রাজধানীতে আবাসিক প্লট বা ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তবে, এবার উল্টো পথে হাঁটতে যাচ্ছে সংস্থাটি। এখন থেকে টাকার বিনিময়ে আবাসিক প্লট বা ভবনগুলোকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহারের অনুমতি দিতে যাচ্ছে রাজউক।

তবে, শুরুতে রাজধানীর সব এলাকায় এ সুবিধা দেবে না রাজউক। প্রথমে রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে এ সুযোগ দেবে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে অভিজাত এলাকার ভবনমালিকদের গুনতে হবে কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। সঙ্গে মানতে হবে বেশ কয়েকটি শর্ত। যদিও এ উদ্যোগ নগরবাসীর জন্য তেমন সুফল বয়ে আনবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে রাজউক বলছে, যারা নিয়ম অমান্য করে আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহার করছেন, এ উদ্যোগের ফলে তারা অর্থ খরচ করে ও কিছু নিয়ম মানলে বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে দুই পক্ষই উপকৃত হবে।

প্রথম ধাপে রাজউকের আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকার আবাসিক প্লটগুলো বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরিত করার সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে একটি বিষয় পর্যালোচনা করবে রাজউক। তা হলো- প্লট সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা (রাইট অব ওয়ে) ন্যূনতম ১০০ ফুট হতে হবে।

প্রথম ধাপে রাজউকের আওতাধীন গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকার আবাসিক প্লটগুলো বাণিজ্যিক প্লটে রূপান্তরিত করার সুযোগ দেওয়া হবে। এর আগে একটি বিষয় পর্যালোচনা করবে রাজউক। তা হলো- প্লট সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা (রাইট অব ওয়ে) ন্যূনতম ১০০ ফুট হতে হবে। এছাড়া আবাসিক প্লট বা ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পেতে এলাকাভেদে কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত ফি গুনতে হবে।

এর আগে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলাকাভুক্ত গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা (১ম ও ২য় পর্ব) এলাকার আবাসিক প্লটগুলো বাণিজ্যিক প্লট হিসেবে পরিবর্তনের জন্য সরকার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্দেশনাগুলো জারি করা হয়েছে।

শুরুতে যেসব এলাকায় আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবনে পরিবর্তন করার অনুমোদন মিলবে-

প্রথম ধাপে গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান এভিনিউ, বনানী কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বারিধারা আবাসিক এলাকার প্রগতি সরণি, উত্তরা ১ম পর্ব ও ২য় পর্ব আবাসিক এলাকার জসিম উদ্দিন এভিনিউ, রবীন্দ্র সরণি, সোনারগাঁ জনপথ, গাওসুল আজম এভিনিউ, গরিবে নেওয়াজ এভিনিউ, শাহ মখদুম এভিনিউ, শাহজালাল এভিনিউ, ঈশা খাঁ এভিনিউ ও আলাওল এভিনিউ এলাকার আবাসিক প্লট ও ভবনগুলো এ সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্লট বা ভবন সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা ন্যূনতম ১০০ ফুট হতে হবে।

আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবনে পরিবর্তনে মানতে হবে যেসব শর্ত-

ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ ২০২২-৩৫) স্থাপনা ব্যবহারের শ্রেণিবিভাগ তালিকার (পাইকারি ও সংরক্ষণাগার) শ্রেণি ছাড়া এবং বিদ্যমান ব্যবহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হবে। প্লটগুলো নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একত্রীকরণের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য পরিবর্তনের অনুমোদন দেওয়া হবে।

এছাড়া গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা (১ম পর্ব ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকার প্লট ও ভবন বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অনুমোদন পেতে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাধীন এলাকাগুলোর জন্য প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ), ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান ইত্যাদির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া যাবে না।

বহুতল ভবনে যানবাহনের প্রবেশ-বহির্গমন ও পার্কিংসহ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২ অনুসরণ করতে হবে। বিদ্যমান ট্র্যাফিক সার্কুলেশনের ওপর নতুন ইমারতের প্রভাব অর্থাৎ ট্র্যাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (টি আইএ) প্রতিবেদন যাচাই করে ইমারতের অনুমোদন প্রদান করতে হবে।

ইমারতের নকশা অথবা লে-আউট অনুমোদনের ক্ষেত্রে ড্যাপ ২০২২-৩৫, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ২০২০ এবং এর ধারাবাহিকতায় প্রণীত বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা, সরকারি আদেশ ও অনুশাসনসহ সব আইনানুগ দিক যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।

আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য প্রযোজ্য ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) প্রাপ্ত হবে না, বরং প্রকল্পের মূল লে-আউটে বিদ্যমান ভূমি ব্যবহারের জন্য ড্যাপ ২০২২-৩৫, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা এবং এর ধারাবাহিকতায় প্রণীত সর্বশেষ বিধিমালা অনুযায়ী ফ্লোর এরিয়া রেশিও প্রাপ্ত হবে। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সময়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র, নির্দেশনা ইত্যাদির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তিত হবে।

বহুতল ভবনে যানবাহনের প্রবেশ-বহির্গমন ও পার্কিংসহ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১২ অনুসরণ করতে হবে। বিদ্যমান ট্র্যাফিক সার্কুলেশনের ওপর নতুন ইমারতের প্রভাব অর্থাৎ ট্র্যাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (টি আইএ) প্রতিবেদন যাচাই করে ইমারতের অনুমোদন প্রদান করতে হবে।

আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকায় স্থানভেদে মানতে হবে আলাদা আলাদা নিয়ম।

আবাসিক প্লটে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নি প্রতিরোধ ও অগ্নিনির্বাপণ ইত্যাদি সব বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ইমারত বা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বশেষ প্রকাশিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (বিএনবিসি) অগ্নি প্রতিরোধ ও অগ্নিনির্বাপণ সংক্রান্ত সর্বশেষ আইন ও বিধিমালা ইত্যাদি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হবে।

আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবনে পরিবর্তন ফি

গুলশান, বনানী, বারিধারা (জে ব্লক বাদে) আবাসিক এলাকায় আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের ফি কাঠাপ্রতি এক কোটি টাকা। বারিধারা জে ব্লক ও উত্তরা (১ম পর্ব ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকায় এ ফি কাঠাপ্রতি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া এ সুবিধা পেতে হলে যেসব প্লট বা ভবনে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো হতো, সেগুলোর মালিক বা কর্ণধার আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক প্লট বা ভবনে পরিবর্তনের আবেদন ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে রাজউকের মাধ্যমে সরকারের নির্ধারিত জরিমানাসহ পরিবর্তন ফি গ্রহণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে প্লটের ধরন পরিবর্তনের আবেদন না করলে রাজউক যেকোনো মুহূর্তে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

প্রতিটি এলাকায় মানতে হবে আলাদা নিয়ম

আবাসিক প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা এলাকায় স্থানভেদে মানতে হবে আলাদা আলাদা নিয়ম। এর মধ্যে আবার উত্তরা (১ম ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকার বেশকিছু এরিয়া বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য বিমান উড্ডয়ন সংক্রান্ত উচ্চতা নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এসব এলাকায় উচ্চতার সীমা নির্ধারিত (হাইট রেসট্রেকশন) থাকার ফলে কিছু প্লটে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওই প্লটগুলো চিহ্নিত করে সুপরিকল্পিতভাবে সেখানে পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, জলাধার ও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সোলার পার্ক ইত্যাদি স্থাপন করা যাবে।

পরিবর্তিত বাণিজ্যিক প্লটের ভেতরে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্যসামগ্রী ওঠা-নামার জন্য সুনির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনুমোদনের পর পরিবর্তিত বাণিজ্যিক প্লটগুলো আবশ্যিকভাবে অনাচ্ছাদিত (উন্মুক্ত) স্থানের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ শোষণযোগ্য ভূমি রাখতে হবে।

এছাড়া গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা (১ম পর্ব ও ২য় পর্ব) আবাসিক এলাকার ভেতরে অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত সম্পত্তি উচ্ছেদ করা হবে। এরপর সেখানে আবাসিক ভবন, বহুতল ভবন, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সুবিধাদি যেমন- স্কুল, কলেজ, পার্ক, গাড়ি পার্কিং, দুর্যোগকালীন সমাবেশ, সিনিয়র সিটিজেন কেয়ার, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ও শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

অন্যদিকে, বারিধারা কে ব্লক ও গুলশান প্রকল্প এলাকার (নর্থ গুলশান এভিনিউ) কয়েকটি ব্লকে ডিপ্লোম্যাটিক জোন রয়েছে। তাই এসব এলাকায় নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থার নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনাপত্তি গ্রহণ করে নির্ধারিত রাস্তা সংলগ্ন প্লট বাণিজ্যিক প্লটে পরিবর্তনের অনুমোদন দেওয়া যাবে।

