অনুমোদনের অপেক্ষায় ‘এমআরটি পুলিশ’, কর্তৃপক্ষ চায় দ্রুত
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে রাজধানীবাসীর। আগামীকাল বুধবারই স্বপ্ন সত্যি হতে দেখবেন তারা। কাল সকালে উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করবে দেশ।
একটি নিরাপদ যোগাযোগের মাধ্যম ঢাকাবাসীকে উপহার দেওয়ার জন্য শেষ মুহূর্তের কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সবকিছু ঠিক থাকলে বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমআরটি-৬ লাইনের দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে যাত্রী নিয়ে চলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে মেট্রোরেলের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্টরা যেমন শেষ মুহূর্তের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তেমনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পুলিশেরও চলছে বিশেষ প্রস্তুতি।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলের উড়াল পথ, স্টেশন ও স্থাপনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গঠিত হচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত আলাদা ইউনিট। এই বিশেষ ইউনিটটির নাম হতে যাচ্ছে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ’। ‘এমআরটি পুলিশ’ মেট্রোরেল ও যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে।
আরও পড়ুন : এমআরটি পুলিশ অনুমোদনের আগ পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় ডিএমপি
প্রাথমিক পর্যায়ে ‘এমআরটি পুলিশ’ নামে বিশেষায়িত ইউনিটটির সদস্য সংখ্যা হবে ৩৫৭ জন। নিরাপত্তা ও দাপ্তরিক কাজে ব্যবহার করার জন্য এ ইউনিটের সদস্যরা ২১টি যানবাহন পাবেন।
ইউনিটটির দায়িত্বে থাকবেন পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তা।
এছাড়া থাকবেন একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৭ জন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), একজন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ৬ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৫১ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০ জন নায়েক, ২৭০ জন কনস্টেবল, একজন হিসাবরক্ষক, একজন উপ-সহকারী হিসাবরক্ষক ও একজন কম্পিউটার অপারেটরসহ মোট ৩৫৭ জন।
নতুন ইউনিটটির সদস্যদের জন্য থাকবে আলাদা পোশাক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর এমআরটি পুলিশ তাদের কার্যক্রম শুরু করবে।
অনুমোদনের আগ পর্যন্ত নিজস্ব লোকবলে নিরাপত্তা দেবে ডিএমটিসিএল
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন হচ্ছে না বলে প্রাথকিভাবে জানা গেছে। এ অবস্থায় আপাতত নিজস্ব লোকবল দিয়ে মেট্রোরেলের স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ শৃঙ্খলার কাজ করবে ডিএমটিসিএল। ক্ষেত্রবিশেষে নিরাপত্তার জন্য সহায়তা নেওয়া হবে পুলিশের। পরে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন হলে তাদের হাতে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব তুলে দেবে কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন : মেট্রোরেল উদ্বোধন : নিরাপত্তায় আকাশে থাকবে র্যাবের হেলিকপ্টার
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক আগেই এমআরটি পুলিশের অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে আপতত মনে হচ্ছে উদ্বোধনের আগে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন পাওয়া যাবে না। তবে দ্রুত অনুমোদন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এমআরটি পুলিশের অনুমোদনের আগ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব লোকবলের মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নিজস্ব লোকবলে মেট্রোরেলের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমরাই নিরাপত্তা দিয়ে আসছি। উদ্বোধনের পরও আমরাই দেব, কোনো সমস্যা হবে না। সবসময় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে মেট্রোরেলের। এছাড়া ক্ষেত্রবিশেষে রিজার্ভ পুলিশ ও থানা পুলিশের সাহায্য নেওয়া হবে, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
পুলিশের সাহায্য কী প্রক্রিয়ায় নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজন অনুযায়ী নিজস্ব লোকবলের পাশাপাশি পুলিশের সহায়তা নেবেন।
যে দায়িত্ব পালন করবে ‘এমআরটি পুলিশ’
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মেট্রোরেল উদ্বোধন হওয়ার পর রাজধানীর হাজার হাজার মানুষ এতে যাতায়াত করবেন। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বা শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজ হতে পারে স্টেশন এলাকায়। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার। এছাড়া মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকবে এটিএম বুথ, দোকান ও ইলেকট্রিক সরঞ্জাম। সেগুলেঅর নিরাপত্তা এবং সার্বিকভাবে ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নতুন এই ইউনিটটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও পুলিশ সদর দপ্তর।
আরও পড়ুন : মেট্রোরেলের উদ্বোধন বুধবার বেলা ১১টায়
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এমআরটি পুলিশের একটি ফাঁড়ি থাকবে। এমআরটি পুলিশ মূলত মেট্রোরেল সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান ঠিক রাখা, যাত্রীদের নিরাপত্তা, স্থাপনার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করবে। প্রকল্পটি উদ্বোধন হওয়ার পর মেট্রোরেল এলাকায় আইন ভঙ্গ বা নিয়ম অমান্য বা অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এমআরটি পুলিশ।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট) ফারুক আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এমআরটি পুলিশ’ নামে বিশেষায়িত নতুন ইউনিটটি গঠনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে নতুন এই ইউনিটটি গঠনের অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হলেই সবার সামনে আসবে এমআরটি পুলিশ।
এমআরটি পুলিশের কার্যক্রম কী কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের এমআরটি পুলিশ যেভাবে কাজ করে আমাদের ইউনিটও সেভাবে কাজ করবে। মূলত শৃঙ্খলা রক্ষা, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে এমআরটি পুলিশ।
এদিকে শুরু থেকেই যেন মেট্রোরেল, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় সেজন্য এমআরটি পুলিশ দ্রুত চায় ডিএমটিসিএল।
এ বিষয়ে ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমআরটি পুলিশের অনুমোদনের বিষয়টি এখনো মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমরা চাই এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। এটা জরুরি ভিত্তিতেই দরকার আমাদের।
এমএসি/এসএম