মনোনয়ন চূড়ান্ত হলে আ.লীগের সঙ্গে ‘আসন সমঝোতা’ জাপার
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৯৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এখন চূড়ান্তভাবে কত প্রার্থীর মনোনয়ন টিকবে, সেদিকে তাকিয়ে আছে তারা। দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হলেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে সমঝোতার আলোচনায় বসতে চায় দলটি। যদিও মুখে জাপার নেতারা ‘সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেবে না’ বলে জানিয়েছে।
দলটির নেতারা বলছেন, এখনই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় বসবে না তারা। কারণ হিসেবে দলটি বলছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে দেখা গেল তারা কিছু আসনে ছাড় দিল। কিন্তু নানা কারসাজি করে সেসব আসনের অধিকাংশ জায়গায় তাদের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হলো। তখন আওয়ামী লীগ বলবে যে, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আসন ছাড় দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন বাতিল করেছে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) যেন সেই সুযোগ না পায় সেজন্য চূড়ান্ত মনোনয়ন হওয়ার পর আসন সমঝোতা নিয়ে বসা হবে। তখন দলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত তালিকাও দেওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে দেখা গেল তারা কিছু আসনে ছাড় দিল। কিন্তু নানা কারসাজি করে সেসব আসনের অধিকাংশ জায়গায় তাদের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হলো। তখন আওয়ামী লীগ বলবে যে, আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী আসন ছাড় দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন বাতিল করেছে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পর্যন্ত আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেই আমাদের। আমরা কোনো তালিকাও তাদের দেব না।
এবার জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে। এখন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে— উল্লেখ করেন চুন্নু।
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চূড়ান্ত মনোনয়নে আমাদের কত প্রার্থী টেকেন, সেই অপেক্ষায় আছি আমরা। আমাদের ধারণা, চূড়ান্তভাবে ২২০-২৩০ প্রার্থীর মনোনয়ন টিকবে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে আমরা নিজেরা বসব। সেখানে কোন কোন আসনে আমরা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছাড় চাইব, সেই তালিকা করব। এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসব।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, আমার আসনে আওয়ামী লীগের একজন নারী প্রার্থী আছেন। তিনি গত তিনটি নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছেন। আবার স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ বেশ শক্তিশালী। সেখানে আসন সমঝোতা না হলে আমার জয় পাওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্যদিকে, এ আসনে আমি এমপি থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের (আওয়ামী লীগ) নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে, সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে জেনে ও বুঝে আমি কেন নির্বাচনে অংশ নেব?
জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘আজ ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন। ফলে, আজ জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয় কি না, তা দেখার অপেক্ষায় আছি। আমরা দেখব যে, আমাদের হেভিওয়েট কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে কি না। সেখানে যদি এমন কেউ থাকেন যাকে আগামী সংসদে আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাহলে আগে তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার সমঝোতা করতে হবে। এরপর আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনায় যাব।’
এ নেতা আরও বলেন, এবার নির্বাচনে জাপার অবস্থান ভালো। কারণ, রওশন এরশাদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তা-ই জি এম কাদের এককভাবে শক্তিশালী। ফলে, এবার আওয়ামী লীগের কাছে আসনও বেশি চাওয়া হবে। গতবার আমাদের ২৯টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। এবার আমাদের দাবি থাকবে ৫০ আসনের বেশি। সেটি কমপক্ষে ৪০ আসনের মধ্যে রাখার চেষ্টা থাকবে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে প্রকাশ্যে আসন সমঝোতা হবে না। কারণ, ‘গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচন দেখাতে বিরোধী দল হিসেবে সমঝোতা হলে সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ফলে, জাতীয় পার্টি কোন কোন আসনে ছাড় চায় সেই তালিকা দিলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
আরও পড়ুন
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির আসনগুলোতে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো তালিকা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তারা যদি নিজেদের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাচন করে, এ মুহূর্তে এটাই হবে তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো খবর। সত্যিকারের অপজিশন (বিরোধী দল) হিসেবে নিজেদের দাঁড় করানোর একটা মোক্ষম উপায়। তারা নিজেরাই নির্বাচন করতে পারলে আমরা স্বাগত জানাব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আমি এ মুহূর্তে নির্বাচনী এলাকায় আছি। যত দূর জানি জাতীয় পার্টির সঙ্গে এখনও আসন নিয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি। তবে, জি এম কাদের বিরোধী দলের নেতা এবং দলে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না— এমন সমঝোতা করে তাদের নির্বাচনে আনা হয়েছিল।
তাদের তো আসন ছাড় দিতে হবে। সেটি কত আসনে, তা নিয়ে আলোচনা হলে তাদের চাহিদার বিষয়টি জানতে পারব। তবে, গতবারের চেয়ে যে বেশি দিতে হবে সেটি বোঝা যাচ্ছে। এটি তো এরশাদের (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) দল, যে কোনো সময় তারা উল্টাপাল্টা কিছু করতে পারে— বলেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা।
এএইচআর/