স্বপ্নের দুবাইয়ে দুঃস্বপ্নের রাত পার করছেন বাংলাদেশি তরুণীরা
তাদের কেউ জেনে, না জেনে; আবার কেউ লোভ সামলাতে না পেরে এখানে এসেছেন। এসে দেখেন অন্ধকার জগৎ। না পারছেন সইতে, না পারছেন দেশে ফিরতে। বাধ্য হয়ে থেকে যাচ্ছেন অন্ধকার জগতে। এমন ১৫০০ বাংলাদেশি তরুণী বর্তমানে অবস্থান করছেন গ্ল্যামারাস আর ধনীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহর দুবাইয়ে।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) অন্ধকার জগতে বিচরণ করা কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীর সঙ্গে। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫-এর মধ্যে। ‘মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ পরিবেশনের নামে বাংলাদেশি এসব মেয়েকে দুবাই আসতে প্রলুব্ধ করা হয়। দেওয়া হয় আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ফিকে হতে বেশি সময় লাগে না। নাচের নামে তাদের কাজের সুযোগ হয় ড্যান্স বারে। কেউ কেউ সুযোগ পান ওয়েটার বারে অথবা ম্যাসাজ সেন্টারে। দিন শেষে তাদের ভাগ্যে নেমে আসে ভয়াল কালরাত।
বিজ্ঞাপন
দুবাইয়ে আটদিন অবস্থান করে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বাংলাদেশি তরুণীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদক। বাংলাদেশ থেকে কীভাবে তাদের পাচার করে দুবাই আনা হয়, সেই প্রক্রিয়াসহ এর সঙ্গে কারা জড়িত; পাচারের পর বাংলাদেশি মেয়েদের কাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাদের দিয়ে কী কী কাজ করানো হয়, কাজ করতে না চাইলে কীভাবে নির্যাতন করা হয়—রোমহর্ষক সেসব অভিজ্ঞতার বর্ণনা ফুটে উঠেছে ভুক্তভোগী, সংশ্লিষ্ট ব্রোকার (দালাল), দুবাইয়ে দীর্ঘদিন বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুখে। দুই পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথমটি।
টার্গেট নাচের মেয়েরা
বাংলাদেশি দালালদের মাধ্যমে মূলত তিন উপায়ে মেয়েদের দুবাই আনা হয়। প্রথমে টার্গেট করা হয় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণীদের। যারা মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন ড্যান্স ক্লাবে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনেকে আবার এখানে নাচ শিখতে আসেন। এসব ক্লাবের সঙ্গে দেশীয় অনেক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের চুক্তিও আছে। বিভিন্ন দেশে ‘মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’ পরিবেশনের নামে এসব ড্যান্স ক্লাব থেকে মেয়েদের হায়ার (ভাড়া) করে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলো। এখানে দেখানো হয় মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন।
ড্যান্স ক্লাবে আসা অধিকাংশ মেয়েই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাদের টাকার প্রয়োজন। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কর্তারা অনেক মেয়েকে দেখে বলেন, ‘তুমি তো ড্যান্স পার না, তোমাকে কীভাবে নেব
বাংলাদেশি দালাল
এসব ড্যান্স ক্লাব ও ফার্ম দুবাইয়ের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের এজেন্ট হিসেবেও কাজ করে। দুবাইয়ের হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকদের চাহিদা অনুযায়ী ড্যান্স ক্লাব অথবা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মের মালিকরা মেয়েদের সরবরাহ করেন।
দুবাইয়ের ওয়েটার বারে কর্মরত এক তরুণী নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল দুবাইয়ে তিন মাসব্যাপী একটি নাচের অনুষ্ঠান হবে। এজন্য আমাদের তিন মাস থাকতে হবে। প্রতি মাসে ৫০ হাজার করে তিন মাসে দেওয়া হবে দেড় লাখ টাকা। বাংলাদেশে থাকাকালীন অগ্রিম দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। প্লেনের টিকিট এবং থাকা-খাওয়া ফ্রি।’ রাজি হলে বলা হয় ইন্টারভিউ (সাক্ষাৎকার) নেওয়ার কথা।
