প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের এই বাজে উদাহরণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের দেশে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয়। তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে... 

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতির হাতেখড়ি। তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন রাজনীতির জাতীয় মঞ্চে। গড়ে তুলেছেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। যার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন তিনি। কৃষিবিদ হিসেবেও পরিচিত এ রাজনীতিক। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সহকারীও ছিলেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে টানা তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিরোধী দলে থাকাকালীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কারাভোগও করেছেন। 

সম্প্রতি মিয়ানমারে অভ্যুত্থান, রোহিঙ্গা সংকট, ভূ-রাজনীতি ও দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের সঙ্গে। তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা। মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আজ থাকছে প্রথম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান

প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের এই বাজে উদাহরণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের দেশে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সা. সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

ঢাকা পোস্ট : মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন? 

বাহাউদ্দিন নাছিম : প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা মিয়ানমারে গণতন্ত্রচর্চা হোক। বর্তমানে আমাদের দেশের মানুষ যেমন গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জনগণও তেমন হোক। মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে অগণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। গণতান্ত্রিক চর্চার দীর্ঘ ইতিহাস সেখানে নেই।

মিয়ানমারের বাজে উদাহরণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রভাব ফেলবে না- মনে করেন বাহাউদ্দিন নাছিম

আমার মনে হয়, একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বিবেকের চাপে সেখানে গণতান্ত্রিক ধারণার একটি ক্ষীণ ধারা শুরু হয়েছিল। সেই ধারাও বন্ধ হয়ে গেল। এর মধ্য দিয়ে জনগণের বাকরুদ্ধ হলো, বিবেকের দ্বার রুদ্ধ হলো। আমি মনে করি, মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য এটি খারাপ দিক। মিয়ানমারের জনগণ তাদের অধিকার হারাল।

মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের যে টানাপোড়েন তা নিরসনে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে চলছে। আমরা সবসময় আশাবাদী

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সা. সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

তবে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে মিয়ানমারের এই বাজে উদাহরণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমাদের দেশে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। আমরা চাই, মিয়ানমার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসুক। বিবেকের স্বাধীনতা, অধিকারের ব্যাপকতা, কথা বলার স্বাধীনতা, ভোট প্রয়োগের অধিকারসহ জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরে আসুক।

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা হলে তা হবে দুঃখজনক- মনে করেন বাহাউদ্দিন নাছিম

ঢাকা পোস্ট : মিয়ানমারের এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থমকে যাবে কিনা? 

বাহাউদ্দিন নাছিম : মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের যে টানাপোড়েন তা নিরসনে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে চলছে। আমরা সবসময় আশাবাদী। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে যাতে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকরা নিজের ভিটায় ফিরতে পারেন। আমরা চাই, মর্যাদার সঙ্গে নিজস্ব জাতিসত্তার অস্তিত্ব নিয়ে তারা নিজ ভূমিতে ফিরে যাক। রোহিঙ্গারা বিপদে পড়ে এসেছে। তারা নির্যাতিত-নিপীড়িত। তাদের ওপরে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। মানবিক কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাদের ঠাঁই দিয়েছেন। তাদের নিয়ে রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।

আমরা চাই, মর্যাদার সঙ্গে নিজস্ব জাতিসত্তার অস্তিত্ব নিয়ে তারা নিজ ভূমিতে ফিরে যাক

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সা. সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমাদের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য উৎকণ্ঠার, কষ্টের। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন বাংলাদেশে রাখা সম্ভব নয়। তাদের অবশ্যই ফিরে যেতে হবে। মিয়ানমারের সরকারের কাছে আমাদের আহ্বান, নিজ দেশের নাগরিকদের তারা যেন মর্যাদা দিয়ে, অধিকার দিয়ে নিজেদের মূলধারার সঙ্গে মিলিয়ে নিক। তারা ভালো থাকুক, এটাই আমরা চাই। 

ঢাকা পোস্ট : মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানে যে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব সেটা বাংলাদেশে পড়বে কিনা?

বাহাউদ্দিন নাছিম : মিয়ানমারের ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশে কোনো ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক শাসন পরিচালিত হলে সেদেশের জনগণের পাশাপাশি প্রতিবেশী হিসেবে কিছু সুফল আমরাও পেতে পারি। কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র বাধা পেলে তার কুফলের ভাগীদার হই না ওই অর্থে। তাদের দরজা তো বন্ধ করা। যেটুকু খোলা ছিল তার ভেতর দিয়ে একটা সম্পর্ক ছিল। রাজনৈতিক সম্পর্ক, সরকারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিনদিন বাড়ছিল। এটা ভালো দিক। কিন্তু অং সান সু চি, তার দলের নেতারা ও প্রেসিডেন্ট বন্দী হওয়ায় আমার মনে হয় সেটা এখন বন্ধ হয়ে গেল। একইসঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও স্থবিরতা নেমে আসবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাদের ঠাঁই দিয়েছেন। তাদের নিয়ে রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সা. সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

এমনিতেই মিয়ানমার যা বলে, তারা তা করে না। তারা বলে এক, করে আরেক। তারা যা বিশ্বাস করে, তা তারা বলে না। এটা তাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। এখন মিয়ানমারে স্বৈরশাসক, অগণতান্ত্রিক শাসক আর কী করবে? মিয়ানমারে যাদের কিছুটা গণতান্ত্রিক, কিছুটা উদারমনা বলে ভাবতাম, তাদের রেকর্ড তো ভালো না। মানবিকতার কারণে আশ্রয় দেওয়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তারা আশাব্যঞ্জক কিছু করেনি। আমরা আশা করব, যারাই শাসন করুক তারা যেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে ফলপ্রসূ সিদ্ধান্ত নেয়।

দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম

জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর প্রতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান ছিল, সবাই যেন সহযোগিতা করে। মিয়ানমারকে বিশ্ববাসী বাধ্য করুক যেন তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেয়।

মিয়ানমার যা বলে, তারা তা করে না। তারা বলে এক, করে আরেক। তারা যা বিশ্বাস করে, তা তারা বলে না। এটা তাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সা. সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার যে পরিচয় দিয়েছে বিশ্বে তা অনন্য নজির। এসব অসহায় মানুষ দ্রুত নিজ দেশে ফিরে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে— এখন সেই প্রত্যাশা আমাদের। এজন্য আমাদের সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই চেষ্টা বাস্তবায়নের পথে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান বাধা হয়ে দাঁড়ালে তা হবে বড় দুঃখজনক। (চলবে)

এইউএ/এইচকে/এমএআর