২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। জারি করা হয়েছে ‘মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪’। নির্দেশিকায় মোটরসাইকেলের গতি নির্ধারণের পাশাপাশি কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মত থাকলেও রাজধানীকেন্দ্রিক নেওয়া বিশেষ একটি উদ্যোগের কথা সবাই প্রায় ভুলেই গেছেন। সেটি হলো ঢাকার রাস্তায় ‘বিশেষ সাইকেল লেন’ চালু।

সড়ক-মহাসড়কে পৃথক লেন নির্ধারণ না করে সম্প্রতি সরকার মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়ে উঠেছে। নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সড়কভেদে বাইকের গতি। যেমন, ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সিটিতে গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় মাত্র ৩০ কিলোমিটার। আর এক্সপ্রেসওয়েতে নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এমন নির্দেশনায় ভিন্ন মত পোষণ করছেন বাইকাররা। তারা বলছেন, একই সড়কে আলাদা লেন ছাড়া বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। রিকশা-ভ্যান, বাইসাইকেল চলে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে। সেখানে ৩০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল চালানো অসম্ভব, এটি বিজ্ঞানসম্মতও নয়

দুটি সিদ্ধান্তই অযৌক্তিক হয়েছে দাবি করে ইতোমধ্যে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাইকাররা। তারা বলছেন, একই সড়কে আলাদা লেন ছাড়া বাইকের গতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সড়কে রিকশা-ভ্যান কিংবা বাইসাইকেলই চলে ঘণ্টায় ২০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে। আর বাস-ট্রাক চলে ৬০-৮০ কিমি গতিতে। সেখানে ৩০ কিলোমিটার গতিতে মোটরসাইকেল কীভাবে চলবে? এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়।

মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে বাইসাইকেলের কাতারে নামিয়ে আনা নিয়ে যখন এমন আলোচনা চলছে, তখন অনেকে জানেনই না যে, উন্নত দেশগুলোর আদলে রাজধানীর আগারগাঁও ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আলাদা বাইসাইকেল লেন চালু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। ঘটা করে এর উদ্বোধনও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই লেন আদৌ চালু আছে কি না, সেখান দিয়ে সাইকেল চলতে পারে কি না তার খোঁজ রাখে না কেউ।

অথচ যান্ত্রিক এ শহরে একটু হলেও স্বস্তির খবর হয়েছিল সড়কে চালু করা বাইসাইকেল লেন। ভীষণ খুশি হয়েছিলেন পরিবেশবাদী মানুষ ও বাইকাররা। কিন্তু অবৈধ পার্কিং; বিশেষ করে সরকারি যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, ভ্রাম্যমাণ দোকানের দখলে থাকা এসব লেনে বাইসাইকেল চালানো কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। ট্রাফিক পুলিশ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগও যেন ভুলে গেছে বিষয়টি। খোদ  সিটি কর্পোরেশন ওই লেনের ওপর বসিয়েছে ময়লার ভাগাড়।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে বাইসাইকেল চলাচল উৎসাহিত করতে চালকদের জন্য আগারগাঁওয়ে প্রায় নয় কিলোমিটার সড়কে আলাদা লেন তৈরি করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আলাদা সাইকেল লেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই। ২০২০ সালের মার্চে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬০ ফিট মোড় থেকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উত্তরপ্রান্ত হয়ে এলজিইডি সড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা হয় বাইসাইকেল লেন।

ওই সময় ডিএনসিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, সাইকেলের জন্য ছয় ফুট প্রশস্ত আলাদা লেন চালুর মধ্য দিয়ে বদলে যাবে আগারগাঁও এলাকার চিত্র। মডেল সড়ক হিসেবে সাইকেল লেন তৈরির পাশাপাশি ফুটপাত, অনস্ট্রিট পার্কিং ও সবুজায়নে আগারগাঁও হবে মডেল এলাকা। কিন্তু বদল আসেনি। বরং দখলদারিতে অংশ নিয়েছে খোদ সিটি কর্পোরেশন। এ চিত্র যেন বদলের নয়, শুধু দখলের। যে দখলদারিতে সবাই অংশীদার, শুধু সাইক্লিস্টরা ছাড়া। লেন দখলে চলে যাওয়ায় আগের মতো ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে সাইকেল চালকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট রোডের মাথা থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা বাইসাইকেল লেন বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুরোটা দখল হয়ে গেছে। সরকারি যানবাহন, ব্যক্তিগত গাড়ি, স্টাফ বাস, লেগুনা, অ্যাম্বুলেন্স, চায়ের দোকান, রিকশার গ্যারেজ, ভ্রাম্যমাণ দোকান, এমনকি ওষুধের দোকানও বসেছে সাইকেলের লেনের ওপর।