তবে, প্রতিটি পরিবর্তিত বাণিজ্যিক প্লটের ভেতরে বাধ্যতামূলকভাবে পণ্যসামগ্রী ওঠা-নামার জন্য সুনির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অনুমোদনের পর পরিবর্তিত বাণিজ্যিক প্লটগুলো আবশ্যিকভাবে অনাচ্ছাদিত (উন্মুক্ত) স্থানের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ শোষণযোগ্য ভূমি রাখতে হবে। পাশাপাশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তার ক্রমবিন্যাস সম্পূর্ণ আলাদা, তাই ট্র্যাফিক সার্কুলেশন ও রাস্তার ক্রমবিন্যাস পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এসব এলাকায় বিদ্যমান ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা সংশোধনের সময় বিদ্যমান রাস্তা ও সব ধরনের ইউটিলিটি সার্ভিসের ধারণক্ষমতা সমীক্ষাসহ স্কুল, কলেজ, খেলার মাঠ, পার্ক, কবরস্থান, উপাসনালয় ইত্যাদি সংক্রান্ত প্লট, জনসংখ্যা এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধারণক্ষমতা ও ট্র্যাফিক প্রভাব মূল্যায়ন ট্র্যাফিক ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট সংক্রান্ত বিস্তারিত সমীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভূমি ব্যবহার সমীক্ষা প্রস্তুতকরণের মাধ্যমে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা সংশোধন করতে পারবে।

রাজউক বলছে ভালো উদ্যোগ, তবে বিশেষজ্ঞদের মত ভিন্ন

রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক স্থানেই আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যেগুলো পুরোপুরি রাজউকের পক্ষে মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। সে কারণে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণসাপেক্ষে কয়েকটি এলাকার আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় অনুমোদন দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে প্রধান শর্ত প্লটসংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা ন্যূনতম ১০০ ফুট হতে হবে। এমন সব শর্ত পূরণ করার পর বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে। এতে করে প্লট ও ভবনমালিকদের পাশাপাশি রাজউকও উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, যারা ইতোমধ্যে আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করছেন বা করার ইচ্ছা রয়েছে তারা রাজউকের অনুমতি নিলে বৈধতা পাবে। সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই শর্তপূরণ করা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি ইমারত বা ভবনের নকশা অথবা লে-আউট অনুমোদনের ক্ষেত্রে ড্যাপ, ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, বিএনবিসি এবং এর ধারাবাহিকতায় প্রণীত বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা ও সরকারি আদেশ, অনুশাসন সব আইনানুগ দিক যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। কেবল সব শর্ত মানলেই আবাসিক প্লট বা ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাবেন মালিকরা।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়েও ঢাকায় অনেক বেশি মানুষ আছে। সে কারণে ঢাকার প্রতিটি এলাকায় যানজট বেশ তীব্র। ঢাকায় এত ধরনের সমস্যা তবুও এসব বিবেচনা না করে এবং ভবিষ্যতের কথা না ভেবে রাজউক কীভাবে আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবন করার অনুমতি দিতে চায় তা বোধগম্য নয়। বর্তমানে এসব এলাকার যে অবস্থা তাতে এ ধরনের অনুমোদনের পর পরিবেশ আরও জটিল আকার ধারণ করবে। এসব করতে গেলে ট্র্যাফিক এনালাইসিস ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এনালাইসিস করতে হয়। কিন্তু এগুলোর সুদূরপ্রসারী কিছু না ভেবে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত রাজউক নিতে পারে না।

‘কোনো কিছু না ভেবে শুধু কারও কারও সুবিধা এবং অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এসব পরিকল্পনা কার্যকর করা হচ্ছে। ধারণা করে বলা যায়, আগে যেখানে গুলশানের মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে চলাচল করা যেত, সেখানে এখন ট্র্যাফিক জ্যাম ও মানুষের ভিড় বাড়ছে। পর্যায়ক্রমে সব এলাকাতেই এমন অবস্থা হয়েছে। এর মধ্যে আবার যদি আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয় তাহলে এ সমস্যা আরও বাড়বে। মূল বিষয় হলো বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ মানেই কমার্শিয়াল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তা না করে রাজউক আরও বৈধতা দিতে চাচ্ছে!’

ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যারা শখ করে আবাসিক এলাকায় প্লট ও ফ্ল্যাট কিনেছেন, কারণ হলো তারা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে চেয়েছেন। এখন রাজউকের এমন সিদ্ধান্তের ফলে আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। এলাকা ভেদে রাজউক যে ৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা ফি নির্ধারণ করেছে এটা তাদের পকেট ভারী করার পন্থা ছাড়া আর কিছুই নয়। আবাসিক এলাকার কাঠামো ধ্বংস করে রাজউক উপার্জন করতে চায়। তাই সবকিছু বিবেচনা করে রাজউকের উচিত আবাসিক এলাকার পরিবেশ নষ্ট না করে বাণিজ্যিক ভবনের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা।

এএসএস/কেএ/এমএআর