জীর্ণশীর্ণ পুরনো ছোট্ট খুপরি ঘর। তার ভেতরে এক কোণে কুপিবাতি জ্বালিয়ে শ্বাস ধরে বাঁকনলে ফুঁ দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব দেব দুলাল কর্মকার। এরপর সোহাগা দিয়ে সোনা-রুপা গলিয়ে সামনে রাখা ছাঁচে ঢেলে দিচ্ছেন। ঠান্ডা হলে হাতুড়ি দিয়ে টুংটাং শব্দে পিটিয়ে দিচ্ছেন অবয়ব। প্রয়োজনবোধে গলানো সোনা-রুপা থেকেই চিকন সনের ধারালো মুখ ব্যবহার করে তুলছেন নকশা। এভাবেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি বানিয়ে ফেলছেন নারীর সৌন্দর্য আর আভিজাত্যের অহংকার চকচকে নিখুঁত সোনা-রুপার গহনা।

এ কাজে দেব দুলাল যুক্ত আছেন ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ এ সময়ে গভীর ধ্যান, মনোসংযোগ আর অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে নিজের অন্ধকার খুপরি ঘর থেকেই বের করছেন সোনা আর রুপার অসংখ্য গহনা। বাবা ও বড় ভাইয়ের পর তিনিই আগলে রেখেছেন বংশপরম্পরার এ পেশা। তার পর হাল ধরার আর কেউ নেই। অভিমানের সুরে তিনি বললেন, ‘কী হবে এ কাজ করে? পেট-ই চলে না। কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আগের মতো গহনা গড়ার কাজও নেই। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন কাটাতে হয়। এর চেয়ে ছেলেপুলে গার্মেন্টসে কাজ করলেই বেশি ইনকাম। অন্তত স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন চালাতে পারবে।’

রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার নিভৃত পল্লী বরমী গ্রাম। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত এ গ্রামের বাজারের বয়স প্রায় শতবর্ষ। মধ্যবাজারের কামারপট্টি সড়কের উভয় পাশে একসারিতে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক জুয়েলারি দোকান। যেখানে কর্মরত আছেন প্রায় শতাধিক স্বর্ণকার (সোনা/রুপার গহনা তৈরির কারিগর)। তবে, তাদের অধিকাংশের মনেই ভর করেছে হতাশা।

জীর্ণশীর্ণ আর পুরনো ছোট্ট খুপরি ঘর। বিদ্যুৎ না থাকায় ভেতরে কিছুটা অন্ধকার আর ভ্যাপসা গরম। অবশ্য তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, দিনের বেলা বাইরের প্রাকৃতিক আর ওপরের টিনের চালের ফুটো দিয়ে ঘরের ভেতরে আসা সূর্যের আলোয় দিব্যি স্বাভাবিক কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে। সেই ঘরেই মাটিতে মাদুর পেতে সামনে ছোট টেবিল বসিয়ে এক মনে অলংকার তৈরির কাজ করছেন দেব দুলাল কর্মকার

তারা জানান, যেখানে বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের বাজার দিনদিন প্রসারিত হচ্ছে, সেখানে এসব দক্ষ কারিগর নিজের সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এরই মধ্যে অভিমান করে বংশপরম্পরায় পাওয়া বাপ-দাদার ঐতিহ্যের এ পেশা ছেড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ চাকরি খুঁজছেন কিংবা বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পেট-ই চলে না। কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। আগের মতো গহনা গড়ার কাজও নেই। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন কাটাতে হয়— সোনার কারিগর দেব দুলাল কর্মকার / ছবি- ঢাকা পোস্ট

