স্কুলভিত্তিক সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ
‘মারাত্মক’ টাইপ- ১ ডায়াবেটিসে ঝুঁকিতে শিশুরা
দেশের এক কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশই শিশু। এ হার প্রতিনিয়ত আরও বাড়ছে— দাবি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের। কারণ প্রসঙ্গে তারা বলছেন, বংশগত কারণ ছাড়াও অতিরিক্ত নগরায়ণ, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে...
রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর এলাকায় বসবাস করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শ্যামল চন্দ্র দাস। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অবস্থিত বারডেম মহিলা ও শিশু হাসপাতালে। চিকিৎসকদের ভাষ্য, তারা ‘মারাত্মক’ টাইপ- ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিয়মিত দিতে হবে ইনসুলিন।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে বাবা শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, তিন ছেলের মধ্যে দুই ছেলেরই ডায়াবেটিস। একজনকে ১২ বছর এবং অপরজনকে পাঁচ বছর ধরে ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। জানি না এভাবে আর কতদিন চলবে?
আরও পড়ুন >> শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে স্থূলতা রোধের পরামর্শ
‘মেজো ছেলেটার (পরিমল) বয়স যখন সাত, তখন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। পরে অন্য একটা রোগের কারণে ডাক্তারের কাছে গেলে পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন তার ১৯ বছর চলছে। ছোট ছেলেটারও (অনন্ত) ছয় বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তার বয়স এখন ১১।’
মেজো ছেলেটার (পরিমল) বয়স যখন সাত, তখন ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। প্রথমে আমরা বুঝতে পারিনি। পরে অন্য একটা রোগের কারণে ডাক্তারের কাছে গেলে পরীক্ষায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখন তার ১৯ বছর চলছে। ছোট ছেলেটারও (অনন্ত) ছয় বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তার বয়স এখন ১১
সন্তানদের ডায়াবেটিস বংশগত কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেন গোষ্ঠী থেকেই নাকি ডায়াবেটিস শুরু হয়। কিন্তু আমার পরিবারে তাদের ছাড়া আর কারও ডায়াবেটিস নেই। বাবা হিসেবে আমারও নেই, সন্তানদের মায়েরও নেই। আমার তো মনে হয় না এটা বংশগত।’
‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও তাদের শারীরিক অন্য কোনো জটিলতা নেই। খুব স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। ডায়াবেটিসের সঙ্গে তারা অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকে তারা ইনসুলিন নিচ্ছে। প্রতিদিন দুই বেলা ইনসুলিন নিতে হয়। শরীরের এমন কোন জায়গা নাই যে ইনসুলিনের সিরিঞ্জ বা সুই ঢুকানো হয়নি। একদিন হাতে, আরেকদিন পায়ে, আরেকদিন পেটে দেওয়া হয়। এভাবেই চলছে। শুরুর দিকে ইনসুলিন নিতে গিয়ে অনেক কান্নাকাটি করত। এখন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
আরও পড়ুন >> শতকরা ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত
পরিমল বা অনন্তের মতো এমন আরও অনেক শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের অধিকাংশেরই ধরন টাইপ- ১। এর বাইরে যেসব শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাদের প্রায় সবাই স্থূলতায় ভুগছে।
৫ শতাংশ শিশু, টাইপ- ১ এ আক্রান্ত বেশি
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের এক কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশই শিশু। এ হার প্রতিনিয়ত আরও বাড়ছে— দাবি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের। কারণ প্রসঙ্গে তারা বলছেন, বংশগত কারণ ছাড়াও অতিরিক্ত নগরায়ণ, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস হতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- নবজাতক বা নিওনেটাল ডায়াবেটিস। সাধারণত জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের এটা হয়। মূলত নির্দিষ্ট একটি জেনেটিক মিউটেশন বা ত্রুটির কারণে নিওনেটাল ডায়াবেটিস দেখা দেয়। দ্বিতীয়ত হলো- বয়ঃসন্ধিকালের ডায়াবেটিস। এটাও নিওনেটাল ডায়াবেটিসের মতো একটি নির্দিষ্ট জেনেটিক মিউটেশন বা ত্রুটির কারণে হয়। বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে এটা দেখা দেয়। সাধারণত পরিবারের তিন জেনারেশনে এ ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকে।
আরও পড়ুন >> শীতের আগমনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে নিউমোনিয়া
শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি হয় টাইপ- ১ ডায়াবেটিস। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন তৈরি পুরোপুরি ব্যাহত হওয়ায় এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়। শিশুরা টাইপ- ২ ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত হয়। যদিও এ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত বড়দের বেশি দেখা দেয়। শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়া সত্ত্বেও তা কাজ করতে না পারায় এটা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও এটা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। শিশুদের ডায়াবেটিস হলে বড়দের তুলনায় ডায়াবেটিস–সংক্রান্ত জটিলতা বেশি হওয়ার শঙ্কা থাকে।
