রাত পোহালেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৩৬টি রাজনৈতিক দল ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের বাইরে সিপিবি-বাসদের বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল একই দাবিতে আন্দোলন করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দশম-একাদশের ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হবে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। একইভাবে ‘একতরফা’ নির্বাচন হয় একাদশে। এবারও নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপিসহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৩৬টি দল। ফলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।     

ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপি ইতোমধ্যে ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচি এখন পালিত হচ্ছে। দলটির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী এলডিপি ও জাতীয়বাদী জোট এবং গণফোরাম-পিপলস পার্টি হরতাল কর্মসূচি পালন করছে। এ ছাড়া, বিএনপির অপর জোটসঙ্গী ১২ দলীয় জোট ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সকাল-সন্ধ্যা ‘গণকারফিউ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চ ভোটের দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির হরতালে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে, ভোটের দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করব আমরা।

ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে বিএনপি ইতোমধ্যে ৬ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষিত কর্মসূচি এখন পালিত হচ্ছে। দলটির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী এলডিপি ও জাতীয়বাদী জোট এবং গণফোরাম-পিপলস পার্টি হরতাল কর্মসূচি পালন করছে। এ ছাড়া, বিএনপির অপর জোটসঙ্গী ১২ দলীয় জোট ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সকাল-সন্ধ্যা ‘গণকারফিউ’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, গণতন্ত্র মঞ্চ ভোটের দিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

বিএনপি এবং তাদের যুগপৎ সঙ্গীদের বাইরে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ছয় দলীয় বাম গণতান্ত্রিক জোট, এবি পার্টি, এনডিএম, বিজেপিসহ আরও কয়েকটি দল। তবে, ভোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাসদের কোনো কর্মসূচি নেই ভোটের দিনে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোটের দিন আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। তবে, আমরা দলের রাজনৈতিক কর্মী ও সমর্থকদের ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছি।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি দল। দলগুলো হলো— ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যালনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, সুপ্রিম পার্টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি।

অংশ নিচ্ছে না যে দলগুলো— লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম, ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলো হলো— ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যালনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, সুপ্রিম পার্টি, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি

প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তাকে কারাগারে বন্দি করে। তার অনুপস্থিতিতে তাকেই রাষ্ট্রপ্রধান করে ১০ এপ্রিল গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ীর সরকার। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) সেই সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা শপথ নেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন। পরদিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তিনি অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন এবং সেই আদেশের ক্ষমতাবলে দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করেন। ওই আদেশ ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ কার্যকর হয়। ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। সংবিধান পাসও হয় গণপরিষদের অধিবেশনেই। সেই সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায়। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয় পায় আওয়ামী লীগ। একটি আসনে জয় পায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), একটি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ জাতীয় লীগ (বিডিজেএল)। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পান পাঁচটি আসনে। সংরক্ষিত ১৫টি নারী আসনের সবগুলোতেও জয় পায় আওয়ামী লীগ।

দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের অধীনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি, রোববার। ওই নির্বাচনে অংশ নেয় ২৯টি রাজনৈতিক দল। মোট ভোট পড়ে ৫১.২৮ শতাংশ। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জামানত ছিল ২ হাজার টাকা।

নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে এককভাবে ২২০টি আসন পায়। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সংরক্ষিত মহিলা আসন ১৫টি থেকে বাড়িয়ে ৩০টি পাস করে। তাদের প্রাপ্ত ২২০টির সঙ্গে সংরক্ষিত ৩০টি আসন যোগ হয়ে বিএনপির মোট আসন দাঁড়ায় ২৫০টি।

নির্বাচনে বাকি ৮০টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ৩৯টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ১২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ ৮টি, ইসলামী ডেমোক্রেটিক লীগ ৬টি, আওয়ামী লীগ (মিজান) ২টি, জাতীয় লীগ ২টি, গণফ্রন্ট ২টি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন ১টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, জাতীয় একতা পার্টি ও ন্যাপ (মোজাফফর) ১টি করে আসন পায়। এ ছাড়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৫ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ওই সময় থেকে ‘বহুদলীয় গণতন্ত্রের’ নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনীতি এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।

তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে, বুধবার। ওই নির্বাচনে অংশ নেয় ২৮টি রাজনৈতিক দল। ভোটের হার ছিল ৫৯.৩৮ শতাংশ। জামানত ছিল ৫ হাজার টাকা।

বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। জাতীয় পার্টি ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮৩টিতে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। ৭৬টি আসনে জয়লাভ করে বিরোধী দল হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পায় ১০টি আসন, কমিউনিস্ট পার্টি ৬টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ৫টি, মুসলিম লীগ ও জাসদ (রব) ৪টি করে, ওয়ার্কার্স পার্টি (নজরুল) ও জাসদ (সিরাজ) ৩টি করে, ন্যাপ (মোজাফফর) ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন ৪ প্রার্থী। এ সময় কোনো সংরক্ষিত নারী আসন ছিল না।

চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অধীনে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ, বৃহস্পতিবার চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন অবশ্য যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বর্জন করে। এ নির্বাচনে ৮টি রাজনৈতিক দল এবং তাদের অধীনে ৯৭৭ জন প্রার্থী অংশ নেন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯৩ শতাংশ। জামানত ছিল ৫ হাজার টাকা।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে ২৫১টি আসনে জয়লাভ করে। সম্মিলিত বিরোধী দল পায় ১৯টি, জাসদ (সিরাজ) ৩টি, ফ্রিডম পার্টি ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পায় ২৫টি আসন।

বিএনপিসহ কয়েকটি দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে ১১টি দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আওয়ামী লীগের ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এককভাবে ২৩৪টি আসনে পায় তারা। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪১ শতাংশ

পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ২৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। বিএনপি আসন পায় ১৪০টি এবং সংরক্ষিত ২৮টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, সিপিবি ও বাকশাল ৫টি করে, ন্যাপ (মোজাফফর), জাসদ (সিরাজ), এনডিপি, ইসলামী ঐক্যজোট ও গণতান্ত্রিক পার্টি ১টি করে, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হন।

এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৫৫.৫৪ শতাংশ। প্রার্থীদের জামানত ছিল ৫ হাজার টাকা।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। অংশগ্রহণকারী ৪২টি দলের বিপরীতে মোট প্রার্থী ছিল ১৪৫০ জন। ওই নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬৭ লাখ ২ হাজার ৪২ জন। যাদের মধ্যে ভোট দিয়েছিলেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮১ জন।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ অনেক রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় সংসদে বিরোধী দল ছিল না। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে বিএনপি পায় ২৭৮টি আসন। যার মধ্যে আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ৪৮ জন, ফ্রিডম পার্টি পায় ১টি ও স্বতন্ত্র ১০টি আসন। তবে, ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মেয়াদ ছিল মাত্র ৪ মাস।

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন আবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৮১টি রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ নেয়। মোট ভোট পড়ে ৭৫.৬০ শতাংশ। জামানত ছিল ৫ হাজার টাকা।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসনে জয় পায়। তারা জোট নিয়ে সরকার গঠন করে এবং প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। বিএনপি ১১৬টি আসন পেয়ে বিরোধী দল হয়। বিরোধী দলের নেতা হন বেগম খালেদা জিয়া। বাকি আসনগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি, জামায়াতে ইসলামী ৩টি, ইসলামী ঐক্যজোট, জাসদ (রব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ১টি করে আসনে জয়লাভ করে।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ৫৫টি দল অংশ নেয়। সব দল মিলে মোট ১ হাজার ৯৩৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট পড়ার হার ছিল ৭৪.৭৩ শতাংশ। প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়।

এ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩টি আসন পেয়ে জয় পায়। আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি, জামায়াত ১৭টি, জাতীয় পার্টি (নাজিউর রহমান মঞ্জু) ৪টি, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি, জাতীয় পার্টি (মতিন) ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ১টি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ৬টি আসন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেকটা ‘একতরফা’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৫৮টি আসন পায় বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে। জাতীয় পার্টি ২২টি এবং মহাজোটভুক্ত অন্য দলগুলো ৮টি আসনে জয়ী হয়। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত বিএনপি ৬টি, গণফোরাম ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হন

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধয়াক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করার পর সব শর্ত পালন করে ৩৯টি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশ নেয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। সে অনুযায়ী মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৩ জন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ৭ কোটি ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪৮৫ জন। ভোট পড়ার হার ছিল ৮৬.৩৪ শতাংশ। নির্বাচনের জামানতও ছিল ১০ হাজার টাকা।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসনে জয়লাভ করে। অন্যদিকে, বিএনপি পায় ৩০টি আসন, জাতীয় পার্টি ২৭টি, জাসদ ৩টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ২টি, জামায়াত ২টি, বিজেপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১টি করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ৪টি আসন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন

বিএনপিসহ কয়েকটি দলের নির্বাচন বর্জনের মধ্যেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে ১১টি দল অংশ নেয়। আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আওয়ামী লীগের ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এককভাবে ২৩৪টি আসনে পায় তারা। নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৪১ শতাংশ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেকটা ‘একতরফা’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই ২৫৮টি আসন পায় বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে। জাতীয় পার্টি ২২টি এবং মহাজোটভুক্ত অন্য দলগুলো ৮টি আসনে জয়ী হয়। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত বিএনপি ৬টি, গণফোরাম ২টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হন।

এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয় ৮০.২০ শতাংশ। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় মোট ভোটের ৭৪.৪৪ শতাংশ। অপরদিকে, বিএনপি পেয়েছে মাত্র ১২.০৭ শতাংশ ভোট। নির্বাচনের কয়েক দিন পর নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইটে কেন্দ্রভিত্তিক ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ এবং ১৪১৮টি কেন্দ্রে ৯৬ শতাংশের ওপর ভোট পড়েছে। 

এএইচআর/