পরবর্তী ‘সাত্তারদের’ দিকে বিশেষ নজর বিএনপির
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ সিটি কর্পোরেশনের ভোট। তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এসব সিটির ভোটে অংশ না নিলেও বিশেষ নজর থাকছে বিএনপির। দলটির অভিযোগ, এ পাঁচ সিটির ভোটে সরকার পরবর্তী ‘সাত্তার’ বানানোর একটি পাঁয়তারা শুরু করেছে। এজন্য টার্গেট করা হচ্ছে এসব সিটির বিএনপির সাবেক মেয়র ও মেয়রপ্রার্থীদের।
দলটির নেতারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের ভোটেও সরকার যদি ‘সাত্তার’ বানানোর চেষ্টায় সফল হয় তাহলে এখান থেকে কোনো পর্যায়ের নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সাত্তার’ হতে পারে সেই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাবে বিএনপি। ফলে, এসব সিটি নির্বাচনের ভোটারদের অংশগ্রহণ, নির্বাচনের পরিবেশ কেমন থাকে, তা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি পরবর্তী ‘সাত্তারদের’ দিকে নজর থাকবে বিএনপির।
বিজ্ঞাপন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসনের উপনির্বাচনে সরকার যেভাবে ফাঁদে ও লোভে ফেলে ‘উকিল আবদুস সাত্তার’-কে প্রার্থী করে জয়ী করে এনেছেন, একই ফাঁদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিটি ভোটেও বিষয়টি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে তারা। এখানে সরকারের প্রথম টার্গেট থাকবে খুলনা সিটি নির্বাচনের বিএনপির সাবেক প্রার্থী ও দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও রাজশাহীর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু
বিএনপির নেতারা বলছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ আসনের উপনির্বাচনে সরকার যেভাবে ফাঁদে ও লোভে ফেলে ‘উকিল আবদুস সাত্তার’-কে প্রার্থী করে জয়ী করে এনেছেন, একই ফাঁদে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সিটি ভোটেও বিষয়টি কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে তারা। এখানে সরকারের প্রথম টার্গেট থাকবে খুলনা সিটি নির্বাচনের বিএনপির সাবেক প্রার্থী ও দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও রাজশাহীর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু।
তবে, এবার সরকার সফল হবে বলে মনে হয় না। কারণ, মঞ্জুকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বার্তাও দেওয়া হয়েছে। আর মিনু এখন দলে সক্রিয় রাজনীতি করছেন। তাকেও পূর্বের জায়গায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে দলের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি ভোটে কেউ ‘সাত্তার’ হতে চাইলে হবেন। যে ‘সাত্তার’ হবেন এবং যারা ‘সাত্তার’ বানাবেন, তাদেরই সমস্যা। এতে বিএনপির কোনো সমস্যা নাই। কেউ ‘সাত্তার’ হলে আমাদের কোনো ক্ষতি নাই। এতে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কিংবা জনপ্রিয়তা বা রাজনীতির কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ভোটে কীভাবে হয়েছে, কীভাবে পুলিশ পিটিয়ে ভোট করেছে, তা সারা দেশের মানুষ দেখেছে। এরপর কেউ কি এ সরকারের অধীনে ভোটে যাবে?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অব্যাহতি পাওয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা জেলা দলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তো দলের বাইরে না। তাছাড়া দলের বাইরে গিয়ে তো নির্বাচন করতে পারি না। তবে, আমি মনে করি বিএনপি যে নির্বাচনে না যাওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা রিভিউ করা দরকার। না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। নির্বাচন ও আন্দোলন— দুইটাতে থাকা দরকার। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বিএনপি নির্বাচন অংশ নিয়েছিল। এখন নির্বাচন গেলে এটা তো আমরা বলতে পারব যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতি বিএনপির কোনো করুণা চাই না। তবে, এটা আশা করি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের স্বার্থে আগামীতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। এখানে (খুলনা) যে সব কুচক্রীর হাতে দল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত একটা কমিটিও করতে পারে নাই।
বিএনপির নেতারা বলছেন, নানা কারণে বিএনপি থেকে বিভিন্ন সময় সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় নেতাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আবার কাউকে-কাউকে পদাবনতি করা হয়েছে। এছাড়া কাঙ্ক্ষিত পদ-পদবি না পেয়েও বিএনপির অনেক নেতা দলের ওপর মনঃক্ষুণ্ন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না গেলে নানা কারণে দলের ওপর মনঃক্ষুণ্ন নেতাদের লোভে ও ফাঁদে ফেলে ‘সাত্তার’ বানানোর পরিকল্পনা আছে সরকারের।
দলটির নেতারা আরও বলছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ নানা কারণে যাদেরকে বহিষ্কার করেছিল, তাদের ক্ষমা করে দিয়ে দলে ফিরিয়ে নিয়েছে। যাতে দলের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব-কোন্দল দেখা না দেয়। ক্ষমতায় থাকার পর তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অথচ কাজটা প্রথমে করার দরকার ছিল বিএনপির। এখন বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত হবে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে নানা সময় যাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদের ফিরিয়ে নেওয়া। এতে দলের শক্তি যেমন বাড়বে তেমনি সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যাদেরকে ‘সাত্তার’ বানানোর পরিকল্পনা নিচ্ছি সেটাও সফল হবে না।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি বিশাল একটি দল। এখানে দু-চারজন ‘সাত্তার’ থাকতেই পারেন। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নাই। তবে, যারা আগামীতে ‘সাত্তার’ হবেন, তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হবেন। ২০০৮ সাল থেকে সরকার বিএনপিকে ভাঙার পরিকল্পনা নিয়েছে, সফল হয়নি তারা।
তিনি আরও বলেন, উকিল আব্দুস সাত্তার যেমন এখন প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না, নিজের হাতে গড়া কর্মীরা তাকে এখন সম্মান করেন না, নীরবে-নিবৃত্তে ঢাকায় জীবন-যাপন করছেন; তার এ পরিণতি দেখে আগামীতে কেউ ‘সাত্তার’ হতে সাহস দেখাবেন বলে আমি মনে করি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুলনার মঞ্জু, রাজশাহীর মিনু, নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারসহ যে সব নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে দলের মন-মানসিকতা পরিবর্তন করা উচিত। কারণ, আমি সারা জীবন বিএনপির জন্য ত্যাগ স্বীকার করলাম, আর সামান্য ভুলের জন্য মাশুল হিসেবে আমার সারা জীবনের রাজনীতি শেষ হবে যাবে— এটা তো ঠিক না। সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে জনপ্রিয় নেতাদের দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত।
এএইচআর/