খালেদা জিয়া, সেলিমা রহমান, বিলকিছ জাহান, শামা ওবায়েদ, রাশেদা বেগম, শিরিন সুলতানা, বেবী নাজনিন, রুমিন ফারহানা, হেলেন জেরিন, আফরোজা আব্বাস, নিলুফার চৌধুরী, আশরাফি পাপিয়া, নাসরিন মুন্নী, নিপুণ রায় ও শাম্মী আখতার/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছে বাম ও ডানপন্থি দলগুলো। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ‘মাঠের প্রধান বিরোধী দল’ বিএনপি। তবে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির নারী সদস্যদের সেভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে না। নারী নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। যদিও দলটির নেতারা বলছেন, নারীদের রাজনীতির পাশাপাশি ঘরও সামলাতে হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও সবসময় তারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় থাকতে পারছেন না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের অনেক নেত্রীর বক্তব্য, নানা কারণে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন তারা। প্রধান কারণ, দলে অভিজ্ঞ নেত্রীদের অবমূল্যায়ন। দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন, বিএনপিতে আজ তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, যারা নতুন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। শুধু তা-ই নয়, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নতুনদের। যেখানে অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।

দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন, বিএনপিতে আজ তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। অন্যদিকে, যারা নতুন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। শুধু তা-ই নয়, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য করা হচ্ছে অপেক্ষাকৃত নতুনদের। যেখানে অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এছাড়া, সংসদীয় এলাকা-কেন্দ্রিক পুরুষ রাজনীতিবিদরা নারীদের কোণঠাসা করে রাখছেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন ‘গৃহবন্দি’, অসুস্থও বেশ। এ কারণে আগের মতো রাজনীতির মাঠে সক্রিয় নন তিনি / ফাইল ছবি

তাদের মতে, ‘বিএনপি এখন স্বামী-স্ত্রীর সংসার’। স্বামী-স্ত্রী মিলে চালাচ্ছে দলটি- এমন অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, সংসদীয় এলাকা-কেন্দ্রিক পুরুষ রাজনীতিবিদরা বাইরের নারীদের কোণঠাসা করে রাখছেন। যাতে ঘরের বাইরে অন্য কেউ দলের মনোনয়ন না চাইতে পারেন।

আরও পড়ুন >> ‘চায়ের কাপে’ সংলাপের ছায়া, কী বলছে আওয়ামী লীগ?

বিএনপির ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট জাতীয় নির্বাহী কমিটির তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে মোট নারী সদস্যের সংখ্যা ৬৭ জন। সেই হিসাবে বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে মাত্র ১৩.৩৪ শতাংশ। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০২১ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৩০ ভাগে উন্নীত করার কথা বলেছিলেন।

দলটির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া একমাত্র নারী সদস্য সেলিমা রহমান। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান একজন; সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলিয়ে নারী রয়েছেন ২১ জন। নির্বাহী সদস্য আছেন ৪৩ নারী।

 দীর্ঘদিন যারা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন, বিএনপিতে আজ তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না— অভিযোগ নিষ্ক্রিয় নেত্রীদের / ফাইল ছবি

বিএনপির নারী নেতৃত্বে আছেন যারা

বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে মোট নারী সদস্যের সংখ্যা ৬৭ জন। সেই হিসাবে দলটিতে নারী নেতৃত্ব রয়েছে মাত্র ১৩.৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া একমাত্র নারী সদস্য সেলিমা রহমান। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান একজন; সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক মিলিয়ে নারী রয়েছেন ২১ জন। নির্বাহী সদস্য আছেন ৪৩ নারী

বিএনপি চেয়ারপারসন ও স্থায়ী কমিটির সদস্য খালেদা জিয়া ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া চৌধুরী, বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিন, ফরিদপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ; মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নূরে আরা সাফা, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, উপজাতীয়বিষয়ক সম্পাদক ম্যা ম্যা চিংক; সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, বেবী নাজনিন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা; সহ-শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ফরিদা মনি শহিদুল্লাহ; সহ-প্রান্তিক জনশক্তি-বিষয়ক সম্পাদক অপর্ণা রায়, সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ; সহ-প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু, সহ-স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক নিলুফার চৌধুরী মনি; সহ-নার্সেস ও স্বাস্থ্য সহকারীবিষয়ক সম্পাদক জাহানারা বেগম; সহ-মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশিফা আশরাফি পাপিয়া; সহ-তাঁতিবিষয়ক সম্পাদক রাবেয়া সিরাজ; সহ-স্থানীয়বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতার; সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান রোবেয়া চৌধুরী দীর্ঘদিন অসুস্থ। তাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় আছেন। গত ১৪ আগস্ট তাকে কুমিল্লায় গিয়ে দেখে এসেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