মুজরার মেয়েদের সঙ্গে রাত কাটাতে ১৫০০ থেকে ২০০০ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার টাকা) খরচ করতে হয়। এছাড়া ওয়েটার বারের মেয়েদের (যেসব মেয়ে বারে পরিচারকের কাজ করেন) প্রতি রাতের জন্য ১০০০ দিরহাম (২৪ হাজার টাকা) দর নির্ধারিত থাকে। এর মধ্যে অর্ধেক টাকা নেন বারের মালিক, অর্ধেক পান ওই তরুণী
ইন্টারভিউ নেওয়া হয় দুভাবে। প্রথমে, স্কাইপের ভিডিও কলের মাধ্যমে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা হয়। পরে ক্যামেরার সামনে তাদের নাচতে বলা হয়। সেই ভিডিও পাঠানো হয় দুবাইয়ে অবস্থিত হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের কাছে। পরে তারা ভিডিও দেখে মেয়েদের সিলেক্ট করেন।
স্কাইপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুবাইয়ে মেয়েদের পাচার করা এক ব্রোকার (দালাল) বলেন, ড্যান্স ক্লাবে আসা অধিকাংশ মেয়েই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাদের টাকার প্রয়োজন। ইন্টারভিউ নেওয়ার সময় কর্তারা অনেক মেয়েকে দেখে বলেন, ‘তুমি তো ড্যান্স পার না, তোমাকে কীভাবে নেব?’
তখন অনেক মেয়েই বলেন, তারা শিখে নেবেন। কেউ কেউ বলেন, ‘যে কাজ দেবেন, সেটাই করব’। এমন সুযোগে মেয়েদের দুবাই নিয়ে ‘যা ইচ্ছা তাই’ করানোর সুযোগ পান মালিকরা।
আমাদের বলা হয়েছিল দুবাইয়ে তিন মাসব্যাপী একটি নাচের অনুষ্ঠান হবে। এজন্য আমাদের তিন মাস থাকতে হবে। প্রতি মাসে ৫০ হাজার করে তিন মাসে দেওয়া হবে দেড় লাখ টাকা। বাংলাদেশে থাকাকালীন অগ্রিম দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। প্লেনের টিকিট এবং থাকা-খাওয়া ফ্রি
ভুক্তভোগী তরুণী
প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ এসব মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জ ও উত্তরার কয়েকটি স্পটে। প্রশিক্ষণে তাদের পুরুষদের সঙ্গে কথা বলার ধরন, কীভাবে ভালো ব্যবহার করতে হয়, নিজেকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে হয়—এসব বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণের পরপরই শুরু হয় পাচারের প্রক্রিয়া। ড্যান্স ক্লাবের লোকজনের সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজশ থাকে। তারাই মেয়েদের পাসপোর্ট তৈরি করে তাতে ট্যুরিস্ট অথবা ভিজিট ভিসা লাগায়। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষর করা হয়। যেখানে লেখা থাকে, ‘মেয়েটি তিন মাস কাজ করবে, প্রতি মাসের জন্য ৫০ হাজার বাংলাদেশি টাকা দেওয়া হবে।’
যেসব মেয়ে ‘যে কাজ দেবেন, সেটাই করব’ বলেন, তাদের জন্য তৈরি করা হয় আলাদা চুক্তিপত্র। সেখানে টাকার কথা উল্লেখ থাকলেও ‘নির্দিষ্ট কোনো কাজের কথা’ উল্লেখ থাকে না।
মেয়েরা নাচ শেষে আগতদের ছোড়া টোকেন, মালা বা তাজ নিয়ে মালিকের কাছে জমা দেন। প্রতিটি টোকেন, মালা বা তাজের জন্য মেয়েরা অর্ধেক টাকা পান। বাকি অর্ধেক রেখে দেন মালিক। অর্থাৎ কোনো মেয়ে যদি ৫০ দিরহামের টোকেন আয় করেন, মালিক তাকে নগদ ২৫ দিরহাম দিয়ে দেন
ভুক্তভোগী তরুণী
এরপর ‘এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট’ শেষে মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় দুবাই। দুবাই পৌঁছে প্রথমে তাদের রাখা হয় বাংলাদেশিদের অধীন কয়েকটি ফ্ল্যাটে। সেগুলোর নিরাপত্তায় থাকেন বাংলাদেশি দালালরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে মেয়েদের পাঠাতে একজন দালাল বা ব্রোকার পান ২০ হাজার টাকা। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশকে ‘কন্ট্রাক্টের জন্য দেওয়া হয় ৭০ হাজার টাকা।
