টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে সংশয়, সেরাম না দিলে কী হবে?
ভারত সরকার কর্তৃক বিভিন্ন দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা রফতানিতে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে টিকার চালান আসা এবং দ্বিতীয় ডোজের প্রয়োগ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে সরকারের হাতে থাকা টিকার মজুতও কমে আসছে। আবার ৭ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ শুরু হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডোজের মজুত থেকে প্রথম ডোজ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি টিকা না আসে, তাহলে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
গত ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। ২১ জানুয়ারি উপহার হিসেবে আরও ২০ লাখ টিকা পৌঁছায়। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫০ লাখ আসার কথা থাকলেও এসেছে মাত্র ২০ লাখ। মার্চে ৫০ লাখ টিকা আসার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো চালান আসেনি। কবে নাগাদ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হবে সেটা নিয়েও কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজের (এনসিডিসি) পরিচালক ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রফতানি স্থগিতাদেশের কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োগ শেষ করে দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত টিকা আমাদের হাতে মজুত নেই। এ অবস্থায় নতুন করে টিকার চালান না আসা পর্যন্ত আমাদের আশঙ্কার মধ্যেই থাকতে হবে। তবে ৮ তারিখ (এপ্রিল) থেকেই দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে। এটাই আপাতত আমাদের সিদ্ধান্ত।’
রফতানি স্থগিতাদেশের কারণে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রথম ডোজের টিকা প্রয়োগ শেষ করে দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত টিকা আমাদের হাতে মজুত নেই। এ অবস্থায় নতুন করে টিকার চালান না আসা পর্যন্ত আমাদের আশঙ্কার মধ্যেই থাকতে হবে। তবে ৮ তারিখ (এপ্রিল) থেকেই দ্বিতীয় ডোজ শুরু হচ্ছে। এটাই আপাতত আমাদের সিদ্ধান্ত
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, পরিচালক, এনসিডিসি
তিনি আরও বলেন, ‘ভারত সরকারের উপহারের টিকাসহ সর্বসাকুল্যে আমাদের কাছে মোট এক কোটি দুই লাখ টিকা মজুত আছে। এর মধ্যে গতকাল (২৭ মার্চ) পর্যন্ত প্রায় ৫৩ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সামনে আরও কয়েকদিন প্রথম ডোজের টিকা দিয়ে যেতে হবে। এরপর সবমিলিয়ে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করার মতো টিকা আমাদের হাতে নেই। নতুন করে যদি না আসে তাহলে আমাদের অনেকটাই বিপদে পড়তে হবে। যদিও এ মাসের মধ্যে গত মাসের ৩০ লাখ আর চলতি মাসের ৫০ লাখসহ মোট ৮০ লাখ ডোজ টিকা আমাদের পেয়ে যাওয়ার কথা।’
জানা গেছে, আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে কিছু টিকার মেয়াদ শেষ হবে। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্ৰহ এবং মেয়াদ শেষ হওয়ায় বরগুনা জেলার তিনটি উপজেলা থেকে প্রায় তিন হাজার ডোজ টিকা ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। কোভ্যাক্স থেকেও কবে নাগাদ টিকা আসবে বিষয়টি নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়। টিকাপ্রাপ্তি এবং টিকার দ্বিতীয় ডোজ চালুর বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সদস্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আপাতত দেশটির বাইরে টিকা রফতানিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আমি মনে করি এটা কোনো উদ্বেগের বিষয় নয়। কারণ আমাদের হাতে পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। সেগুলো দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ শুরু করা যাবে।
প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার পর ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় থাকে। এরপর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার নিয়ম। আমাদের দেশে প্রথম ডোজ শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। মাত্র দেড় মাসের মতো সময় অতিবাহিত হয়েছে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ এপ্রিল মাসে শুরু করতে না পারলে মে মাসে শুরু করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির সদস্য
‘আমাদের হাতে এখনও যে টিকা রয়েছে, সেগুলো দিতে দিতেই আশা করি টিকা চলে আসবে। এটা নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার পর ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় থাকে। এরপর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়ার নিয়ম। আমাদের দেশে প্রথম ডোজ শুরু হয় গত ৭ ফেব্রুয়ারি। মাত্র দেড় মাসের মতো সময় অতিবাহিত হয়েছে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ এপ্রিল মাসে শুরু করতে না পারলে মে মাসে শুরু করা যাবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না। আর প্রথম ডোজ নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ না নিতে পারলেও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। হয়তো পুরোপুরি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে না, তবে কোনো ক্ষতি হবে না।’
