দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের দীর্ঘ সারি কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। এ কারণে ভ্যাকসিনে আস্থা রাখতে চাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ / ফাইল ছবি

দেশে বেশ জোরেশোরেই ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা চলছে। কোনোভাবেই যখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের দীর্ঘ সারি থামানো যাচ্ছে না, তখন হয়তো ভ্যাকসিনেই আস্থা খুঁজতে শুরু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সম্প্রতি আলোচনায় আসা আইসিডিডিআর, বি ও যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ‘টিভি-০০৫’ নামক ভ্যাকসিন তৈরিতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (২ অক্টোবর) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এক হাজার ১৭ জন। এ ছাড়া, বছরের এ সময় পর্যন্ত সারাদেশে সর্বমোট ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ আট হাজার ৮৮৪ জন। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন নয় হাজার ২৮৩ জন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাস যা বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে উঠেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির মৃদু লক্ষণে জ্বর ও হাড়ের ব্যথা অনুভূত হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে শক, রক্তপাত, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে। সাধারণত ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন- ১, ২, ৩, ৪) বা সেরোটাইপ একক বা সম্মিলিতভাবে সক্রিয় থাকতে পারে। যেকোনো সেরোটাইপই একজন মানুষকে অসুস্থ করতে পারে। তবে, অন্য কোনো সেরোটাইপ দিয়ে দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার শঙ্কা থাকে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সম্ভাবনার নতুন নাম ‘টিভি-০০৫’

গত ২৮ সেপ্টেম্বর আইসিডিডিআর,বির পক্ষ থেকে ডেঙ্গুপ্রবণ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘টিভি-০০৫’ নামক একটি টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা এ টিকা নিয়ে তাদের ‘চূড়ান্ত’ গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।

জানা গেছে, আইসিডিডিআর,বি ও ইউভিএম’র ভ্যাকসিন টেস্টিং সেন্টারের (ভিটিসি) গবেষকরা ২০১৫ সালে ‘ডেঙ্গু ইন ঢাকা ইনিশিয়েটিভ (ডিডি)’ নামক গবেষণাটি শুরু করে। এ সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার লক্ষ্য ছিল ডেঙ্গু টিকার উন্নয়নে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ২০১৫ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল, ল্যাবরেটরি পরীক্ষণ অবকাঠামো এবং প্রারম্ভিকভাবে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অধ্যয়ন সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য আইসিডিডিআর, বিতে প্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি করা হয়।

 চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০১৭ জন। হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ আট হাজার ৮৮৪ জন / ফাইল ছবি

জানা গেছে, এ টিকার দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তৃতীয় ধাপের কার্যকারিতা ট্রায়াল পরিচালনার অপেক্ষায় আছে।

টিকাটি ডেঙ্গুর চার ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী

আইসিডিডিআর, বির দাবি অনুযায়ী, টিকাটি ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। গবেষণাটির ফলাফল সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, টিভি-০০৫ টেট্রাভ্যালেন্ট লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ডেঙ্গু টিকার নিরাপত্তা, ইমিউনোজেনিসিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতা এবং তিন বছর পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার স্থায়িত্বের অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়েছে। গবেষকরা ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের (বয়স ১- ৪৯ বছর) ১৯২ জন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীকে চারটি ভাগে ভাগ করে ৩:১ অনুপাতে টিভি-০০৫ টিকা বা প্লাসিবো প্রদান করেছেন এবং পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেছেন। টিকা দেওয়ার পরে বেশির ভাগ স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে চারটি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত (২ অক্টোবর) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এক হাজার ১৭ জন। এ ছাড়া, বছরের এ সময় পর্যন্ত সারাদেশে সর্বমোট ডেঙ্গু শনাক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ আট হাজার ৮৮৪ জন। বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন নয় হাজার ২৮৩ জন

এমনকি যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। যদিও গবেষণাটির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়নি, তবে এখন পর্যন্ত টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করা যায়নি।

সম্ভাবনা আছে কিউডেঙ্গারও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে ছাড়পত্র

জাপানের টাকেডা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ‘কিউডেঙ্গা’ (টিএকে-০০৩)। ডেঙ্গুর দ্বিতীয় টিকা হিসেবে গত পাঁচ বছর আগে এসেছে এ টিকা। কিউডেঙ্গা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফল মিলেছে। এমনকি গত সোমবার (২ অক্টোবর) জরুরি প্রয়োজনে এ টিকা ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্রও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি— এমন অঞ্চলগুলোতে ছয় থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এ টিকা ব্যবহার করা যাবে।

জাপানের টাকেডা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ‘কিউডেঙ্গা’। ডেঙ্গুর দ্বিতীয় টিকা হিসেবে কিউডেঙ্গার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফল মিলেছে / ফাইল ছবি

এর আগে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কিউডেঙ্গাকে ছাড়পত্র দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল।