দুবাইয়ে যাওয়ার পর কোনো মেয়ে যদি ভালো কাজ দেখাতে পারেন, তাহলে মালিক তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। আর যারা উদাসীন হন, তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে সবাইকে ন্যূনতম তিন মাস সেখানে থাকতেই হয়—জানান ওই দালাল।
মেয়েদের দিয়ে যেভাবে আয় করেন মালিকরা
মুজরা ভারতীয়দের জন্য ঐতিহ্যবাহী একটি নাচ। দুবাইয়ে গেলে ভারতীয়রা পরিবার-পরিজন নিয়ে মুজরা দেখতে রেস্টুরেন্টে যান। দুবাই সরকারও মুজরার জন্য মেয়েদের লাইসেন্স দেয়। একটি রেস্টুরেন্টে সাধারণত ২০ জন মেয়েকে নাচের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে একদিন স্টেজে একসঙ্গে ১২ জন মুজরার সুযোগ পান। অতিরিক্ত একজন মেয়েকে সেখানে রাখা হয়।
লাইসেন্স নিয়ে ভারতীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে রুচিশীল মুজরা পরিবেশন হলেও বাংলাদেশি তরুণীদের দিয়ে মালিকরা একটু ভিন্নভাবে মুজরা করান। তাদের জামাকাপড় থাকে অশালীন, অঙ্গভঙ্গি থাকে অসুস্থ ও উত্তেজনাকর।
ভারতীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে খাওয়ার জন্য গেলে বিনামূল্যে মুজরা দেখা যায়। গ্রাহকরা মুজরা দেখেন আর খাবার খান। তবে মুজরা পছন্দ হলে কেউ কেউ মেয়েদের ওপর টাকা ছিটান।
বারে কর্মরত অধিকাংশ মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকেই নিজ দেশে কোনো তরুণের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি, প্রেমও করেননি। কেউ কেউ এখানে এসে তরুণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তারা শুধু প্রেমিকের সঙ্গেই রাত কাটাতে চান। কিন্তু মালিকরা তাদের বাধ্য করেন অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে। রাজি না হলে মেয়েদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মারধরের পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অথবা জোর করে মদ পান করিয়ে অন্যের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়
তবে বাংলাদেশি মেয়েদের নিয়ে আয়োজিত মুজরা দেখতে গেলে গেট থেকেই গ্রাহককে টোকেন সংগ্রহ করতে হয়। প্রতি টোকেনের দাম ৫০ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৫০ টাকা)। কোনো মেয়ের নাচ ভালো লাগলে গ্রাহক টাকার বদলে ৫০ দিরহামের ওই টোকেন ছুড়ে মারেন। বাংলাদেশি মালিকানা কয়েকটি বার/রেস্টুরেন্টে আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। সেখানে মেয়েদের নাচ ভালো লাগলে টোকেনের বদলে দেওয়া হয় গোল্ড প্লেটের তাজ বা ফুলের মালা। টোকেনের মতো এসব মালা বা তাজেরও একটা উপযুক্ত মূল্য আছে।
মুজরায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি এক তরুণী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়েরা নাচ শেষে আগতদের ছোড়া টোকেন, মালা বা তাজ নিয়ে মালিকের কাছে জমা দেন। প্রতিটি টোকেন, মালা বা তাজের জন্য মেয়েরা অর্ধেক টাকা পান। বাকি অর্ধেক রেখে দেন মালিক। অর্থাৎ কোনো মেয়ে যদি ৫০ দিরহামের টোকেন আয় করেন, মালিক তাকে নগদ ২৫ দিরহাম দিয়ে দেন।
অনেক সময় দুই হাত ও পা বেঁধে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় মুখে মদ বা নেশাজাতীয় পানীয় পান করিয়ে রাজি করানো হয়। অনেক মেয়ে নির্যাতনের মুখে দেশে ফিরে আসতে চান। মালিকরা তখন তাদের হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে ওই মেয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য হন
ভুক্তভোগী তরুণী
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি বারগুলোতে মুজরার মেয়েদের মাসিক ৩০০ টোকেন সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করা হয়।