সরেজমিনে বরমী বাজার কামারপট্টির ২২ নম্বর দোকান ঘুরে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ আর পুরনো ছোট্ট খুপরি ঘর। বিদ্যুৎ না থাকায় ভেতরে কিছুটা অন্ধকার আর ভ্যাপসা গরম। অবশ্য তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, দিনের বেলা বাইরের প্রাকৃতিক আর ওপরের টিনের চালের ফুটো দিয়ে ঘরের ভেতরে আসা সূর্যের আলোয় দিব্যি স্বাভাবিক কাজগুলো করা সম্ভব হচ্ছে। সেই ঘরেই মাটিতে মাদুর পেতে সামনে ছোট টেবিল বসিয়ে একমনে অলংকার তৈরির কাজ করছেন দেব দুলাল কর্মকার। অবশ্য স্থানীয়দের কাছে তিনি দুলাল বাইন্না (স্বর্ণকার) নামেই বেশি পরিচিত। এ বাজারে বয়সে ও কাজের অভিজ্ঞতায় তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র। দীর্ঘদিনের  অভিজ্ঞতায় দেব দুলাল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বানিয়ে ফেলতে পারেন চকচকে নিখুঁত সোনা কিংবা রুপার গহনা। অবশ্য বড় কাজ কিংবা ডিজাইন জটিল হলে অনেক সময় পুরো কাজ শেষ করতে দিন দুয়েকও লাগে।

দুলাল কর্মকার বলেন, পাকিস্তান আমলে যখন রুপার ভরি আড়াই টাকা আর সোনার ভরি ৩৫০-৪০০ টাকা, তখন আমার কাজের হাতেখড়ি। বাবা স্বর্গীয় মহেন্দ্র কর্মকার ছিলেন ওই সময়ে এ এলাকার নামকরা সোনার কারিগর। বাবার দক্ষতা, গহনা তৈরির নৈপুণ্য দেখে আমিও কাজ শিখতে আগ্রহী হয়ে উঠি। এরই মধ্যে আমার বড় ভাই রাধাগোবিন্দ কর্মকারও বাবার কাছ থেকে কাজ শিখে ফেলেন। তখন আমিও নিয়মিত দোকানে আসা-যাওয়া শুরু করি। বাবা কাজের চাপে আমাকে কম সময় দিতেন। তবে, বড় ভাই হাতে ধরে কাজ শিখিয়েছেন।

‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। তখন সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আতঙ্কে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করি। দেশ স্বাধীন হলে আবার বাড়ি ফিরে আসি। তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিজেই বাপ-ভাইয়ের পেশা ধরে রেখেছি। মরার আগ পর্যন্ত এ কাজই করব। বয়স হলেও বাড়িতে বসে থাকতে পারি না। খুপরি ঘরটাই আমার কাছে সবকিছু। এই গদিতে বসে বাঁকনলে ফুঁ দিলেই আমার ভালোলাগা কাজ করে। যদিও এখন আর আগের মতো কাজ নেই। তারপরও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দোকানে বসি। আগের জৌলুস না থাকলেও একেবারেই ফাঁকা বসে থাকতে হয় না।’

তারা সোনার কারিগর। বাপ-দাদার ঐতিহ্যের এ পেশা ছেড়ে তারা এখন অন্য পেশার সন্দানে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

জীবনের তিন কালের দুই কালই সোনার কারিগর হিসেবে পার করা দেব দুলালের দিন কাটে অনেকটা নীরবে-নিভৃতে। তার দুই ছেলে প্রবাসী। ছোট ছেলে তন্ময় কর্মকার সৌদি আরবে, বড় ছেলে সুখময় কর্মকার থাকেন কলকাতায়। স্ত্রীও গত হয়েছেন দুই বছর আগে। এখন একাকী জীবনে মনের কল্পনায় সোনার কারিগরদের সে কালের জৌলুসপূর্ণ অবস্থা আর এ কালের টানাপোড়েন নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন।

দেব দুলাল বলেন, আমার কাছে বহু মানুষ কাজ শিখেছে। অনেক শিষ্য আমার। তাদের অনেকেই এখন মহাজন হয়েছেন। কত কাজ করেছি, তার হিসাব নেই। আগের দিনে মাকড়ি, কানপাশ, সাগরিকা, সাঁওতালি রিং, কলেজ রিং, বল রিং, মটো রিং, এক বল, নোলক বালি, চুড়ি, বালা, চেইন, পায়েল, নূপুর কত কিছু বানিয়েছি, সেগুলো বলে শেষ করতে পারব না। এখন তো আমাদের দুরবস্থা চলছে। আগে স্বর্ণ-রুপার দাম কম থাকায় মানুষের কাছে কিছু টাকা জমলেই তা দিয়ে গহনা তৈরির জন্য আমাদের কাছে আসত। এখন তেমনটি নেই৷ এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আমাদেরকে বাঁচাতে হবে। যেমন- এখন আর নতুন কেউ এ কাজ শিখছে না। তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ কার কাছে রেখে যাব? সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা এবং বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। না হলে সবকিছু মেশিন-নির্ভর হয়ে পড়বে। এক সময় আর দেশীয় সোনার কারিগর (স্বর্ণকার) খুঁজে পাওয়া যাবে না।

