আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (বর্তমানে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীও ছিলেন তিনি। বর্তমানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। ২০১৪ সালে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল, রমনা, পল্টন) নৌকার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নতুন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ভোটারদের জন্য কী কী পরিকল্পনা করছেন, আসনের ভোটারদের প্রত্যাশাপূরণে কী কী চিন্তা-ভাবনা করছেন-এসব বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সাইফুল ইসলাম।      

প্রশ্ন : ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্বাচন করছেন, নির্বাচনের আর মাত্র এক মাস বাকি, প্রস্তুতি কেমন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন। সে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা কর্মকাণ্ড শুরু করেছি। আমরা এখন ভোটারদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাইতে পারি না, তবে দোয়া চাচ্ছি। বিভিন্নভাবে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত করছি। যাতে ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাইতে যেতে পারি। নির্বাচনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য, আমাদের দলীয় কর্মী, সমর্থক ও ভোটারদেরকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য, নির্বাচনে এসে ভোট দেওয়ার জন্য ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করার জন্য, আমরা কাজ করব।

তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নিজেও ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাব। যতদূর সম্ভব প্রতি এলাকা, পাড়া-মহল্লায় যাওয়ার চেষ্টা করব। নির্বাচনে যারা বাধা সৃষ্টি করে, নির্বাচনকে যারা বানচাল করতে চায়, তাদের যে ভ্রান্ত রাজনীতি, ভুলে ভরা রাজনীতি, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, মানুষকে পুড়িয়ে মারা, ভয় দেখানো, বোমা হামলা, গান পাউডার ছিটিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে আগুন ধরানো, রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থায় ট্রেনসহ বিভিন্ন জায়গাতে নাশকতামূলক যে কর্মকাণ্ড হয়, এগুলো যে দেশের ক্ষতি করে, দেশের অর্থনীতি অগ্রগতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সে বিষয়গুলো আমরা মানুষের কাছে তুলে ধরব।

প্রশ্ন : ঢাকা-৮ আসন আপনার জন্য নতুন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন করতে গিয়ে আপনি কি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন বলে মনে করেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : ঢাকা-৮ আসন আমার জন্য নতুন নির্বাচনী এলাকা এটা সত্য, কিন্তু এই অঞ্চলটাতে আমার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বেশি সময় পার করেছি। ঢাকা-৮ আসন বাংলাদেশের রাজধানীর একটা কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। এই আসনটি ৫টি থানা ও ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য, বিবেকবান মানুষদের সর্বোচ্চ শিক্ষাক্ষেত্র, সর্বোচ্চ মেধাবীদের বিচরণক্ষেত্র এই এলাকা। শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সব এই এলাকায়। বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য, শিল্পকলা সবকিছুই এই এলাকার ভেতরে। এখানে বাংলাদেশের প্রশাসনিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা যেমন বসবাস করেন, তেমনি বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ কার্যক্রম যেখানে হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট সেটাও এখানে অবস্থান করছে। এখানে বিবেকবান, সমৃদ্ধ মানুষদের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমজীবী, মেহনতি, পেশাজীবী মানুষদের বসবাস। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সাংবাদিকতা, জনগণের সঙ্গে সংযোগ, রাজনীতির সঙ্গে সংযোগের কেন্দ্রবিন্দুও কিন্তু এই ঢাকা-৮ নির্বাচনী এলাকা। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে আরম্ভ করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠানগুলোও কিন্তু এলাকায়। এই এলাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের মন্ত্রীরা এখানেই বসবাস করে। সবকিছু মিলিয়ে এই এলাকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, খুবই সংবেদনশীল বলে আমি মনে করি।

