নেহাল থেকে যাবেন নাকি নতুন মুখ আসবে
মাউশির ডিজির চেয়ারে কে বসবেন?
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ এপ্রিল। ঈদের ছুটির কারণে সেদিন পর্যন্ত তার অফিস করার সুযোগ নেই। ৯ এপ্রিল শেষ অফিস করবেন তিনি। ফলে পদটি শূন্য হয়ে যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যে।
১৩ এপ্রিলের আগেই মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নেহাল আহমদের চাকরির মেয়াদ বাড়ছে নাকি এ পদে নতুন মুখ আসছে— শিক্ষা প্রশাসনের সবার নজর এখন সেদিকে।
বিজ্ঞাপন
শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ এ পদে আসীন হতে আগ্রহী শিক্ষা ক্যাডারের এক ডজনেরও বেশি প্রভাবশালী কর্মকর্তা। তারা সবাই নিজ নিজ সম্পর্ক ব্যবহার করে জোর লবিং শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে বর্তমান মহাপরিচালকের চাকরির মেয়াদ পূর্তির বিষয়ে শিক্ষা সচিব বরাবর অবহিতকরণ পত্র পাঠানো হয়েছে। তাই এ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
মাউশির মহাপরিচালক পদের জন্য যারা তদবির করছেন তারা সবাই শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাবশালী ও পরিচিত সদস্য। কেউ শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আছেন, কেউ দেশের সর্ববৃহৎ কলেজের অধ্যক্ষ, কেউ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবার কেউ শিক্ষা প্রশাসনের অন্য কোনো দপ্তরের মহাপরিচালক বা পরিচালক।
শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্য থেকে চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মহাপরিচালক নিয়োগের কথা থাকলেও গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ প্রাধান্য পেয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না ধরে নিয়ে রাজনৈতিক চ্যানেলে তদবির চালাচ্ছেন আগ্রহীরা।
শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ এ পদ পেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চলছে নানামুখী তদবির। সরকারের প্রভাবশালীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাবশালী অধ্যাপকরা। তাদের পক্ষে মন্ত্রী, এমপি ও সরকার দলীয় নেতারা তদবির করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে।
এদিকে গতকাল সোমবার বর্তমান মহাপরিচালক নেহাল আহমেদকে গ্রেড-১ এ পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। অনেকে ধারণা করছেন, সরকার হয়ত পুনরায় তাকে একই পদে বসাবে। তাই শেষ সময়ে এসে পদোন্নতি দিয়েছে। নেহাল আহমেদ সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাগনে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামার প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি থেকে যেতে পারেন।
আরও পড়ুন
এদিকে মহাপরিচালক হতে আগ্রহী প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। আগ্রহীদের রাজনৈতিক আদর্শ, শিক্ষা ক্যাডারে তাদের অভিজ্ঞতা, গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরির বয়সসহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে সংস্থাগুলো। এ অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আনুকূল্য পেতে চলছে বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির ও দেন-দরবার।
তদবির ও দৌড়ঝাঁপে ব্যস্ত যারা
মাউশির মহাপরিচালক পদের জন্য যারা তদবির করছেন তারা সবাই শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাবশালী ও পরিচিত সদস্য। কেউ শিক্ষা প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আছেন, কেউ দেশের সর্ববৃহৎ কলেজের অধ্যক্ষ, কেউ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবার কেউ শিক্ষা প্রশাসনের অন্য কোনো দপ্তরের মহাপরিচালক বা পরিচালক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমান মহাপরিচালকসহ অন্তত এক ডজন সিনিয়র অধ্যাপক শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জোর লবিং করছেন। তাদের মধ্যে কেউ রাজনৈতিক তদবিরও করাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর আনুকূল্য পেতে চলছে দেন-দরবার। অনেকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। কেউ অন্য মন্ত্রী বা সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের দিয়ে ফোন করাচ্ছেন। কেউ কেউ ছাত্রজীবনে রাজনীতির অভিজ্ঞতা ও পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে তদবির করছেন।
মাউশির ডিজির পদটি শুধু সম্মানের নয়, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এটি বেশ আকর্ষণীয় পদ। এই পদে নিয়োগের জন্য সরকার প্রধানের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে।
বর্তমান মহাপরিচালক ছাড়া আলোচনার শীর্ষে আছেন মাউশি অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি প্রশাসন ও কলেজ শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী। ১৪তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব ছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে কাজ করছেন। ক্লিন ইমেজধারী এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। বর্তমান ডিজি চুক্তিভিত্তিক পুনরায় নিয়োগ না পেলে শাহেদুল খবীরই হচ্ছেন পরবর্তী মহাপরিচালক, এমন গুঞ্জন রয়েছে। তবে ছাত্রজীবনে আওয়ামী বিরোধী একটি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়েছে বলে শিক্ষা ক্যাডারের একটি সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে।
আরও পড়ুন
এরপর আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার। তাঁর নিজ জেলা নোয়াখালী হওয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে। তবে তার চাকরির মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়ে যাবে বলে এ পদের ব্যাপারে তিনি আগ্রহী নন বলে জানান।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাকরির মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। তাই আমি এ পদের জন্য আগ্রহী নই।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন মাউশির পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক শফিউল আজিম, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, নায়েমের সাবেক মহাপরিচালক মো. নিজামুল করিম, মাউশির পরিচালক (মনিটরিং) অধ্যাপক আমির হোসেন, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ, মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) সৈয়দ জাফর আলী, মাউশির পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ও পলাশ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদুজ্জামান, বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আমিনুল হক। মাউশির সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে ধামরাই সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সেলিম মিয়া।
আলোচনার শীর্ষে আছেন মাউশি অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি প্রশাসন ও কলেজ শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবীর চৌধুরী। ১৪তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব ছিলেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে তিনি শিক্ষা প্রশাসনে কাজ করছেন। ক্লিন ইমেজধারী এই কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তার সখ্য রয়েছে
এর বাইরেও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মাউশির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাই এখানে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে সেটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। পদ শূন্য হওয়ার আগেই নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
মাউশির ডিজির পদটি শুধু সম্মানের নয়, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে এটি বেশ আকর্ষণীয় পদ। এই পদে নিয়োগের জন্য সরকার প্রধানের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই পদে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এনএম/এসকেডি