যদিও অর্থের চেয়ে কাজ করেই বেশি আনন্দ— মন্তব্য করেন আরেক কারিগর বিজয় সেন। তার মতে, সোনার গহনা কেবল অলংকার নয়, এটি নারীর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের স্মৃতি এবং ভালোবাসার একটি প্রতীক। এটি যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও সম্পদের প্রতীক হিসেবে সমাদৃত হয়ে আসছে। আমরা এ কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাই। টাকা-পয়সার জন্য কাজ করি না। বাপ-দাদার ঐতিহ্যের এ পেশা ছেড়ে কোথায় যাব? যত দিন বাঁচব এ মাটিই আমাদের সব।

চোখের সমস্যার কারণে স্বর্ণের গহনা বানানোই ছেড়ে দিয়েছি। এখন কেবল রুপার গহনা তৈরির কাজ করি— বলছেন এক কারিগর / ছবি- ঢাকা পোস্ট

হতাশ সোনার কারিগররা, বানাচ্ছেন না উত্তরসূরি

কথা হয় একই বাজারের অন্যান্য সোনার কারিগরের সঙ্গে। তারা জানান, এ কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালাতে হচ্ছে। স্বর্ণের উচ্চ মূল্যের কারণে নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে কেউ দোকানের কাছে ঘেঁষেন না। বিয়ে, বউভাত, আকিকা কিংবা জন্মদিন ঘিরে স্বর্ণের গহনার কদর থাকলেও অধিকাংশ গ্রাহকই রেডিমেড গহনা কিনতে বেশি আগ্রহী। আগের মতো ডিজাইন দিয়ে বা অর্ডার দিয়ে গহনা বানানো এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। সেজন্য পর্যাপ্ত কাজের অভাবে স্বর্ণকাররা দিনের অধিকাংশ সময় অবসরে পার করছেন। আর যেসব কাজ আসছে অধিকাংশই গহনা মেরামত কিংবা পুরনো অলংকার গলিয়ে নতুন করে তৈরি করার। তা-ই নতুন করে উত্তরসূরি কিংবা শিষ্য তৈরিতে আগ্রহী নয় কোনো কারিগর।

বরমী বাজারের জননী জুয়েলারির মহাজন রতন বর্মন ৩৫ বছর ধরে স্বর্ণ-রুপার গহনা তৈরির কাজ করছেন। আগ্রহ, চেষ্টা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে কারিগর থেকে নিজেই জুয়েলারি দোকানের মালিক হয়েছেন। তার অধীনে এখন কাজ করেন আরও দুজন কারিগর।

দীর্ঘ এ যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে এ কাজ শুরু করি। এর আগে যখন প্রাইমারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম তখন থেকেই সোনার গহনা তৈরির কাজ শেখার প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। আমার বাবা ও পূর্বপুরুষরা ছিল জেলে সম্প্রদায়ের। সেখান থেকে আমি নিজের চেষ্টায় অলংকার তৈরির কাজ শিখতে শুরু করি। আমার গুরু ছিলেন মাখন বর্মন। এ বাজারেই কাজের হাতেখড়ি হয়েছিল। এখনও চলছে।

