কেন্দ্রের কাঁধে তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ
• যত সমস্যা কেন্দ্রকেই সমাধান করতে হয়
• এমপি ও স্থানীয় আ.লীগ একাধিক গ্রুপে বিভক্ত
• মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের মধ্যে তৈরি হয় গ্রুপিং
• দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই
আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে অংশ নিতে ক্ষমতাসীনরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, তৃণমূলে আওয়ামী লীগের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার সমাধান তৃণমূলে গিয়ে করতে হচ্ছে কেন্দ্রকে।
আগামী নির্বাচন উপলক্ষ্যে তৃণমূলে চলছে গ্রুপিং। ভাই লীগ, আত্মীয় লীগ, এমপি লীগ, চেয়ারম্যান লীগ— নামে চলছে ক্ষমতার দাপট। কেউ কারও কথা মানছেন না, কাউকে ছাড়ও দিচ্ছেন না। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে তৃণমূলের সমস্যা তত প্রকট আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্যদের (এমপি) বাইরে কেউ মনোনয়ন চাইলে তার ওপর চলছে হামলা-নির্যাতন। মামলা দিয়ে চিরতরে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতার চেয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি যেন প্রকট হচ্ছে সর্বত্র— এমনটি মনে করছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বিজ্ঞাপন
তাদের মতে, প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সেখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের আধিপত্য বেশি। ফলে তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াসও বেশি। অর্থাৎ বিরোধী শক্তির চেয়ে নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে লড়াইটা বেশি হচ্ছে। অন্তর্দলীয় কোন্দল আর ক্ষমতার লড়াইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শত্রু এখন আওয়ামী লীগই!
এমপিদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ সময়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা-জেলার নেতা এবং তাদের সমর্থকরা জড়াচ্ছেন সংঘর্ষে। এর জেরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঐক্যবদ্ধভাবে পালিত হচ্ছে না। তবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে বলেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা মহাসাগর। মহাসাগর থেকে আমি শুকনো নদী হতে পারব না। যে পার্টিতে স্রোত নাই, পানির প্রবাহ নাই, যে পার্টির ভেতরে লক্ষ-লক্ষ কর্মী নাই, নেতা নাই, সেই পার্টি কখনও জনগণের পার্টি হিসেবে দাঁড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগ একটা প্রাচীন ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক দল। এখানে অনেক নেতা আছেন, লক্ষ লক্ষ কর্মী আছেন। একাধিক প্রার্থী আছেন, তার মধ্যে থেকে একজনকে বাছাই করে নেওয়া হবে। শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এটাই আমাদের পার্টির সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যেতে পারেন না, পারবেন না।’
আরও পড়ুন >> রাজনীতির মাঠে ‘জামায়াতি ধাঁধা’
‘জাতীয় নির্বাচন কিন্তু লোকাল নির্বাচনের মতো নয়’— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। লোকাল নির্বাচনের আরেক প্রেক্ষাপট। দুইটা কিন্তু দুই রকম। জাতীয় নির্বাচনে গ্রুপিং খুবই কম হয়। হয় না বললেই চলে। যাকে নৌকা দেওয়া হবে, সবাই নৌকার পক্ষেই নেমে যাবেন। এর বাইরে কেউ থাকবেন না। সবাই নৌকার ছায়াতলে চলে আসবেন।’
আগামী নির্বাচন উপলক্ষ্যে তৃণমূলে চলছে গ্রুপিং। ভাই লীগ, আত্মীয় লীগ, এমপি লীগ, চেয়ারম্যান লীগ— নামে চলছে ক্ষমতার দাপট। কেউ কারও কথা মানছেন না, কাউকে ছাড়ও দিচ্ছেন না। নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসছে তৃণমূলের সমস্যা তত প্রকট আকার ধারণ করছে। ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্যদের (এমপি) বাইরে কেউ মনোনয়ন চাইলে তার ওপর চলছে হামলা-নির্যাতন। মামলা দিয়ে চিরতরে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিযোগিতার চেয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি যেন প্রকট হচ্ছে সর্বত্র
এদিকে, তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, কিছু কিছু এমপি নিজ এলাকায় নিজেকে রাজা মনে করেন। তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিলে বা মতের মিল না হলেই নেতাকর্মীদের ওপর চলে হামলা-মামলা। এমন অর্ধশতাধিক স্থানে দলীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন মুখোমুখি অবস্থানে। তাদের মধ্যে সংঘর্ষ, এমনকি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে। বিষয়টি দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার টেবিলেও এসেছে। তৃণমূলের কোন্দলের চিত্র দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, বিস্মিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।
‘তৃণমূল রাজনীতিতে গ্রুপিং আগামী নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না’— এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বড় রাজনৈতিক দল। এখানে প্রতিযোগিতা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে, গ্রুপিংও আছে। তবে, আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ঐক্যবদ্ধ এবং তাদের বন্ধনটা সুদৃঢ়। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আমরা সবাই মিলে করেছি। সেখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবেই। তবে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নেবেন না। তারপরও ব্যতিক্রম আছে।’
আরও পড়ুন >> ভোট দিতে ‘অনীহা’ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের
‘একটা বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকে। এটা যাতে না হতে পারে সেজন্য আমরা সবসময় চেষ্টা চালাচ্ছি। মাননীয় সভানেত্রী বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি। গণতন্ত্রে ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মত থাকবেই। তবে, যখন কোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত হয়ে যায় তখন সেই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না।’
অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূলে আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত নেতাকর্মীরা। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চালানো হচ্ছে ‘পরিকল্পিত হামলা’। রাত-বিরাতে আক্রমণ, গুলি করে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। তৃণমূলের এমন আধিপত্য বিস্তার রুখতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তারপরও থেমে নেই। গত কয়েক মাসে সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজনকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব ঘটনার পেছনে রয়েছে স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক প্রার্থী থাকবেই। স্বাধীনতার পক্ষের দল, যে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু-তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা, সেই দলে একাধিক প্রার্থী থাকবেন— এটা অস্বাভাবিক কিছু না, স্বাভাবিক। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মনোনয়ন বোর্ড যাকে মনোনয়ন দেবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করবেন। এটাই আমাদের বিশ্বাস। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে গ্রুপিংয়ের কথা বলছেন, তা থাকবে না। এটা জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ক্ষমতার পালাবদলের নির্বাচন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ক্ষমতায় দেখতে চান। যে সংকটের কথা বলছেন সেটা থাকবে না।’
আরও পড়ুন >> সংলাপ হবেই, তবে এখনই নয়!
