পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০২২-৩৫) গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব বিন্যাস, নগরজীবন রেখা, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার মানদণ্ড প্রণয়ন, ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন ও উন্নয়ন-স্বত্ব বিনিময়— সবমিলিয়ে রাজধানী ঢাকার সমস্যাগুলো কমিয়ে পরিকল্পিত শহর গড়ার লক্ষ্যে ড্যাপ প্রণীত হয়েছে। নতুন ড্যাপে আবাসন চাহিদা পূরণে প্লটভিত্তিক উন্নয়নের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ এবং সুবিধা রাখা হয়েছে।

রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করা হয়েছে ড্যাপে। জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে এলাকায় যতটুকু উন্নয়ন, সেখানে ততটুকু ভবনের উচ্চতার অনুমোদন দেওয়া হবে। অর্থাৎ, ভবনের সামনে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা তুলনামূলক কম উচ্চতার ভবনের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন>> বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম, আকাশচুম্বী হবে বাড়ি ভাড়া

রাজউকের অন্তর্ভুক্ত এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করা হয়েছে ড্যাপে। জরিপ করে প্রতিটি ব্লকের জনসংখ্যার ধারণক্ষমতা, সড়ক অবকাঠামো, নাগরিক সুবিধা এবং সেখানে উন্নয়নের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আবাসিক ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে এলাকায় যতটুকু উন্নয়ন, সেখানে ততটুকু ভবনের উচ্চতার অনুমোদন দেওয়া হবে

এমন সিদ্ধান্তের ফলে রাস্তার প্রশস্ততা যতটা, ভবনের ব্যবহারযোগ্য স্পেসের পরিমাণও সেই অনুপাতে হবে। আগে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলেও যেখানে ৮/১০ তলা ভবন করা যেত, এখন সেখানে অনুমোদন পাওয়া যাবে ৪/৫ তলার। ফলে বিষয়টি নিয়ে প্রশস্ত রাস্তা না থাকা জমির মালিক ও আবাসন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজউক।

তবে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজধানীতে আবাসিক চাহিদা পূরণে প্লটভিত্তিক একক উন্নয়নের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক অর্থাৎ কয়েকটি প্লট একসঙ্গে করে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ভবনের উচ্চতা নির্ধারণ নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না। অন্যদিকে, প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে যদি কেউ এককভাবে ভবন নির্মাণ করতে চান, সেক্ষেত্রে ওই ভবনের উচ্চতা আগের চেয়ে কমে আসবে। অর্থাৎ, যেখানে আগে ৮/১০ তলা ভবনের অনুমোদন পাওয়া যেত, সেখানে এখন ৪/৫ তলা ভবনের অনুমোদন মিলবে।

নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ধানমন্ডি, বাংলামোটর, শাহবাগ, পরীবাগ এলাকায় নতুন করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা যাবে। সেই সঙ্গে মালিবাগ, শান্তিবাগ, পশ্চিম রাজাবাজার, জিগাতলা, শুক্রাবাদ, গোড়ান, সিপাহিবাগ, দক্ষিণগাঁও, কদমতলী, সবুজবাগ, আনছারাবাদ, মধ্য বাসাবো এলাকায় পরিষেবার দিক বিবেচনা করে আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবনের অনুমোদন পাওয়া যাবে

ব্লকভিত্তিক ভবন নির্মাণে থাকছে উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ

যেহেতু নগর এলাকায় জায়গার স্বল্পতা রয়েছে, সেহেতু প্লটভিত্তিক ভবনের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক ভবন নির্মাণের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে নতুন ড্যাপে। এখানে ব্লকভিত্তিক আবাসন পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো- নির্দিষ্ট জায়গায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত স্থান রেখে ছোট ছোট প্লট একত্রিত করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা। সেখানে ভবনের উচ্চতার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। যত উঁচু ভবন নির্মাণ করতে চাওয়া হবে, সিভিল এভিয়েশনের শর্ত মেনে তার অনুমোদন দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন>> প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে আটতলার ভবন হবে চারতলা

ড্যাপে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের আবাসনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্লট ও ব্লকভিত্তিক আবাসনের পার্থক্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি পাঁচ কাঠার একটি জমির মালিক সেখানে ভবন নির্মাণ করতে চান তাহলে তাকে প্রথমে নকশা ও ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হবে রাজউকের কাছে থেকে। সেখানে যদি প্রশস্ত রাস্তা না থাকে তাহলে ৪/৫ তলার ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাবেন। আগে সেখানে ৮/১০ তলা ভবনের অনুমোদন পাওয়া যেত।

গুলশান, বারিধারাসহ আরও কিছু এলাকায় সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণের বিধান রাখা হয়েছে ড্যাপে। পাশাপাশি মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, উলন, নিকেতন, মিরপুর- ১১, বাউনিয়া, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, নিকেতন, নয়াটোলা, মধুবাগ, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ারসাহারা, কালাচাঁদপুর, কড়াইল এলাকার নাগরিক পরিষেবা বিশ্লেষণ করে আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবন নির্মাণের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে

অন্যদিকে, পাঁচ কাঠার ছোট ছোট জায়গার মালিকগণ একত্রিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে যদি একটি আবাসিক ভবন গড়তে চান, সেটা হবে ব্লকভিত্তিক আবাসন। নতুন ড্যাপে এখানে নানা সুবিধা রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভবনের উচ্চতা নিয়ে মালিকদের আর ভাবতে হবে না। সুউচ্চ ভবনের অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

এ বিষয়ে ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব নির্ধারণ প্রক্রিয়া রয়েছে ড্যাপে। এ কারণে আবাসন চাহিদা পূরণে প্লটভিত্তিক উন্নয়নের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ওপর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ব্লকভিত্তিক পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো- আবাসনের সার্বিক পরিষেবার সুবিধা রেখে উন্মুক্ত স্থানসহ ছোট ছোট প্লটগুলো একত্রিত করে ব্লকে পরিণত করা। এতে ভবনমালিকরা যেমন সুউচ্চ ভবন পাবেন, তেমনি আবাসনকেন্দ্রিক সমস্যার সমাধানও মিলবে।

ড্যাপে ভবনের উচ্চতা কমানো হয়েছে যেসব এলাকায়

নতুন ড্যাপের সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগে যেখানে জমির পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সুউচ্চ ভবনের অনুমোদন দেওয়া হতো, এখন সেখানে প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে সুউচ্চ ভবন নির্মাণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে আগের আট তলা ভবনের স্থলে এখন চার তলা ভবনের অনুমোদন মিলবে। কারণ, বিভিন্ন এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্বের অনুপাত এবং সেখানকার নাগরিক সুবিধা বিবেচনায় রেখে রাজধানী ঢাকাকে একটি উন্নত ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলা।

এমন সিদ্ধান্তের ফলে স্বল্প প্রশস্তের রাস্তার পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সেই সঙ্গে আবাসন বা ডেভেলপার কোম্পানিগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করছেন তারা।

আরও পড়ুন>> বাসযোগ্য ঢাকা-কতদূর?

নতুন ড্যাপে পরিষেবা বিবেচনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) নির্ধারণ করা হয়েছে। যে এলাকার পরিষেবা উন্নত, সে এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি হবে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। যেমন- নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ধানমন্ডি, বাংলামোটর, শাহবাগ, পরীবাগ এলাকায় নতুন করে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা যাবে। সেই সঙ্গে মালিবাগ, শান্তিবাগ, পশ্চিম রাজাবাজার, জিগাতলা, শুক্রাবাদ, গোড়ান, সিপাহিবাগ, দক্ষিণগাঁও, কদমতলী, সবুজবাগ, আনছারাবাদ, মধ্য বাসাবো এলাকায় পরিষেবার দিক বিবেচনা করে আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবনের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অধীন এলাকা যেমন- গুলশান, বারিধারাসহ আরও কিছু এলাকায় সুউচ্চ আবাসিক ভবন নির্মাণের বিধান রাখা হয়েছে ড্যাপে। পাশাপাশি মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, উলন, নিকেতন, মিরপুর- ১১, বাউনিয়া, কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, নিকেতন, নয়াটোলা, মধুবাগ, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ারসাহারা, কালাচাঁদপুর, কড়াইল এলাকার নাগরিক পরিষেবা বিশ্লেষণ করে আগের চেয়ে কম উচ্চতার ভবন নির্মাণের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জমির সামনে যতটুকু প্রশস্ত রাস্তা থাকবে, সে অনুযায়ী ভবনের নকশার অনুমোদন দেবে রাজউক। প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে ৩/৪ তলা ভবনের অনুমোদন পাবেন ভবনমালিকরা। সুউচ্চ ভবন নির্মাণে অনেক নিয়ম ও শর্ত আরোপ করা হয়েছে নতুন ড্যাপে। এসব সিদ্ধান্ত ভবনমালিক ও আবাসন কোম্পানির জন্য খুব খারাপ বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি এসব কারণে ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষ ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন না।

আরও পড়ুন>> পূর্বাচলে ১১১ তলা আইকনিক টাওয়ার নির্মাণে জটিলতা!

‘আগে যেখানে একজন জমির মালিক ৮ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করতে পারতেন, এখন সামনে বড় রাস্তা না থাকলে তিনি ৩/৪ তলা ভবনের অনুমোদন পাবেন। সেক্ষেত্রে তিনি হয় জমিটি ফেলে রাখবেন, না হয় নিজের যখন পর্যাপ্ত টাকা হবে তখন করবেন। সেক্ষেত্রে আবাসন কোম্পানিকে উনি আর দেবেন না। কারণ, উনি চার তলা বিল্ডিং আর ফ্ল্যাটের ভাগাভাগি চাইবেন না।’

ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতা

ঢাকাসহ আশেপাশের এক হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার উন্নয়নে নানা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে ড্যাপে। নতুন ড্যাপের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০ বছর। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমবে এবং নাগরিক সেবার মান বাড়বে। রাজউকের উদ্যোগে প্রণীত নতুন ড্যাপে থাকছে ভূমি পুনর্বিন্যাস, উন্নয়ন-স্বত্ব, প্রতিস্থাপন পন্থা, ভূমি পুনঃউন্নয়ন, ট্রানজিটভিত্তিক উন্নয়ন, উন্নতিসাধন ফি, স্কুল জোনিং ও ডেনসিটি জোনিং।

ওয়ার্ডভিত্তিক জনঘনত্বের বিষয়ে দিকনির্দেশনাও আছে সংশোধিত ড্যাপে। এছাড়া সড়ক, উন্মুক্ত স্থান এবং পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও স্যুয়ারেজসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা সরবরাহের সামর্থ্য বিবেচনায় নতুন ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে কাজ করছে রাজউক। তবে, এত বিস্তর এলাকায় ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজউকের কতটা সামর্থ্য রয়েছে— এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

আরও পড়ুন>> কবরের ওপর কবর, স্থায়ী নয় সাড়ে ৩ হাত মাটিও

পাঁচ বছর মেয়াদি ড্যাপের প্রথম মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন হয়েছিল ২০১০ সালে। ২০১৫ সালে প্রথম ড্যাপের মেয়াদকাল শেষ হয়। পরে সময় বাড়িয়ে নগর উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে রাজউক। এখন সংশোধিত নতুন ড্যাপের মেয়াদ হয়েছে ২০ বছর।

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নাগরিক সমস্যা কমিয়ে একটি বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত শহর গড়ার নানা পজিটিভ দিক ড্যাপে রয়েছে। এটা বাস্তবায়ন করা গেলে সবার জন্যই ভালো। তবে, বিশদ এই অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে রাজউকের আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে। জনবলসহ মনিটরিং বা সার্বিক বিষয়ে তাদের তৎপরতা দৃশ্যমান হতে হবে।

নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, সংশোধিত ড্যাপে অনেক ভালো দিক থাকলেও এটা বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বর্তমান যে অবস্থা তাতে রাজউকের সেই সক্ষমতা নেই। তাদের বোর্ড সদস্যরা কয়েক বছরের জন্য হয়ে থাকেন। এ কারণে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। যে কারণে পেশাজীবীদের দিয়ে রাজউকের বোর্ড তৈরি করতে হবে। এত বিস্তৃত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি।

এ বিষয়ে ড্যাপ পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ড্যাপের সার্বিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন, জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করানোর বিষয়গুলো নিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আশা আর শঙ্কার দোলাচল

নতুন ড্যাপে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি আবাসন খাত সংকটে পড়েছে বলে দাবি করছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে রাজউক বলছে, নতুন ড্যাপে গণমানুষের আবাসনের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যার অনেকাংশই সমাধান করা যাবে।

আরও পড়ুন>> নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ১ লাখ ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা

এ বিষয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ড্যাপের নিয়ম অনুযায়ী প্রশস্ত রাস্তা না থাকলে জমির মালিক ৩/৪ তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাবেন। ফলে ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমে যাবে। ফ্ল্যাটের দামও বাড়বে। আবাসন কোম্পানিগুলো আগের মতো সব স্থানে সুউচ্চ ভবন নির্মাণের সুযোগ পাবে না। চাহিদার তুলনায় ফ্ল্যাট কম নির্মাণ হবে।

‘সাধারণ একজনের স্বপ্ন থাকে একটা ফ্ল্যাট কিনবেন। কিন্তু নতুন ড্যাপে সেই স্বপ্নটা সংকুচিত করা হয়েছে। অন্যদিকে, আমাদের মতো আবাসন ব্যবসায়ীদের ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিধি কমে আসবে। ফলে আমাদের যে জনবল আছে, যেমন- ইঞ্জিনিয়ার, নির্মাণ-শ্রমিকসহ এ খাতে সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরও কাজের জায়গা কমে আসবে। কারণ, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে আগে যেখানে ২০ জন প্রকৌশলী ছিলেন, সেখানে ৫/৭ জনকে রাখা হবে। একইভাবে নির্মাণ-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাজের জায়গা কমে আসবে।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের ‘ঠিক উল্টোটা’ দাবি করে ডিটেল এরিয়া প্ল্যান- ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, নতুন ড্যাপে গণমানুষের আবাসনের বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নিম্নবিত্তদের আবাসন ব্যবসার বিপরীতে প্রণোদনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর বিষয়টি প্রস্তাব করা হয়েছে। সবার জন্য, বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের সাশ্রয়ী আবাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ৫৮টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে।

ড্যাপের সার্বিক বিষয় নিয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাস্তবিক অর্থে ড্যাপে প্রস্তাবিত সব পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করবে এর যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের ওপর। স্বল্প আয়ের আবাসনকে নীতিপ্রণোদনা দেবার পাশাপাশি নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করে সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা জরুরি। যে পরিকল্পনা এবারের ড্যাপে স্থান পেয়েছে, এখন দরকার এর যথাযথ বাস্তবায়ন।

এএসএস/এমএআর