করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালগুলোতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও ক্যার্ডিওগ্রাফারসহ প্রায় দুই হাজার ৮০০ শূন্য পদে জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।

প্রতিটি নিয়োগে ১৫-২০ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন, এমনকি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা অস্পষ্ট সংকেত পাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

• টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে উত্তীর্ণ ৪৪৫৩ জন
• উত্তীর্ণদের ৮০-৮৫ ভাগ অস্বাভাবিক বেশি নম্বর পান
• লিখিত পরীক্ষায় উচ্চ নম্বর পেলেও মৌখিকে করেন ফেল
• ২৫০০ উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং, পেন্সিলের সংকেত
• ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা
• মামলায় ফাঁসছেন নিয়োগ কমিটি, আড়ালে প্রকৃত কারিগর

জানা যায়, ২০২০ সালের ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে ৭২ হাজারের বেশি আবেদন জমা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে টেকনিশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে উত্তীর্ণ হন চার হাজার ৪৫৩ জন। মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেওয়া কথা।

দুর্নীতির গন্ধ আরও গাঢ় হয় যখন ওইসব পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেন বা অনেক কম নম্বর পান। এমনকি খাতায় লেখা প্রশ্নের বিষয়ে যথাযথ জবাবও দিতে ব্যর্থ হন তারা। অথচ কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অনেক ভালো করেন

বিষয়টি স্বাভাবিক মনে হলেও সন্দেহের সূত্রপাত হয় তখন যখন দেখা যায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ পরীক্ষার্থী অস্বাভাবিক বেশি নম্বর পান। দুর্নীতির গন্ধ আরও গাঢ় হয় যখন ওইসব পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ নম্বর পেলেও মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করেন বা অনেক কম নম্বর পান। এমনকি খাতায় লেখা প্রশ্নের বিষয়ে যথাযথ জবাবও দিতে ব্যর্থ হন তারা। অথচ কম নম্বর পাওয়া পরীক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় অনেক ভালো করেন।

আরও পড়ুন <-> দুদকের নোটিশ ‘পাত্তা’ দেন না এলজিইডির অতিরিক্ত প্রকৌশলী

এরপরই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঘুষ লেনদেনের তথ্য প্রকাশ পেতে থাকে। পদপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা যায়। যাদের পাস করাতে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিবর্তন করা হয়। সন্দেহভাজন পরীক্ষার্থীদের প্রতিটি খাতায় নানা ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন, এমনকি হাতের লেখায়ও অমিল পাওয়া যায়। নানা বিতর্কে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রথমে স্থগিত এবং পরে বাতিল করা হয়। 

অনুসন্ধানে প্রায় ২৫০০ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ মেলে। যার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা। যে কারণে সংস্থাটি অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. হাসান ইমাম, সদস্য সচিব ও উপপরিচালক আ খ ম আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে। শুধু তা-ই নয়, অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত যাদের নাম আসে তাদের বিষয়েও চমকে যাওয়ার মতো তথ্য-উপাত্ত মেলে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

দুদকের অনুসন্ধানে প্রায় ২৫০০ পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ মেলে। যার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হন পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তারা

আরও পড়ুন <-> স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যবহারে অপারগ, বরাদ্দে কোপ অর্থ মন্ত্রণালয়ের

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির সভাপতি হাসান ইমাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ এটা বলেই ফোন কেটে দেন তিনি।

অন্যদিকে, নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব আ খ ম আখতার হোসেন বলেন, ‘আমি সদস্য সচিব ছিলাম ঠিকই। তবে, নিয়োগের বিষয়ে আমার তেমন কাজ ছিল না। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলমান। এ বিষয়ে জানতে আপনি সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’

নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিয়োগ দুর্নীতিতে ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধানে যা মেলে

কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরিভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এক হাজার ২০০টি, মেডিকেল টেকনিশিয়ান এক হাজার ৬৫০টি এবং ক্যার্ডিওগ্রাফারসহ দুই হাজার ৭৯৮টি শূন্য পদে জনবল নিয়োগের ছাড়পত্র প্রদান করে সরকার। ২০২০ সালের ৩০ জুন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ জুলাই। বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মোট ৭২ হাজার ৬১৫ প্রার্থী আবেদন করেন। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগ।

আরও পড়ুন <->‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ ছাড়াই পদোন্নতি চেয়েছিলেন ডা. শারফুদ্দিন!

নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) পদে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (এনেসথেসিয়া, ডায়ালাইসিস, কার্ডিওগ্রাফার, বায়োমেডিকেল, ইটিটি, পারফিউশনিস্ট, সিমুলেটর, অর্থোপেডিক্স, ইকো) পদে ১৯ ডিসেম্বর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে খাতা বুঝে নেন। নিয়মানুযায়ী নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ খ ম আক্তার হোসেনের নিকট তা জমা হয়। এরপর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও মেডিকেল টেকনিশিয়ান (ইসিজি) সংশ্লিষ্ট খাতা মূল্যায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।

অন্যদিকে, মেডিকেল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের নিকট জমা দেওয়া হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখে প্রতিস্থাপন করেন। খাতার কাভার পেজে একাধিকবার স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র কিন্তু মূল খাতায় একবার স্ট্যাপলিং এবং উত্তরপত্রের বিভিন্ন স্থানে পেন্সিলে লেখা অস্পষ্ট সংকেতের প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানকালে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিখিত পরীক্ষায় দুর্নীতি হয়েছে— এমন আভাস পাওয়ায় ইতোমধ্যে নিয়োগ কমিটির দুজন সদস্য উপপরিচালক আ খ ম আখতার হোসেন ও সদস্য সচিব দীপংকর বিশ্বাসকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে আ খ ম আখতার হোসেনের পরিবর্তে উপপরিচালক মো. আবুল হাশেমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপরই অভিযোগ ওঠে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব শ্রীনিবাস দেবনাথ কিছু চাকরিপ্রার্থীকে ভাইভাতে পাস করানোর জন্য আবুল হাশেমকে এক কোটি টাকা ঘুষ প্রদানের প্রস্তাব দেন। আবুল হাশেম যা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়ে জানান। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক পিএস মো. আরিফুর রহমান আবুল হাশেমকে কথা মতো কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন— এমন লিখিত অভিযোগও পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন <-> বিদেশ থেকে লাগেজে সোনা আনার খরচ বাড়ছে

