অর্থপাচারের সব অপরাধ তদন্তে আইন সংশোধনে চাপ দুদকের
• হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে বিধি সংশোধন চায় দুদক
• তদন্তের ক্ষমতা না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন দুদক
• বিধি সংশোধনের নথি এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে
• ২৭তম সভায় চূড়ান্ত প্রস্তাবনা উপস্থাপনের নির্দেশনা
২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অর্থপাচারসহ সম্পৃক্ত সব অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৫ সালে আইনটি সংশোধন করে ২৭টি অপরাধের মধ্যে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং অপরাধ দুদকের আওতায় রেখে বাকিগুলোর অনুসন্ধান-তদন্তের জন্য সরকারের ছয়টি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সংস্থা ছয়টি হলো- পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ কাস্টমস, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), পরিবেশ অধিদপ্তর ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ফলে দেশি-বিদেশি মুদ্রাপাচার, জালিয়াতি ও প্রতারণা সংক্রান্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অন্য সব অপরাধ দুদকের এখতিয়ারের বাইরে চলে যায়।
আরও পড়ুন >> দুর্নীতি করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে
বিভিন্ন সময় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থপাচারের ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। অথচ, বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইনে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে না দুদক। এর বাইরে বেসরকারি পর্যায়ে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হলে তারও তদন্তের ক্ষমতা দুদকের এখতিয়ারের বাইরে। ফলে আলোচিত অর্থপাচার সংক্রান্ত ফাঁস হওয়া বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে তদন্ত করতে পারছে না দুদক।
২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। কেবল ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই ছিল ভুয়া
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বাণিজ্য-সংশ্লিষ্ট লন্ডারিংয়ের সত্যতা পাওয়া যায়। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর অর্থপাচারের পরিমাণ বাড়ছে। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। কেবল ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই ছিল ভুয়া।
অথচ, বরাবরের মতো মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগ উঠলেই সবচেয়ে বেশি দায় নিতে হয় দুদককে। এমনকি সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত থেকেও বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ‘দুদক ঘুমিয়ে আছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
এ কারণে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত সব অপরাধ তদন্তে আগের ক্ষমতা আবার ফিরে পেতে আইন ও বিধি সংশোধনের তোড়জোড় বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যত দ্রুত সম্ভব মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় দুদকের তফসিলভুক্ত যে কোনো অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন চায় সংস্থাটি। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ আগস্ট মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধে জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২৬তম সভায় এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন দুদক চেয়ারম্যান।
অনলাইন জুম প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভায় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ সব মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্তে দুদকের এখতিয়ার রয়েছে— সম্প্রতি হাইকোর্টের এমন রায় বাস্তবায়নে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা (তফসিলসহ) সংশোধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন >> অভিযোগের বিষয়ে অপসারিত দুদক কর্মকর্তা শরীফের যত ব্যাখ্যা
এ বিষয়ে সভা-সংশ্লিষ্ট সরকারের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক চেয়ারম্যানের আনা প্রস্তাবের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, বিধিমালা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আইন ও দলিলাদি যাচাইয়ের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে একটি প্রস্তাবনা পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের নির্দেশনা দেন। ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে।
এছাড়া সভায় মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভায় গৃহীত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বরাবরের মতো মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগ উঠলেই সবচেয়ে বেশি দায় নিতে হয় দুদককে। এমনকি সম্প্রতি দেশের উচ্চ আদালত থেকেও বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার ও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ‘দুদক ঘুমিয়ে আছে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর আওতায় জারি করা ২০১৯ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালার তফসিলে ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ সংক্রান্ত মানি লন্ডারিং অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের দায়িত্ব দুদকের। তবে, সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি মামলায় দুদক সব মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত করবে মর্মে রায় প্রদান করা হয়। কিন্তু আইন ও তফসিলে শুধু ঘুষ ও দুর্নীতির অপরাধকে দুদক তদন্ত করতে পারে বিধায় সংস্থাটি উক্ত রায় বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
‘দুদক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ এর তফসিলে বর্ণিত দলিল-দস্তাবেজ জালকরণ, প্রতারণা, জালিয়াতি, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ, কর সংক্রান্ত অপরাধ, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন) থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং তদন্তের এখতিয়ার অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দুদককেও প্রদানের জন্য বিধিমালা (তফসিলসহ) সংশোধনের সুপারিশ করে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে।’
প্রায় একই তথ্য দেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দুদক আইনের তফসিলভুক্ত মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট যে কোনো অপরাধ অনুসন্ধান ও তদন্ত দুদক করতে পারবে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দুর্নীতি দমন কমিশন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা- ২০১৯ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পত্র প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মানি লন্ডারিং তদন্তের এখতিয়ার অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি দুদককেও প্রদানের লক্ষ্যে উক্ত বিধিমালা (তফসিলসহ) সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন হতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করে বিষয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে প্রেরণ করেছে বলে জানি।’
