শামসুল আলম, চিকিৎসাবিদ্যায় পড়াশোনা করেও ৪০তম বিসিএসে জায়গা করে নিয়েছেন পুলিশ ক্যাডারে / ঢাকা পোস্ট

শামসুল আলম। পড়াশোনা করেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। চিকিৎসাবিদ্যায় পড়াশোনা করলেও ৪০তম বিসিএসে জায়গা করে নিয়েছেন পুলিশ ক্যাডারে। বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি পড়াশোনা, সফলতা ও ব্যর্থতাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুছা মল্লিক।

ঢাকা পোস্ট : বেড়ে ওঠার গল্প জানতে চাই…

শামসুল আলম : ছোটবেলা থেকেই শান্ত-স্বভাবের ছিলাম আমি। নওগাঁ সদরের ইকুরকুড়ি গ্রামে আমার বেড়ে ওঠা। ২০০৬ সালে নওগাঁ জিলা স্কুল থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি এবং  ২০০৮ সালে নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এইচএসসি পাস করি। বাবা কৃষক ও মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে কড়া শাসন আর গভীর স্নেহে বেড়ে উঠেছি। ওই সময় থেকে স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে বিসিএস ক্যাডার হব।

ঢাকা পোস্ট : চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ে পুলিশে আসার কারণ?

শামসুল আলম : চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ে পুলিশে আসার বিশেষ কোনো কারণ ছিল না। একটি ভিন্নধর্মী ভাবনা থেকে পুলিশিং পেশায় আসার স্বপ্ন লালন করি। ভিন্নধর্মী ভাবনাটি ছিল এরকম- ‘অপরাধ জগৎ সম্পর্কে জানা এবং একজন সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে তা প্রতিরোধ করতে জীবনের সবটুকু দিয়ে কাজ করা’। সেই থেকে শুরু। অপরদিকে, চিকিৎসকদের বেসরকারি চাকরিতে ক্যারিয়ার গঠনের অনুকূল পরিবেশ আমাদের এখানে তেমন একটা নেই। বিসিএস ক্যাডার হবার প্রধান কারণ- ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি সাধারণ মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা এবং অফুরন্ত ভালোবাসা।

বিসিএস ক্যাডার হওয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়া অনেকটা সহজ ও মসৃণ।

পুলিশের পেশায় থেকে একটু ভিন্নভাবে অসহায়, নিরীহ ও নির্যাতিত মানুষের সেবা করার সুযোগ থাকে— শামসুল আলম

ঢাকা পোস্ট : এ পেশায় এসে কীভাবে দেশের সেবা করতে চান? 

শামসুল আলম : চিকিৎসক হিসেবে রোগীদের সেবা করতে হয়। পুলিশের মাধ্যমে সেবা পান ভুক্তভোগীরা। খুব অসহায় হয়ে পড়লে মানুষ এ দুই পেশার মানুষের কাছে আসেন। পুলিশের পেশায় থেকে একটু ভিন্নভাবে অসহায়, নিরীহ ও নির্যাতিত মানুষের সেবা করার সুযোগ থাকে। চিকিৎসক পেশা থেকে অর্জিত কাউন্সিলিং ক্যাপাসিটি দিয়ে একজন নির্যাতিত, নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে মানসিকভাবে আরও বেশি সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

আরও পড়ুন >> ছবি এঁকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল অটিজমে আক্রান্ত সোহেল

ঢাকা পোস্ট : বিসিএসের জন্য বিশাল সিলেবাস, প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কীভাবে?