স্থূলতায় ভুগছে ৪ থেকে ৭ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ শিশু
বংশগত ডায়াবেটিস ছাড়া শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে মুটিয়ে যাওয়া বা স্থূলতায় ভোগা। ২০১৯ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এক জরিপে দেখা গেছে, চার থেকে সাত বছর বয়সী ১৪ শতাংশ শিশু স্থূলতায় ভুগছে। জেলা শহরপর্যায়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ মা শিশুদের স্থূলতাকে কোনো সমস্যা মনে করেন না। প্রায় ৭০ শতাংশ মায়েরা জানেন না শিশুর স্থূলতার কারণে ভবিষ্যতে কী কী অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
জরিপে আরও দেখা যায়, ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয় খেলে যে শিশুরা মুটিয়ে যায় সে সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই প্রায় ৭০ শতাংশ মায়ের। এছাড়া শিশুদের প্রায় ৭০ শতাংশ স্ক্রিন টাইম (মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার ইত্যাদি) গাইডলাইন অনুসরণ করে না। মায়েরাও জানেন না যে এ কারণে শিশুরা মুটিয়ে যেতে পারে।
সম্প্রতি সুইডেনের একদল গবেষক দেশটিতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলের পরীক্ষার ফলের ওপর একটি গবেষণা চালায়। সেখানে দেখা যায়, মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়নি এমন শিশুদের চেয়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের (দুই বছর আগে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে এমন শিক্ষার্থী) নম্বর কম ছিল।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের এক কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশই শিশু। এ হার প্রতিনিয়ত আরও বাড়ছে— দাবি ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের। কারণ প্রসঙ্গে তারা বলছেন, বংশগত কারণ ছাড়াও অতিরিক্ত নগরায়ণ, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিমাত্রায় মোবাইল আসক্তির কারণে শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে
গবেষণায় আরও দেখা যায়, শৈশবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে নেতিবাচক প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলেও তা বিদ্যমান। পরবর্তী জীবন ও চাকরির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ২৯ বছর বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লাভজনক কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম ছিল।
স্কুলভিত্তিক সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সহকারী পরিচালক প্রকাশ কুমার নাথ বলেন, সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস মহামারি হিসেবে চিহ্নিত এবং স্বীকৃত। সংক্রামক ব্যাধি হিসেবে এ প্রাণঘাতী রোগ সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশে এক কোটিরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। যে হারে রোগী বাড়ছে আমরা আশঙ্কা করছি ২০৪৫ সালে বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটি ২০ লাখ। বাস্তব চিত্র কিন্তু আরও ভয়াবহ।
আরও পড়ুন >> ডেঙ্গুর মধ্যেই ভারতে ছড়াচ্ছে আরএস ভাইরাস, আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা
‘শিশুদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো বিদ্যালয়। চার-পাঁচ বছর থেকে শিশুদের প্রাথমিক পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গণ্ডি পার করতে হয় তাদের। এ সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া, বিশেষ করে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় স্কুলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়ের ওপর সচেতনতা বৃদ্ধির একটি আদর্শ স্থান হতে পারে।’
প্রকাশ কুমার বলেন, উন্নত দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর স্কুল ও জাতীয় শিক্ষানীতিতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের বিশেষ চাহিদাগুলো স্বীকৃতি দিতে চায় না। রক্তের গ্লুকোজ নিরীক্ষণ, ইনসুলিন দেওয়ার ব্যবস্থা এবং জরুরি অবস্থায় চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলের কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা থাকে। ডায়াবেটিস সম্পর্কে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অজ্ঞতা এবং ভ্রান্ত ধারণাগুলো বৈষম্যের মূলে থাকে।
করণীয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শিশুদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সব পক্ষকে নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা কৌশল তৈরি করতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি তার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ডায়াবেটিস সচেতনতা, নিয়মিত হেলথ চেকআপ, পুষ্টিবিদদের দিয়ে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থাপত্র এবং টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত শিশুদের যথাযথভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে। এটা ভবিষ্যতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালু হবে বলে আশা করা যায়।’
