‘ভাই, এখানে এক চাইনিজ এজেন্টের কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। এখন বাড়ি থেকে পাঁচ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) না দিলে বের হতে দেবে না। কাল অনেক মারধর করেছে। ভাই, আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন? একটু চেষ্টা করেন, বের করতে পারেন কি না। যদি পারেন আমার অনেক উপকার হয়।’

চলতি বছরের (২০২২) আগস্টের প্রথম সপ্তাহে কম্বোডিয়ার নম পেন শহর থেকে সেখানকার এক চীনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীর পাঠানো বার্তাটি আসে ঢাকা পোস্টের কাছে। ওই বার্তার সূত্র ধরে কথা হয় ওই কর্মীর সঙ্গে। উঠে আসে কম্বোডিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতনের রোমহর্ষক চিত্র

ভুক্তভোগী ওই যুবকের পাশাপাশি কম্বোডিয়ায় থাকা আরও প্রায় ৩০ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়ায় এনে বিক্রি করা হয় তাদের। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালালরা। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কেনার পর তাদের ‘দাস’ বানিয়ে রাখে। বাধ্য করা হয় নানা অপকর্ম করতে। তাদের কথামতো সবকিছু করতে হয়। না করলে চলে নির্যাতন।

ভুক্তভোগী ওই যুবকের পাশাপাশি কম্বোডিয়ায় বসবাসরত আরও প্রায় ৩০ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে কম্বোডিয়ায় এনে বিক্রি করা হয় তাদের। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশি দালালরা। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো কেনার পর তাদের ‘দাস’ বানিয়ে রাখে। বাধ্য করা হয় নানা অপকর্ম করতে। তাদের কথামতো সবকিছু করতে হয়। না করলে চলে নির্যাতন

ঢাকা পোস্টের নিজস্ব অনুসন্ধান এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কাজ নিয়ে বৈধভাবে কম্বোডিয়ায় যান কর্মীরা। সেখানে প্রত্যেককে বিমানবন্দরে রিসিভ করেন বাংলাদেশি ট্রাভেল এজেন্সির লোকেরা। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় দেশটির কোনো শহরের হোটেল বা ফ্ল্যাট বাড়িতে। সেসব হোটেল বা বাড়িতে বাংলাদেশি দালালরা থাকেন। সেখানে তাদের কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা যাচাই করা হয়। এর ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করে একেকজন বাংলাদেশিকে বিক্রি করে দেওয়া হয় অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। বিক্রির সময় বাংলাদেশি দালাল এবং ওই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তিপত্রে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে ‘দাস’ বানানো হয় বাংলাদেশি কর্মীদের।

‘ভাই, আপনি কি সাহায্য করতে পারবেন’— এমন বার্তা দিয়ে ঢাকা পোস্টের এ প্রতিবেদকের কাছে সাহায্য চান এক ভুক্তভোগী বাংলাদেশি / ঢাকা পোস্ট

আরও পড়ুন >> ইউরোপে মানবপাচারের নতুন রুট ‘ভারত হয়ে উজবেকিস্তান’

কম্বোডিয়ায় দাসত্ব থেকে ফেরা বাংলাদেশিদের বক্তব্য ও অনুসন্ধান অনুযায়ী, একজন বাংলাদেশিকে কমপক্ষে আড়াই থেকে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেন বাংলাদেশি দালালরা। কোনো কর্মী যদি অনলাইন প্রতারণায় ‘দক্ষতা’দেখান তাহলে তাকে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে আরও বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

নকিব আল নোমান কায়সার (ছদ্মনাম), বাংলাদেশি এ কর্মীকে চার মাস আগে বিক্রি করে দেওয়া হয় চীনা এক প্রতিষ্ঠানের কাছে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘আমাকে কম্বোডিয়া এনে প্রতারণা করেন এক বাংলাদেশি। গত চার মাস ধরে আমাকে তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেওয়া হয়। এখন চতুর্থ প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। সর্বশেষ আগস্ট মাসে আমাকে আবার বিক্রি করে দেওয়া হয়। এই চার মাসে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো থাকা-খাওয়া ছাড়া আমাকে কোনো বেতন দেয়নি। কম্পিউটার টাইপিং এবং ইংরেজিতে দক্ষতা থাকায় তারা আমাকে দিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের প্রতারণার কাজ করতে বাধ্য করে।’

