নজরদারিতে ৫০ হাজার বৈধ অস্ত্রমালিকদের কর-ফাইল
ব্যক্তিগত সুরক্ষায় সামাজিকভাবে প্রভাবশালীরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানে দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫০ হাজার। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ২৯ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী। অন্যান্য পেশা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে রয়েছে ২০ হাজার ৪৩০টি বৈধ অস্ত্র।
জানা যায়, দেশে লাইসেন্সপ্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও সেভাবে মিলছে না কর। তাদের অনেকেরই আয়কর ফাইলে দেখানো আয় ও সম্পদের হিসাবে গরমিল দেখা যায়। বিভিন্ন কৌশলে বড় অঙ্কের কর ফাঁকি দিচ্ছেন অনেকে। এমন বেশকিছু অভিযোগ এসেছে এনবিআরের গোয়েন্দা বিভাগে।
বিজ্ঞাপন
এসব অভিযোগ মাথায় রেখে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়া করদাতাদের আয়কর নথি যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কর জরিপ ও পরিদর্শন বিভাগ থেকে দেশের সব কর অঞ্চলের কাছে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্ত করদাতাদের রিটার্নের তথ্য চাওয়া হয়েছে। ই-মেইল ও ডাকযোগে এক্সেল ফরমেটে ছক আকারে তথ্য দিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেখানে লাইসেন্সধারীর ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে আয়কর রিটার্নের প্রমাণক বা রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তিস্বীকার পত্র (পিএসআর) সংযুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশের বিশেষ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে বর্তমানে দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে অনেকেই ন্যূনতম কর দিয়ে লাইসেন্স নবায়ন করেন। যেহেতু আয়কর আইন অনুযায়ী, লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়নে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক বা পিএসআর যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে কেবল লাইসেন্স টিকিয়ে রাখতে রিটার্ন দাখিল করছেন অনেকে। এনবিআর তাদের পেশা, আয়ের উৎস, ব্যাংক হিসাব ও সম্পদের বিবরণীসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র যাচাই করবে।
আরও পড়ুন
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ৫০ হাজার ৩১০টি। এর মধ্যে ব্যক্তিগত অস্ত্র ৪৫ হাজার ২২৬টি। অস্ত্রগুলোর মধ্যে পিস্তল চার হাজার ৬৮৩টি, রিভলভার দুই হাজার ৪৩টি, একনলা বন্দুক ২০ হাজার ৮০৯টি, দোনলা বন্দুক ১০ হাজার ৭১৯টি, শটগান পাঁচ হাজার ৪৪৪টি, রাইফেল এক হাজার ৭০৬টি এবং অন্যান্য আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে চার হাজার ছয়টি। বাকি অস্ত্রগুলো বিভিন্ন আর্থিক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করা।
প্রাপ্ত হিসাব বলছে, এসব অস্ত্রের মধ্যে ১০ হাজার ২১৫টি রয়েছে রাজনীতিবিদদের কাছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে রয়েছে সাত হাজার ২১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র। বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে আছে দুই হাজার ৫৮৭টি এবং অন্যান্য দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নামে ৭৯টি বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর প্রথম দফায় এবং গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দ্বিতীয় দফায় দেশে সব কর অঞ্চলের কমিশনারকে এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের জরিপ, কর ফাঁকি ও আইটিপি রেজিস্ট্রেশন বিভাগের দ্বিতীয় সচিবের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩ এবং অর্থ আইন ২০২২-এর বিধান অনুসারে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণ ও বহাল রাখার ক্ষেত্রে লাইসেন্স গ্রহণকারী ব্যক্তি প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করে তার প্রমাণক (পিএসআর) জমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেজন্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সপ্রাপ্তি এবং বহাল রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট লাইসেন্স গ্রহণকারী ব্যক্তির ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্ন দাখিল ও দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন মোতাবেক আয়কর পরিশোধ, আয়কর আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করতে হবে। আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহণকারী ব্যক্তি যথানিয়মে আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিতকরণ-সংক্রান্ত তথ্য সংযুক্ত ছক মোতাবেক ই-মেইল ও হার্ড কপি এনবিআরে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
আরও পড়ুন
২০১৬ সালের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নিতে হলে ওই ব্যক্তিকে (বাংলাদেশি নাগরিক) ‘ব্যক্তি শ্রেণির’ আয়করদাতা হতে হবে। আবেদনকারীকে আবেদনের পূর্ববর্তী তিন বছর ধারাবাহিকভাবে পিস্তল, রিভলভার, রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম তিন লাখ এবং শটগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এক লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। আবেদনকারী কর্তৃক পরিশোধিত আয়করের পরিমাণ উল্লেখসহ এনবিআর কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি দ্বৈত নাগরিকের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের জন্য আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে ধারাবাহিকভাবে সর্বশেষ তিন বছরে প্রতি বছর ন্যূনতম ১২ লাখ টাকা হারে রেমিট্যান্স এবং বিদেশে আয়কর প্রদানের প্রমাণপত্র থাকতে হবে। রেমিট্যান্সকৃত অর্থ শুধু যেসব সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে, ওই সব ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হবে।
অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিতে হলে প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা হতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা, এমন যে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে।
আরএম/