পরিশ্রমের সঙ্গে কমেছে সুষম খাদ্যাভ্যাস, বেড়েছে চর্বিযুক্ত খাবার
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য। বংশ বা জন্মগত, যা-ই থাকুক না কেন এ রোগ ত্বরান্বিত করতে পারিপার্শ্বিক কারণগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দ্রুত নগরায়ণের ফলে আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রায় মারাত্মক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। যদি এটা সুনিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে মৃত্যুঝুঁকি বহুলাংশে বেড়ে যায়। রোগী অল্প বয়সে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে। কারণ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও পক্ষাঘাত, কিডনি ও স্নায়ু জটিলতা, বন্ধ্যত্ব এবং পায়ে ঘা ও পচন হতে পারে।’
আরও পড়ুন >> ‘ডায়াবেটিস রোধ হলে বছরে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব’
শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে ডা. ফারুক পাঠান বলেন, ‘শিক্ষার মাধ্যমে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, সে সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা গেলে; বিষয়গুলো যদি সবাই জানতে পারে তাহলে এ রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। এটা প্রমাণিত যে ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য দরকার শিক্ষার মাধ্যমে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা। এটা শুরু করতে হবে নিজের পরিবার থেকে। এরপর স্কুলের শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।’
‘পাঠ্যবইয়ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আবাসিক এলাকা এবং স্কুলে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ তৈরি করতে হবে। ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয় ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন তৈরি করতে হবে। মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকাকে এ বিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।’
ইনসুলিন ছাড়া শিশুদের জীবন হুমকির মুখে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা খুবই জরুরি। যে কারণে ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আগামীতে নিজেকে সুরক্ষায় ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানুন’। আমরা যদি ডায়াবেটিস রোগ সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে এটাকে প্রতিরোধ করতে পারব।
‘আমাদের সবার মনোযোগ থাকে টাইপ- ২ ডায়াবেটিস নিয়ে। এটা মূলত বয়স্কদের হয়। কারণ, আমাদের ১০০ ডায়াবেটিস রোগী থাকলে ৯৫ জনের ধরন টাইপ- ২। আমরা কখনও চিন্তা করি না যে আমাদের শিশুদেরও ডায়াবেটিস হতে পারে। বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে সরকারও সেটা বুঝতে পারেনি। এটা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে ডায়াবেটিক সমিতি। যা আমাদের জন্য খুবই অ্যালার্মিং।’
আরও পড়ুন >> জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিতে’ ১০০ কোটি শিশু
শিশুদের ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার প্রসঙ্গে রোবেদ আমিন বলেন, ‘গবেষণায় আমরা দেখেছি যে আট দশমিক চার শতাংশ ডায়াবেটিসের প্রিভ্যালেন্স (ব্যাপকতা) বেশি। তখন প্রশ্ন ছিল, এর নিচে যারা আছে, তাদের কী ডায়াবেটিস নেই। তখন ডায়াবেটিক ফেডারেশন থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে শূন্য থেকে ১৪ বছর বয়সী ডায়াবেটিস রোগী রয়েছে চার শতাংশের বেশি। এরপর ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত ডায়াবেটিস রোগীর হার নির্ণয়ে সাড়ে সাত হাজার স্যাম্পল নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা যায়, তিন শতাংশের প্রিভ্যালেন্স বেশ। তাহলে দেখেন, জন্ম থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সেই ডায়াবেটিস হতে পারে।’
‘আমাদের শিশুদের ডায়াবেটিস হচ্ছে। ইনসুলিন ছাড়া তাদের জীবন তো হুমকির মুখে পড়ে যাবে। অর্থাৎ তাদের জন্য ইনসুলিন হলো জীবনরক্ষাকারী একটি জিনিস। এটা ছাড়া তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এ কারণে সরকার টাইপ- ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য বিনা মূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, টাইপ- ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিশুদের একটি স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপহার দেওয়ার জন্য কাজ করছে ডেনমার্কভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নভো নরডিক্স। শিশুদের বিনা মূল্যে ইনসুলিন সরবরাহের পাশাপাশি প্রতি মাসে পরামর্শ, এইচবিএওয়ান সি পরীক্ষা, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, সিরিঞ্জ, স্ট্রাইপসহ গ্লুকোমিটার; শিশুদের জন্য বার্ষিক ডায়াবেটিস ক্যাম্প, সরাসরি চিকিৎসা ও টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে। বর্তমানে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, ফরিদপুর ও দিনাজপুরের তিনটি ক্লিনিকে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
টিআই/এমএআর/