আটঘাট বেঁধে নির্বাচনের মাঠে ছাত্রলীগ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করার চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নে একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে থেকে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভাগ ও মহানগর থেকে শুরু করে জেলা, থানা এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেগঞ্জেও দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিস্তর ও কৌশলী ছক চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেহেতু আসন্ন নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ বেশি তাই সূক্ষ্ম পরিকল্পনা ও কৌশলী পদক্ষেপের মাধ্যমে মানুষের কাছাকাছি পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে সারাদেশে সুশৃঙ্খলভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে। সেজন্য সময় নষ্ট না করে প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথেই আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী সময়জুড়ে প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে ঝাপিয়ে পড়বেন তারা।
বিজ্ঞাপন
এজন্য গঠন করা হয়েছে ‘বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম’। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের শাসনকালের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, বিদ্যমান কার্যক্রমসহ অন্যান্য বিষয় স্থান পাচ্ছে সাংগঠনিক প্রচার-প্রচারণায়। মানুষের সামনে এসব কার্যক্রম তুলে ধরতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ক্যাম্পেইনের মতো কর্মসূচি।
আরও পড়ুন
সম্প্রতি নৌকার জন্য প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৩০ মিনিটের ক্যাম্পেইন পরিচালনার ঘোষণা করা হয়েছে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। যেখানে শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে এবং নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, নতুন ভোটার, তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নৌকার জন্য ৩০ মিনিট’ সময় ব্যয় করবেন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও সম্পদের সমৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে হবে। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, নতুন ভোটার, তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রসমাজের প্রত্যেক বন্ধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন ৩০ মিনিট শেখ হাসিনার জন্য নিবেদন করবেন। এ সময় তারা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, বিভিন্ন গ্রুপ, পেজ প্রভৃতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মসূচি প্রচার, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কর্মসূচি সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, করোনা ও বৈশ্বিক যুদ্ধ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাবিরোধী গোষ্ঠী ও তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজ নিজ বক্তব্য, লেখা, ভিডিওগ্রাফি, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অনলাইন পেইন্টিং ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এ দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পেছনের মূল কারিগর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই এ ধারা অব্যাহত রাখতে তার (শেখ হাসিনার) বিকল্প কিছু নেই। চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে সাধারণ জনতা, ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম ও নবীন ভোটার এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা নিরলসভাবে দিন-রাত সামাজিক মাধ্যমে (ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম) কাজ করে চলেছেন। এমন কার্যক্রম বিএনপি ও জামায়াতের তথ্যসন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র আর গুজব রুখে দিয়ে সফলতা বয়ে আনবে বলেও মনে করছেন তারা।
আরও পড়ুন
বিভাগীয় সমন্বয়ক কমিটি তদারকি করবে জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় ছাড়া অন্য কোনো কথা ভাবছেন না ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে গঠন করা হয়েছে বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ৭২ জন সহ-সভাপতি, ১১ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক ঠাঁই পেয়েছেন এ কমিটিতে। হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য যাবতীয় কৌশল প্রণয়ন করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত রাখতে কাজ করবেন তারা। এ ছাড়া বিশেষভাবে সার্বিক নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, আচরণবিধি মোতাবেক নির্বাচনী প্রচারণা, কেন্দ্রভিত্তিক টিম গঠন প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান, প্রশিক্ষণ দান, সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে দিকনির্দেশনা এবং সুপারিশ প্রদান করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগীয় সমন্বয়ক টিমে পুরো দেশকে ভাগ করা হয়েছে সাতটি ভাগে। সেগুলো হলো- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগকে দুই ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগ- ১ এ জায়গা পেয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ। ঢাকা বিভাগ- ২ এ জায়গা পেয়েছে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম বিভাগ- ১ এ জায়গা পেয়েছে রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও বান্দরবান। চট্টগ্রাম বিভাগ- ২ এ জায়গা পেয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর।