‘ডিজাইন তৈরির ক্ষেত্রে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। গুরুর হাত ধরেই কাজ শিখেছি। এখন কম-বেশি ৫০টির মতো অলংকারের ডিজাইন করতে পারি। আবার যেকোনো ডিজাইনের অলংকারের ছবি দেখেও হুবহু তৈরি করে দিতে পারি। এ দোকানে আরও দুজন কারিগর কাজ করেন। তবে, নতুন করে কেউ এ পেশায় আসতে চাইছেন না। আজ থেকে ৫-১০ বছর আগেও অনেকে আমার হাত ধরে কাজ শিখেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মন্দাভাবের কারণে কোনো উত্তরসূরি তৈরি হচ্ছে না। দেখুন, দেশের এত বড় একটি শিল্প অথচ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো নেই। প্রতিটি কারিগরই অসম্ভব মেধা দিয়ে কাজ করেন। কারণ, এ পেশায় মেধা ও সৃজনশীলতা না থাকলে টিকে থাকা সম্ভব না।’

দীর্ঘ সময় বসে থাকতে থাকতে কোমর ও মেরুদণ্ডে স্থায়ী ব্যথা বাঁধে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। তারা মাটিতে বসেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে / ছবি- ঢাকা পোস্ট

‘আমিও আমার ছেলেদের এ ব্যবসা ধরতে নিরুৎসাহিত করছি। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় কারিগর খুঁজে পাওয়া যাবে না। ধরুন, আমি মারা গেলে এ দোকানের দায়িত্বভার নেওয়ার কেউ থাকবে না। এভাবেই এক সময় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখা এবং গ্রামাঞ্চলে স্বর্ণশিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে হাল ধরে রাখা স্বর্ণকারেরা হারিয়ে যাবেন।’

সমীর বর্মন নামের জননী জুয়েলারির কারিগর বলেন, আগের তুলনায় অর্ডার কমেছে। বড় বড় দোকান বা শো-রুমগুলোতে হয়তো মানুষের উপস্থিতি আছে। কাজ বেড়েছে। তবে, আমাদের মতো ছোট দোকানের কার্যক্রম কমেছে। লগ্নি যারা বেশি করতে পারেন তারা ব্যবসা করতে পারছেন। আর যারা ছোট পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের জন্য জীবন-যাপন করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আমাদের সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। ব্যাংক লোন কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরাও এ খাতকে সমৃদ্ধ করতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারব। তা না হলে কয়েক বছর পরে গ্রামগঞ্জে সোনার কারিগর খুঁজে পাবেন না।

মফস্বল ও গ্রাম এলাকার কারিগরদের দুরবস্থার সময়ে ভালো নেই শহরের কারিগররাও। কাজের মন্দায় তারাও অনেকে পেশা ছাড়ছেন। রাজধানী ঢাকার আজিমপুর কবরস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার একপাশে রয়েছে অন্তত ৩০টি জুয়েলারি দোকান। তার পাশেই একটি ভবনের নিচতলায় গহনা তৈরির কারখানা। সেখানে কাজ করেন শতাধিক কারিগর

রেডিমেড গহনা কদর কমিয়েছে শহরের কারিগরদেরও

মফস্বল ও গ্রাম এলাকার কারিগরদের দুরবস্থার সময়ে ভালো নেই শহরের কারিগররাও। কাজের মন্দায় তারাও অনেকে পেশা ছাড়ছেন। রাজধানী ঢাকার আজিমপুর কবরস্থান ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার একপাশে রয়েছে অন্তত ৩০টি জুয়েলারি দোকান। তার পাশেই একটি ভবনের নিচতলায় গহনা তৈরির কারখানা। সেখানে কাজ করেন শতাধিক কারিগর।

হাতে তৈরি সোনার গহনার পরিবর্তে এখন রেডিমেড, সিটি গোল্ড (ইমিটেশন গহনা) ও বিকল্প পণ্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে / ছবি- সংগৃহীত

তারাও বলছেন, শহরে গহনার কদর থাকলেও কয়েক বছর ধরে রেডিমেড ও বিদেশি গহনার প্রতি মানুষ ঝুঁকছেন বেশি। ফলে কাজের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমেছে। টান পড়েছে আয়েও। ব্যয়বহুল এ শহরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকা তো দূরের কথা, একা থাকতেও কষ্ট হচ্ছে।

