বিএনপির পর দলটির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সাদা পোশাকে গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলগুলোর নেতাদের ওপর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ ও প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করা হচ্ছে।

যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীরা বলছেন, বিএনপির বাইরে যেসব দল ও জোটের নেতারা রাজপথে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন তাদের গ্রেপ্তারের একটা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে, সেটাও এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ, তফসিল ঘোষণার পর সরকার চাইলেও এভাবে গ্রেপ্তার করতে পারবে না। আসলে সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলনে আছে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। যেন মাঠের আন্দোলন জমে উঠতে না পারে।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলের শীর্ষ নেতারা/ফাইল ছবি

১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহদাত হোসেন সেলিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার যতই হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার করুক, কিছুই যায় আসে না। সামনে আরও গ্রেপ্তার হতে পারে। কিন্তু আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, জোটের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিকে যে কোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা হতে পারে— এমন খবর ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, গ্রেপ্তার আতঙ্ক নিয়ে কেউ আত্মগোপনে যাবেন না। যে কোনো অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চ/ছবি- ঢাকা পোস্ট

গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘গতকাল ১২ দলীয় জোটের নেতা এহসানুল হুদাকে সাদা পোশাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা গতকালই তার নিন্দা জানিয়েছি। যারা বিভিন্ন দল ও জোটে রাজপথে সক্রিয় আছেন, তাদের গ্রেপ্তারে ধারাবাহিক অংশ হতে পারে এটি। তবে, সরকার যা-ই করুক আমরা আমাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত ৩৬ দল। দলগুলোর নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে গত দুদিনে দুটি দলের শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। কাউকে বলা হচ্ছে আন্দোলন থেকে সরে আসতে। আবার যাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান ভালো তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করে যাচ্ছে গণঅধিকার পরিষদের উভয় অংশ। একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সরকার তো খুবই দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তারা বিরোধী দলকে কারাগারে রেখে একটা পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন সেই একতরফা নির্বাচনের সঙ্গী হচ্ছে।’

এক দফা দাবিতে দেশজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ/ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির কিছু নেতাকে বাগিয়ে নিয়ে এবং আরো ছোট-ছোট কিছু দলকে নিয়ে একটা পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে সরকার। যেন বিদেশিদের দেখাতে পারে যে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদের যেহেতু দেশে-বিদেশে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাই নির্বাচনে অংশ নিতে আমাদের ওপর চাপ আছে। তবে, আমাদের কথা পরিষ্কার— দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব না। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারব না।’

নুর বলেন, ‘প্রথম দিকে আমরা দেখেছি বিএনপি ব্যতীত অন্য দলগুলোর ওপর কোনো খড়ক আসেনি। কিন্তু গতকাল ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ জনতা অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তরিকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী এক দলের শীর্ষ নেতা বলেন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাসহ পশ্চিমাদের একটা চাপ সরকারের ওপর আছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরে তাদের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ধরনের খড়গ নেমে আসবে, সরকার সেটা বুঝতে পারছে। যে কারণে সরকার চাচ্ছে বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের দলের কিছু নেতাসহ অন্য দলগুলোকে নিয়ে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখাতে। সেই কারণে ভদ্র ভাষায় আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে— ‘নির্বাচনে না গেলে আন্দোলনকারীদের অবস্থান হবে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে’।

গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের শীর্ষ দুই নেতা নুরুল হক নুর ও রেজা কিবরিয়া

গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া অংশের সদস্য ফারুক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চাপ তো আছেই। কিন্তু আমরা পরিষ্কার বলেছি— নির্বাচন অংশ নেব না। তবুও যতটুকু সামর্থ্য আছে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এএইচআর/এমজে