বিভাগীয় সমন্বয়ক কমিটির কার্যক্রম সাজাতে গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিভাগীয় সমন্বয়ক টিমের জরুরি সভা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি এবং ঢাকা বিভাগ- ২ এর সমন্বয়ক টিমের সদস্য ফুয়াদ হাসান বলেন, নির্বাচনের অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম মাঠপর্যায়ে সরাসরি তদারকি করবেন। কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা-মহানগরপর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং মানুষের বাড়িবাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে নৌকা মার্কার জয়ধ্বনি। আমরা বিশ্বাস করি যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের মুখে চুনকালি মেখে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। বিদেশিদের কাছে হাতজোড় করে ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। যারা এখনও মনে করছে ভিনদেশিদের কাঁধে ভর করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসা যাবে, তাদের সে চিন্তা শিগগিরই হাওয়ায় মিশে যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এ নেতা আরও বলেন, দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে এ দেশের স্বাধীনতা এসেছিল। পরবর্তীতে তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের কান্ডারি হয়েছেন। সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশের খেতাব থেকে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে এসেছেন। দেশের এ উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিকল্প কিছু নেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে তার নেতৃত্বে আবারও সরকার গঠনের বিষয়টি গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার হাতেই মানুষ আবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কেন্দ্রভিত্তিক তৃণমূল মুনশিয়ানা দেখাবে ভোটের মাঠে
নির্বাচন ঘিরে সরগরম তৃণমূল পর্যায়ও। সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা, ভোটারদের কাছে যাওয়া এবং ভোটারদের মন জয় করে ব্যালট যুদ্ধে নৌকা প্রতীককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবরকম সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করবে সংগঠনটি। এরই মধ্যে স্থানীয় কেন্দ্র ও আসনভিত্তিক সেল তৃণমূল পর্যায়েও গঠন করা হয়েছে। তবে, এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে স্থানীয় ভোটারদের। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্ব স্ব এলাকায় যে কেন্দ্রের ভোটার সেখানেই দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের আগে তো কাজ করবেনই, ভোটের দিন স্থানীয় ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করানোর দায়িত্বও পালন করবেন তারা। এক্ষেত্রে আসনভিত্তিক সমন্বয়ক কমিটি তত্ত্বাবধান করবেন তাদের।
বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগ কেন্দ্রভিত্তিক একটি সেল গঠন করেছে যেখানে একজন সমন্বয়কের নেতৃত্বে সাধারণ সদস্যরা কাজ করবেন। সে ধারাবাহিকতায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণেও আমরা প্রত্যেকটি কেন্দ্রে একজন করে সমন্বয়ক ও সদস্য দিয়ে কমিটি গঠন করার কার্যক্রম চলমান রেখেছি। এ টিমের সদস্যরা অবশ্যই দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রের ভোটার। তারা ভোটকেন্দ্রভিত্তিক যে এরিয়া আছে সেখানে প্রচার-প্রচারণা চালাবেন এবং জনগণের কাছে গিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিগত ১৫ বছরের উন্নয়ন সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরবেন।
একই সঙ্গে আসনভিত্তিক কমিটিও নির্বাচনের কাজে সরাসরি যুক্ত হবে— জানিয়ে তিনি বলেন, আওতাধীন এলাকার আসনগুলোতে আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদক সরাসরি সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকব। আমাদের মহানগরী এবং বিভিন্ন থানার নেতৃবৃন্দ সেখানে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে করা হচ্ছে। যেমন- কমিটি করার ক্ষেত্রে ওই আসনের ভোটারের বাইরে অন্য কাউকে কেন্দ্র এবং আসনভিত্তিক কার্যক্রমে রাখছি না। যখন নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দ হয়ে যাবে সাথে সাথেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা মাঠে ছড়িয়ে পড়বেন। নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করার পরই তারা ঘরে ফিরবেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিজয়ের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের কিছু রাজনৈতিক দলের টানাপোড়েন এবং বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ তৃণমূল পর্যায়ে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের জন্ম হয়েছে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য। আমরা জন্মলগ্ন থেকে কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা পালন করেছেন। বহির্বিশ্ব হিসেবে আপনি যাদের ইঙ্গিত করছেন তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের পক্ষে ছিল না। তারপরও দেশপ্রেমিক বাঙালিরা পাকিস্তানি হায়েনাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। বর্তমান বিষয়টিও আমরা সেই স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো মনে করছি। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। দেশের ভালো-মন্দের সিদ্ধান্ত আমরাই নেব। কোন দেশ কী বলল বা কী মনে করল, তাতে আমরা মোটেও বিচলিত নই এবং কর্ণপাতও করছি না। অতীতের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী অঙ্গ-সংগঠন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।
শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবে ছাত্রলীগ
যা-ই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত মাঠ ধরে রাখবেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নির্বাচন ঘিরে কোনো সমস্যা তৈরি হলেও সেটি প্রতিহত করা হবে শক্ত হাতে। এমনটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। নির্বাচন ঘিরে প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধ্যায় বলে আমরা মনে করি। কারণ, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফয়সালা হবে বাংলাদেশে সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত থাকবে নাকি অশুভ শক্তি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। বিষয়টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্ধারিত হবে।
নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত কেউ করলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে— উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি স্বার্থান্বেষী ও ধর্মান্ধ গোষ্ঠী নির্বাচনকে বানচাল করতে চেষ্টা করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে সেই উৎসব বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে, বোমাবাজি করে, ককটেল ফাটিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। তবে, আমরা শঙ্কিত নই, ভীত নই। এ অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে দেশের মানুষকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে।
অবশ্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে সারাদেশে গণতান্ত্রিক জোয়ার এসেছে— বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনকে ঘিরে গোটা বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক জোয়ার তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে অনেক বেশি উৎসাহী। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তা-ই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাদের এ ভোট উৎসবকে আরো রঙিন করতে এবং নতুন প্রজন্মের তরুণ ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে কাজ করবে। এক্ষেত্রে তরুণদের আকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো যেন রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে প্রাধান্য পায় সেটি নিশ্চিত করার জন্যও আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাকে যারা ব্যাহত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করতে চাই। একই সঙ্গে গোটা বাংলাদেশকে জানিয়ে দিতে চাই, দেশের বৃহৎ ছাত্রসমাজ স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলেছে সেটার বহিঃপ্রকাশ নির্বাচনে হবে। এমন অবস্থা সামনে রেখে আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আমরা কিন্তু ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৪৩ হাজার ৩৫০টি কেন্দ্রে কাজ করার জন্য একটি টিম গঠন করেছি। আমাদের আট লাখ কর্মী সরাসরি তৃণমূল পর্যায়ে নেতৃত্ব প্রদান করবে, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহিত করবে।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, তরুণ প্রজন্মই এ নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করবে। আমরা বিভাগ থেকে শুরু করে স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটি করেছি। প্রতিটি নেতাকর্মী নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সুন্দর একটি সাংগঠনিক বিন্যাসের মাধ্যমে সর্বোচ্চ কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করবে।
বিএনপির নির্বাচনে না আসার বিষয়টি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব ফেলবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মানুষ ভোট নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে যে স্বপ্ন এবং শেখ হাসিনার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে ভালোবাসা সেটি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আর এসবের মাধ্যমেই অপশক্তির সমস্ত কার্যক্রম বিনাশ হয়ে গিয়েছে। তাদের অপচেষ্টা ভেস্তে গেছে।
‘মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এমন অবস্থায় যদি কেউ ভোট নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে বা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, সহিংসতা করে মানুষকে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করে, তাহলে তাদের বিষয়ে এমনিতেই মানুষের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। শুধু সামাজিক নয় বরং সারা দেশে নাগরিক প্রতিরোধও গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ সবক্ষেত্রে তাদের বয়কট করবে।’
আরএইচটি/এমএআর/