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আশা করি ৭ এপ্রিল থেকেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু করা যাবে। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এখন আমাদের দেখার বিষয় হলো ১২ সপ্তাহের মধ্যে টিকার নতুন চালান আসছে কি না। যদি না আসে, তাহলেই আমাদের দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে। তবে এখনও ১২ সপ্তাহ হতে অনেক সময় বাকি।
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সেরাম টিকা রফতানি বন্ধ করলেও আমাদের কাছে দ্বিতীয় ডোজ পরিচালনার মতো টিকা রয়েছে। এগুলো দেওয়ার মধ্যেই আশা করি টিকা চলে আসবে। এছাড়া আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ তেমন নেই। যাদের আগ্রহ আছে এই টিকা দিয়ে আপাতত চালিয়ে নেওয়া যাবে। যদি হুটহাট মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয় সেক্ষেত্রে টিকা আরও লাগবে।’
সেরাম টিকা রফতানি বন্ধ করলেও আমাদের কাছে দ্বিতীয় ডোজ পরিচালনার মতো টিকা রয়েছে। এগুলো দেওয়ার মধ্যেই আশা করি টিকা চলে আসবে। এছাড়া আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ তেমন নেই। যাদের আগ্রহ আছে এই টিকা দিয়ে আপাতত চালিয়ে নেওয়া যাবে
ড. মুশতাক হোসেন, উপদেষ্টা, আইইডিসিআর
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার আগ্রহ তৈরি হোক। তাহলে আমরাও সেরামকে বলতে পারব। কিন্তু এখন আগ্রহ যে নেই, মানুষ টিকা নিচ্ছে না, সেটা সেরাম দেখছে। কোন দেশে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কত, চাহিদা কত— সেগুলো তারা লক্ষ করছে।’
সেরামের স্থগিতাদেশে কোভ্যাক্সেও সংকট দেখা দেবে
বাংলাদেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের কথা রয়েছে কোভ্যাক্সের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ হচ্ছে কোভ্যাক্স। যার আওতায় বিশ্বের ১৯০টিরও বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করা হয়।
তবে কোভ্যাক্সকেও একটা বড় অঙ্কের টিকা সরবরাহ করার কথা রয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের। সেক্ষেত্রে কোভ্যাক্সও টিকা সংকটের মুখে পড়বে কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউট যদি তাদের টিকা নাও দেয়, তবুও কোভ্যাক্সের টিকার অভাব হবে না। কোভ্যাক্স মানেই তো শুধু সেরামের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা নয়, ফাইজার-জনসনসহ আরও অনেকেরই টিকা কেনা আছে।’
সেরাম ইনস্টিটিউট যদি তাদের টিকা নাও দেয়, তবুও কোভ্যাক্সের টিকার অভাব হবে না। কোভ্যাক্স মানেই তো শুধু সেরামের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা নয়, ফাইজার-জনসনসহ আরও অনেকেরই টিকা কেনা আছে
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, পরিচালক, এনসিডিসি
তিনি বলেন, কোভ্যাক্স যদি আমাদের সাড়ে চার কোটি টিকা দেয়, তাহলে এখানে অক্সফোর্ড কোনো বিষয় নয়। কিন্তু কবে দেবে, এটাই দেখার বিষয়। এটা পেতে দেরিও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোভ্যাক্স কোন টিকা কী মাত্রায় দেবে সেটা পুরোটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওপর নির্ভর করবে। আর যদি এমন অবস্থা হয় যে কিছুতেই তারা রফতানি করবে না, তাহলে আমাদের সমস্যায় পড়ে যেতে হবে।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউট টিকা তৈরির বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নানা সহযোগিতা পেয়েছে। সেই হিসেবে আন্তর্জাতিক দেশগুলোর সঙ্গে টিকা রফতানিতে একটা প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার রয়েছে তাদের। সেটাকে তারা এড়িয়ে যেতে পারবে না। এখন তাদের দেশের ভেতরে টিকার চাহিদা বেশি। কাজেই তারা সেই চাহিদা পূরণ করবে বলে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, একটা দেশের সরকার সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানেই তো দেশের বাইরে স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। তবে এখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইন সম্পর্কিত কোনো বিষয় থাকলে সেটা ভিন্ন কথা।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু আইনকানুন আছে। একটি দেশের কোম্পানির সঙ্গে যদি অন্য আরেকটি দেশের কোম্পানির চুক্তি হয়, তাহলে দেশের সরকার এটার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যদি এখানে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তাহলে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে চলে যাবে
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি কমিটির সদস্য
এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউটকে আমরা টিকার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়েছি। এখন জানি না বেক্সিমকো সেরামের সঙ্গে কী চুক্তি করেছে। যদি চুক্তিতে থেকে যে তাকে এতদিন পরপর এত ডোজ টিকা দিতে হবে, তাহলে টিকা প্রস্তুত হলে তারা দিতে বাধ্য। সে দেশের সরকার এই টিকার ওপর স্থগিতাদেশ দিতে পারে না।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কিছু আইনকানুন আছে। একটি দেশের কোম্পানির সঙ্গে যদি অন্য আরেকটি দেশের কোম্পানির চুক্তি হয়, তাহলে দেশের সরকার এটার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যদি এখানে প্রভাব বিস্তার করতে চায় তাহলে সেটা আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এ অবস্থায় সেরাম ইনস্টিটিউটের যদি টিকা থাকে, আর যদি সেগুলো আমাদের দিতে না চায়, তাহলে বেক্সিমকো চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক আদালত চাইলে সেরামকে কালো তালিকাভুক্ত করে দিতে পারে।
সেরাম না দিলে টিকা কর্মসূচির কী হবে?