 বিএনপি যেন ‘স্বামী-স্ত্রীর সংসার’। দলটির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা / ফাইল ছবি

নির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন- রেজিনা ইসলাম, বিলকিস ইসলাম, সাঈদা রহমান জ্যোৎস্না, রওশন আরা ফরিদ, লাভলী রহমান, কাজী হেনা, খালেদা পান্না, সুলতানা মাহমুদ, শাহিদা আখতার রিতা, নূরজাহান ইয়াসমিন, লায়লা বেগম, রহিমা সিকদার, লিটা বশির, মেহেরুন্নেছা হক, রাজিয়া আলিম, শাহিনা খান, খালেদা ইয়াসমিন, ইয়াসমিন আরা হক, শাহানা আখতার সানু, সাইমুম বেগম, হাসিনা আহমেদ, খালেদা রব্বানী, সাহানা রহমান রানী, চমন আরা, নার্গিস আলী, জিবা খান, নাছিমা আক্তার কল্পনা, সাবেরা সুলতানা, ফিরোজা বুলবুল কলি, রিনা পারভিন, আয়েশা সিদ্দিকা মনি, নুর জাহান মাহমুদ, ফরিদা ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট সিমকি ইসলাম, এলিজা জামান, অ্যাডভোকেট আরিফা জেসমিন, অ্যাডভোকেট মুন্নি, রুখসানা খানম মীতু, রিজিয়া ইসলাম, নিপুণ রায়, রাবেয়া আলী, তাহমিনা খান আওরঙ্গ ও সাবেরা আলাউদ্দিন হেনা।

দলটির ৬৭ নেত্রীর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, বেবী নাজনিন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা পূর্ণমাত্রায় রাজনীতিতে সক্রিয়। এর বাইরে মহিলা দল নিয়ে সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদ; নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় মাঠের রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া টকশো-কেন্দ্রিক সক্রিয় আছেন সহ-স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক নিলুফার মনি

৮২ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে আছেন সারোয়ারি রহমান, অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম, সাহিদা রফিক, রোজী কবির, তাহসিনা রুশদির লুনা ও আফরোজা খান রিতা।

আরও পড়ুন >> নারীদের অংশগ্রহণের নিয়ম মানছে না ইসলামী দলগুলো

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলটির ৬৭ নারীনেত্রীর মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ জাহান শিরিন, শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, বেবী নাজনিন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা পূর্ণমাত্রায় রাজনীতিতে সক্রিয়। এর বাইরে মহিলা দল নিয়ে সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস ও সুলতানা আহমেদ; নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় মাঠের রাজনীতিতে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া টকশো-কেন্দ্রিক সক্রিয় আছেন সহ-স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক নিলুফার মনি। সম্প্রতি গঠিত হয় বিএনপির মিডিয়া সেল। সেলের সদস্য ও সহ-স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আখতারও বেশ সক্রিয়।

বাকিরা দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ এবং তার স্ত্রী সাবেক নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়া / ফাইল ছবি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নুরে আরা সাফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আসলে আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। এখন দেশে এসেছি। প্রথমে মহিলা দলের সভাপতি ছিলাম। বিএনপিতে আছি এবং থাকব। কোথাও যাব না, রাজনীতিই করব।’

বিএনপির সহ-প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক অর্পণা রায় দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি আসলে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় নই। মা স্ট্রোক করেছেন। এখন আমার কাছে আছেন। এই কারণে কিছুদিন দলীয় কোনো কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি।’

‘কেরানীগঞ্জ জেলা বিএনপি আমার সংসদীয় এলাকা (আসন)। তারা কর্মসূচির বিষয়ে আমাকে কিছুই জানায় না। এই কারণে উপস্থিত থাকতে পারি না। এর বাইরে মহিলা দল ও কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসূচিতে আমি সবসময় উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।’

নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পেছনে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে কি না— জানতে চাইলে অর্পণা বলেন, ‘কিছু তো সমস্যা আছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও তার স্ত্রী রুমানা মাহমুদ / ফাইল ছবি

রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার পেছনের কারণ জানতে চাইলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রওশন আরা ফরিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখন আর আমাদের দিয়ে রাজনীতি চলে না। যারা তেল মারতে পারেন, মিথ্যা কথা বলতে পারেন, তারাই বড় রাজনীতিবিদ। এটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই জায়গাতেই আছে। দলও তাদের মূল্যায়ন করে।’