আফিয়া জুয়েলার্সের কারিগর সবুজ মিয়া বলেন, আমাদের এ দোকানে চারজন কারিগর ছিল। সম্প্রতি কাজের অর্ডার কমে যাওয়ায় দুজন কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। এখন দুজন কাজ করছি। আমরা হাতে তৈরি দেশীয় ডিজাইনের গহনা তৈরি করে অভ্যস্ত। কিন্তু বর্তমানে সবাই রেডিমেড গহনার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। ফলে অর্ডারের সংকট চলছে। আমি অন্য কোনো কাজ পারি না। সেজন্য ভালো হোক বা খারাপ হোক এ কাজ করে যাচ্ছি।

শুধু রেডিমেড নয়, সিটি গোল্ড (ইমিটেশন গহনা) ও বিকল্প পণ্যের প্রতিও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে— জানান সুজন সাহা নামের আরেক কারিগর। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সোনার গহনার গ্রাহক সংখ্যা কমার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ফ্যাশন ট্রেন্ড পরিবর্তন এবং বিকল্প পণ্যের জনপ্রিয়তা এর মধ্যে অন্যতম।

এদিকে, ক্রেতা কমে যাওয়ায় হতাশ মহাজনরাও। এ মার্কেটের রাকিব হাসান নামের এক মহাজন বলেন, সোনার দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ফলে অনেক গ্রাহকের জন্য গহনা কেনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী চলা অর্থনৈতিক মন্দা ও মুদ্রাস্ফীতি অনেকের ক্রয়ক্ষমতাকে হ্রাস করেছে। আবার আধুনিক ফ্যাশন ট্রেন্ডে হালকা ও স্বল্পমূল্যের গহনাগুলো বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। সস্তা ধাতু, প্লাস্টিক ও অন্যান্য বিকল্পের প্রতি তরুণীদের আগ্রহ বাড়ছে। আধুনিক জীবনে কর্মব্যস্ততা ও সুবিধাজনক পণ্যগুলোর চাহিদা বাড়ার কারণে তাদের অনেকেই হালকা ও সহজে ব্যবহারযোগ্য গহনা পছন্দ করছেন। এ ছাড়া অনলাইন শপিং ও ই-কমার্সের প্রসারেও অনেক গ্রাহক সোনার গহনা কেনার পরিবর্তে বিকল্প পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকছেন। সবমিলিয়ে আমাদের এ বাজারে টিকে থাকতে হলে আধুনিক মেশিনারিজের ব্যবহার বাড়িয়ে ডিজাইনের মান আরও উন্নত ও আকর্ষণীয় করতে হবে।

 বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোনার গহনা তৈরির কারিগরদের দক্ষতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাজুস / ছবি- সংগৃহীত

মেরুদণ্ড, কোমর আর চোখের সমস্যায় ভোগেন অধিকাংশ কারিগর

শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সোনা ও রুপার গহনার চাহিদা আদিকাল থেকেই। আগে বড় বড় মার্কেট, বাজার কিংবা গঞ্জে জুয়েলারি দোকান থাকলেও এখন অবস্থা পাল্টেছে। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে কারিগরদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাট-বাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায়ও অলংকারের দোকান হয়েছে। এসব দোকান থেকে চাহিদা অনুযায়ী এক আনা থেকে শুরু করে এক ভরি কিংবা এর চেয়েও বেশি পরিমাণের স্বর্ণ বা রুপা দিয়ে গহনা তৈরি করে নিতে পারেন ক্রেতারা। তবে, এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের চাহিদা পূরণে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পালন করেন স্বর্ণকার। একটি গহনা তৈরিতে গভীর মনোযোগ, দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম আর ক্রেতার চাহিদা মাথায় রাখেন তারা।

দেশের মফস্বল এলাকার অধিকাংশ স্বর্ণকারই এখনও সনাতন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তারা মাটিতে মাদুর পেতে নিচের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘ সময় গহনা তৈরির কাজ করেন। ফলে অল্প বয়সে অনেকের মেরুদণ্ড-কোমরে ব্যথা এবং চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার সমস্যায় পড়েন। তবে, এর বিপরীতে তারা নেন না তেমন কোনো চিকিৎসা। চোখের সমস্যা সমাধানে চশমার বন্দোবস্ত হলেও মেরুদণ্ড কিংবা কোমরব্যথার কোনো ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করেন না। জীবন-জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ সময় ধরে এসব সমস্যা নিয়েই জুয়েলারি সামগ্রী তৈরির কাজ করেন তারা। ফলশ্রুতিতে শরীরে বাসা বাঁধে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, ডিস্ক প্রলাপসসহ নানা ব্যাধি।

