দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
মনোনয়ন দৌড়ে আছেন ২ ডজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান অন্তত দুই ডজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), অতিরিক্ত আইজিপি ও সাবেক এসপি রয়েছেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে একই আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী সাবেক দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যেসব সরকারি কর্মকর্তা চাকরি থেকে কমপক্ষে তিন বছর আগে অবসরে গেছেন, কেবল তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এবার এই তিন বছরের বিধানও কমানোর চেষ্টা করেছিলেন একদল সরকারি কর্মকর্তা। যদিও শেষ পর্যন্ত সফল হননি তারা।
বিজ্ঞাপন
তিন বছর আগে অবসরে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকে যেমন মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন, তেমনি তারও আগে অবসর নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারাও রয়েছেন সেই দৌড়ে। তাদের মধ্যে বর্তমান এমপি ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ও সাবেক এসপি হাবিবুর রহমানও আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পুলিশের ৮৮ কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তারা। তাদের মধ্যে ছিলেন ১৫ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ১৯ অতিরিক্ত আইজিপি, ২৪ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ৩ অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ১৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি)। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
শরীয়তপুর-১ থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক আইজিপি শহীদুল
এ কে এম শহীদুল হকের জন্ম শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার নরকলিকাতা গ্রামে। ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের অন্যতম প্রবর্তক শহীদুল হক। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে যোগদান করে ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেওয়া সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শকদের একজন তিনি।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। নেত্রী যদি চান আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামব। রাজনৈতিক নেতারা যেভাবে মনোনয়ন আদায় করেন, আমি তো সেটা পারি না। তবে শরীয়তপুরের মানুষ অধীর আগ্রহে বসে আছেন। তারা আমাকে চান, বলেন চেষ্টা করেন। আমি চেষ্টা করছি। বাকিটা নেত্রীর ওপর।
তিনি বলেন, আমার এলাকায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন মানুষ আমাকে কীভাবে চাচ্ছেন। সেখানে অনেক গ্রুপিং আছে। আমি শরীয়তপুর-১ থেকে আগ্রহী। আমি এলাকার জন্য চেষ্টা করেছি সর্বোচ্চ কিছু করার। আমি মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। এটি ২০২২ সালে ঢাকা বিভাগ থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি পেয়েছে।
কিশোরগঞ্জ-২ এমপি নূর মোহাম্মদের প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দ
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন বর্তমান এমপি ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদের প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা কাহার আকন্দ। নির্বাচনী প্রচারণা, এলাকায় জন-সম্পৃক্ততায় গিয়ে হামলার শিকারও হয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন
আবদুল কাহার আকন্দ পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি)। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে আলোচিত তিনি।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মাঠের অবস্থা খুবই ভালো। এলাকায় খবর নেবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী নূর মোহাম্মদেরও খবর নেবেন। দলের সবাই জানে, যোগাযোগও আছে। আমি নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেই মাঠে নেমেছি। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে মাঠ চষে বেড়াচ্ছি। মাঠ গুছিয়েও এনেছি। এখন নেত্রীর চূড়ান্ত মনোনয়নের অপেক্ষায় আছি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পুলিশের ৮৮ কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তারা। তাদের মধ্যে ছিলেন ১৫ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ১৯ অতিরিক্ত আইজিপি, ২৪ উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ৩ অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ১৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি)। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
অন্যদিকে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এবং সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ইতোমধ্যে সংসদে গেছেন। এবারও মনোনয়ন পেতে চান তিনি।
নূর মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার খবর পাবেন এলাকার মানুষের কাছ থেকে। আমার কথা আমি বললে তো ভালোই বলব। নিজের কথা কেউ খারাপ বলে না। দল চায় কি না সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে আমি আমার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জামালপুর থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-১ আসনে (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ)। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান।
২০১৯ সালের ৫ মে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক(প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান অবসরোত্তর ছুটিতে যান। মোখলেসুর রহমান ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশনস) ছাড়াও অপরাধ তদন্ত শাখার (সিআইডি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে ঘন ঘন যাতায়াত করছেন। গণসংযোগ করছেন এ দুই উপজেলাতেই। বর্তমান সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়।
জোটের কারণে গত নির্বাচনে বঞ্চিত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিমও মনোনয়ন দৌড়ে
বিএনপির আমলে চাকরি হারানো মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় কর্মরত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিমও নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী।
১৯৬৯ সালে গ্রাজুয়েশন লাভের পর আব্দুর রহিম নিজ এলাকা আঠারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। পরে এ কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের আঞ্চলিক সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরও পড়ুন
বিসিএস প্রথম ব্যাচে ১৯৭৩ সালে এএসপি হিসেবে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন আব্দুর রহিম। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় তাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলে পরদিন তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ টিমে।
জোটের কারণে গত নির্বাচনে বঞ্চিত সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আবদুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত নির্বাচনে আমি জনপ্রিয়তার জরিপে প্রথম ছিলাম। এরপরও জোটের কারণে বঞ্চিত হয়েছি। জোটের কারণে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারও আমি নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। দল থেকে এখনো কিছু জানায়নি। ৪-৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও এবার আমার পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রচার-প্রচারণায় আনুষ্ঠানিকভাবে নামিনি। মনোনয়ন পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী বগুড়া-৫ আসনের তিনবারের এমপি সাবেক এসপি হাবিবর