যেভাবে নির্যাতনের শিকার হন মেয়েরা
ওই তরুণী ঢাকা পোস্টকে জানান, সাধারণত মুজরা শুরু হয় রাত ১০টায়। নাচ পছন্দ হলে আগতরা মেয়েদের ওপর টোকেন ছুড়তে থাকেন। রাত ৩টার দিকে শেষ হয় মুজরা। এর মধ্যে আগতদের অনেকেই মুজরায় অংশ নেওয়া মেয়েদের প্রেমে পড়ে যান। তারা পছন্দের মেয়েকে নিজ বাসা বা হোটেলে নিয়ে যেতে চান। অধিকাংশ মেয়েই যেতে চান না। তখন মালিকরা তাদের নির্যাতন করেন। মারধর করে নিজ গাড়িতে গ্রাহকের সঙ্গে হোটেলে পাঠান। পরদিন দুপুরে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।
মুজরার মেয়েদের সঙ্গে রাত কাটাতে ১৫০০ থেকে ২০০০ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৬ হাজার টাকা) খরচ করতে হয়। এছাড়া ওয়েটার বারের মেয়েদের (যেসব মেয়ে বারে পরিচারকের কাজ করেন) প্রতি রাতের জন্য ১০০০ দিরহাম (২৪ হাজার টাকা) দর নির্ধারিত থাকে। এর মধ্যে অর্ধেক টাকা নেন বারের মালিক, অর্ধেক পান ওই তরুণী।
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় ওয়েটার বারে কর্মরত বাংলাদেশি এক তরুণীর সঙ্গে। তিনি জানান, বারে কর্মরত অধিকাংশ মেয়ের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। তাদের অনেকেই নিজ দেশে কোনো তরুণের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলেননি, প্রেমও করেননি। কেউ কেউ এখানে এসে তরুণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। তারা শুধু প্রেমিকের সঙ্গেই রাত কাটাতে চান। কিন্তু মালিকরা তাদের বাধ্য করেন অন্য পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে। রাজি না হলে মেয়েদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। মারধরের পাশাপাশি ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অথবা জোর করে মদ পান করিয়ে অন্যের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরও জানান, এক্ষেত্রে কম বয়সী মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হন বেশি। কারণ, সেখানকার ব্যবসায়ীরা তাদের সঙ্গে রাত কাটাতে বেশি আগ্রহ দেখান। অন্যদিকে, নাচের বাইরে অন্যকিছু করতে চান না মেয়েরা। এ কারণে নির্যাতন করে তাদের পাঠানো হয়। একজন তরুণীর সঙ্গ পেতে বাংলাদেশি গ্রাহকরা সর্বোচ্চ তিন হাজার দিরহাম (প্রায় ৭২ হাজার টাকা) পর্যন্ত দিতে রাজি থাকেন।
নির্যাতন করা হয় যেভাবে
দুবাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশি মালিকানাধীন ওয়েটার বারে কর্মরত অপর এক তরুণী ঢাকা পোস্টকে জানান, তারা জেনেশুনে নাচের জন্য দুবাইয়ে এসেছেন। তবে তারা জানতেন না, তাদের এখানে গ্রাহকদের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করা হবে। যেসব মেয়ে রাজি হন না, প্রাথমিকভাবে তাদের রাজি করানোর জন্য মেয়ে লিডারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই মেয়ে লিডার বিভিন্নভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। হুমকি-ধামকিও দেন। এতে কাজ না হলে চড়-থাপ্পড় মারা হয়। তাতেও কাজ না হলে নেমে আসে অকথ্য নির্যাতন।
‘অনেক সময় দুই হাত ও পা বেঁধে দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখা হয়। এ অবস্থায় মুখে মদ বা নেশাজাতীয় পানীয় পান করিয়ে রাজি করানো হয়। অনেক মেয়ে নির্যাতনের মুখে দেশে ফিরে আসতে চান। মালিকরা তখন তাদের হাত-পা বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। পরে ওই ভিডিও দেশে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। একপর্যায়ে ওই মেয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য হন’—বলেন ওই ভুক্তভোগী তরুণী।
চলবে…
এআর/এমএআর/এমএমজে