#মানসম্মত জবাবের অভাব
#প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাব
#যথাযথ গ্রাউন্ডস উপস্থাপনে ব্যর্থতা
#সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা

উচ্চ আদালতে সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলায় বারবার হেরে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও অধিদপ্তর। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ১৭১টি মামলায় হেরেছে সরকার। এভাবে প্রতিবছর শত শত মামলায় হেরে যাচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।

সম্প্রতি সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পেশ করা এক প্রতিবেদনে মামলায় হেরে যাওয়ার এ তথ্য উঠে আসে।

মামলায় সরকারের বিপক্ষে রায় বা আদেশ হলে তার কারণ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই কমিটির আগের সভায় (৫ম) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের আলোকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন পাঠায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো প্রতিবেদনে মামলায় সরকারের পরাজয়ের কারণ উল্লেখ করা হয়।

সরকারি অফিসগুলোতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী আইন শাখায় কাজ করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা আইন বিষয়ে ততটা দক্ষ থাকেন না

প্রতিবেদনগুলোতে সরকার পক্ষের পরাজয়ের কারণ হিসেবে মানসম্মত জবাব না হওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা যথাযথ গ্রাউন্ডস উপস্থাপনে ব্যর্থতা এবং তামাদি বারিত (নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ায় খারিজ) হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারি অফিসগুলোতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী আইন শাখায় কাজ করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা আইন বিষয়ে ততটা দক্ষ থাকেন না।

অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, সরকারের পক্ষে নিষ্পত্তি হওয়া আদেশও অনেক সময় আইন বিভাগের কর্মীরা বুঝতে পারেন না। যে কারণে অপ্রয়োজনীয় আপিল হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, সরকারের বিপক্ষে রায় হওয়া মামলাগুলো কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বা দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হলে সেই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি মামলায় এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

১৭১ মামলায় হারার সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটনের নির্দেশ 

সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়কালে সরকারের বিপক্ষে রায় হওয়া ১৭১টি মামলার কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে হারার সুনির্দিষ্ট কারণ উদঘাটন করতে হবে। তামাদি বারিত হয়ে মামলা খারিজ হওয়া বা পরাজয়ের ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর গাফিলতি রয়েছে কি না তা শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারের বিপক্ষে রায় হওয়া মামলাগুলো কেস-টু-কেস পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি বা দায়িত্বহীনতা পরিলক্ষিত হলে সেই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কয়েকটি মামলায় এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

সভায় বলা হয়, সরকারের বিপক্ষে রায় হওয়া মামলায় যথাযথ গ্রাউন্ড বা যৌক্তিকতাসহ যথাসময়ে আপিল দায়ের নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবস্থা নেওয়া সম্পর্কে নিয়মিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন পাঠাতেও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

এছাড়া সরকারি মামলা পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ ও বেসরকারি আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে আইন ও বিচার বিভাগ। উচ্চ আদালতে চলমান মামলায় সরকারি স্বার্থ রক্ষার্থে করণীয় বিষয়ে কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখার বিষয়ে সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

গতি আনতে চালু হচ্ছে অনলাইন সিস্টেম

সরকার মামলায় হেরে যাচ্ছে, এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে মামলার তারিখ আমরা জানতে পারি না। আবার মামলার তারিখ হলেও আমাদের পক্ষ থেকে হাজির হতে পারি না। এ কাজ করার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে

উচ্চ আদালতে চলমান সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলার তথ্য সংরক্ষণ ও সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যক্রমে আরও বেশি দক্ষতা ও গতি আনতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে স্মার্ট কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নামে একটি অনলাইনভিত্তিক সিস্টেমের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারের সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর-সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এ সিস্টেম ব্যবহার করবে। 

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার মামলায় হেরে যাচ্ছে, এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে মামলার তারিখ আমরা জানতে পারি না। আবার মামলার তারিখ হলেও আমাদের পক্ষ থেকে হাজির হতে পারি না। এ কাজ করার জন্য একটি বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এমনভাবে আমরা সফটওয়্যার তৈরি করেছি, মামলার তারিখ হলেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে মেসেজ চলে যাবে। এখন যদি মন্ত্রণালয় হাজির না হয়, তাহলে কিন্তু আমরা ধরতে পারব। সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা পুরো কাজটিকে সার্বিকভাবে মনিটর করব। 

মামলা জট নিরসনে সরকার কাজ করছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি কমিটি আছে। এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। 

এসএইচআর/জেডএস