শুধু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়, ডেংভ্যাক্সিয়ার কার্যকারিতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। কারণ, এ টিকার এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ নয়। বরং ফিলিপাইনে এ টিকার প্রয়োগে বেশকিছু শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অথবা ডেঙ্গু-আক্রান্ত হননি এমন চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষ কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন নিতে পারবে। দুই ডোজের কিউডেঙ্গা ভ্যাকসিন ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুরক্ষা দেয় ৮০ দশমিক ২ শতাংশ এবং ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোধ করে ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ। এমনকি এর কার্যকারিতা বজায় থাকে ১৮ মাস পর্যন্ত।

ডেংভ্যাক্সিয়া ভ্যাকসিন নিয়ে আছে ভয়-শঙ্কা

ডেংভ্যাক্সিয়া বিশ্বের সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর টিকা। ফ্রান্সের সানোফি এ টিকা তৈরি করেছে ইয়োলো ফিভার ভাইরাসকে ব্যাকবোন হিসেবে ব্যবহার করে। জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রথম দেশটিতে পরীক্ষামূলকভাবে ডেংভ্যাক্সিয়া ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ টিকা ডেঙ্গুর মাত্র একটি ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর। তবে, এ ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ কারণে এটি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে যারা আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি (সেরোনেগেটিভ), তাদের জন্য ভ্যাকসিনটি নিরাপদ নয়। এ ছাড়া, নয় বছরের কম বয়সী শিশুরা এ ভ্যাকসিনের উপযুক্তও নয়। কম বয়সী শিশু এবং যাদের আগে ডেঙ্গু হয়নি তাদের এ ভ্যাকসিন দিলে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি এক ধরনের ভ্যাকসিনজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সানোফির ভ্যাকসিনটির ফেইজ-৩ ট্রায়াল করা হয়েছিল এক বছর ধরে। তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ট্রায়ালের সময় ধরা পড়েনি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর আইসিডিডিআর,বির পক্ষ থেকে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘টিভি-০০৫’ নামক একটি টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয় / ফাইল ছবি

তারা বলেন, শুধু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়, ডেংভ্যাক্সিয়ার কার্যকারিতা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আছে। কারণ, এ টিকার এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ নয়। বরং ফিলিপাইনে এ টিকার প্রয়োগে বেশকিছু শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

ডেংভ্যাক্সিয়াতে সংযুক্ত করা হয়েছে শুধু ডেঙ্গু ভাইরাসের সার্ফেস এন্টিজেন, যেখানে ডেঙ্গু ভাইরাসের নন-স্ট্রাকচারাল প্রোটিনের কোনো জিন নেই। আছে ইয়োলো ফিভার ভাইরাসের নন-স্ট্রাকচারাল জিন। ফলে ডেংভ্যাক্সিয়া দিলে শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি সাব-টাইপের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হয় কিন্তু সেল মেডিয়েটেড ইমিউনিটি তৈরি হয় না। এই একপেশে ইমিউনিটির কারণে ডেংভ্যাক্সিয়া নেওয়ার পরে ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমণ হলে কিছু কিছুক্ষেত্রে ডেঙ্গু মারাত্মক আকার ধারণ করে। কেন এমন হয় তা খুব একটা পরিষ্কার না। তবে, এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে বলে এন্টিবডি-ডিপেন্ডেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট।

আইসিডিডিআর, বির দাবি অনুযায়ী, টিকাটি ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই উপযোগী। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। গবেষণাটির ফলাফল সম্প্রতি দ্য ল্যানসেট ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে

জানা গেছে, ডেংভ্যাক্সিয়া যখন বাজারে আসে তখনই এটা দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ফিলিপাইনে যখন শিশুরা মারা গেল, তখন সবাই সতর্ক হয়ে গেল। তখন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আমরা এমন কিছু করব না যাতে ইপিআইয়ের (সরকারের টিকাদান কর্মসূচি) অন্যান্য টিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এটা পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ হলে তখন ভাবা যাবে।

আইসিডিডিআর,বির নতুন টিকা ‘টিভি-০০৫’ ডেঙ্গুর চার ধরন প্রতিরোধে বেশ কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে / ফাইল ছবি

সানোফির ডেংভ্যাক্সিয়া ইউএস এফডিএ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ২০টি দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত। তবে, এই অনুমোদন অনুযায়ী ভ্যাকসিনটি শুধুমাত্র দেওয়া যাবে ছয় থেকে ১৬ বছরের বাচ্চাদের, যাদের আগে ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে (সেরোপজিটিভ) এবং যাদের রক্তে এনএস- ১ এন্টিবডি রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে ভ্যাকসিনটির দুটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়েছে শুধুমাত্র দুই থেকে ১৬ বছরের শিশুদের ওপর। পাঁচ বছরের ভ্যাকসিন সার্ভেইল্যান্সে দেখা গেছে, এ ভ্যাকসিন দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে মারাত্মক ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় সাড়ে সাত গুণ।