যদিও শ্রীনিবাস দেবনাথ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, মো. আরিফুর রহমানও মোবাইল ফোনে কথা বলেননি বলে জানিয়েছেন।

ঢাকা পোস্টের কাছেও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দেন আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার নাম কেন আসল, সেটাই জানি না। যা হবার হয়েছে। এখন এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। ওই নিয়োগের বিষয়ে আমার কোনো ধারণা ছিল না।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর ভাইভাতে প্রতিটি প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর লিখতে দেওয়া হয়। লিখিত ও ভাইভার চূড়ান্ত ফল, মৌখিক পরীক্ষা বোর্ড, উত্তরপত্র মূল্যায়ন কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সমুদয় উত্তরপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি টেবুলেশন শিটও পরীক্ষা করে।

উত্তরপত্র ও টেবুলেশন শিট পরীক্ষা করে দেখা যায়, বেশকিছু পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় ৭৮-৭৯ পর্যন্ত নম্বর পান অথচ মৌখিক পরীক্ষায় খুবই খারাপ করেন। অন্যদিকে, লিখিত পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত কম নম্বর (৪০-৫৫) পাওয়া পরীক্ষার্থীরা মৌখিক পরীক্ষায় খুব ভালো করেন।

আরও পড়ুন <-> রিটার্ন জমা স্লিপ পেতে গুনতে হবে ২ হাজার টাকা 

সরেজমিন অনুসন্ধান ও নথিপত্র যা বলছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা, নিয়োগ কমিটি, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কয়েকজন প্রার্থীর বক্তব্য এবং ঢাকা পোস্টের কাছে আসা নথি যাচাই করা হয়েছে। যেখানে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চার হাজার ৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য উপকরণ পরীক্ষার পর দুই হাজার ৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিং করা ছিদ্র এবং পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন ধরনের সংকেতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যার যথাযথ সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ১৫-২০ লাখ টাকা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষায় উচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত অধিকাংশ পরীক্ষার্থীর সরবরাহ করা উত্তরপত্র বর্তমান উত্তরপত্র দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ কমিটির সভাপতি মো. হাসান ইমাম লিথোকোড ফরমের ছেঁড়া অংশ ও সদস্য সচিব আ খ ম আখতার হোসেন গোপনীয়ভাবে খাতা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। মো. হাসান ইমামের পিএ আহসান সাইদ, পিএ আবু সোহেল এবং এও কবির আহমেদ ও আক্তারুজ্জামান সোহেল নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত ছিলেন।

অন্যদিকে, খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষক মো. শাওকত আলী খাতাগুলো নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের দিন সদস্য সচিব আ ফ ম আখতার হোসেনের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। পরীক্ষার পরবর্তী রাত বা দিনে বিকল্প খাতায় নতুন করে প্রশ্নের উত্তর লিখে তা অফিসিয়ালি সরবরাহ করা খাতায় প্রতিস্থাপন করেন। এসব কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি মো. হাসান ইমাম, সদস্য সচিব আ খ ম আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মো. শাওকত আলীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমনকি দুদকের অনুসন্ধানেও তাদের বিরুদ্ধে মামলাযোগ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, করোনা সংকটের সময় স্বাস্থ্য খাতের নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের খবর আমরা জানতে পেরেছি। একই ধরনের পরীক্ষার মুখে পড়লে অন্য খাতগুলোর অবস্থাও কমবেশি একই রকম হতো। তবে, করোনা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো এত ব্যাপক ও গভীর দুর্নীতি অন্য কোনো দেশে হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত মেলেনি।

অভিযোগে যা ছিল

করোনাকালে সরকারি হাসপাতালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় দুই হাজার ৫২১ জন উত্তীর্ণ হন, যা মোট পরীক্ষার্থীর পাঁচ শতাংশের মতো। যারা উত্তীর্ণ হন তাদের মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ খুব ভালো নম্বর পান। এজন্য মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় খুব কড়াকড়িভাবে।

আরও পড়ুন <-> ওয়াসার নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ, মামলায় ফাঁসতে পারেন এমডি তাকসিম

মৌখিক পরীক্ষায় ২০ নম্বরের মধ্যে ১০ পাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু এ পরীক্ষায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি। এরপরই অভিযোগের বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে। অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ কমিটি থেকে যে দুজন সদস্যকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাদের একজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আ ফ ম আখতার হোসেন। তার জায়গায় ২০২১ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পান ডা. মো. আবুল হাশেম শেখ।

আবুল হাশেম স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে ঘুষের প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি অভিযোগ আকারে জমা দেন। ওই সময় স্বাস্থ্য সচিবের দায়িত্বে ছিলেন আবদুল মান্নান। চিঠিতে ডা. হাশেম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা অধিশাখা) শ্রীনিবাস দেবনাথ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ খ ম আখতার হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ সোহেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আরিফুর রহমানের ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন। এছাড়া নিয়োগ কমিটির অপর এক সদস্যও নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন বলে জানা যায়।

আরএম/এমএআর