পাঁচ সিটির নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আওয়ামী লীগের গ্রুপিং যেন প্রকাশ্যে এসেছে। গাজীপুর ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় গ্রুপিং ছিল স্পষ্ট। নৌকার লোক পরিচয় দিয়ে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে গাজীপুর সিটির সব থানা, ওয়ার্ডপর্যায়ের সংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তৃণমূলের সমস্যাগুলো সমাধানে কেন্দ্র ও জেলাপর্যায় থেকে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। গত সপ্তাহে নীলফামারীতে আমাদের বৈঠক ছিল, বর্ধিত সভা ছিল। ঈদের পর কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁওয়ে বর্ধিত সভা হবে। যেকোনো সমস্যা সমাধানের আমরা খুবই সচেষ্ট।’
‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই এক ও অভিন্ন। যারা বিদ্রোহ করে তারা সবসময় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। বড় দল হিসেবে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারেন, পাবেন কিন্তু একজনই। দলের প্রতি যাদের কমিটমেন্ট আছে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করেন, বিশ্বাস করেন, লালন করেন; তারা কখনও বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন না।’
দল ও দলের বাইরের আলোচিত ঘটনা
গত ২৫ এপ্রিল রাত পৌনে ১০টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতা নিহত হন। তারা হলেন- জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান (৩৫) ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমাম।
গত ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরশহরের উদয়ন মোড় এলাকায় শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা খাইরুল আলম জেমকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুষ্ঠানে স্লোগান দেওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে সোনা মিয়া (৫৫) নামের এক আওয়ামী লীগের কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষের সমর্থকরা। গত ২৪ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে উপজেলার হারাগাছ খানসামা ইমামগঞ্জ স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোনা মিয়া হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন।
গত ২৩ এপ্রিল রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সেখ সবুজ (২৮) নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। জানা যায়, সবুজসহ কয়েকজন নিজ বাড়ির বসতঘরের মেঝেতে বসে ব্যবসায়িক হিসাব করছিলেন। রাত ১০টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ঘরের জানালা দিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় সবুজ ও সজিব শেখ গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সবুজ মারা যান।
আরও পড়ুন >> সিটিতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও ভিসানীতিতে স্বস্তি
চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। সংঘর্ষ চলাকালে অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নরসিংদী জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা মো. রাজীব আহমেদ ও নিলক্ষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসমাইলি সিরাজীর সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ- ৫ (বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুরের আংশিক) আসনের বর্তমান এমপি আবদুল মমিন মন্ডল এবং সাবেক এমপি আবদুল লতিফ বিশ্বাসের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এত দিন তাদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চললেও গত ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিনে তা প্রকাশ্যে আসে। বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির পিতার জন্মদিনের ব্যানারে স্থানীয় এমপি আবদুল মমিন মন্ডলের ছবি না থাকায় অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। এতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেনসহ তিনজন আহত হন।
কুমিল্লা-৪ আসনের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তার সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের দ্বন্দ্ব যেন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে এমপির কেন্দ্রে নৌকা পেয়েছিল মাত্র ১৬ ভোট। ওই নির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ নৌকার প্রার্থী ছিলেন। এমপির চাচা ধানের শীষ নিয়ে পেয়েছিলেন ৯৮১ ভোট। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব শুরু হয়। গত বছরের ১৬ জুলাই দেবিদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজ ও সম্পাদক স্বপনের নাম ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তখন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ কমিটিকে সমর্থন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এমপি ফখরুল উপজেলা চেয়ারম্যান আজাদকে কিল-ঘুষি মারেন। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এখনও সেই ধারা চলমান রয়েছে।
এদিকে, রাজশাহী- ৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে আগামী সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। গত ১৩ জানুয়ারি রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে দলীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন, জামায়াত-শিবির ও রাজাকারের সন্তানদের চাকরি দেওয়া, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ একাধিক অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
এছাড়া দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দিনাজপুর- ৫ আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সঙ্গে দিনাজপুর- ৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছরের ২৭ আগস্ট রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ফিজারের বিরুদ্ধে তাকে নানাভাবে হেনস্তার অভিযোগ তোলেন শিবলী সাদিক। তার বিরুদ্ধে দলে গ্রুপিং তৈরি, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া, পকেট কমিটি গঠনসহ নানা অভিযোগ করেন শিবলী সাদিক।
এমএসআই/