আজ হোক বা কাল, পাচার করা অর্থ দেশে আসবেই
শুধু দেশে নয়, বিদেশেও অবৈধ সম্পদ পাচারকারীদের তাড়া করা হচ্ছে। অর্থপাচারকারীরা আইনি জালে ধরা পড়বেই। আজ হোক বা কাল, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরে আসবে। পাচারকারীরা এ অর্থ ভোগ করতে পারবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
এমন সংকল্প ব্যক্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। ২০১৮ সালের ২২ জুলাই থেকে তিনি এখানে কর্মরত। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। দায়িত্ব পালন করেছেন অর্ধডজন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে। এছাড়া তিনি মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিবসহ উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
বিজ্ঞাপন
দুদকের অনুসন্ধান বিভাগের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় তিন বছর। এ সময়ের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এফ এম আবদুর রহমান মাসুম।
ঢাকা পোস্ট : দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিন বছর হতে চলল। এ সময় আপনার পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে বলে মনে করেন…
মোজাম্মেল হক : দুদক কমিশনার হিসেবে আমি আমার আইনি দায়িত্ব পালন করছি। এ দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন- ২০০৪ ও সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান এবং দুদকের পাঁচ বছর মেয়াদের কর্মকৌশল সঠিকভাবে অনুসরণের চেষ্টা করেছি। বর্তমান কমিশন দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে বহুমাত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যা আপনারা নিয়মিত গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন। দুদকের অভিযোগকেন্দ্রের হটলাইন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট, গোয়েন্দা ইউনিট, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা, সততা স্টোর, প্রাতিষ্ঠানিক টিমের প্রতিবেদন প্রণয়ন, গণশুনানি— এমন অসংখ্য কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়ন করেছি। দুদক এখন সর্বমহলে পরিচিত এবং প্রশংসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে।
কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, ছাড় দেওয়া হবেও না। নিরপরাধ কাউকে জোর করে আসামি করা হবে না, আবার কোনো অপরাধীকেও ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে আমরা শতভাগ নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছি
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
ঢাকা পোস্ট : আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হয়। প্রায় ২০০ জনের তালিকা নিয়ে কাজ করছেন। তবে মামলা বা চার্জশিটের সংখ্যা কম। অভিযোগ আছে, গণপূর্তের প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে সেভাবে মামলা হয়নি?
মোজাম্মেল হক : ক্যাসিনোকাণ্ডে ইতোমধ্যে ২৩টির মতো মামলা দায়ের হয়েছে। একইভাবে ১০টি মামলার চার্জশিট দাখিল হয়েছে। এসব মামলায় সম্পৃক্ত অবৈধ সম্পদও জব্দ হয়েছে। বেশকিছু আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। কাউকে কাউকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে আইনের নিখুঁত প্রয়োগ হয়েছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি, ছাড় দেওয়া হবেও না। নিরপরাধ কাউকে জোর করে আসামি করা হবে না, আবার কোনো অপরাধীকেও ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তে আমরা শতভাগ নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করছি। রাগ-অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না, করবও না।
ঢাকা পোস্ট : অনেক বড় বড় কেলেঙ্কারি ও অর্থপাচার চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান থাকলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে তারা ঠিকই বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন। এর প্রধান কারণ কী, দায়-ই বা কার?
মোজাম্মেল হক : এসব অপরাধী দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকুক, দুদক তাদের তাড়া করবে এবং করছে। আইনের কাছে তাদের সোপর্দ করা হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ অনুসন্ধানের আগেই হয়তো অপরাধীরা পালিয়ে যায়। তবে এ কথাও ঠিক, দুদকের মামলার যেসব আসামি বিদেশে পালিয়েছে, তাদের দেশে এনে শাস্তির ব্যবস্থার জন্য দুদক চেষ্টা করছে।
এসব অপরাধী দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকুক, দুদক তাদের তাড়া করবে এবং করছে। আইনের কাছে তাদের সোপর্দ করা হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অভিযোগ অনুসন্ধানের আগেই হয়তো অপরাধীরা পালিয়ে যায়। তবে এ কথাও ঠিক, দুদকের মামলার যেসব আসামি বিদেশে পালিয়েছে, তাদের দেশে এনে শাস্তির ব্যবস্থার জন্য দুদক চেষ্টা করছে
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এসব অপরাধীকে আইনি কাঠামোয় আনার জন্য আন্তর্জাতিক আইনি পরিকাঠামো রয়েছে। বিদেশে পালিয়ে থেকেও অপরাধীরা পার পাবে বলে মনে হয় না।
ঢাকা পোস্ট : দায়িত্ব পালনে নিজেকে কতটুকু সফল মনে করেন? রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কতটুকু কাজ করতে পারছেন?
