দেশের পোশাকশিল্পের নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘সারা’ লাইফস্টাইল। এটি রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত স্নোটেক্স গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। যাত্রার শুরু থেকেই সারা লাইফস্টাইল গুণগতমান ধরে রেখে ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে পণ্য দিয়ে আসছে। দামের বিচারে অন্য ব্র্যান্ডের তুলনায় সারা বরাবরই ব্যতিক্রমী। পণ্যের দাম সবসময় গ্রাহকসুলভ হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে সারা ভিন্নভাবে পরিচিত।

সময়োপযোগী ব্যতিক্রম ডিজাইন, ফ্যাশন, গুণগতমান, স্বাচ্ছন্দ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের পোশাকের চমৎকার সমন্বয় করে থাকে দেশীয় ব্র্যান্ড ‘সারা’ ও তার সাব ব্র‍্যান্ড ‘ঢেউ’।

আভিজাত্যের ছোঁয়ায় সারা লাইফস্টাইল প্রতি উৎসব আয়োজন নিয়ে ক্রেতার কাছে হাজির হয়। বরাবরের মতোই বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও মোটিফ-প্যাটার্ন আর স্টাইলে ভিন্নতা সারার পোশাককে করেছে অন্যদের চেয়ে আলাদা। যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে সারার পোশাকের কাটিং ও প্যাটার্নে থাকে বৈচিত্র্যতা।

নামি এই ব্র্যান্ড এবারের ঈদে সব ধরনের পোশাকে ৩০ শতাংশ মূল্যহ্রাস অফার দিচ্ছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘সারা’ লাইফস্টাইল ও ‘ঢেউ’র এমন অফার ক্রেতাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, বিষয়টি স্বীকার করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।

দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিজেদের উদ্ভাবন, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এবং সর্বোচ্চ গুণগতমান বজায় রেখে বিক্রয় মূল্যকে আরও অধিক ক্রেতাসুলভ করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে সারা লাইফস্টাইল এ অফার দিচ্ছে। আরামদায়ক কাপড়ে তৈরি ক্যাজুয়াল কিংবা ফরমাল পোশাকসহ নিত্যদিনের সব পোশাক থাকছে অভাবনীয় ৩০ শতাংশ মূল্যহ্রাসের তালিকায়। সারা লাইফস্টাইলের সব আউটলেট ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস থেকে কেনা যাচ্ছে এসব পোশাক।

প্রতিষ্ঠানটির এমন সব অভাবনীয় অফার, অল্প সময়েই ক্রেতাদের আস্থা অর্জনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের কথা হয় ‘সারা’ লাইফস্টাইল পরিচালক শরীফুন রেবার সঙ্গে। আলাপকালে উঠে আসে সারার এত সাড়া পাওয়ার পেছনের কারণগুলো, আগামীর পরিকল্পনাসহ নানান দিক। ‘সারা’ লাইফস্টাইলের পরিচালক শরীফুন রেবার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত

ঢাকা পোস্ট : ‘সারা’ কেমন সাড়া পাচ্ছে?

শরীফুন রেবা : ‘সারা’ অন্যরকম সাড়া পাচ্ছে। সত্যি কথা বলতে সারা ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে অল্প সময়ের মধ্যেই। আমরা কাস্টমারদের খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। প্রতি উৎসব আয়োজনেই আমরা ক্রেতাদের জন্য নতুনত্ব আনার চেষ্টা করি। উৎসব আয়োজনকে মাথায় রেখে সেভাবে প্রতিটা জিনিসের ডিজাইন করা হয়। এসব ভিন্নতার কারণে সারা কাস্টমারদের খুব সাড়া পেয়ে আসছে।

তিনি বলেন, সারার পণ্যে কাস্টমারদের সবসময় আলাদা রকমের চাহিদা রয়েছে। ফলে কাস্টমারদের চাহিদার কথা আমরা মাথায় রেখে পণ্যে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কাস্টমারদের অভূতপূর্ব সাড়া পাই বলেই আমরা বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে প্রাধান্য দিয়ে সেই থিম নিয়ে কাজ করি।

ঢাকা পোস্ট : গুণগতমান ও তুলনামূলক কম দামের মেলবন্ধন কীভাবে সম্ভব করতে পারে ‘সারা’?

