প্রতিবারই কোরবানির বর্জ্য অপসারণে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এবারও আগের ধারায় নগরী থেকে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন দুই নগর পিতা। শুধু ঘোষণাই নয়—রীতিমত আল্টিমেটাম দিয়েছেন। কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এছাড়া সবাইকে অবাক করে ৬ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। 

তবে দুই সিটির বাসিন্দারা বলছেন, অবাস্তব বক্তব্য না দিয়ে, সময়মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে দ্রুত বর্জ্য অপসারণ হবে। অতীতে এমন ঘোষণা এলেও বাস্তবে নগরীর অনেক অলি-গলিতে কোরবানির বর্জ্য থেকে গেছে। তাই ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা বর্জ্য অপসারণ শুধু মুখের ঘোষণাতেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে।

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে দুই সিটিতে যেসব প্রস্তুতি

উত্তরে ৬ ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ

ঈদুল আজহায় ৬ ঘণ্টায় কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম। তার ঘোষণার পর কি কি প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি-এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার প্রায় ডিএনসিসি এলাকায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে।  

ডিএনসিসি জানায়, বাসা বাড়ির কোরবানির বর্জ্য নির্দিষ্ট ব্যাগে বাড়ির পাশে রেখে দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে ৯ লাখ ৪০ হাজার পলিব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত আছে ২৬৮০ বস্তা ব্লিচিং পাউডার (২৫ কেজি বস্তা), স্যাভলন-৯০০ ক্যান (প্রতি ক্যান ৫ লিটার), টুকরী-৭০০০টি, ফিনাইল-১২৫০ লিটার।

বর্জ্য অপসারণে ডিএনসিসির কাছে আছে যেসব প্রযুক্তি 

ডিএনসিসিতে আছে ৮৫টি ডাম্প ট্রাক, ২১টি পে-লোডার, ১৮টি পানির গাড়ি, ২টি টায়ার ডোজার, ৫টি স্কিড লোডার, ১৪০টি পিক-আপ, ৪৫টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ১২১টি কম্পোক্টর, ৪৩টি খোলা ট্রাক। এছাড়া ৪৮০টি বিশেষায়িত যানের পাশাপাশি সাম্প্রতি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে ৮টি আধুনিক কম্প্যাক্টর ট্রাক ও ৩২টি ডাম্প ট্রাক। 

ডিএনসিসির মুখপাত্র মকবুল হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্জ্য অপসরণে এবার ডিএনসিসির ২৮টি ওয়ার্ডে নিজস্ব ২৩৯৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করবেন। এছাড়া বাকি ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৩২৩ জন কাজ করবেন। এছাড়া ভ্যান সার্ভিসের কর্মী থাকবেন ৪২০০ জন, পিক-আপ ভ্যানে নিয়োজিত কর্মী থাকবেন ৪২০ জন। সব মিলিয়ে এবার কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকা উত্তরে প্রায় ১০ হাজার কর্মী নিয়োজিত থাকবেন।

তিনি বলেন, গত কোরবানিতে তিন দিনে মোট ৩৯৩১ ট্রিপ বর্জ্য অপসারণ করা হয়। যার ওজন ছিল ১৯৬৪৪ টন। এবার বর্জ্য আরও বাড়বে। ঢাকা উত্তরকে সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধহীন রাখতে যা করার তাই করা হয়েছে। বর্জ্য দ্রুত অপসারণে নগর ভবনে অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে, তারা সার্বক্ষণিক কাজ করবেন।

ঢাকা দক্ষিণে ২৪ ঘণ্টার চ্যালেঞ্জ

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস কোরবানির বর্জ্য অপসরণে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। এছাড়া পশুর হাটগুলোর বর্জ্য ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরিষ্কার করার নির্দেশনাও দিয়েছেন।

ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের জানিয়েছেন, এবার কোবানির বর্জ্য অপসারণে প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করবেন। এর মধ্যে নিজস্ব জনবল ৪৯৯৭ জন, পিসিএসপির ৪৫০০ জন (প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন করে)।

তিনি জানান, দক্ষিণ সিটিতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার, ২২২ গ্যালন স্যাভলন (প্রতি গ্যালনে ৫ লিটার করে)। এছাড়াও ৭৫টি ওয়ার্ডে ১৫০টি মিনি ট্রাক নিয়োজিত থাকবে। সব মিলিয়ে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে সর্বমোট ৫৬০টি যানবাহন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
 
বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির কাছে আছে যেসব প্রযুক্তি 

কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির কাছে রয়েছে ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ৪৬টি কম্পেক্টর, ৪৭টি কন্টেইনার ক্যারিয়ার, ২৪টি পে-লোডার, ১২টি টায়ার ডোজার, স্কিড লোডার ৮টি, ব্যাক হো লোডার ৪টি, পানির গাড়ি ৯টি, বুলডোজার ২টি, স্কেভেটর ৮টি, গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার ৩টি, ফর্ক লিফট ২টি, হাইড্রলিক ক্রেন ২টি, লং ট্রলি ২টি, প্রাইম মুভার ২টি, রেকার ১টি এবং জেড অ্যান্ড সাকার ১টি।

ডিএসসিসির মুখপাত্র আবু নাছের আরও জানিয়েছেন, কোরবানির হাট ও পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকিতে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ করা হয়েছে। কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাসময়ে অপসারণ না হলে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এই (০১৭০৯৯০০৮৮৮ ও ০২২২৩৩৮৬০১৪) নম্বরে নগরবাসীকে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বর্জ্য অপসরণে দুই সিটির আল্টিমেটাম নিয়ে যা বলছেন নগরবাসী

আগেরবারও বর্জ্য অপসরণে এমন আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে অনেক অলি-গলিতে দুতিন দিন পর্যন্ত বর্জ্য ছিল বলে দাবি করেছেন রাজধানীর গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মকিদুর রহমান। 

তিনি বলেন, গত বছর ঢাকা উত্তর সিটির এই অংশে কোরবানির দিনই বর্জ্য সরানোর কথা থাকলেও পরের ‍দু-তিন দিন পর্যন্ত অলিগলির বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য ছিল। এতে মারাত্মক দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছিল। সেবারও তারা ৮ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসরণের ঘোষণা দিয়েছিল। এবার ৬ ঘণ্টার ঘোষণা দিয়েছে কিন্তু বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন কাজ। এবার তাদের ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবায়নের সঙ্গে কতটা মিল থাকে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি।

রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বসাবো এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম মীর বলেন, প্রতিবারই তারা এমন ঘোষণা দেয়। গতবারও চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল কিন্তু পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অলি-গলিতে ৭২ ঘণ্টার পরও বর্জ্য ছিল। এবার আবার ঘোষণা দিয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবে। কিন্তু বাস্তবায়ন করা অতটা সহজ হবে না। আমরা চাই কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম যেন শুধু ঘোষণাতে সীমাবদ্ধ না থাকে। 

এএসএস/এমএসএ