ছবি - সর্পদংশনে মৃত্যু আতঙ্ক / ইনফোগ্রাফ / ঢাকা পোস্ট

বর্ষাকাল এলেই দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে ওঠে সাপের কামড়। ফলে প্রতিনিয়ত সারা দেশে বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় চার লাখ তিন হাজার মানুষকে সাপে কামড় দেয় এবং তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫১১ জন মারা যান। এ ছাড়া সাপের কামড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৯ হাজার গৃহপালিত পশু আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে আড়াই হাজারের মতো পশু মারা যায়।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর এলাকায় বিষধর রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরে বৃহত্তর রাজশাহী, রাজবাড়ী ও বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপারের কামড়ে কমপক্ষে ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় সাপের কামড়ে গত দেড় মাসে অন্তত তিনজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকরা ক্ষেত থেকে ফসল তুলতে ভয় পাচ্ছেন।

গত দেড় মাসে অন্তত তিনজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে / ঢাকা পোস্ট

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতি বছর সাপের কামড়ে যাদের মৃত্যু হয়, তাদের প্রায় অধিকাংশের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া বা ওঝা-কবিরাজের কাছে গিয়ে সময়ক্ষেপণ এবং নিকটস্থ হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকার কারণে মৃত্যু হয়। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, দেশে সাপের কামড় এবং মৃত্যুর উচ্চ প্রকোপহার সত্ত্বেও স্থানীয়ভাবে কোনো অ্যান্টিভেনম উৎপাদিত হয় না।

৬৫ ভাগ মানুষ শুরুতে ওঝার শরণাপন্ন হন

২০২১-২০২২ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাপের কামড়ের সব ঘটনার মধ্যে এক চতুর্থাংশ বিষাক্ত, যাদের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ শারীরিক ও এক দশমিক ৯ শতাংশ মানসিক অক্ষমতা দেখা যায়। এমনকি সাপের কামড়ের মধ্যে ৯৫ শতাংশ ভুক্তভোগী গ্রামীণ অঞ্চলের এবং নারীদের তুলনায় এক দশমিক চার শতাংশের বেশি পুরুষ সাপের কামড়ের ঝুঁকিতে থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ এলাকায় সাপের কামড়ের ঘটনা তুলনামূলক বেশি। ২৫-৫৫ বছর বয়সী পুরুষেরা বাড়ির আশপাশে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের ভেতরে সবচেয়ে বেশি সর্পদংশনের শিকার হন। শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ দংশনের পর দংশিত অঙ্গে গিট দেন এবং ৬৫ ভাগ মানুষ প্রথমে ওঝা বা প্রচলিত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া সাপের কামড়ে প্রতি হাজারে দুজন মানুষের অঙ্গহানি ঘটে এবং ২-২৩ ভাগ মানুষ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতায় ভোগেন। সর্পদংশনের পর শতকরা প্রায় ১০ ভাগ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন।

দংশনের পর ৬৫ ভাগ মানুষ প্রথমে ওঝা বা প্রচলিত চিকিৎসকের কাছে যান / ঢাকা পোস্ট

প্রাণ বাঁচানো অ্যান্টিভেনম কতটা সহজলভ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাভুক্ত নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিসভুক্ত (উপেক্ষিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগসমূহ) রোগের সংখ্যা ২০টি। তবে বাংলাদেশে ৭টি রোগ প্রধান নেগলেক্টেড হিসেবে বিদ্যমান আছে, যার মধ্যে সর্পদংশন অন্যতম।

সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর বা বিষ নিষ্ক্রিয় করতে পারে এমন উপাদানকে অ্যান্টিভেনম বলা হয়। এই অ্যান্টিভেনম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগের (অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ) তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশে সাপের কামড়ের বিষয়টি এখনো অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা।

চিকিৎসকদের মতে, যেকোনো বিষধর সাপ কাটার পর অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ জরুরি। অন্যথায় রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। রোগীর শরীরে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ সবচেয়ে জরুরি হলেও বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এখনো অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত দুইটি ডোজ অ্যান্টিভেনম দিয়ে রাখা হয়। এরপরও প্রত্যেক জেলা সিভিল সার্জনকে আরও পাঁচটি ডোজ অতিরিক্ত দেওয়া থাকে। তবে সম্প্রতি রাজশাহী ও রাজবাড়ী জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম না থাকায় রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করার ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণে রোগীদের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।