কোন ধরনের কাজ করতে বাধ্য করা হয়— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরুষকে তরুণী সেজে কখনও ব্যাংকার, আবার কখনও বড় ব্যবসায়ী রূপে ইউরোপ-আমেরিকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তাদের নানা ধরনের ভুয়া স্কিমের মাধ্যমে টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে বলা হয়। বিনিয়োগ করাতে পারলে বেতন হয়, না পারলে বেতন হয় না।’

আরও পড়ুন >> দালালের কথায় ‘চোখ বন্ধ করে’ সিল মারেন ইমিগ্রেশন অফিসার

‘আমাকে চীনা একটি প্রতিষ্ঠান ছয় মাসের চুক্তিতে কিনে নেয়। ১৫ দিনের ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরপর ভুয়া ঋণ বিতরণের প্রলোভন দেখিয়ে সার্ভিস চার্জ আদায়ের কাজ দেওয়া হয়। প্রথম মাসে কারও সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আনতে পারিনি। পরের মাসে আমাকে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করে দেওয়া হয়। শুরুতে আমার মূল্য ধরা হয় দুই হাজার মার্কিন ডলার। পরে আমাকে চার হাজার ডলারে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানে এবং পরবর্তীতে সাত হাজার ডলারে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। এ প্রতিষ্ঠানের কোনো নাম নেই। শুধুমাত্র একটি ফ্ল্যাট বাড়ি, ভেতরে বড় বড় রুম আর কম্পিউটার আছে। কয়েকটি হল রুমের মধ্যে ২০০-২৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা। সেখানে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। অনেক চেষ্টা করেছি এ জাহান্নাম থেকে বের হতে, কিন্তু পারিনি।’

কম্বোডিয়ায় পাচার হওয়া ভুক্তভোগী দুই বাংলাদেশির পাসপোর্ট। তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় ঢাকা পোস্টের / ছবি- ঢাকা পোস্ট  

বাংলাদেশিরা কোন ভিসায় কম্বোডিয়ায় যায়, বাস্তবতা কী

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে প্রায় ৭০টির মতো ট্রাভেল ও রিক্রুটিং এজেন্সি ট্যুরিস্ট, বিজনেস, ফ্যামিলি বা ভিজিট ভিসা ইস্যু করে বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাঠায়। এগুলোর মধ্যে ডজনখানেক এজেন্সি সক্রিয়ভাবে নিয়মিত লোক পাঠায়। ঢাকা পোস্টের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, মূলত ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসায় বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় বেশি পাঠানো হয়।

কম্বোডিয়ায় বিজনেস ই-ভিসা করতে বর্তমানে ৪২ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি প্রায় চার হাজার টাকা) এবং ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করতে ৩৬ ডলার (তিন হাজার ৪০০ টাকা) খরচ পড়ে। পাশাপাশি প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পাসপোর্টপ্রতি এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ এই একই ভিসায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সেখানে পৌঁছানোর পর কাজ তো দূরের কথা, বিমানবন্দরে নেমে দালালের খপ্পরে পড়ে নরকর স্বাদ গ্রহণ করছেন বাংলাদেশিরা

তবে ভিসার ধরন যাই হোক, এখান থেকে বলা হয় বাংলাদেশি কর্মীদের অন্য কাজ দেওয়া হবে। যেখান থেকে ভালো আয় হবে। বাংলাদেশিদের অনলাইন ক্যাসিনো পরিচালনার সহযোগী, টাইলস মেশিনের কাজ, ইলেকট্রিশিয়ান হেল্পার, কনস্ট্রাকশন কাজের (দিনমজুর) প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু ওখানে যাওয়ার পর তাদের আর সেই ধরনের কোনো কাজ দেওয়া হয় না। সেখানে নিয়ে বাংলাদেশিদের কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বিক্রি করে দেওয়া হয় কোনো না কোনো চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে।