মোজাম্মেল হক : দুর্নীতি করে পার পাওয়া যাবে— এই ধারণাগত অপসংস্কৃতি ভাঙতে বর্তমান কমিশন কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক কোনো প্রভাব আমার কর্মকালে অনুভব করিনি। আইনগতভাবে কেউ দুদকে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পান না। আমরা স্বাধীনভাবে বিবেক দ্বারা চালিত হই। কারও প্রতি রাগ-বিরাগ আমাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় নেই। দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া শাণিত করতে যুগোপযোগী কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হয়। আগামীতেও কমিশন তাদের কর্মপ্রক্রিয়া আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। কারণ, দুর্নীতির ধরন ও মাত্রা ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, কমিশনকেও সমভাবে কৌশলী হতে হচ্ছে।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে দুদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটুকু শক্তিশালী বলে মনে করেন? দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা কতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছেন?
মোজাম্মেল হক : দুদক স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইনগতভাবেই শক্তিশালী। তবে দুদককেও একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রক্রিয়াগত কারণেই দুদকের অনুসন্ধান বা তদন্ত প্রক্রিয়ায় সময়ের একটি বিষয় সামনে আসে। অনেকেই বলেন, দুদকের অনুসন্ধান বা তদন্ত একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা চেষ্টা করেছি দ্রুততম সময়ে অভিযোগের অনুসন্ধান বা তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে। দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার বিষয়টি দুদক বিধি, ২০০৭ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিধি অনুসারে দুদক কর্মকর্তাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবীক্ষণ করা হয়। আমি দুর্নীতির বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে বিশ্বাস করি। অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করছি।
আইনগতভাবে কেউ দুদকে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পান না। আমরা স্বাধীনভাবে বিবেক দ্বারা চালিত হই। কারও প্রতি রাগ-বিরাগ আমাদের কর্মপ্রক্রিয়ায় নেই। দুর্নীতি দমন বা নিয়ন্ত্রণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া শাণিত করতে যুগোপযোগী কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হয়। আগামীতেও কমিশন তাদের কর্মপ্রক্রিয়া আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করবে বলে আমি প্রত্যাশা করি
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
ঢাকা পোস্ট : বর্তমান সময়ে অর্থপাচার বড় একটি আলোচিত বিষয়। অর্থের পুনরুদ্ধার এবং অপরাধীর শাস্তির বিষয়ে দুদক কতটুকু অবদান রাখতে পারছে বলে আপনি মনে করেন?
মোজাম্মেল হক : অর্থপাচার বৈশ্বিক সমস্যা। এটা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এগমন্ট গ্রুপের সদস্য। অর্থাৎ, অর্থপাচার প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক যে আইনি পরিকাঠামো রয়েছে বাংলাদেশ তার অংশ। অর্থপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশও সফল হবে, এ প্রত্যাশা আমার আছে।
এ বিষয়ে বিগত দুই বছরে দুদকের কার্যক্রম তুলে ধরছি। ২০১৮ সালে ১৩৯ কোটি ৯৪ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯১ টাকা জরিমানা করা হয়। ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৫২ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। ২০১৯ সালে তিন হাজার ৪৯৭ কোটি ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৯ টাকা জরিমানা এবং ৪৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭৪ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
এছাড়া ২০১৯ সালে দুই হাজার ৮৭৬ শতাংশ জমি, ১৩টি বাড়ি, ১৯টি ফ্ল্যাট, ছয়টি দোকান, ছয়টি গাড়ি, ৫২২ কোটি ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৩২৪ টাকা, পাঁচ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, দুই লাখ ২১ হাজার ৬৫৫টি শেয়ার ক্রোক করা হয়েছে। একই সময়ে দুবাইয়ের দুটি কমার্শিয়াল স্পেস, ৫৯ লাখ ৩৪২ ব্রিটিশ পাউন্ড এবং ২২ লাখ ৮১ হাজার ১৯০ রিঙ্গিত জব্দ করা হয়েছে।
দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার বিষয়টি দুদক বিধি, ২০০৭ দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে। এই বিধি অনুসারে দুদক কর্মকর্তাদের নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিবীক্ষণ করা হয়। আমি দুর্নীতির বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে বিশ্বাস করি। অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করছি
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
কমিশন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও অবৈধ সম্পদ পাচারকারীদের তাড়া করছে। কেউ যেন অনুপার্জিত আয় ভোগ করতে না পারে সে বিষয়ে দুদক তার আইনি দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া দুদকের করা মামলায় সাজার হার একসময় ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ, বর্তমানে তা ৭৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থপাচারের মামলায় সাজার হার ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থপাচারকারীরা আইনি জালে আবদ্ধ হবে। আজ হোক বা কাল, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরে আসবে। পাচারকারীরা এ অর্থ ভোগ করতে পারবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
ঢাকা পোস্ট : নতুন কমিশন গঠিত হলো। আপনার প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে যদি বলতেন…
মোজাম্মেল হক : আমি ব্যক্তিগতভাবে আশাবাদী মানুষ। হতাশা কখনও আমাকে স্পর্শ করেনি। আমার প্রত্যাশা, ক্রমাগত ভালোর দিকেই আমরা যাব। পরিকল্পনা এখন বলা সমীচীন হবে না।
ঢাকা পোস্ট : প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তাকে ডেপুটেশনে কাজ করাতে দুদকে আনা হয়। কয়েক বছর অনুসন্ধান ও তদন্তে দক্ষতা অর্জনের পর আবার নিজ দফতরে ফিরে যান তারা। এতে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক ক্ষতিগ্রস্ত হয় কি না? এর চেয়ে দুদকের নিজস্ব জনবলকে অধিক দক্ষ ও শক্তিশালী করার ওপর বেশি নজর দেওয়া উচিত কি না?