উচ্চ প্রকোপ সত্ত্বেও স্থানীয়ভাবে তৈরি হয় না অ্যান্টিভেনম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অ্যান্টিভেনমকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ বললেও বাংলাদেশ এখনো নিজেদের সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম বানাতে পারছে না। বিষয়টিকে দেশের জন্য ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভারতে যেসব সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সাপের পুরোপুরি মিল নেই। অথচ বছরের পর বছর ধরে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়ে বাংলাদেশের সাপের কামড়ের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে তা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। আর অন্য দেশের অ্যান্টিভেনম এই দেশে শতভাগ কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ, একেক দেশের সাপের প্রকৃতি একেক রকম।

দংশনের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে নিষ্ক্রিয় করে / ঢাকা পোস্ট

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, সাপের কামড় বা দংশনের পরে দ্রুত অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দিলে অ্যান্টিবডিগুলি বিষকে নিষ্ক্রিয় করে। যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেঁচে যায়। গোখরো সাপের দংশনের গড় ৮ ঘণ্টা পর, কেউটে সাপের দংশনের গড় ১৮ ঘণ্টা পর ও চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপের দংশনের গড় ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন পর রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সময়সীমার মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা জরুরি।

‘শ্রেণি বৈষম্যে’ গুরুত্ব পাচ্ছে না চিকিৎসা, লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ অভিযোগ করে বলেন, সাপের কামড়ে প্রতি বছর যদি দেশে সাড়ে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, তাহলে ভাবুন তো পাঁচ বা ১০ বছরে মৃতের সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায়, গত ৫০ বছরে দেশে সাপের কামড়ে অন্তত কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যদিও একটা মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়।

তিনি বলেন, এই যে এতগুলো মানুষ মারা গিয়েছে এবং যাচ্ছে, এই মানুষগুলো কারা? সাধারণ অর্থে যদি আমরা দেখি এ মানুষগুলোর পরিচয় হলো তারা দরিদ্র পরিবারের লোক। এরা কৃষক প্রজাতির মানুষ, আমাদের মতো এত সুন্দর করে তারা কথা বলতে পারে না, বড় বড় মিটিং সেমিনারে আসতে পারে না। আর এসব কারণে সাপের কামড়ের চিকিৎসা নিয়ে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এই মারা যাওয়া মানুষগুলো হলো গ্রামের মানুষ। আর গ্রামের মানুষগুলোর হাসপাতাল হচ্ছে উপজেলা হাসপাতাল, যেখানে ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা মেলে না।

এম এ ফয়েজ বলেন, সর্পদংশনের সমস্যাটা বেশি দেখা যায় মূলত গ্রামেই। যে কারণে গ্রামেই এর চিকিৎসা থাকাটা বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসা মানে শুধু অ্যান্টিভেনম না। এ ছাড়া আরও অনেক আনুষঙ্গিক চিকিৎসা আছে। আর এসব আনুষঙ্গিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্যও এক্সপার্ট চিকিৎসক প্রয়োজন। এজন্য আমি মনে করি ওইসব চিকিৎসকদের জন্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ খুব জরুরি।

মূলত গ্রামে সর্পদংশনের সমস্যাটা বেশি দেখা যায় / সংগৃহীত

এম এ ফয়েজ আরও বলেন, সাপে কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো চিকিৎসার আওতায় আসা। এককথায় সবার আগে হাসপাতালে আসতে হবে। এজন্য ব্যাপকভাবে সামাজিক আন্দোলন তৈরি করা দরকার।

সর্পদংশনে কোনো মৃত্যু হয়নি : রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় সাপের কামড়ে গত দেড় মাসে অন্তত তিনজন কৃষকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও জেলা সিভিল সার্জন সেগুলোর স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তার দাবি, এই রোগীগুলোর মৃত্যু হয়েছে অন্য জেলার হাসপাতালে। তাই রাজবাড়ীতে সাপের দংশনে কোনো মৃত্যু নেই।

সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতে এখন পর্যন্ত সাপের কামড়ে কারো মৃত্যু হয়নি। পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে, কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটি উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া আছে, অ্যান্টিভেনম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন তারা সংগ্রহ করে নেয়। কিছুদিন আগে একজন সাপের কামড় নিয়ে ভর্তি হয়েছিল, তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন।

উপজেলায় অ্যান্টিভেনম না থাকায় রোগীদের অন্য হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অ্যান্টিভেনম না থাকলে কেন রোগীকে রেফার করে দিতে হবে? এক উপজেলায় শেষ হতে পারে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই তো পার্শ্ববর্তী অন্য উপজেলা থেকে সেটি সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। এটা তো কোনো কঠিন কাজ নয়। যদি সেখানেও না পাওয়া যায় আমাদের জানালে আমরা প্রয়োজনে ঢাকা থেকে নিয়ে আসব।