‘আমাদের নেত্রী মুক্ত হলে, সুস্থ হয়ে উঠলে... তখন যদি ডাকেন, যাব। এখন কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আমাদের। আমাদের নেতাও দেশের বাইরে।’

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির অপর সদস্য লায়লা বেগমের কাছে। তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিএনপির কাজ তো চলছে। নারীদের জন্য আটকে নেই। তাছাড়া নারীরাও পুরুষদের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে যাচ্ছেন। হয়তো কোনো কোনো নেত্রী নিষ্ক্রিয় আছেন। আশা করি, তারাও সময় মতো সক্রিয় হবেন।’

আরও পড়ুন >> হঠাৎ উজ্জীবিত হলেও সতর্ক বিএনপি

‘নারীরা তো বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা ঠিক, আমরা নারীরা একসঙ্গে কাজ করছি না। কেন করছি না, এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে আমার মনে হয়, অলস সময় পার করার মতো পরিস্থিতি এখন নেই। আশা করি, সবাই আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। বিএনপিতে নারী নেতৃত্ব সবসময় আছে এবং থাকবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস / ফাইল ছবি

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য (নারী) ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইডেন কলেজ থেকে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল সব আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু কোনো মূল্যায়ন পাইনি। অন্যদিকে, কিছুদিন আগে রাজনীতিতে আসা রুমিন ফারহানা ও শামা ওবায়েদ আজ বিএনপির নারী নেতৃত্বে। সব জায়গায় এখন তাদের জয়জয়কার। তাহলে আমরা কেন রাজনীতিতে সক্রিয় হব?’

‘দীর্ঘদিন আমরা যারা বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়, এখন তারা মহিলা দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক হতে পারতাম। কিন্তু সেই যোগ্যতা আমাদের হয়নি। অন্যদিকে, রাজনীতিতে এসেই মহিলা দলের সভানেত্রী হয়ে গেছেন মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাহলে কেন অন্যরা মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে পুলিশ বা বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের লাঠিপেটা ও গুলি খাবেন?’

বিএনপি যেন স্বামী-স্ত্রীর সংসার

নেতৃত্বে আসতে না পেরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া কয়েকজন (নারী কর্মী) ঢাকা পোস্টের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, বিএনপি যেন ‘স্বামী-স্ত্রীর সংসার’। এখানে অর্ধ-ডজনের বেশি ‘রাজনৈতিক দম্পতি’ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ সংসদ সদস্যও হয়েছেন। আবার উভয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণও করেছিলেন।

তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই সংসদ সদস্য ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুমানা মাহমুদ। রুমানা মাহমুদ সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও ছিলেন।

আরও পড়ুন >> সম্পত্তি বানাতে মানুষ এখন রাজনীতিতে আসে

বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আফরোজা আব্বাস বর্তমানে বিএনপির সহ-মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও মহিলা দলের সভানেত্রী। ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই দম্পতি ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যদিও পরাজিত হন তারা।

সংসদীয় এলাকা-কেন্দ্রিক পুরুষ রাজনীতিবিদরা নারীদের কোণঠাসা করে রাখছেন— অভিযোগ নিষ্ক্রিয় নেত্রীদের / ফাইল ছবি

এছাড়া ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা আহমেদও নির্বাহী কমিটির সদস্য। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হারুন-উর রশিদের স্ত্রী আশিফা আশরাফি পাপিয়া নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন বিএনপির স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ন ম এহসানুল হক মিলনের স্ত্রী নাজমুন নাহার বেবী মহিলা দলের সহ-সভানেত্রী। এছাড়া বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতার স্ত্রী নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

স্ত্রীদের সক্রিয় রাজনীতিতে আসা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমি যেহেতু জাতীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকি, আমরা স্ত্রী সপ্তাহে এক-দুদিন নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে সময় দিয়ে আসেন। এটা আমার জন্য ভালো। কারণ, আমার এলাকার মানুষ সুখ-দুঃখের কথা তার (স্ত্রী রুমানা মাহমুদ) কাছে বলতে পারেন। তিনি প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন।’

বাস্তবায়ন হয়নি দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশনা

২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে দলের ষষ্ঠ সম্মেলনের সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বাড়াব। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা এই সংখ্যা ৩০ ভাগে নিয়ে যাব।’

কিন্তু তার ওই কথার বাস্তবায়ন হয়নি এখনও। যদিও গত বছরের ২৩ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে সারা দেশের ৮১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্যের নামের তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠাতে বলা হয়। কিন্তু এক বছর পার হতে চলল, তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি দলটির তৃণমূল।

এএইচআর/এমএআর/