সচিন্দ্র বণিক নামের এক কারিগর বলেন, জোয়ান বয়সে এক সময় ডিজাইন দেখেই কাজ করে দিতাম। এখন তেমনটা পারি না। চোখের সমস্যার কারণে স্বর্ণের গহনা বানানোই ছেড়ে দিয়েছি। এখন কেবল রুপার গহনা তৈরির কাজ করি। বয়স হয়েছে, দীর্ঘ সময় বসেও থাকতে পারি না। এ পেশাতে এমন কষ্ট আছে। দীর্ঘ সময় বসে থাকতে থাকতে কোমর ও মেরুদণ্ডে স্থায়ী ব্যথা বাঁধে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না। আমরা মাটিতে বসেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।

বিকাশ সাহা নামের আরেক কারিগর বলেন, স্বর্ণকাররা ভালো নেই। কাজের সংখ্যা কম, মজুরিও কম। মানুষের বাসায় কাজ করলে এর চেয়ে বেশি আয় হয়। আমি ১৯৮৯ সালের দিকে বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কাজ শিখি। এখন পর্যন্ত গহনা তৈরি করেই দিনাতিপাত করছি। ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ হাজারের বেশি গহনা তৈরি করেছি। এ কাজ আয়ত্তে আনতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। তবে, এখন কেউ আর এ কাজ শিখতে আগ্রহী নয়। কারণ, মজুরি কম আর শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যেতে হয়। সংসার চালানোর জন্য দীর্ঘসময় কাজ না করেও পারা যায় না। মেরুদণ্ডে ব্যথা আর চোখের সমস্যা হয়নি— এমন কারিগরের সংখ্যা খুবই কম। এখন অনেকেই কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া একজন স্বর্ণকার কতক্ষণ কাজ করবেন বা পরবর্তী সময়ে শারীরিক অসুস্থতা রোধে কী ব্যায়াম করবেন, কী খাবার খাবেন— এমন কোনো নীতিমালা বা নির্দেশনাও নেই। কিন্তু এ বিষয়ে সবার নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সুস্থতা নিশ্চিতে স্বর্ণকারদের সচেতন করার পরামর্শ চিকিৎসকদের

দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করার ফলে হাড়ক্ষয়, কোমর ও মেরুদণ্ডে ব্যথা বা ডিস্ক প্রলাপসের মতো শারীরিক জটিলতা রোধে স্বর্ণকারদের সচেতন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ট্রমা, অর্থোপেডিক, হ্যান্ড ও মাইক্রো সার্জন এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যেহেতু এটি (সোনার গহনা তৈরি) তাদের পেশা, সেজন্য জীবন-জীবিকার তাগিদে এ কাজ তো করতেই হবে। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। কারিগররা যেন দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থেকে কাজ না করেন। কাজের ফাঁকে-ফাঁকে কিংবা কিছু সময় পরপর দাঁড়াতে হবে। হাঁটাচলা করতে হবে। আর পরিশ্রম করলে কিংবা কাজ করলেই ডিস্ক প্রলাপস হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। তবে, সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

স্বর্ণের গহনা কিনলে গ্রাহককে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন— বলছেন সংশ্লিষ্টরা / ছবি- সংগৃহীত 

‘এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দীর্ঘ সময় বসে থেকে কাজ করেন, আবার বাসায় গিয়ে আধশোয়া অবস্থায় ফোন চালান। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিশ্রমের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রামও নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে একেবারে নরম বিছানায় না থেকে শক্ত বিছানায় ঘুমাতে হবে।’

সোনার কারিগরদের জন্য বড় সুখবর দিয়েছে বাজুস

জুয়েলারি শিল্পকে এগিয়ে নিতে এবং সোনার কারিগরদের (স্বর্ণকার) জীবনমানের উন্নয়নে দারুণ সুখবর দিয়েছে দেশের সোনার গহনার ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গহনা তৈরির কারিগরদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে এবং কারিগরি শিক্ষা হিসেবে নবীনদের হাতে-কলমে গহনার আধুনিক ডিজাইন শেখাতে নতুন ইনস্টিটিউট করার জোর কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ কার্যক্রমে বিশ্ব ব্যাংক ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডিএ) সহায়তা করছে।