রাজধানীতে বাইসাইকেল চলাচল উৎসাহিত করতে চালকদের জন্য আগারগাঁওয়ে প্রায় নয় কিলোমিটার সড়কে আলাদা লেন তৈরি করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আলাদা সাইকেল লেন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই। ২০২০ সালের মার্চে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ৬০ ফিট মোড় থেকে নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল হয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উত্তরপ্রান্ত হয়ে এলজিইডি সড়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পর্যন্ত চালু করা হয় আলাদা বাইসাইকেল লেন

সরকারি দপ্তরের সামনের লেন সরকারি যানের দখলে

পরিবেশ অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, এলজিইডি, পাসপোর্ট অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। বাইসাইকেল লেনের ওপর সরকারি যানবাহনের অবৈধ পার্কিং তৈরি করা হয়েছে। খালি চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিন বছর আগে এখানে চালু করা হয়েছিল সাইকেল লেন। চালকদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে তড়িঘড়ি করে যানবাহন সরিয়ে নিয়ে যান। কেউ বলেন, বিষয়টি তারা জানেন না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কের সাইকেল লেন দখল করে পার্কিং করা প্রতিষ্ঠানটির বাসচালক নাম প্রকাশ না করে বলেন, কবে সাইকেলের লেন ছিল? কই কখনো তো দেখিনি, কখনো শুনিওনি! এখানে তো বড় গাড়িই রাখে সবাই।

বাইসাইকেল লেনে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ভাগাড় 

এলজিইডি ভবনের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেন বরাবর সিটি কর্পোরেশন তৈরি করেছে ভ্রাম্যমাণ ময়লার ভাগাড়। সেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার ময়লা ফেলা হচ্ছে।

নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের সামনের সড়কে বাইসাইকেল লেনে বসেছে অবৈধ পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান। লেগুনা, হাসপাতালের চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সের সারি সেখানে চোখে পড়ে।

আলমগীর হোসেন নামে এক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, প্রতিদিনই রোগী আনা-নেওয়া করি। কখনো কেউ কিছু বলেনি। শুধু আমি নই, পার্কিং তো সবাই করছে। সরালে সবাইকে সরাতে হবে।

মিরপুর-২ উত্তর পীরেরবাগ এলাকা থেকে ফার্মগেটে প্রতিদিন বাইসাইকেলে চলাচল করেন প্রকৌশলী রিজওয়ান। তিনি বলেন, আমি বাইসাইকেল চালানো শিখেছি আগারগাঁওয়ে। প্রতি শুক্র ও শনিবার সেখানে বাইসাইকেল চালাতাম। আলাদা লেন চালুর কিছুদিন পরই তা দখলে চলে গেছে। আগারগাঁওয়ে গেলে আর বাইসাইকেল লেনের অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। কোথায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে আলাদা লেন হবে, সেটা না। উল্টো চালু করা লেনগুলো সরকারি দপ্তরের গাড়ির নিচে চাপা পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে তাই অনেকে চলছেন মূল সড়কে।

বিডি সাইক্লিস্টস-এর অ্যাডমিন নাজমুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা শহরে আছেন ১০ লাখেরও বেশি সাইক্লিস্ট। যারা নিয়মিত বাইসাইকেলে চলাচল করতেন। আশাবাদী ছিলাম, ঢাকার অন্তত দুটি জায়গায় বাইসাইকেল লেন সক্রিয় থাকবে। এর সফলতার ভিত্তিতে ঢাকায় আস্তে আস্তে আরও কিছু লেন চালু হবে। এমন দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে পরীক্ষামূলক চালু করা দুটি লেন দখলে চলে গেছে।

‘প্রতিদিন আমি বকশিবাজার থেকে বনানী সাইকেলে যাতায়াত করি। কোনো লেন নেই। পরিবেশবান্ধব এ পা-চালিত বাহনটি নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। যদি থাকত তাহলে লেন দখল হতো না। আগারগাঁওয়ে দেখলাম খোদ সিটি কর্পোরেশন ময়লার ভাগাড় বানিয়েছে সাইকেলের লেন দখল করে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় আমরা কোথায় যাব?’

