ডলার সংকটে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর স্পট মার্কেট থেকে ধারাবাহিকভাবে এলএনজি ক্রয় শুরু করেছে সরকার। বৈশ্বিক সংকটের ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বাড়তি থাকায় গত বছরের আগস্ট হতে স্পট মার্কেট থেকে বন্ধ রাখা হয় এলএনজি ক্রয়। চলতি বছরের শুরুতে এর দাম কমতে থাকে। ফলে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ফেব্রুয়ারি থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা।

আগামী জুন পর্যন্ত ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এর দুই-তৃতীয়াংশ দেশে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমে যাওয়ায় আমদানির সক্ষমতা বেড়েছে আমাদের। সক্ষমতা বাড়লেও বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যমান অবকাঠামো। কারণ, মজুত করার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই সরকারের।

আরও পড়ুন >> স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়, শিল্পে সংকট নিরসনের আশা

আগামী জুন পর্যন্ত ১২ কার্গো এলএনজি আমদানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে এর দুই-তৃতীয়াংশ দেশে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমে যাওয়ায় আমদানির সক্ষমতা বেড়েছে আমাদের। সক্ষমতা বাড়লেও বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যমান অবকাঠামো। কারণ, মজুত করার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই সরকারের

জ্বালানি তথ্য সেবা প্রতিষ্ঠান এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস-এর হিসাব মতে, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ চার লাখ ৯০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করেছে। মার্চ শেষে এর পরিমাণ ছিল চার লাখ ৫০ হাজার টন। ২০২২ সালের জুনের পর এ দফায় সবচেয়ে বেশি এলএনজি কিনেছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ গত ৩ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটি চার কার্গো এলএনজি কেনার অনুমোদন দেয়। ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ ধারণক্ষমতার মোট চার কার্গো এলএনজি কিনতে ব্যয় হচ্ছে দুই হাজার ১৪ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন >> ৬৯০ কোটি টাকায় এক কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার

তবে, বিদ্যমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয় এলএনজির এই আমদানি। দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে গড়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (১৩ মে, 
পেট্রোবাংলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী)। বড় আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় এবং ডলার সংকট পুরোপুরিভাবে না কাটায় গ্যাসের সরবরাহ এখন বাড়ানো সম্ভব নয়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয় এলএনজির এই আমদানি। দেশে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে গড়ে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (১৩ মে, 
পেট্রোবাংলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী)। বড় আকারের গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়ায় এবং ডলার সংকট পুরোপুরিভাবে না কাটায় গ্যাসের সরবরাহ এখন বাড়ানো সম্ভব নয়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা

তাদের মতে, বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম কমে যাওয়ায় আমদানির সক্ষমতা বাড়লেও বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যমান অবকাঠামো। বর্তমানে দেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য ভাসমান টার্মিনাল রয়েছে দুটি। কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত টার্মিনাল দুটির মালিকানা যথাক্রমে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি ও দেশীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপের হাতে।

আরও পড়ুন >> ভোলায় নতুন গ্যাস কূপে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত

মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি করে এক্সিলারেট এনার্জি। নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। ১৫ বছর মেয়াদি এ টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস সরবরাহের চুক্তি রয়েছে ২০৩২ সাল পর্যন্ত। তবে, কোম্পানিটি এরই মধ্যে টার্মিনাল চুক্তির মেয়াদ ২০৩৮ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

অপরদিকে, সামিট গ্রুপ ২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি সই করে। ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ শুরু করে কোম্পানিটি। এ টার্মিনালের মেয়াদ রয়েছে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত।

আরও পড়ুন >> সমুদ্রে শুরু হচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

টার্মিনাল দুটির সক্ষমতা ১০০ কোটি ঘনফুট হলেও দৈনিক সরবরাহের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট।

তবে, পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্টরা বলছেন,দেশে আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানি করা গ্যাসের মজুত ও সরবরাহ অনেকটা বাড়ানো যেত। যদিও গত কয়েক বছরে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার অস্তিত্ব কেবলই কাগজে-কলমে।

দেশে আরও একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ হলে সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানি করা গ্যাসের মজুত ও সরবরাহ অনেকটা বাড়ানো যেত। যদিও গত কয়েক বছরে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার অস্তিত্ব কেবলই কাগজে-কলমে

সূত্র মতে, ইতোমধ্যে মাতারবাড়ী ও পায়রায় আরও দুটি ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পেট্রোবাংলাকে পৃথকভাবে প্রস্তাব দিয়েছে সামিট গ্রুপ ও এক্সিলারেট এনার্জি। প্রস্তাবনা নিয়ে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হলেও তাতে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে কথা হয় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে চলেছে। প্রাকৃতিক উৎস থেকে বড় কোনো গ্যাসক্ষেত্র এখনও আবিষ্কার না হওয়ায় এলএনজি আমদানি বহাল রাখতেই হবে। এজন্য এলএনজি আমদানির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে পায়রাতে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চুক্তি সই করার প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে। পায়রার এ টার্মিনালের সক্ষমতা হবে ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ঘনফুট।

আরও পড়ুন >> গ্যাস সংকটে নাকাল শিল্প, অনুসন্ধান-উত্তোলনে স্থবিরতা

অপরদিকে, সামিট গ্রুপ একটি ভাসমান টার্মিনালের প্রস্তাব দিয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া মহেশখালীতে স্থলভাগে একটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ টার্মিনালের সক্ষমতা হবে ১০০ কোটি ঘনফুট। এজন্য জমিও নির্ধারণ হয়ে গেছে। কোনো সমস্যা না হলে নির্বাচনের আগেই টার্মিনালের কাজ শুরু করা যাবে— বলেন জনেন্দ্র নাথ সরকার।

ওএফএ/এসকেডি