বিজনেস ও ট্যুরিস্ট ভিসায় কম্বোডিয়া যাওয়া চার বাংলাদেশি ঢাকা পোস্টকে জানান, তারা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় কম্বোডিয়ায় গিয়েছেন। তাদের বলা হয়, পোশাক কারখানায় কাজ দেওয়া হবে। যাদের কাজের অভিজ্ঞতা আছে তারা ৪০০ থেকে ৬০০ মার্কিন ডলার প্রতি মাসে আয় করতে পারবেন। অদক্ষ বা অনভিজ্ঞ শ্রমিকরা ৩০০ থেকে ৪০০ ডলার পাবেন। তাদের এমনও বলা হয়, ভালো কম্পিউটার অপারেটিং করতে পারলে মাসে এক থেকে দেড় হাজার ডলার আয়ের সুযোগ আছে। প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা কাজ, সপ্তাহে একদিন ছুটি। এছাড়া থাকা-খাওয়া, মেডিকেল বিমা, পরিবহন খরচ, দেশে ছুটিতে আসার এয়ার টিকিট- সব ওই প্রতিষ্ঠান বহন করবে বলে জানানো হয়।

আরও পড়ুন >> দুবাইয়ে বাংলাদেশি তরুণীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছেন যারা

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কম্বোডিয়ায় বিজনেস ই-ভিসা করতে বর্তমানে মাত্র ৪২ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি চার হাজার টাকা) এবং ট্যুরিস্ট ই-ভিসা করতে কেবল ৩৬ ডলার (তিন হাজার ৪০০ টাকা) খরচ পড়ে। পাশাপাশি প্রসেসিং চার্জ হিসেবে পাসপোর্টপ্রতি এক হাজার টাকা নেওয়া হয়। অথচ একই ভিসায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকায় লোক পাঠানো হচ্ছে কম্বোডিয়ায়। সেখানে পৌঁছানোর পর কাজ তো দূরের কথা, বিমানবন্দরে নেমে দালালের খপ্পরে পড়ে নরকর স্বাদ গ্রহণ করছেন বাংলাদেশিরা।

‘দাসত্বের শৃঙ্খলে’ যা করছেন বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশিদের কেনার পর নানা ধরনের প্রতারণামূলক কাজে লাগায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন এমন চার বাংলাদেশি হলেন শাহরিয়ার, রোমান, রুম্মন ও মোক্তারুল (অনুমতি নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হলো)। ঢাকা পোস্টকে তারা জানান, তারা চার বন্ধু, একই এলাকায় বসবাস। ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ থেকে ‘কম্পিউটার অপারেটর’ হিসেবে চাকরি নিয়ে কম্বোডিয়া যান। টাইপিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিংসহ প্রভৃতি বিষয়ে দক্ষ ছিলেন তারা। কম্বোডিয়া পৌঁছানোর পর প্রত্যেককে সাড়ে তিন হাজার মার্কিন ডলারে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে এক বছরের জন্য বিক্রি করে দেন বাংলাদেশি দালাল। ওই প্রতিষ্ঠান তাদের ২০ দিনের ট্রেনিং দেয়।

লায়ন কামাল। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের পাচারচক্রের অন্যতম হোতা / ছবি- ঢাকা পোস্ট

শাহরিয়ার বলেন, ‘প্রথমে আমাকে কানাডার আলবার্টা প্রদেশের একজন আর্কিটেক্ট (স্থপতি) পরিচয়ে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়। ওই অ্যাকাউন্টে আমার  নাম দেওয়া হয় ক্যাস্ট্রো ডেভিড। প্রোফাইলে ছবি দেওয়া হয় একজন সুদর্শন ও সাদা চামড়ার যুবকের। বয়স দেখানো হয় ২৮ থেকে ৩০ বছর। আমি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে নিয়মিত ওই ছেলের ছবি পোস্ট করতাম। ট্রেন্ডিং, ফুটবল, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে পোস্ট দিয়ে অ্যাকাউন্ট সচল রাখতাম এবং প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতাম।’

