সাইফুজ্জামান শিখর। রাজনীতির হাতেখড়ি ছাত্রজীবনে। দায়িত্বপালন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তার আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। দেশের অন্য সংসদীয় আসনগুলোতে মনোনয়ন-বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও ব্যতিক্রম শিখর। তিনি সাকিবকেই সমর্থন দিয়ে পাশে আছেন।

মাগুরার বর্তমান রাজনীতি, স্থানীয় সমস্যা ও আগামীর চ্যালেঞ্জ, নৌকার নতুন মাঝির (সাকিব আল হাসান) গ্রহণযোগ্যতাসহ নানা বিষয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেন মাগুরার নৌকার পুরান মাঝি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সাইফুল ইসলাম।

মাগুরা-১ আসন থেকে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান / ফাইল ছবি

ঢাকা পোস্ট : আপনি মাগুরা-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। এবার আপনার আসনে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ব্যক্তি পরিবর্তন হওয়ায় নৌকার অবস্থানে কোনো প্রভাব পড়বে কি না?

সাইফুজ্জামান শিখর : গত পাঁচ বছর আমি চেষ্টা করেছি মাগুরার মানুষকে ভালো রাখার। চেষ্টা করেছি উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শিকড়টা খুব গভীরে নিয়ে যাওয়ার। এখন সংগঠনের যে অবস্থা, আওয়ামী লীগের সভাপতি বা মনোনয়ন বোর্ড যাকেই মনোনয়ন দিতেন, তিনি সেখান থেকে জিতে আসতে পারতেন। আমি সেভাবেই আমার কাজগুলো করেছি। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাগুরার মানুষের যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ এর যারা প্রার্থী তারা দুজনেই বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন। আমরা আশা করছি, ভোটারদের উপস্থিতিও আশানুরূপ থাকবে এবার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাইফুজ্জামান শিখর / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : একজন এমপি হিসেবে আপনার আসনে এখনও কী কী সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন?

সাইফুজ্জামান শিখর : মাগুরায় সে রকম কোনো সমস্যা নেই। দলের সাংগঠনিক ভিতও মজবুত। মাগুরার মানুষের একটাই চাওয়া, সেটা হচ্ছে ইকোনমিক জোন। মাগুরা কৃষিপ্রধান জেলা। এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার সুযোগ কম। যদিও চেষ্টা করে বেসরকারি উদ্যোগে আমরা কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি করে ১০ হাজারের মতো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। বন্ধ হয়ে যাওয়া টেক্সটাইল মিল চালু করেছি। সেখানেও কিছু লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : আপনার কাছে মাগুরার বর্তমান চ্যালেঞ্জ কী?

সাইফুজ্জামান শিখর : প্রধানমন্ত্রী ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমার ধারণা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার কারণে এ কার্যক্রমের গতি কিছুটা কমেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আমাদের জায়গা দেখা হয়ে গেছে, প্রক্রিয়াটাও শুরু হয়েছে। আগামীতে যদি এটা আমরা করে ফেলতে পারি তাহলে মাগুরাবাসীর আর কোনো অসুবিধা থাকবে না। মাগুরার কর্মসংস্থানটাই এখন আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।

মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাকিব আল হাসান / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : আপনি দীর্ঘদিন ধরে মাগুরার রাজনীতিতে সক্রিয়। আপনার অনুপস্থিতিতে নৌকার বর্তমান প্রার্থী (সাকিব আল হাসান) দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন কি না ?

সাইফুজ্জামান শিখর : দেখুন, সংসদ সদস্য একটি বিষয়, সংগঠন আরেকটি বিষয়। আমরা সংগঠন করা লোক। আমরা যেহেতু সংগঠন করা লোক, আমাদের শিকড়টা অনেক নিচে। আমরা সংগঠনটাকে গোছাব, সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়েই আমরা সব ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করব।

ঢাকা পোস্ট : নৌকার বর্তমান প্রার্থীর (সাকিব আল হাসান) কাছে আপনার কোনো প্রত্যাশা আছে কি না?

সাইফুজ্জামান শিখর : সাকিবের কাছে আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী যে উন্নয়নের ধারা রচনা করেছেন, মানুষকে যেভাবে ভালো রেখেছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, মাগুরার মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমানোর নিশ্চয়তা পেয়েছেন— এ ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। আমরা সংগঠনটাকে সুসংগঠিত করতে পেরেছি। একদম ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা ঐক্যবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী যখন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সেটা বাস্তবায়ন করেছি। আশা করব, সাকিবও একইভাবে এ সব কাজ করে যাবেন।

রাজনীতির মাঠে নতুন হলেও সাকিব অসহায় বা দুর্বল নন— বলেছেন মাগুরা-১ আসনের এমপি সাইফুজ্জামান শিখর / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ঢাকা পোস্ট : সাকিব আল হাসান তো রাজনীতি করেননি, সেক্ষেত্রে তাকে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে কি না?

সাইফুজ্জামান শিখর : আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে। তিনি (সাকিব আল হাসান) রাজনীতি করেননি; তার মানে এটা নয় যে, তিনি অসহায় বা দুর্বল। আমরা তাকে সাংগঠনিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করব।

ঢাকা পোস্ট : মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

সাইফুজ্জামান শিখর : আপনাকেও ধন্যবাদ।

এমএসআই/এসকেডি/এমএআর/