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির আমলে চাকরি হারানো সাবেক এসপি মো. হাবিবর রহমান। হাবিবর রহমান রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।
তিনি বলেন, চতুর্থ বারের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী। এলাকায় আমার অবস্থান ভালো। নতুন নতুন ভাবনা সৃষ্টি করে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু করেছি। এবার মনোনয়ন পেলে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারব।
প্রত্যাশা করলেও যেচে মনোনয়ন চাইবেন না সাবেক আইজিপি মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও গোদাগাড়ীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েও না পেয়ে অভিমানী মতিউর রহমানের মন্তব্য, যেচে দলের মনোনয়ন চাই না। নেত্রী চাইলে নির্বাচন করব।
জানা গেছে, মতিউর রহমান স্কুল জীবনেই রাজনীতিতে আসেন। সর্বশেষ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার সময় পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন মতিউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় বিএনপি সরকার। পরের বছরেই আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন আওয়ামী লীগে।
আরও পড়ুন
সেই সুবাদে ২০০৮ সালে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য করা হয় তাকে। ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি একই দায়িত্ব পালন করেন। গত নির্বাচনে জোরালো চেষ্টা করেও মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি।
মতিউর রহমান বলেন, আমিসহ ৬৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না। আমারও হয়নি। কৃষির বহুমুখীকরণসহ আদিবাসী অধ্যুষিত এ জনপদের উন্নয়নে অনেক কাজ করার বাকি। আমি তিনবার মনোনয়ন চেয়েও, চেষ্টা করেও পাইনি। আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু এবার যেচে মনোনয়ন চাইব না। নেত্রী দিলে করব।
নির্বাচনে গেলে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক আইজিপি এম এ কাইয়ুম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনের জন্য বিএনপির ফরম তুলে আলোচনায় আসেন আবদুল কাইয়ুম। ২০০৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পুলিশের আইজির দায়িত্ব পালন করা এম এ কাইয়ুম ১৯৪৮ সালে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ থানার পাখিমারা গ্রামে জন্ম নেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন কাইয়ুম। তিনি পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক, উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ডিএমপির কমিশনার এবং সারদা পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।
এবারও তিনি নির্বাচনী আওয়াজে আছেন। জামালপুর-২ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনবেন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে নয়, বিএনপি থেকে। যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তবেই।
সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন চান সাবেক এএসপি শেখ আতাউর রহমান
বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের সাবেক সিনিয়র এএসপি শেখ আতাউর রহমান সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ ও ওলামা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা তিনি। চূড়ান্ত মনোনয়ন পেতে হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বর্তমান সংসদ সদস্য জগলুল হায়দারের সঙ্গে।
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কোন্দলে হেরে যাওয়া শেখ আতাউর রহমান বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। এজন্য আমাকে বিএনপি আমলে জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়। বাংলা ভাইকে ধরার ক্ষেত্রে আমি ছিলাম। আমি সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। উপজেলা নির্বাচনে কোন্দলের কারণে পারিনি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার কান্ডারি হতে চাই।
বরিশালে নৌকায় মনোনয়ন প্রত্যাশী মুজীবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া মাহবুব উদ্দিন
বরিশাল সদর উপজেলার আমানতগঞ্জের মাহবুব উদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসিকতার জন্য পেয়েছেন বীর বিক্রম খেতাব। বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার পুলিশ প্রশাসক ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করলে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।
মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা মাহবুব এলাকায় এসপি মাহবুব নামে পরিচিত। গত ঈদুল আজহার রাতে হঠাৎ করেই তিনি নিজের বাড়িতে দলীয় নেতা-কর্মীদের জন্য ভুরিভোজের আয়োজন করে আলোচনায় আসেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর পুলিশের চাকরি হারানো মাহবুব উদ্দিন এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নৌকার মনোনয়ন চাই। আমি কী করেছি, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক ছিল সবই নেত্রীর জানা। আগে চেষ্টা করিনি এবার করছি। এলাকায় খোঁজ নিলে জানতে পারবেন আমার অবস্থান।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, যেসব সরকারি কর্মকর্তা চাকরি থেকে কমপক্ষে তিন বছর আগে অবসরে গেছেন, কেবল তারাই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এবার এই তিন বছরের বিধানও কমানোর চেষ্টা করেছিলেন একদল সরকারি কর্মকর্তা। যদিও শেষ পর্যন্ত সফল হননি তারা।
এদিকে, বাগেরহাট-৪ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিম খান।
এছাড়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপিদের মধ্যে নুরুল আলম, আলী ইমাম চৌধুরী, খন্দকার মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, আবদুল মান্নান, সাবেক ডিআইজি দেওয়ান হাবিবুল্লাহ, সফিক উল্লাহ, খন্দকার সাহেব আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মোখলেসুর রহমান, শাহ আলম সিকদারসহ অন্তত দুই ডজন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।
সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন দৌড়ে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত হওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। তবে অবসর নেওয়ার পর যদি কেউ রাজনীতিতে যুক্ত হতে চায় তাতে তো সংবিধান বাধা দেয়নি। ফলে এটা নেতিবাচক কিছু নয়। বরং কিছুটা ইতিবাচক হতে পারে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা কালো আইন। অন্যান্য দেশে সরকারি কর্মকর্তারাও নির্বাচন করতে পারেন। জিতলে চাকরি ছাড়তে হয়, হারলে চাকরিতে বহাল থাকে। আমাদের দেশে তা নেই। এখানে আলু-পটোলের ব্যবসায়ীরা যদি রাজনীতি করতে পারেন তাহলে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ারা পারবেন না কেন? তারা তো নাকে খত দেয়নি যে কখনো রাজনীতি করবে না।
নিজে কখনো কোনো দলের হয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না নিশ্চিত করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনীতিতে নেওয়া।
জেইউ/এসকেডি