“যারা একসেপ্ট করত তাদের প্রথম পাঁচ-ছয়দিন শুধু ‘গুড মর্নিং’, ‘গুড নাইট’সহ নানা গ্রিটিং মেসেজ পাঠাতাম। একপর্যায়ে কেউ যদি রিপ্লাই দিত তাদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। মাসখানেকের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার দুটি এবং মালয়েশিয়ার একটি মেয়ে আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। আমরা নিয়মিত চ্যাট ও কল করতাম। একে অন্যকে নগ্ন ও আপত্তিকর ছবি পাঠাতাম। মেয়েদের সারা শরীরের ছবি থাকলেও আমার ছবিতে মুখ বা চেহারা থাকত না। সম্পর্কের দ্বিতীয় মাসে আমি চীনা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশে অন্য একটি আইডি খুলে ওই তিন মেয়ের কাছে ঘনিষ্ঠ ও আপত্তিকর ছবিগুলো পাঠিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা দাবি করি। তাদের কাছ থেকে প্রায় আট হাজার মার্কিন ডলার আদায় করি। এটি ছিল আমার প্রথম আয়। এভাবে শত শত কৌশল ব্যবহার করে আমাকে দিয়ে প্রতারণা করানো হয়।”

আরও পড়ুন >> স্বপ্নের দুবাইয়ে দুঃস্বপ্নের রাত পার করছেন বাংলাদেশি তরুণীরা

বর্তমানে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন বিক্রির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি স্ক্যামিং করছে— অভিযোগ করেন তিনি।

ওই চার কর্মীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, প্রতিটি চীনা প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব অ্যাপ থাকে। ওই অ্যাপ দিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন কেনা যায়। বাংলাদেশি কর্মীদের কাজ ছিল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ভুয়া বিটকয়েন বিক্রি করা। তাদের মূলত আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের কাছে বিটকয়েন বিক্রি করতে দেওয়া হতো। সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশিদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হতো আফ্রিকান কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের নাম ও ফোন নম্বর। তাদের ফোন দিয়ে বা মেসেজ পাঠিয়ে ওই অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হতো।

অনিক। তিনিও নিরীহ বাংলাদেশিদের কম্বোডিয়ায় পাচারের সঙ্গে জড়িত / ছবি- ঢাকা পোস্ট

শাহরিয়ারের বন্ধু ভুক্তভোগী মোক্তারুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা আফ্রিকানদের ফোন দিয়ে বিটকয়েনের লাভজনক দিকগুলো তুলে ধরতাম। তাদের অনেকে আমাদের কথায় খুশি হয়ে অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করত। নিজেদের ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে বিটকয়েন কিনত। তবে, তারা যে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কয়েন কিনত আমরা সেসব কার্ড থেকে টাকা তুলে তাদের ব্লক করে দিতাম। তারা কার্ডের টাকা হারাত, বিটকয়েনও হারাত। এভাবেই চলছিল কার্যক্রম। বাংলাদেশি একজন কর্মীকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ১০ জন গ্রাহককে রেজিস্ট্রেশন করাতে হতো।’

জানা যায়, কম্বোডিয়ায় নাইজেরিয়া, ঘানা, আইভরি কোস্টসহ আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বসবাস। তাদের বিরুদ্ধে দেশটিতে অপরাধ ও মাদক বিক্রির অভিযোগ আছে। এসব আফ্রিকানদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন পেশাজীবীদের মোবাইল নম্বর বিক্রি করে তাদের (চীনা প্রতিষ্ঠান) কাছে। পরবর্তীতে ওই নম্বরে ফোন দিয়ে বা মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণা করা হয়।

রুম্মন নামে অপর এক বাংলাদেশি কর্মী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপে বিভিন্ন দেশের ভিআইপি ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর দেয়া হতো। আমরা ওই ব্যক্তিদের হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, টেলিগ্রাম অ্যাপে তরুণী সেজে ম্যাসেজ দিতাম। তাদের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাট করতাম। কথোপকথনের একপর্যায়ে তাদের অনলাইন ক্যাসিনো, ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিতাম। মেয়ে সেজে ১০০ জনকে ম্যাসেজ দিলে ২০ থেকে ২৫ জন আমাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে টাকা বিনিয়োগ করত। এরপর আমরা তাদের টাকা আটকে ফেলতাম।