আশিকুর রহমান নামে এক বাইকার বলেন, আমার বাসা কল্যাণপুরে। সেখান থেকে প্রতিদিন ধানমন্ডির অফিসে যেতাম বাইসাইকেলে। আলাদা লেন নেই, বাইসাইকেলে ঝুঁকি ছিল। পরে ধানমন্ডি থেকে আগারগাঁও তালতলায় অফিস স্থানান্তর হওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। কারণ, সেখানে বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন আছে। নিরাপদে চলাচল করতে পারব। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। লেনের অস্তিত্ব এখন খুঁজে পাওয়াই দায়। বাধ্য হয়ে বাইক কিনেছি। এখন বাইকে চলাচল করি।

‘স্বল্প দূরত্বে হলেও বাইসাইকেলের জন্য লেন করা হয়েছিল। সেটিই অরক্ষিত। এখন আবার শুনতেছি মোটরসাইকেলের গতি নাকি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যে শহরে বাইসাইকেল চালানোই দায়, সেই শহরে প্রায় একই গতিতে মোটরসাইকেল চালানো অসম্ভব। ব্যস্ত এ নগরীতে নগরবাসীর সুবিধাটা কেউ চিন্তা করেন না; না বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে, না বাইকের ক্ষেত্রে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনদাবির মুখে পরিবেশবান্ধব নগরী গড়তে রাজধানীতে সাইকেল লেন তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটির ফল শূন্য। সাইকেল লেনের ওপর সাইকেলই চলতে পারে না। সরকারি সিদ্ধান্তে বাস্তবায়িত এ লেনের অধিকাংশ স্থান দখল করে আছে সরকারি সব দপ্তরের যানবাহন। এসব দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের। আমাদের দাবি, সাইকেল লেনে চলুক সাইকেল। সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকায় দুটি বাইসাইকেল লেন রয়েছে। কিন্তু অবৈধ দখল আর পার্কিংয়ের কারণে লেন দুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পুলিশ কি বিষয়টি জানে না— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরের যুগ্ম কমিশনার আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো বিষয় আমাদের নজরে এলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চালু করা বাইসাইকেল লেন দখলে গেলে এবং এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘লেনটা কারা করেছে? সিটি কর্পোরেশন। তারা তো জানাবে বাইসাইকেল লেন দখল হয়ে গেছে। তাহলেই না আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।’

অভিযোগ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশ কি ব্যবস্থা নিতে পারে না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন-স্ট্রিট পার্কিংয়ের অনুমতি দেয় সিটি কর্পোরেশন। ব্যবস্থা তো তারা নেবে। আমাদের জানালে আমরাও ব্যবস্থা নিতে পারি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আগে দেখতে হবে। দেখে শুধু উচ্ছেদ কেন, আরও যদি কিছু করতে হয় আমরা করব। আমরা যদি বাইসাইকেল লেন করে থাকি, আর সেটি যদি দখলে থাকে, উচ্ছেদের দায়ও আমাদের।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করি, কিন্তু সেসব রক্ষা করতে পারি না। ফলপ্রসূ বাস্তবায়নের অভাবে মাঝপথে সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। এটি খুবই দুঃখজনক। নতুন উদ্যোগের চেয়ে পূর্ববর্তী ভালো উদ্যোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি।

বাইসাইকেল লেন কার্যকর না করে নতুন করে মোটরসাইকেলের গতি নির্ধারণ, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন— উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই বাইসাইকেল লেন কার্যকরের উদ্যোগ নিতে হবে। এখন তো মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ বা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হচ্ছে। বাইসাইকেল লেনই যদি রক্ষা করতে না পারি, মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও কঠিন হবে।’

জানতে চাইলে নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফটোসেশন বা আত্মতুষ্টির জন্য কোনো প্রজেক্ট দাঁড় করানো অত্যন্ত দুঃখজনক। উন্নত পরিবেশ তৈরিতে দিনদিন আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দূষিত শহরের তালিকায় আমরা সবার উপরেই থাকি। সেখানে বাইসাইকেল লেনের বিষয়টি আশার আলো হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাইসাইকেল লেন যখন করা হলো আমরা তখনই বলেছিলাম স্বল্প মেয়াদ বা দূরত্বে করলে ফলপ্রসূ হবে না। সেটাই হয়েছে, জাস্ট লোক দেখানো করা বাইসাইকেল লেন প্রজেক্টটি ব্যর্থ হয়েছে। এটি সাসটেইনেবল (টেকসই) করার কোনো চেষ্টা করা হয়নি।

‘এখন বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেলসহ যানবাহনের গতি নির্ধারণ করা হবে। এটি অবাস্তব সিদ্ধান্ত। কোথায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে? ঢাকা শহরে যে পরিমাণ মোটরসাইকেল চলাচল করে, সে অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থাপনাই তৈরি করা হয়নি। অথচ দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। আলাদা লেন না করে একই লেনে একেক যানবাহনের গতিসীমা আলাদা করার সিদ্ধান্ত অবাস্তব। উচিত হবে সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক বিভাগসহ সকলে মিলে টেকসই ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। তা না হলে এটিও বাইসাইকেল লেনের মতো হবে। এ শহরে বাইসাইকেল লেনটা অত্যন্ত জরুরি ছিল পরিবেশের জন্য।’

জেইউ/এসকেডি