বন্ড সুবিধার আওতায় লিকার, বিয়ার, হুইস্কি ও সিগারেট আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। আমদানির পাশাপাশি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের নিলাম করা পণ্যও ক্রয় করে বিক্রির সুযোগ রয়েছে তাদের। এ ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় মদ বা সিগারেট এনে চাইলে দেশের বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় বিক্রি করতে পারে। তবে, সেক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য অপরিশোধিত শুল্ক-কর আদায় এবং সংযোজিত ইনভেন্টরি ভ্যালু (নিজস্ব ব্যয়) ও মুনাফাসহ বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। 

কিন্তু বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রি ও উৎসে মূসকের বিপরীতে ৭৩ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অনুসন্ধানে ওই ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উঠে এসেছে। 

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গঠিত নিরীক্ষা দল বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের নিরীক্ষা বা অডিট সম্পন্ন করে। এরপর অডিট টিম প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার ৯৮২ টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপন করে। 

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুদ্ধ-কর পরিশোধ ছাড়া পণ্য আমদানি করে বন্ডেড ওয়্যারহাউজে ও র‍্যাম্প বন্ডেড ওয়্যারহাউজে গুদামজাত করে। সেখান থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের শুল্কমুক্ত বিপণিতে পণ্য সরবরাহ করা হয়। শুল্কমুক্ত ওই বিপণি থেকে ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী যাত্রীদের কাছে পণ্য বিক্রি করা হয়। এ ছাড়া মহাখালী বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও র‍্যাম্প বন্ডেড ওয়্যারহাউজ থেকে দেশের ভেতরে অনুমোদিত কিছু বার ও হোটেলে বন্ড কমিশনারেট ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন সাপেক্ষে দেশীয় ভোগের জন্য শুল্ক-কর আদায় করে পণ্য বিক্রি করা হয়।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে শুধু আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক-কর আদায় করলেও সংযোজিত ইনভেন্টরি ভ্যালু (নিজস্ব ব্যয়) ও মুনাফাসহ বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট আদায় না করে রাজস্ব ক্ষতি করেছে।

ভ্যাট আদায়ের জন্য মূল্য সংযোজন কর আইন- ১৯৯১ এর ৫৫ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৬ জুন দাবিনামা জারি করে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এমনকি ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের শুনানিও নেওয়া হয়েছে। শুনানি ও নথিপত্র পর্যালোচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়।

অডিট টিমের পর্যালোচনা ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা নথি যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে পাওনা ভ্যাটের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪০ টাকা। অন্যদিকে, শুধু ২০১২-১৩ অর্থবছরে উৎসে মূসকের পরিমাণ ২৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৫ টাকা। সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত তাদের কাছ থেকে ৭৩ লাখ সাত হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য। 

যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ভ্যাট পরিশোধের জন্য কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চলতি আগস্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় কিস্তিতে তাদের ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভ্যাটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত ৭৩ লাখ সাত হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের সুদ মওকুফ করে কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও পাওনা না পাওয়া দুঃখজনক।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও বিপণন) মো. জিয়াউল হক হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলাপ করে পরে জানানো হবে বললেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অপরিশোধিত ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, দেশে মদ বা হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, অগ্রিম আয়কর বা আগাম কর (এটি), ল্যান্ডিং চার্জ, ইন্স্যুরেন্স, মূল্য সংযোজন কর- সবমিলিয়ে ৪৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। হুইস্কি বা ভদকার মতো পানীয় আমদানিতে শুল্কের হার ৬০০ শতাংশের বেশি।

আরএম/জেডএস