আরও পড়ুন >> না বুঝে ফাঁদে পা দিচ্ছেন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুরা

‘এছাড়া প্রতিটি চীনা প্রতিষ্ঠানে ৩০-৩৫ জন সুন্দরী মেয়ে থাকে। তারা এশিয়ান ছেলেদের সঙ্গে বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভিডিও কলে কথা বলে। দেহ প্রদর্শন করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কাপড় খোলার জন্য তারা ভিডিওতে ইলেকট্রিক চিপস দাবি করত। ফাঁদে পড়া ছেলেরা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মেয়েদের চিপস কিনে দিত। ফলে একদিকে ওই মেয়েদের আয় যেমন হতো, অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য নিয়ে স্ক্যামিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়া মেয়েদের ভিডিও দেখার সময় তাদের ওয়েবক্যাম হ্যাক করত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর হ্যাকাররা। পরে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে আরও টাকা হাতিয়ে নেওয়া হতো।’

আতিক। কম্পিউটার অপারেটরের কথা বলে তিনিও কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের পাঠাতেন / ছবি- ঢাকা পোস্ট

তিন বছর ১১ মাস বন্দিশালায় থেকে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্বপালনের মাধ্যমে চীনাদের নৈকট্য লাভ করেছিলেন মো. জিন্নাহ নামে এক বাংলাদেশি। চীনাদের প্রতারণার কর্মযজ্ঞ নিয়ে কথা হয় ওই যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিনটি চীনা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি। মূলত চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বড় বড় ধনীদের নানাভাবে কনভিন্স করতেন (রাজি করানো) তারা। তাদের সঙ্গে ভিডিও সেক্স করার মতো সম্পর্ক তৈরি করা হতো। পরে সেসব ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল, ক্যাসিনোতে বিনিয়োগ, তাদের ব্যাংক ব্যালান্সের সব তথ্য সংগ্রহ ও হ্যাকিং করা এবং সর্বশেষ এসব তথ্য বিক্রি করে বিলিয়ন ডলার কামাই করতেন তারা।’

দাস কেনার চুক্তিপত্রে যা থাকে

কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশিদের কেনা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্যাসিনো ও অনলাইনে ভুয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি বিক্রির নামে প্রতারণা করে। তারা তাদের বাংলাদেশি এজেন্টদের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহ করে। যারা ‘দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত। এসব দালাল বাংলাদেশ থেকে যাওয়া কর্মীদের কাজের নামে চীনা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দেয়। বিক্রির সময় দালাল ও বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র/অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর হয়। সেখানে চীনা প্রতিষ্ঠানের নাম ও তারিখ উল্লেখ থাকে। তার নিচে বাংলাদেশি কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জন্ম তারিখ, বাংলাদেশের ঠিকানা, এজেন্টের (দালাল) নাম, চুক্তির মেয়াদকাল, কর্মঘণ্টা এবং কত টাকা দিয়ে (মার্কিন ডলার) বাংলাদেশিকে কেনা হয়েছে সেসব বিষয় উল্লেখ থাকে।

ঢাকা পোস্ট এ ধরনের একটি চুক্তিপত্র সংগ্রহ করেছে। এতে কর্মীকে দিয়ে কী কাজ করানো হবে তা উল্লেখের পাশাপাশি ওই কাজ করতে তিনি বাধ্য থাকবেন, তা উল্লেখ থাকে। তবে, চুক্তিপত্রটি বাংলাদেশি কর্মীকে পড়তে দেওয়া হয় না। তারা কেবল স্বাক্ষর দেন।

আরও পড়ুন >> ৫ মিনিটে ‘স্ত্রীকে হ্যাক’!