সেরাম ইনস্টিটিউট যদি টিকা না দেয় তাহলে অধিদফতরের ভাবনা কী— এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘যদি তারা টিকা না দেয় তাহলে তো আমাদের কিছুই করার নেই। এটা তো তাদের ব্যাপার। শুধু আমরাই নই, তাদের থেকে আরও অনেক দেশে টিকা কিনেছে। তারাও টিকা পাবে না। আর অন্য দেশগুলো যদি পায়, তাহলে অবশ্যই আমরাও পাব। যদি না দেয় তাহলে সবাই বিপদে পড়ে যাব। সেই মুহূর্তে আমাদের কাছে যে টিকাগুলো আছে, সেগুলো দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ শুরু করে দিতে হবে। এর মধ্যে কোভ্যাক্সের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। তাদের থেকে তো সাড়ে চার কোটি ডোজ টিকা আসার কথা। সেগুলো তো আসবেই। কিন্তু কখন আসে এটা হলো বিষয়!’
না, আপাতত আর কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে না। আপনি কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেন? উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে চার/পাঁচগুণ বেশি টিকা মজুত করেছে। এখন কিনতে চাইলে হয়তো বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু এটা তো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন, পরিচালক, এনসিডিসি
অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠান থেকে টিকা কেনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে কি না— জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘না, আপাতত আর কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা হচ্ছে না। আপনি কার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলেন? উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে চার/পাঁচগুণ বেশি টিকা মজুত করেছে। এখন কিনতে চাইলে হয়তো বেশি দাম দিয়ে বিক্রি করতে পারে। কিন্তু এটা তো এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তবে আমরা এখনও সেরামেই আশাবাদী। এমনও হতে পারে, এক/দুই সপ্তাহ পর তারা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। তাহলে তো আমরা সহজেই পেয়ে যাব। তাদের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি করাই আছে।’
চীনের টিকা আমদানি প্রসঙ্গে রোবেদ আমিন বলেন, ‘চীন সিনোভ্যাক নামের একটা টিকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার নানা খবর আসছে। তাদের আরেক প্রতিষ্ঠান ক্যানসিনো বায়োর টিকার অনেক দাম। প্রতি টিকার দাম ৩৫ থেকে ৬০ ডলার পর্যন্ত। এই মুহূর্তে আপনি কিনতে গেলে দেখবেন এই টিকার দাম ১০০ ডলার হয়ে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের ভাবতে হবে। কিন্তু সেরামের সঙ্গে যেহেতু আমাদের একটা চুক্তি আছে, আবার সেটার মূল্যও পরিশোধ করেছি, কোনো না কোনো সময় তারা এই টিকা দিতে বাধ্য। আমার মনে হয় সাময়িক সময়ের জন্য হয়তো তারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। সেটা তুলে দিলেই আমরা পেয়ে যাব। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোভ্যাক্সের টিকাতেই আমাদের আশাবাদী হয়ে থাকতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে টিকা আমদানির বিষয়ে চুক্তি হয়। এরপর ২১ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দেশে আসে ২০ লাখ ডোজ টিকা। ২৫ জানুয়ারি কেনা টিকার প্রথম চালান আসে। ওই সময় ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসে দেশে। কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান আসে ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতি চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা থাকলেও ওইদিন ২০ লাখ ডোজ টিকা আসে।
যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সবসময়ই বলেছেন, টিকার সংকট হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে টিকা উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দেশের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আর সেরামের সঙ্গে চুক্তির বাকি টিকা যতটা সম্ভব দ্রুত সময়ে আনতে যোগাযোগ চলছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান জানান, টিকার পরবর্তী চালান কবে আসবে তা এখনও নিশ্চিত জানেন না তারা।
টিআই/এমএআর/এমএমজে