তিনি বলেন, এই এলাকায় নির্বাচনে দাঁড়িয়ে চাইলেই মানুষের ভোট পাওয়া যাবে, এমনটা আমি মনে করি না। এখানকার মানুষজন বিবেক সমৃদ্ধ, তাদের বিবেচনা উতরে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া খুবই কঠিন। তারপরও যেহেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, আমি দলের কাছে ও দলের প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। সেই ৮০ সাল থেকে যদি হিসেব করি ঢাকায় ৪৩ বছরের আমার রাজনৈতিক জীবন এখানেই। এখানেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। এখানেই তো বাংলাদেশের আন্দোলন, সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম আমরা করেছি। এই এলাকার জনগণ পাশে থেকে আমাদের সমর্থন দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের নেতাকর্মী আমরা এখানেই আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় পার করেছি। সেই হিসেবে এই নির্বাচনী এলাকা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। এই এলাকার মানুষের কাছে আমি অপরিচিত এমন নয়। তারা আমাকে খুব ভালো করে চেনে, আমি কেমন মানুষ, আমার মানসিকতা কেমন, আমি কি চিন্তা করি এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে আমি মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারি কি না, আমি মানুষকে ভালোবাসতে পারি কি না, মানুষের ভালোবাসা ও মন জয় করার মতো যোগ্যতা আমার আছে কি না। আমি মনে করি এই সমৃদ্ধ এলাকা, বিবেকবান মানুষদের চিন্তায় আমি ইতিবাচক জায়গায় থাকব বলে বিশ্বাস করি।

প্রশ্ন : এই আসনটি ভিআইপি ও ব্যবসায়ীদের এলাকা, সেক্ষেত্রে নির্বাচিত হলে তাদের জন্য আপনার পরিকল্পনা কি?

বাহাউদ্দিন নাছিম : একজন জনপ্রতিনিধির প্রথম কাজটি হলো মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা। একজন জনপ্রতিনিধি সব মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে আবার এটাও সম্ভব না। তবে আমি বিশ্বাস করি, মানুষের সঙ্গে মিশতে পারলে, মানুষের মন জয় করা খুব কঠিন কিছু না। মানুষ কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির কাছে, নেতার কাছে, এমপির কাছে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো শেয়ার করতে আসে। তাদেরকে একটু সময় দিলে, তাদের কথা শুনলে, তাদের কষ্ট-দুঃখ লাঘব হয়। মানুষ কিন্তু জনপ্রতিনিধির কাছে অর্থবিত্ত, সম্পদ, ব্যবসা চাইতে আসে না। তারা তাদের একান্তই ছোটখাট বিষয়গুলো দূর করার জন্য আসে।

তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এলাকা থেকে যেসব এমপিরা নির্বাচিত হয়, তাদের কিন্তু অনেক বেশি কাজ করতে হয় না। কিন্তু কাজগুলো সমন্বয় করা দরকার হয়। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলররাই মূলত নাগরিকের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দূর করার জন্য কাজ করে। সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করলে মানুষের যে অধিকার সে অধিকারগুলো পূরণ করা সম্ভব। মানুষ চায় কি? শান্তি। মানুষ চায় কি? স্বস্তি। মানুষ চায় কি? নির্বিঘ্নে বসবাস করতে। সেখানে সন্ত্রাসীদের দ্বারা মানুষের জীবন অতিষ্ট হউক এটা মানুষ চায় না। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের বিষয় থাকে যা মানুষকে কষ্ট দেয়। যা মানুষকে স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত করে। আরও অনেক বিষয় আছে। এগুলো নিয়ে আমি কাজ করছি, মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছি, মানুষের চোখের ভাষা থেকেও অনেক বিষয় বুঝতে হয়, দেয়াল লিখন পড়েই কিন্তু সবকিছু বোঝা যায় না। মানুষের মনের কথা উপলব্ধিতে নিয়েই এটা বুঝতে হয়। এই বিষয়গুলো কম-বেশি সবই আমি ধারণ করি।

নাছিম বলেন, এই এলাকাতে কি কি অসুবিধা আছে, এই এলাকার অভিভাবকরা কি চায়, এই এলাকার শিক্ষকরা কি চায়, নির্বাচনী এই এলাকার যারা ছাত্র-ছাত্রী তারা কীরকম পরিবেশ চায়, সবকিছুকে ইতিবাচকভাবে নিয়ে, ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে, ইতিবাচক দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্বশীল কাজগুলো যদি আন্তরিকতার সঙ্গে করি, সেক্ষেত্রে আমার নিজের ভেতর যদি কোনো সংশয় না থাকে, আমার নিজের ভেতরে বিবেকবোধের জায়গায় যদি আমি পরিষ্কার থাকি, সততার সঙ্গে, নীতির সঙ্গে যদি আমি কাজ করি, অনেক অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ ভালোর সঙ্গে, সত্যের সঙ্গে, ন্যায়ের সঙ্গে যারা কাজ করবে তাদের সমর্থন করে, করবে। এটা কিন্তু বাংলাদেশের, বাঙালির ঐতিহ্য।