অঙ্গীকারনামায় যেসব বিষয় উল্লেখ থাকে তা হচ্ছে— স্বাক্ষরকারী ওই কর্মী এক বছরের জন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করা এবং প্রতিষ্ঠানের সব শর্ত মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। তাকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজের টার্গেট দেওয়া হবে। সেই টার্গেট পূরণ করতে না পারলে বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ (টিম লিডারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে) ওই প্রতিষ্ঠান কেটে রাখবে। চাকরির প্রথম এক বছর তারা অফিস ভবন থেকে বের হতে পারবেন না। কাজের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি নির্দিষ্ট মেয়াদের টার্গেট পূরণ না করেই কাজ ছেড়ে চলে যেতে চান তাহলে তাদের সেই মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা কেটে রেখে দেওয়া এবং তাদের কিনতে যত টাকা খরচ হয়েছে সেই অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে।

এতে আরও উল্লেখ আছে, কোনো কর্মী যদি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান চাইলে যেকোনো কর্মীকে যেকোনো সময় অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে।

উসমান ও আবুল। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের ‘সাইবার ক্রীতদাস’ বানাতে তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছেন বলে অভিযোগ / ছবি- ঢাকা পোস্ট 

অঙ্গীকারনামার শেষ অংশে লেখা রয়েছে, ‘আমি ঘোষণা করছি, সম্পূর্ণ সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে এবং কারও প্ররোচনা ছাড়াই স্বাক্ষর করলাম।’ তবে, ঢাকা পোস্টকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, চুক্তির বিষয়বস্তুগুলো তাদের পড়তে দেওয়া হয় না। এছাড়া ইংরেজিতে লেখা থাকায় অনেকেই তা পড়ার আগ্রহ দেখান না।

পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক, আরও কঠিন শাস্তি

ঢাকা পোস্টের সঙ্গে নির্যাতনের শিকার প্রায় ছয় বাংলাদেশির কথা হয়েছে। নির্যাতনের কয়েকটি ভিডিও ক্লিপও হাতে এসেছে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য ও ভিডিও দেখে জানা যায়, বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে ইলেকট্রিক শক।

ভুক্তভোগীরা জানান, কেউ যদি টানা দুই-তিনদিনের টার্গেট পূরণ করতে ব্যর্থ হন অথবা বারবার বাড়ি ফিরতে চান তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। প্রথমে তাদের লোহার পাইপ বা রডের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। তাদের কোমরের নিচে লাঠি বা রড দিয়ে পেটানো হয়। পাশাপাশি পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। ক্রিকেট বা বেজবল ব্যাট দিয়েও পেটানো হয়।

মোহাম্মদ মহসিন সরকার (ছদ্মনাম) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি ১২ ঘণ্টা নাইট ডিউটি করতাম। টানা আট ঘণ্টা ডিউটির পর ৩০ মিনিটের জন্য খাবারের বিরতি দেওয়া হতো। এরপর আবারও কাজ। একবার ডিউটি করা অবস্থায় রাতে শুয়ে পড়েছিলাম। তারা স্পাইক কেডস দিয়ে আমার পিঠে লাথি মারে। ব্যথায় কাতরাতে থাকি, তারপরও লাথি দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকি এবং কম্পিউটারের সামনে কাজ করতে বসি। নিয়মিত কিল-ঘুষি, লাথি ও গালিগালাজ চলত সেখানে।’

আরও পড়ুন >> পাসপোর্ট সেবা প্রশ্নবিদ্ধ, চোখ কেন এনআইডিতে?

‘প্রতিটি রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং কন্ট্রোল রুম অপারেটর থাকে। রাতে কেউ ঘুমালে তাকে ব্যাট দিয়ে পেটাতে দেখেছি আমি। অনেকে শিশুর মতো হাউমাউ করে কাঁদত। তাদের মুখে কাপড় ঢুকিয়ে আরও তীব্রভাবে পেটানো হতো। আমার এক রুমমেট সাতদিন রুমে ফেরেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে মেরে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে, আমরা সঠিক তথ্য জানতে পারিনি। বিষয়টি রহস্যই থেকে গেছে।’