গত ২৭ জুন বাজুসের কেন্দ্রীয় কমিটির এক্সিকিউটিভ মেম্বার আনোয়ার হোসাইন ঢাকা পোস্টকে এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আজও বৈঠক করেছি। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সোনার গহনা তৈরির কারিগরদের দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য আমরা একটি ইনস্টিটিউট করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। এরই মধ্যে এর কারিকুলামসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও কাজ চলমান। কারিগররা যেন উন্নত ডিজাইনের গহনা তৈরির পারদর্শিতা অর্জন করতে পারেন, বিষয়টি এখানে প্রাধান্য পাবে। সেজন্য আধুনিক মেশিনারিজের ব্যবহার, কারিগরদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাসহ সব বিষয় চিন্তা করে কারিকুলাম তৈরি করা হচ্ছে।

‘শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত যত কারিগর আছেন তাদের আমরা এ ইনস্টিটিউট থেকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আরও যোগ্য করে গড়ে তুলব। এ মুহূর্তে ৮০ শতাংশ অলংকারই বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসছে।  স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশীয় কারিগরদের কাজ কমে গেছে। আগে দেশে ৪০ লাখ কারিগর ছিল। এখন এ সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অবশ্য আমাদের কারিগররাই যদি বিদেশি অলংকারের মতো আধুনিক ডিজাইনের অলংকার তৈরি করতে পারেন তাহলে তো আমাদেরই লাভ। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তারা বিভিন্ন দেশেও কাজের জন্য যেতে পারবে। আমরা এটি নিয়ে অনেক কাজ করছি।’ চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকেই ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির প্রয়োগ চান বাজুস সম্পাদক

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্পের বিকাশে সরকারের বিনিয়োগবান্ধব ও উদার নীতির যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়। গত ২৭ জুন তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের বিকাশের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গহনা তৈরির কাজটি কারিগরি শিক্ষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া শুধুমাত্র এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য আলাদা কারিগরি ইনস্টিটিউট করার চেষ্টাও চলছে। পাশাপাশি বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর স্বর্ণের রিফাইনারি কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি চালু করতে পারলে পুরো জুয়েলারি শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। কারণ, স্বর্ণ তখন সহজলভ্য হবে।

‘দেশে বর্তমানে জুয়েলারি শিল্পের জৌলুস হারিয়ে যাচ্ছে, কথাটি সত্য। কারণ, আমাদের স্বর্ণের উৎপাদন নেই। দেশেও স্বর্ণ-সম্পর্কিত ইন্ডাস্ট্রির ডেভেলপমেন্ট এখনও তেমন  হয়নি। এখন কিছু কিছু হচ্ছে। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য সামনে আমরা আধুনিক মেশিনারিজ মেলা করতে চাচ্ছি। তবে, এ সেক্টরকে আরও সমৃদ্ধ করতে সরকারের উদার ও বিনিয়োগবান্ধব সহযোগিতা প্রয়োজন। যেমন- এখন স্বর্ণের গহনা কিনলে গ্রাহককে ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। গহনা কেনার প্রতি তাদের অনীহা বাড়ছে। ভ্যাটের খড়গ থেকে বাঁচতে অনেক গ্রাহকই বিদেশমুখী হচ্ছেন। আবার এর মধ্যে অনেক লুকোচুরিও হচ্ছে। আমরা চাই, দেশে জুয়েলারি শিল্পের সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারিগর, ব্যবসায়ীসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’

এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, যেকোনো সমস্যার সমাধান কিংবা সিদ্ধান্ত কার্যকরে দীর্ঘসূত্রিতা এবং ডলার সংকটের কারণে স্বর্ণ আমদানি করতে না পারা জুয়েলারি শিল্পের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে— মন্তব্য করেন বাদল চন্দ্র রায়। তা-ই এসব বিষয়ে সরকারের সুনজর প্রত্যাশা করেন তিনি।

আরএইচটি/এমএআর/