‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ তাদের
জীবিকার তাগিদে অন্যের বাসাবাড়ি অথবা অফিস পাহারা দেন তারা। ঈদের দিনটা তাদের কাছে অন্য সবার মতো নয়, একটু ব্যতিক্রম। পরিবার থেকে দূরে অনেকটা অসহায় অবস্থায় ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করছেন নিম্ন আয়ের এসব মানুষ। মনে আছে কষ্ট, ‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না’ তাদের।
ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। ঈদ বলে বাড়তি কোনো আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। কর্মস্থলে কেউ কেউ একা অথবা কয়েকজন মিলে গল্প করে ঈদের দিন পার করছেন। লোক কম থাকায় কারও কারও ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দনিয়া উপশাখায় দায়িত্ব পালন করছেন এতোয়া। তিন শিফটে কাজ করতে হয় তাদের। সনাতন ধর্মাবলম্বী এতোয়া ছাড়াও সকালের শিফটে আছেন আরও দুজন। ঘুম পাচ্ছিল তার, তাই কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে কফি কিনতে বের হয়েছেন। ঈদের দিন হওয়ায় হাতেগোনা দু-একটা ছাড়া প্রায় সব দোকান বন্ধ। একটা দোকানে মিনিপ্যাক কফি ঝুলছিল। সেটাই কিনে নিলেন। দোকানের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।
নওগাঁর বাসিন্দা এতোয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদ মানে তো ছুটি। কিন্তু আমাদের ছুটি নাই।
ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যেতে পারেননি বলে মন খারাপ তার। বলেন, ঈদে বাড়ি যেতে পারলে ভালো লাগত। মন খারাপ হলেও লাভ নাই। চাকরি করি, দায়িত্ব পালন তো করতেই হবে। বাড়িতে ছেলে ও স্ত্রী আছে। ছেলে এখন ডিগ্রিতে পড়ছে। বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না বলে তাদেরও মন খারাপ। কিন্তু কিছুই করার নেই।
মুসলিম সহকর্মী কয়েকজন ঈদে বাড়ি গেছেন, কয়েকজন আমার সঙ্গে ডিউটি করছেন— বলেন এতোয়া।
মাসখানেক হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দনিয়া উপশাখার এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেছেন বরিশালের মো. মিজানুর রহমান। বাড়িতে স্ত্রী, বোন, বোনের মেয়ে আর মা আছেন। ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং রাত ১০টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত মোট ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করবেন তিনি।
মিজানুর রহমান বলেন, ঈদে ধনী-গরিব সবারই তো বাড়ি যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যে চাকরি করি তাতে বাড়ি যাওয়া সম্ভব না। তার ওপর চাকরিতে যোগ দিয়েছে মাত্র এক মাস হলো। এখনই ছুটির কথা কীভাবে বলি!
‘এর আগে একটা জাপানি কোম্পানিতে কাজ করতাম। সেখানে ঈদ উপলক্ষে সাত/আটদিন ছুটি দিত। করোনার সময় একটা পেট্রোল পাম্পে কাজ করেছি। সেখানে ঈদের ছুটি পাইনি। এখন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিতেও একই অবস্থা।’
‘ঈদের দিনেও যদি বাড়ি যেতে পারতাম, খুব ভালো লাগত। বাড়ি যেতে পারছি না বলে পরিবারের সবার মন খারাপ। কিন্তু উপায় নাই। সকাল বেলা মোবাইলে কল দিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। এটাই আমার ঈদ’— আক্ষেপ করে বলেন মিজানুর রহমান।
এএজে/এমএআর/