দেশটির রাজধানী নম পেন থেকে শুরু করে আশপাশের শহর এবং ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। বাইরে থেকে দেখলে বিশেষ কিছুই মনে হবে না। একটি ছোট ডুপ্লেক্স বাসা বা ফ্ল্যাট বাড়িতেই অফিস তৈরি করে তারা। পাঁচ-ছয়টি ঘরে দুই শিফটে ২৪ ঘণ্টা চলে তাদের কার্যক্রম। কর্মীদের থাকার জন্য রয়েছে আট-দশটির মতো ঘর। প্রতিটি ঘরে ২০-৩০ জন গাদাগাদি করে ঘুমান। চীনা স্ক্যামিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ক্রং ব্যাটামব্যাং, শিয়ানোভিল, ক্যাম্পং চ্যাম, কান্দাল, পোয়েপেট ও পুরসাত শহরে অবস্থিত

কম্বোডিয়ায় নরকের স্বাদ শেষে এ বছরের মে মাসে দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশি তরুণ সামাদ মোহাম্মদ সোহেল রানা। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমার টিমে পাঁচজন ছিলেন। একজন চীনা, দুজন পাকিস্তানি, একজন নেপালি এবং আমি। প্রতি মাসেই টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হতাম আমি। তারা মাসে তিন হাজার থেকে চার হাজার ডলার আয়ের টার্গেট দিত। কিন্তু ৪০০ থেকে ৫০০ ডলার আয় কম হতো। এজন্য তারা আমার বেতন থেকে ১০০ ডলার, কখনও ২০০ ডলার কেটে রাখত।

উচ্চ বেতনে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কম্বোডিয়াতে নিয়োগের কথা বলে ‘সাইবার ক্রীতদাস’ বানাত চক্রটি। পাঁচ শতাধিক চাকরিপ্রত্যাশীর সঙ্গে প্রতারণা করা এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব / সংগৃহীত

‘আমাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি টানা পাঁচ মাস টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়। ষষ্ঠ মাসে তারা টার্গেটের ২০ ভাগও অর্জন করতে পারেনি। এক রাতে তাদের ডেকে নেওয়া হয়। তিনদিন তাদের কোনো খোঁজ ছিল না। আমরা কেউ ভয়ে জানারও চেষ্টা করিনি। চতুর্থ দিন তারা একসঙ্গে ফিরে আসে। তাদের দুই পা, পিঠ ও গলায় ক্ষত চিহ্ন দেখতে পাই। পরে তারা জানায়, হাত-পা বেঁধে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। পরবর্তী মাসে টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হলে অন্য কোথাও আরও এক বছরের জন্য তাদের বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। আমিও সেখানে এক বছর থেকেছি। এমন কোনো রাত কাটেনি যেদিন সহকর্মীদের কাতরানোর শব্দ শুনিনি।’

আরও পড়ুন >> অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের স্বীকার করেন না মালদ্বীপের মালিকরা

বাংলাদেশিদের জন্য ‘নরক’ যেসব শহর

ঢাকা পোস্টের অনুসন্ধান, ভুক্তভোগী ও কম্বোডিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটির রাজধানী নম পেন থেকে শুরু করে আশপাশের শহর এবং ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহরগুলোতে এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। বাইরে থেকে দেখলে বিশেষ কিছুই মনে হবে না। একটি ছোট ডুপ্লেক্স বাসা বা ফ্ল্যাট বাড়িতেই অফিস তৈরি করে তারা। পাঁচ-ছয়টি ঘরে দুই শিফটে ২৪ ঘণ্টা চলে তাদের কার্যক্রম। কর্মীদের থাকার জন্য রয়েছে আট-দশটির মতো ঘর। প্রতিটি ঘরে ২০-৩০ জন গাদাগাদি করে ঘুমান। চীনা স্ক্যামিং প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই ক্রং ব্যাটামব্যাং, শিয়ানোভিল, ক্যাম্পং চ্যাম, কান্দাল, পোয়েপেট ও পুরসাত শহরে অবস্থিত।

(চলবে…)

 এআর/এমএআর/