ভ্যাট দেওয়া-নেওয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে এনবিআরের সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট / ফাইল ছবি

>> ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজের ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি 
>> টাকা উদ্ধারে দাবিনামা জারি, খারিজ করে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট
>> অডিট নিয়ে মুখোমুখি ভ্যাট গোয়েন্দা ও ঢাকা উত্তর ভ্যাট অফিস
>> ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আপিল

রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের বিভিন্ন সেবায় সরকারের ভ্যাটবাবদ পাওনা প্রায় ২৬ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের নিয়ন্ত্রণাধীন।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে মূসক বা ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। কিন্তু এরপরই বাধে বিপত্তি। ভ্যাট দেওয়া-নেওয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে এনবিআরের সহযোগী দুই প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা বিভাগের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসে ইউনিভার্সেলের ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য। ওই টাকা উদ্ধারে দাবিনামা জারি করা হলেও এনবিআরের অপর প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট তা খারিজ করে দেয়। ফলে ভ্যাট ফাঁকির বিষয় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গোয়েন্দা বিভাগের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে আসে ইউনিভার্সেলের ২৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য। ওই টাকা উদ্ধারে দাবিনামা জারি করা হলেও এনবিআরের অপর প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট তা খারিজ করে দেয়। ফলে ভ্যাট ফাঁকির বিষয় নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। সমস্যা সমাধানে এখন তা এনবিআরের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত গড়িয়েছে।

আরও পড়ুন >> পেট্রোবাংলার পেটে সরকারের ২২ হাজার কোটি টাকা

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, অডিট বা নিরীক্ষার ক্ষমতা রয়েছে ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের। কিন্তু ভ্যাট গোয়েন্দার নিরীক্ষা প্রতিবেদনের আগে ওই ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটিত হয়েছে। সে কারণে ওই দাবিনামার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।

এ অবস্থায় ঢাকা উত্তর কমিশনারেট ভ্যাট গোয়েন্দার দাবিনামা খারিজ করতে পারে না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে / ছবি- সংগৃহীত

এনবিআরের অপর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একতরফাভাবে ঢাকা (উত্তর) কমিশনারেট ভ্যাট অফিস গোয়েন্দা অধিদপ্তরের দাবিনামা খারিজ করে দিয়েছে। বিষয়টি এখন এনবিআরের আপিল ট্রাইব্যুনালে রয়েছে। ট্রাইব্যুনালই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তার আগে কোনো মন্তব্য করা যথাযথ হবে না।

এনবিআর ও ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় দলিল পাঠানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি (আয়েশা মেমোরিয়াল স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল) নজরে আসে। এরপর দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় দিয়ে নথিপত্র দাখিলের জন্য আবারও চিঠি দেওয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠানের লিয়েন ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট আয়কর নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠানোর জন্য আবারও চিঠি দেয় অধিদপ্তর।

২০২২ সালের ২ মার্চ ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরীক্ষা মেয়াদের ভ্যাট সংশ্লিষ্ট দলিল পাঠানোর জন্য বিভাগীয় দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ভ্যাট গোয়েন্দাকে জানায় যে, ইউনিভার্সেল মেডিকেলের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং উদঘাটিত সমুদয় ভ্যাট বা মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন >> নিটল মটরসের ৩৬৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

এদিকে, ভ্যাট গোয়েন্দার নিরীক্ষায় উঠে আসে যে, ইউনিভার্সেল মেডিকেলের পরিহার করা বা ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটবাবদ ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৭৩৯ টাকা এবং সুদবাবদ নয় কোটি ৩৭ লাখ ছয় হাজার ১৬৩ টাকাসহ মোট ২৫ কোটি ৯৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯০৩ টাকা সরকারের পাওনা রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট বরাবর চিঠি পাঠায় সংস্থাটি।

সমস্যা সমাধানে বিষয়টি এনবিআরের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত গড়িয়েছে / ফাইল ছবি  
২০২২ সালের ২ মার্চ ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরীক্ষা মেয়াদের ভ্যাট সংশ্লিষ্ট দলিল পাঠানোর জন্য বিভাগীয় দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ভ্যাট গোয়েন্দাকে জানায় যে, ইউনিভার্সেল মেডিকেলের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এবং উদঘাটিত সমুদয় ভ্যাট বা মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে

অপরদিকে, ভ্যাট গোয়েন্দার নিরীক্ষা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিভার্সেল মেডিকেলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এবং শুনানির জন্য চিঠি পাঠায়। শুনানিতে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করলেও ইউনিভার্সেল মেডিকেলের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। যে কারণে বিষয়টি সুরাহা হয়নি বলে ধরে নেয় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

গত ২৬ এপ্রিল ইউনিভার্সেল মেডিকেলের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিপরীতে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের জারি করা দাবিনামা খারিজ করে চূড়ান্ত বিচারাদেশ জারি করে ঢাকা উত্তর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

আরও পড়ুন >> রানার গ্রুপ : কোম্পানি সেক্রেটারি মিজানুরের সম্পদ কত?

এ ধরনের কার্যক্রম এনবিআরের নিরীক্ষা সংক্রান্ত আদেশের পরিপন্থি বলে দাবি করেছে ভ্যাট নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলছে, চূড়ান্ত বিচারাদেশ জারি করতে পারে না ঢাকা উত্তর কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। তাই ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল করা হয়েছে।

এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্টকে জানান, গত ৩০ জুলাই আপিল দায়ের সংক্রান্ত চিঠি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মূসক গোয়েন্দারা ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট অডিটের জন্য আদেশ জারি করে। এরপর ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকা (উত্তর) কমিশনারেট আদেশ জারি করে। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনায় রয়েছে, যে দপ্তর আগে আদেশ জারি করবে সেই দপ্তর অডিট করবে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঢাকা (উত্তর) কমিশনারেট অডিট করে।

ভ্যাট ফাঁকি বা বকেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ / ফাইল ছবি

এ কর্মকর্তার দাবি, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মূসক গোয়েন্দাকে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ও দলিলাদি সরবরাহ করা হয়নি। ব্যাংক থেকে সিএ রিপোর্ট সংগ্রহ করে একতরফাভাবে নিরীক্ষা করা হয়। ঢাকা উত্তরের কমিশনারও মূসক গোয়েন্দার তথ্য উদঘাটন খারিজ করে দেয়। তাই কমিশনারের আদেশের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আপিল করেছে মূসক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

আরও পড়ুন >> সার্ভেয়ারের চাকরি নাকি সম্পদ গড়ার পরশ পাথর!

এ বিষয়ে আপিলাত ট্রাইব্যুনালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (ম্যানেজমেন্ট কমিটি) কাজী রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের ভ্যাট ফাঁকি বা বকেয়া নেই।

আরএম/এমজে/