দুদকের করা মামলায় সাজার হার একসময় ছিল মাত্র ৩৭ শতাংশ, বর্তমানে তা ৭৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থপাচারের মামলায় সাজার হার ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অর্থপাচারকারীরা আইনি জালে আবদ্ধ হবে। আজ হোক বা কাল, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরে আসবে। পাচারকারীরা এ অর্থ ভোগ করতে পারবে না, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
মোজাম্মেল হক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (কর্মচারী) চাকুরী বিধিমালা- ২০০৮ অনুসরণ করেই কর্মকর্তাদের ডেপুটেশনে আনা হয়। তাদের অনেকে কর্মকালে দক্ষতার পরিচয়ও দেন। আবার যিনি কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন না, তাকে কমিশনও দ্রুত মাতৃসংস্থায় ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এটা প্রশাসনিক ও প্রচলিত প্রক্রিয়া। ডেপুটেশনে যারা আসবেন তারা যদি সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে তারাও দেশকে অনেক কিছু দিতে পারেন। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। দুদকের নিজস্ব জনবলকে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী করার লক্ষেই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দুদকে এমন কোনো কর্মকর্তা পাবেন না, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে দুদকের নিজস্ব জনবলকে অধিকতর দক্ষ ও সক্ষম জনবলে পরিণত করা হচ্ছে।
দুদকে এমন কোনো কর্মকর্তা পাবেন না, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে দুদকের নিজস্ব জনবলকে অধিকতর দক্ষ ও সক্ষম জনবলে পরিণত করা হচ্ছে
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
ঢাকা পোস্ট : দুদকে একটি ফরেনসিক ল্যাব হচ্ছে। সর্বশেষ অগ্রগতি এবং এটা চালু হলে দুদকের অনুসন্ধান কাজের গতি কতটুকু বাড়বে বলে মনে করেন?
মোজাম্মেল হক : ‘দুর্নীতি দমন কমিশন শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম সহজ ও গতিশীল করার জন্য প্রধান কার্যালয় ও ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের অটোমেশনের কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সফটওয়্যার, ইনভেন্টরি বিষয়ক সফটওয়্যার, গ্রন্থাগার বিষয়ক ডাটাবেজ সফটওয়্যার, সুরক্ষিত ফাইল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সফটওয়্যার, সততা সংঘের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ সফটওয়্যার, দুর্নীতি বিষয়ক অপরাধ ও অপরাধীর তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ সফটওয়্যার তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। আমার জানা মতে, এই ল্যাব স্থাপনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দুদকের নিজস্ব ফরেনসিক ল্যাব উদ্বোধন হবে। এটি হলে দুদকের তদন্ত ও অনুসন্ধানে ডিজিটাল উপাত্ত সংগ্রহ সহজ হবে। ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করা যাবে।
প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করে দায়িত্বপালনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সক্ষমতার স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আমাদের
ড. মোজাম্মেল হক খান, কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করে দায়িত্বপালনের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ সক্ষমতার স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে আমাদের।
একনজরে মোজাম্মেল হক খান
মোজাম্মেল হক খান ১৯৫৯ সালে মাদারীপুর জেলার পাঁচখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে মাদারীপুরের ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে বিএসএস ও এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেন। মিশরের কায়রো ডেমোগ্রাফিক সেন্টার থেকে জনসংখ্যা ও বিকাশে এসডি এবং জনপ্রশাসনে পিএইচডি শেষ করেন।
বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক জনপ্রশাসন সচিবের দায়িত্ব পালনের আগে সড়ক বিভাগ; বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৭ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হওয়ার পর ওই বছরের ৪ অগাস্ট একই মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পান মোজাম্মেল হক। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের দায়িত্বে থাকার সময় ২০১৪ সালের ২০ মার্চ পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন। আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এম আমান উল্লাহর পিএস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
একসময় বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের পরিচালক (অর্থ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোজাম্মেল হক। ব্যক্তিজীবনে বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার এবং সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল স্কাউট অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যানসহ অর্ধশত স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি।
আরএম/এমএআর/