চাওয়া হলেও অনেকে হাসপাতাল অ্যান্টিভেনমের চাহিদা দেয় না : রোবেদ আমিন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে চাহিদার বিষয়ে আহ্বান করা হলেও অসংখ্য হাসপাতাল থেকে অ্যান্টিভেনম চাওয়া হয় না। এমনটাই দাবি করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। তিনি বলেন, হাতেগোনা কিছু হাসপাতাল থেকে চাহিদা এলেও অসংখ্য হাসপাতাল থেকে কোনো তালিকা পাওয়া যায় না।

তিনি বলেন, কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যদি আমাদের ডিমান্ড না দেয়, তাহলে তো আমরা বলতে পারছি না সেখানে সাপের কামড় আছে কি-না। এগুলো অনেক দামি ওষুধ, এক একটা ডোজ দিতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। এখন এগুলো আমরা গণহারে প্রত্যেক উপজেলায় দিয়ে রাখলাম, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার না হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেল, সেটা তো আমরা হতে দিতে পারি না।

রোবেদ আমিন বলেন, আমরা পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম কিনে রেখেছি এবং সবজায়গায় সাপ্লাই দেওয়া আছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমরা চাহিদা চেয়েছি, ইতিমধ্যে অনেক হাসপাতাল তাদের চাহিদা দিয়েছে আবার অনেকে দেয়নি, সে অনুযায়ী আমরা পাঠিয়েও দিচ্ছি। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যান্টিভেনমের অন্তত দুইটি ডোজ আমরা রেখে দিয়েছি। সেই সঙ্গে সিভিল সার্জনকেও আরও ৫টি ডোজ দেওয়া আছে, হঠাৎ যদি কোন উপজেলায় প্রয়োজন হয়, তাহলে সিভিল সার্জন অফিস থেকে সেটি সংগ্রহ করা যাবে।

ভারতের অ্যান্টিভেনম বাংলাদেশে খুব বেশি কাজ নাও করতে পারে

অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, বাংলাদেশে একটি অ্যান্টিভেনমই আছে, যেটি আমরা ভারত থেকে আমদানি করি। এই অ্যান্টিভেনমটি রাসেলস ভাইপারসহ চার প্রজাতির সাপের বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে একটি বিষয় হলো এই অ্যান্টিভেনমগুলো তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়ান সাপের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে এটি খুব বেশি কাজ নাও করতে পারে। তারপরও আমরা ক্রসচেকের মাধ্যমে দেখি, যেগুলো টুকটাক কাজ করে সেগুলো আমরা নিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে যাদেরকে দেওয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রেই এই অ্যান্টিভেনমগুলো ঠিকঠাক কাজ করতে দেখি।

চাহিদা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা ভারত থেকে ২০ হাজার ভায়াল অ্যান্টিভেনম কিনে থাকি, ১০ হাজারের মতো ভায়াল দেওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও বলেছি। এগুলো আপাতত আমাদের সঞ্চয়, এগুলো আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু এটা আমরা তৈরি করি না, আমাদের কোনো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিও তৈরি করে না, সেহেতু চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেলে তো হুটহাট একটা সংকট তৈরি হতেই পারে।

সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভেনম রিসার্চ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে / ঢাকা পোস্ট

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা নিজেরা অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন যাচাই-বাছাই শেষে ইডিসিএলে (অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড) একটা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এখন বিষয়টা পুরোপুরি তাদের উপর নির্ভর করছে।

অ্যান্টিভেনম তৈরি ও গবেষণা জোরদারের তাগিদ 

বাংলাদেশ টক্সিকোলজি সোসাইটির সভাপতি এম এ ফয়েজ বলেন, আমরা বলে থাকি দেশে সব ধরনের চিকিৎসার ওষুধ আমরা নিজেরাই তৈরি করি। কথাটা আসলে কতটুকু সত্য, সেটি সাপের অ্যান্টিভেনম খুঁজতে গেলেই বোঝা যায়। অথচ এই অ্যান্টিভেনমটিও একটি অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগের মধ্যে পড়ে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য ১৯৮৫ সালের দিকে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ফরিদা হক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তখন সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। এরপর আর সেরকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে এখন আবার সরকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ভেনম রিসার্চ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে সাপের বিষ সংরক্ষণের একটা স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।

বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক আরও বলেন, নতুন এই প্রযুক্তি চালু করা গেলে শুধু অ্যান্টিভেনম তৈরিই নয়, যে অ্যান্টিভেনমগুলো বাইরে থেকে আনি, সেগুলো আসলে সাপের বিষ কতটা নির্বিষ করতে পারে, সেটাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার কথা রয়েছে। যত দ্রুতই বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিয়ে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যায়, ততই আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

টিআই/এমজে