আরও পড়ুন >> ৬ মাসে দুর্নীতিবাজদের ৬৮২ কোটি টাকার সম্পদ ক্রোক-ফ্রিজ
গত ২৬ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির অপর কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক আদেশে বলা হয়েছে, তফসিলভুক্ত যে কোনো অপরাধের বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারবে দুদক। আগে মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপরাধ অনুসন্ধান করতে পারত সংস্থাটি। এখন থেকে সবগুলো অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের সুযোগ পাবে দুদক। কমিশন থেকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ২৭টি অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে পারত দুদক। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে মামলা ও হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ আছে। সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আরেটি মামলার পরিপ্রেক্ষিত হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। সংবিধানের ১১১ ও ১১২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুদককে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মানতেই হবে। আমরা মানতে বাধ্য।’
চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সব ধরনের অর্থপাচারের অপরাধ তদন্তের সুযোগ রেখে আইনের সংশোধন চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয় দুদক। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা ওই চিঠিতে বলা হয়, অর্থপাচারের ৮০ শতাংশ পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইনে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে পারে না দুদক। অথচ, মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বড় দায় নিতে হয় দুদককে। এ কারণে তদন্তের ক্ষমতা পুনরায় ফিরে পেতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিদ্যমান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটির (দুর্নীতি ও ঘুষ) অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে কমিশনের। বাকিগুলো করছে সরকারের ছয়টি সংস্থা- সিআইডি, এনবিআর, বিএসইসি, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কাস্টমস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অথচ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সব সম্পৃক্ত অপরাধ থেকে উদ্ভূত মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান ও তদন্তের একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল দুদক।
দুদকের ক্ষমতা না থাকায় পানামা পেপারস; প্যারাডাইস পেপারস; প্যান্ডোরা পেপারস; মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্প; কানাডা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থপাচারের মতো অনুসন্ধান-তদন্ত করা যাচ্ছে না। ফলে বিষয়গুলো তদন্তে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে ফাইল পাঠিয়ে দিতে হয়েছে।
২০০২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি মানি লন্ডারিং অপরাধ তদন্ত করতে পারতেন। এরপর মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০২ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ- ২০০৮ জারি করা হয়। ওই অধ্যাদেশের অধীন ১৭টি প্রেডিকেট অফেন্স থেকে উদ্ভূত সব মানি লন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল। পরে অধ্যাদেশটি বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০০৯ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইনেও সব মানি লন্ডারিং এককভাবে শুধু দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য ছিল।
কিন্তু মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০০৯ বাতিল করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ অধ্যাদেশ-২০১২ জারি করা হয়। যা পরবর্তীতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ হিসেবে জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১২ সালের সংশোধিত আইনে ১৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের পরিবর্তে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধ প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এসব অপরাধ এককভাবে দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য করা হয়। অর্থাৎ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের শুরুতে সব সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র সংস্থা ছিল দুদক।
আরও পড়ুন >> ঘুষ নিলেন, ভুক্তভোগীকে মামলায়ও ফাঁসালেন তিনি!
২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করা হয়। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে ২৭টি সম্পৃক্ত অপরাধের মধ্যে শুধু একটি (ঘুষ ও দুর্নীতি) অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদককে। ২০১৬ সালের ২১ জুন এটি দুদক আইনে তফসিলভুক্ত করা হয়।
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ২৭টি প্রেডিকেট অফেন্স অনুসন্ধান-তদন্তের জন্য সাতটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা- ২০১৯ অনুসারে ওই সাতটি সংস্থা তাদের ওপর নির্ধারিত প্রেডিকেট অফেন্সের অনুসন্ধান-তদন্ত করবে।
বিধিমালা অনুসারে ‘দুর্নীতি ও ঘুষ’ সম্পৃক্ত একটি অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের ভার এককভাবে দুদককে দেওয়া হয়। এনবিআরকে ‘কর সংক্রান্ত অপরাধ’ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে ‘পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধ (ইনসাইডার ট্রেডিং অ্যান্ড মার্কেট ম্যানিপুলেশন)’ এককভাবে অনুসন্ধান-তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
‘মুদ্রা জালকরণ’, ‘দলিল-দস্তাবেজ জালকরণ’, ‘চাঁদাবাজি’, ‘প্রতারণা’, ‘জালিয়াতি’, ‘অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা’, ‘অপহরণ, অবৈধভাবে আটকে রাখা ও পণবন্দি করা’, ‘খুন ও মারাত্মক শারীরিক ক্ষতি’, ‘নারী ও শিশু পাচার’, ‘চুরি/ডাকাতি/দস্যুতা/জলদস্যুতা/বিমান দস্যুতা’, ‘মানবপাচার’, ‘যৌতুক’, ‘মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন’, ‘সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থ জোগান’, ‘ভেজাল বা স্বত্ব লঙ্ঘন করে পণ্য উৎপাদন’, ‘যৌন নিপীড়ন’, ‘সংঘবদ্ধ অপরাধ’, ‘ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায়’- এই ১৮টি সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান-তদন্তের ভার এককভাবে সিআইডিকে দেওয়া হয়।
এছাড়া বাকি ছয়টি সম্পৃক্ত অপরাধের অনুসন্ধান ও তদন্তের ক্ষমতা যৌথভাবে দেওয়া হয়। এগুলো হলো- ‘অবৈধ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবসা’ সম্পৃক্ত যৌথভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও সিআইডি; ‘চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা’ বাংলাদেশ কাস্টমস ও সিআইডি; ‘চোরাকারবার’ এনবিআর ও সিআইডি; ‘দেশি ও বিদেশি মুদ্রাপাচার’ এনবিআর ও সিআইডি; ‘চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত অপরাধ’ এনবিআর ও সিআইডি; ‘পরিবেশগত অপরাধ’ পরিবেশ অধিদপ্তর ও সিআইডিকে যৌথভাবে অনুসন্ধান-তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
আরএম/এমএআর/