শরীফুন রেবা : সারার আসলে লক্ষ্যই এটা ছিল যে আমরা পণ্যের কোয়ালিটি নিশ্চিত করব। সেইসঙ্গে কাস্টমারদের কাছে তুলনামূলক কম দামে কীভাবে পৌঁছাতে পারি এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সারার যাত্রা শুরু হয়। মূল বিষয়টা হলো ক্রেতাকে আমরা কোয়ালিটিফুল একটি প্রোডাক্ট দেব, সেইসঙ্গে এটার দাম যতটা কম রাখা যায় সেই চেষ্টাই আমাদের আজ পর্যন্ত চলছে। আর এই কাজটা করব বলেই সারার যাত্রা শুরু করা।

ঢাকা পোস্ট : এবার ঈদে সারার আয়োজন কেমন, সে সম্পর্কে একটু জানতে চাই

শরীফুন রেবা : এবার ঈদে আমাদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে সারা, ঢেউয়ের সব প্রোডাক্টে ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। সারার যতগুলো আউটলেট আছে যতগুলো প্রোডাক্ট আছে সব প্রোডাক্টে এই ৩০ শতাংশ ছাড় চলবে। ঈদ উপলক্ষ্যে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অফার। সারার গুণগত মানসম্পন্ন সব প্রোডাক্টের তুলনামূলক দাম কম। তারপরও আমরা কাস্টমারদের কথা বিবেচনা করে, আমাদের প্রতি কাস্টমারদের যে প্রত্যাশা সেটাকে মাথায় রেখে আমরা প্রতিটা প্রোডাক্টে ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। এটা একটা বিশাল বড় অফার।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আমাদের প্রচুর পরিমাণে নতুন প্রোডাক্ট এসেছে, এসব নতুন প্রোডাক্টেও যেমন ৩০ শতাংশ ছাড় চলমান রয়েছে, তেমনি আগের সব প্রোডাক্টেও ৩০ শতাংশ ছাড় চলছে। আমাদের মূল লক্ষ্যই হলো ক্রেতারা যেন আমাদের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়। শুধু ক্রেতাদের কথা বিবেচনা করেই এবং সারার যে লক্ষ্য– কম দামে গুণগতমানের প্রোডাক্ট কাস্টমারদের হাতে পৌঁছে দেওয়া, সেই লক্ষ্যেই এই ৩০ শতাংশ ছাড়ের অফার আমাদের ঈদ আয়োজনে।

ঢাকা পোস্ট : প্রতি উৎসব আয়োজনেই সারায় নতুন আয়োজন থাকে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ডিজাইনে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে সারা?

শরীফুন রেবা : ফ্যাশনের ক্ষেত্রে যখন যেই উৎসব আয়োজন থাকে, সেই সময়টার ট্রেন্ড আমরা ধরতে চেষ্টা করি। সেই ট্রেন্ডকে কাজে লাগিয়ে পোশাক বা অন্যান্য প্রোডাক্টের নিত্যনতুন ডিজাইন আমরা নিয়ে আসি। ফ্যাশন ট্রেন্ড প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হয়, আমরা সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সারার কাস্টমারদের সবচেয়ে নতুন, সবচেয়ে আধুনিক ও সবচেয়ে কম দামে প্রোডাক্ট হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। এটfই আমাদের থিম, এটfই আমাদের ব্যবসায়িক কৌশল। পোশাকের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ট্রেন্ড, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ট্রেন্ড, আমাদের নিজস্ব ট্রেন্ড সব বিষয়কে মাথায় রেখে নিত্যনতুন আধুনিক পোশাকগুলো প্রোভাইড করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

ঢাকা পোস্ট : খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা একটি জায়গায় পৌঁছেছে, কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করেছে। সারার শুরুটা কেমন ছিল, সে বিষয়ে একটু জানতে চাই।

শরীফুন রেবা : ২৫ বছর ধরে আমাদের ব্যবসা, পোশাক নিয়েই মূলত আমাদের ব্যবসা, আমাদের প্রতিষ্ঠান। আমাদের মূল প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত পোশাক দেশের বাইরে যাচ্ছে। একসময় আমরা ভাবলাম যে কোয়ালিটি সম্পন্ন কাজ করছি, আমাদের পোশাকগুলো বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। তাহলে আমরা তো নিজেদের দেশের জন্য সর্বোচ্চ ভালো মানের পোশাকগুলো ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রেখে কাজ করতে পারি। সে লক্ষ্য নিয়েই ২০১৮ সালে সারার যাত্রা শুরু হয়। আমাদের বাজারে আসার বিষয়টি ছিল কীভাবে আমরা কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিসকে তুলনামূলক কম দামে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিতে পারি এই লক্ষ্য নিয়েই।

ঢাকা পোস্ট : এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে কাস্টমারদের এত কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে সারা?

