষয়টি ব্যাগেজ বিধিমালার ৯ ও ১০ ধারায় বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘একজন যাত্রী অনধিক ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার অথবা ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্যের অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২টির অধিক হবে না) সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ ছাড়া আমদানি করতে পারবেন।

১০ ধারা অনুসারে, একজন যাত্রী বিদেশ হতে দেশে আসার সময় অনধিক ২৩৪ গ্রাম বা ২০ তোলা ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড কিংবা রৌপ্যবার বা রৌপ্যপিণ্ড সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ-সাপেক্ষে আমদানি করতে পারবেন। তবে, সকল যাত্রীর জন্য একটি ফরম পূরণ করিয়া ব্যাগেজ ঘোষণা প্রদান করতে হবে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিধিমালা সংশোধন করে ২৩৪ গ্রামের পরিবর্তে ১১৭ গ্রাম করা হয়। চলতি বাজেটে ব্যাগেজ বিধিমালার ৯ ও ১০ ধারায় আরেক দফা সংশোধন আনা হয়েছে। যেখানে বিদেশ ফেরত একজন যাত্রী বিনা শুল্কে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণালংকার আনতে পারবেন। তবে, সুবিধার অপব্যবহার ঠেকাতে স্বর্ণালংকারের সংজ্ঞায় ‘স্বর্ণালংকার অর্থ ২২ বা তার চেয়ে কম ক্যারেটের স্বর্ণে নির্মিত নকশাখচিত ও পরিধানযোগ্য অলংকার’ যুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণবার গলিয়ে চুড়ির মতো বানিয়ে আনার সুযোগ থাকবে না।

এ ছাড়া ব্যাগেজ বিধিমালার ৩ ধারায় একটি বিষয় সংযোজন করা হয়েছে। সেটি হলো, ১২ বছরের কম বয়সী যাত্রীদের জন্য স্বর্ণবার ও স্বর্ণের অলংকার আনার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া। আগের বিধিমালায় এটি সুস্পষ্ট ছিল না।

আরএম/এসকেডি/এমএআর/