শামসুল আলম : নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে এটা আয়ত্ত করি। দীর্ঘ এ পথচলায় লাইব্রেরিতে গ্রুপ স্টাডি খুবই ভালো ফল দিয়েছে। বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য নবম ও দশম শ্রেণির বইগুলো পড়ি। এছাড়া এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও প্রাণিবিদ্যার কিছু অধ্যায় পড়ি। ইংরেজির প্রিপারেশন নিতে জিআরই (GRE) ভোকাবুলারি বইটি বারবার পড়তাম। ইংরেজি পত্রিকার কলাম পড়ে নিজের মতো করে হ্যান্ড নোট তৈরি করতাম। প্রচুর উক্তি, কবিতার লাইন ও ডেটা আলাদা করে নোট নিতাম। পরে সেগুলো বারবার পড়তাম।

আরও পড়ুন >> নীলফামারীর সোহান এখন চাকরি করছেন গুগলে

সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ভাইবা বোর্ডে নার্ভাস হয়ে পড়া। বারবার প্র্যাকটিসের মাধ্যমে এটা দূর করেছিলাম— শামসুল আলম

ঢাকা পোস্ট : যেকোনো সফলতার পেছনে নিশ্চিত ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে থাকে। আপনারও আছে। গল্পটা যদি বলতেন…

শামসুল আলম : জীবনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল ভাইবা বোর্ডে নার্ভাস হয়ে পড়া। সেখানে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে না পারা। বারবার প্র্যাকটিসের মাধ্যমে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করেছিলাম।

সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়েই মানুষের জীবন। আমি জীবনে সফল না ব্যর্থ, তা বলা কঠিন। ব্যর্থতা আছে বলেই সফল হতে পেরেছি। অন্ধকারের স্রোত যখন জেঁকে বসেছে তখনও নিজেকে শক্ত রেখেছি। জীবনে এমন খুচরা সমস্যা আর সাময়িক ব্যর্থতা থাকবেই, তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন >> প্রকৌশলীর চাকরি ছেড়ে ভার্মি কম্পোস্টে সার উৎপাদন করে সফল নাঈম 

ঢাকা পোস্ট : আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?

শামসুল আলম : ভবিষ্যতে ক্রিমিনোলজি নিয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে। সত্য ও ন্যায়ের মানসিকতা নিয়ে এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। মানুষের জন্য নিরাপদ ও সহজ সেবা নিশ্চিত করতে চাই। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন করে মানুষের সেবা করতে চাই।

আরও পড়ুন >> ছবি এঁকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল অটিজমে আক্রান্ত সোহেল

জীবনে অনেক খুচরা সমস্যা আর সাময়িক ব্যর্থতা থাকবেই, তাই বলে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না— শামসুল আলম

ঢাকা পোস্ট : নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

শামসুল আলম : মানুষের জীবন অজ্ঞতা আর জ্ঞানের একটি সংগ্রাম। যখন কোনো মানুষ নিজের সম্পর্কে জ্ঞান আর তথ্যের অনুসন্ধান বন্ধ করে দেয়, তখনই তার অজ্ঞতার শুরু। এই সংগ্রাম চলে প্রতি মুহূর্তে। সুতরাং নিজেকে চিনতে হবে সবার আগে।

আপনি যদি বুঝতে পারেন, আপনি নিজেই সমস্যা তাহলে নিজেকে পাল্টাতে পারবেন। কিছু শিখে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন। বেশিরভাগ লোকই চায় পৃথিবীর সবকিছু পাল্টে যাক। তারা কিন্তু নিজেদের বদলাতে চান না। নিজেকে বদলাতে পারলে জীবন সহজ ও সুন্দর হয়।

সুতরাং, ভালো আর খারাপ দিকগুলো জেনে প্রস্তুতি নিতে হবে সম্ভাবনাময় আগামীর দিকে। প্রকৃত শিক্ষার জন্য কর্মশক্তি, আবেগ এবং তীব্র আকাঙ্ক্ষার প্রয়োজন। সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে  বিসিএসের সিলেবাস ভিত্তিক পড়াশোনা করতে হবে। ধৈর্য, মেধা ও নিয়মিত পড়াশোনা— এ তিনের মিশেলে সম্ভাবনা ধরা দেবেই।
 
এমএম/এফকে/এমএআর/