শরীফুন রেবা : সারার মূল লক্ষ্যই হলো কোয়ালিটি সম্পন্ন প্রোডাক্ট কম দামে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এ বিষয়টি সারাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে অল্প সময়ের মধ্যে। সাধারণ ক্রেতারা ভাবছে যে কোয়ালিটিও আছে প্রোডাক্টের দাম তুলনামূলক কম, মূলত এই কারণে তারা সারাকে বেছে নিয়েছেন। কাস্টমারদের খুব কাছাকাছি চলে যেতে এই মূলমন্ত্রই আমাদের সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। কোয়ালিটি সম্পন্ন প্রোডাক্ট তুলনামূলক কম দামে পাওয়ার যে আস্থা কাস্টমারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, এই একটি মাত্র কারণেই সারা এগিয়ে গেছে। আমরা কখনোই কোয়ালিটিতে কোনো কম্প্রোমাইজ করিনি, পাশাপাশি তুলনামূলক কম দামে কাস্টমারদের হাতে প্রোডাক্টকে পৌঁছে দিতে চেয়েছি।

ঢাকা পোস্ট : আগামীতে সারা নিয়ে আর কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?

শরীফুন রেবা : সারাকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বর্তমানে আমাদের সারার ১৪টি স্টোর রয়েছে, তার মধ্যে ঢাকাতে ৮টি আর ঢাকার বাইরে রয়েছে ৬টি। এ বছরের মধ্যে আরও ৪/৫টি স্টোর আমরা ওপেন করব, সে অনুযায়ী আমাদের কাজ চলছে। চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার ভেতরে আরও বেশ কয়েকটি, ঢাকার বাইরেও আরও বেশ কিছু স্টোর এই মুহূর্তে আমাদের দরকার। এটা সরাসরি কাস্টমারদের চাহিদা। তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা স্টোরগুলো নতুন করে ওপেন করব। এগুলোর কাজ করার পর আমাদের লক্ষ্য আছে, আমরা স্বপ্ন দেখি, সারাকে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখতে চাই।

ঢাকা পোস্ট : সারার সাব ব্যান্ড ‘ঢেউ’ সম্পর্কে এবার একটু জানতে চাই।

শরীফুন রেবা : পোশাকের ব্র্যান্ড হিসেবে দেশের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে সারা লাইফস্টাইল। সারার সাব ব্র্যান্ড হিসেবে এখন নতুন করে সাড়া ফেলছে ‘ঢেউ’। যারা কেবল ওয়েস্টার্ন পোশাক বিক্রি করছে। এরই মধ্যে নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঢেউ ফ্যাশন। সাধ্যের মধ্যে সেরা মানের ওয়েস্টার্ন পোশাক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা।

তিনি বলেন, এখনকার মানুষ খুব বেশি ফ্যাশন সচেতন। আমাদের দেশে একটি শ্রেণির মানুষ আছে যারা ওয়েস্টার্ন ফ্যাশন খুব পছন্দ করেন। মূলত তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ঢেউ বাজারে এসেছে। ফ্যাশন যারা পছন্দ করেন, সংগ্রহ করতে চান তারা আমাদের ঢেউয়ের ক্রেতা। বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশন ঢেউয়ের প্রতি খুব বেশি ঝুঁকেছে। তাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় যে একদম আধুনিক, ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনেবল ড্রেসগুলো তারা সবচেয়ে কম দামে ঢেউয়ে পেয়ে যাচ্ছে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঢেউও বিশেষ আস্থা অর্জন করে নিয়েছে। তবে নানা ভেরিয়েশন থাকায় সব বয়সী ক্রেতাই এখন ঢেউ’র পণ্য কিনছে।

ঢাকা পোস্ট : সারা-ঢেউকে আগামীতে কোথায় দেখতে চান?

শরীফুন রেবা : আমরা দেখতে চাই সারা ও ঢেউ আন্তর্জাতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সবখানে ফ্যাশনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, ক্রেতারা আরও বেশি আস্থাশীল হয়ে উঠেছে এই ব্র্যান্ডে। এর আগে আমরা আরও কাজ করতে চাই, দেশের সব প্রান্তে যেন সারার আউটলেট থাকে, কাস্টমারদের দোরগোড়ায় যেন পৌঁছে যায় সারা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা আগে প্রস্তুত হতে চাই।

ঢাকা পোস্ট : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

শরীফুন রেবা : ঢাকা পোস্টকেও অনেক ধন্যবাদ।

এএসএস/এসএসএইচ