ডেংভ্যাক্সিয়ার ডোজ তিনটি। প্রথম ডোজ দেওয়ার পর ছয় ও ১২ মাস পরে আরও দুটি ডোজ নিতে হয়। অন্যদিকে, কিউডেঙ্গার ডোজ দুটি। দ্বিতীয় ডোজটি প্রথম ডোজের তিন মাস পর নিতে হয়।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আইসিডিডিআর, বি একটি টিকার ট্রায়াল করেছে। তারা দাবি করেছে, সেকেন্ড ফেইজ ট্রায়ালে তারা সফলতা পেয়েছে। এরপরও  টিকাটির থার্ড ফেইজের ট্রায়াল হতে হবে। ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি দেশ ডেঙ্গুর অন্যান্য টিকার বিষয়ে কাজ করছে। মধ্যে জাপানের কিউডেঙ্গা টিকাটি বেশ কয়েকটি দেশে থার্ড ফেইজের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে।

ডেংভ্যাক্সিয়া বিশ্বের প্রথম ডেঙ্গুর টিকা। এর এমন কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ নয়। বরং ফিলিপাইনে এ টিকার প্রয়োগে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে / ফাইল ছবি

‘আইসিডিডিআর,বির টিকাটির যেহেতু এখনও চূড়ান্ত ট্রায়াল সম্পন্ন করে আসতে অনেক সময় বাকি, সেহেতু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে টিকা ট্রায়ালে ভালো ফলাফল দিয়েছে, সেই টিকার বিষয়েও বাংলাদেশ সরকার ভাবতে পারে।’

ডেঙ্গুতে রেকর্ড আক্রান্ত-মৃত্যুর সময়ে টিকা নিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার টিকা নিয়ে হয়তো একটু সময় নিচ্ছি। এর কারণ আছে। বিষয় হলো, বিশ্বের কোনো দেশেই এখন পর্যন্ত টিকার বিষয়ে পুরোপুরি কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি। আমরা আসলে অনেক দেশকে অনুসরণ করে চলি। সে কারণে হয়তো সরকার টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছে। অন্যান্য দেশে এর ফলাফল সরকার বুঝতে চাচ্ছে।’

বাংলাদেশে টিকার গবেষণা করতে পেরে গর্বিত ড. রাশিদুল

২০০৯ সাল থেকে এ ডেঙ্গু টিকার পরীক্ষা শুরু হয়। বাংলাদেশে এ টিকা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিডিডিআর, বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. রাশিদুল হক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহণে টিভি-০০৫ টিকার গবেষণা করতে পেরে আমরা গর্বিত। টিকাটি হলো একমাত্র একক ডোজের টেট্রাভ্যালেন্ট ডেঙ্গু টিকা, যা টিকাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।’

জাপানের টাকেডা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ‘কিউডেঙ্গা’ (টিএকে-০০৩)। ডেঙ্গুর দ্বিতীয় টিকা হিসেবে গত পাঁচ বছর আগে এসেছে এ টিকা। কিউডেঙ্গা টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কার্যকারিতা নিয়ে ইতিবাচক ফল মিলেছে। এমনকি গত সোমবার (২ অক্টোবর) জরুরি প্রয়োজনে এ টিকা ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্রও দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

‘টিকাটি বাংলাদেশে পরীক্ষার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে পরীক্ষা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল- দুই দেশেই প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের দুটি পরীক্ষাই করা হয়েছে এবং ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে ‘।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত দ্বিতীয় ফেজের ট্রায়ালে টিকার নিরাপত্তা এবং এটির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির সক্ষমতার দিকটি দেখা হয়। তৃতীয় ফেজের ট্রায়ালে টিকার কার্যকারিতা দেখা হয়। বাংলাদেশে দ্বিতীয় ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে, এক্ষেত্রে আমাদের এ টিকা যাদের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাদের তিন বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের কেউই এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। অর্থাৎ আমরা দেখলাম যে এটি সেফ (নিরাপদ) এবং ইমিউনোজেনিক (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে)।’

ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক / ফাইল ছবি

ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে : স্বাস্থ্য মহাপরিচালক

বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। তবে, এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

‘একদিকে আইসিডিডিআর,বি নতুন টিকা নিয়ে আসছে, যা চারটি ধরনেই কার্যকর বলে দাবি করা হচ্ছে। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোর মুখ দেখলে আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত বড় বিষয় হবে। অন্যদিকে আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাপানের ডেঙ্গু টিকা কিউডেঙ্গাকে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে। এটিও ভালো খবর। সবগুলো বিষয় আমরা পর্যালোচনা করছি। খুব শিগগিরই হয়তো একটা সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছাতে পারব।’

টিআই/এমএআর/এসকেডি