প্রশ্ন : আসনটি আগে শরিকদের ছিল, এখন আপনাকে দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে শরিকদের কাছ থেকে আপনি কি রকম সহযোগিতা পাচ্ছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : শরিকদের সঙ্গে আমার খুবই ভালো যোগাযোগ আছে। বর্ষীয়াণ নেতা মেনন ভাইয়ের সঙ্গে আমার আজকেও আলাপ হয়েছে। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে ও ১৪ দলের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক আছে, সমন্বয় আছে। সবকিছুই সুন্দরভাবে সমাপ্ত হবে। এটা নিয়ে নতুন কোনো ভাবনা, আশঙ্কা নেই।  

প্রশ্ন : মনোনয়ন পাওয়ার পরই ভোটাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা কি, তারা কি চায়?

বাহাউদ্দিন নাছিম : আমি আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসছি, দলীয় কাজও করতে হয়, সেটাও করছি। আমার কাছে মনে হয় ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হিসেবে বলছি না, আমি যা দেখছি, আমি যা বুঝছি, মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস আছে। আওয়ামী লীগের যারা মাঠের কর্মী, তৃণমূলের কর্মী, তারা খুবই আনন্দিত, খুশি। আমাকে এত যোগ্যলোক হিসেবে, আমি মনে করি না। তবে আমি একটা বিষয় বুঝতে পারি এখানে নির্বাচনে আমার বিজয়ী হতে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। আরও একটা বিষয় আমার মনে হচ্ছে, ভালো সংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসবে। দল মত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আমাকে ভোট দেবে। অনেকেই বলেছে, ভাই আমি ভোট দিতে এমনিতেই যাই না, তবে এবার আপনাকে একটা ভোট দেব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ব্যাংকপাড়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকদের ভেতরেও এ কথা বলা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এত বড় এলাকার মধ্যে ঘুরে ঘুরে ভোট চেয়ে কিন্তু কাভার করা যাবে না। গণমাধ্যম, সংবাদ মাধ্যমের সাপোর্ট আমার দরকার। সহযোগিতা দরকার। আমি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি করি। আমি অসাম্প্রদায়িক মানুষ। বৈষম্যহীন দেশ গড়ে উঠুক, এটা আমার এক ধরনের চিন্তা। এই চিন্তাটা সবসময় আমার বিবেকের ভেতর কাজ করে। বৈষম্যহীন দেশ আমরা গড়ে তুলতে পারলে তবেই তো আমরা আরও বেশি শক্তিশালী দেশে পরিণত হব। মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ সেটা কমে আসবে। ব্যবসায়ীদের কাছে আমি আতঙ্কিত মানুষ না। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তো আমি যুদ্ধ ঘোষণা করব না। করা সম্ভবও না, উচিতও না। তবে ব্যবসায়ীদেরও দেশপ্রেমিক হতে হবে। সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে।  

প্রশ্ন : ১৪ দলের শরিকদের আসন বণ্টনের দায়িত্ব আপনাদের দেওয়া হয়েছে, বিষয়টা নিয়ে আপনারা কতটুকু অগ্রসর হচ্ছেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম : আমাদের আলোচনা চলছে। শিগগিরই এটা (সিট বণ্টন) শেষ হবে। আমরা চেষ্টা করছি এটা বেশি দেরি যেন না হয়। আমরা আগে বলেছিলাম ১৬-১৭ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। আমার মনে হয় তার আগেই শেষ হবে। সমঝোতা ও পারস্পরিক যে বোঝাপড়া, এটা আগেই হবে।

এমএসআই/জেডএস