• ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে
• আইন মন্ত্রণালয় যখন মতামত দেয় তখনও চারটি মামলা বিচারাধীন 
• প্রশাসনিক কর্মকর্তার ৮টি এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ২৭টি পদে পদোন্নতির বিষয়ে মতামত চাওয়া হয় 
• মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত পদোন্নতির বিধান নেই, বলছেন আইনজীবী 
• ফোনে কথা বলতে নারাজ আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম

আইন মন্ত্রণালয়ে ভুল তথ্য দিয়ে এবং আদালতে চলমান মামলার বিষয়ে তথ্য গোপন করে পদোন্নতির জন্য মতামত বাগিয়ে নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।  

চলতি বছরের এপ্রিলে এ ঘটনা ঘটে। ৬ এপ্রিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৫ এর সিনিয়র সহকারী সচিব (প্রশাসন) তৈয়বুল হাসান স্বাক্ষরিত সংশ্লিষ্ট মতামতটি আইএমইডিকে দেওয়া হয়। 

এরআগে এই নির্দিষ্ট মতামতটি প্রদান করতে আইএমইডির সচিব আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, পদোন্নতি বিষয়ক আদালতে একটি রিট পিটিশন থাকলেও পরবর্তীতে পিটিশনকারীরা তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এছাড়া হাইকোর্ট বা অন্য কোনো কোর্টে আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। 

এ তথ্য উল্লেখ করে আইএমইডিতে পদোন্নতি প্রদানে কোনো আইনগত বাধা আছে কি না সে বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালার আওতায় টেকনিক্যাল বিধিমালায় জনবলের পদোন্নতি ও কোটা বৃদ্ধি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে আসছে। যার ফলে বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালায় নিয়োগপ্রাপ্তরা দীর্ঘদিন পদোন্নতিবঞ্চিত রয়েছেন। 

আইন মন্ত্রণালয় যখন মতামত প্রদান করে ওই সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১টি, হাইকোর্ট বিভাগে ২টি ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ১টিসহ মোট ৪টি মামলা বিচারাধীন ছিল। 

এর মধ্যে গত ৩১ মে শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের একটি মামলা রিজেক্ট হয়েছে। বাকি তিনটি মামলা এখনও বিচারধীন। 
কিন্তু চলমান এই মামলাগুলো সম্পর্কে না জানিয়ে, তথ্য লুকিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চায় আইএমইডি। আইন মন্ত্রণালয় সে অনুযায়ী মতামত দিয়ে দেয়। 

যে মতামত চেয়েছিল আইএমইডি
গত বছরের পহেলা নভেম্বর আইএমইডির সিনিয়র সহকারী সচিব সাবিকুননাহার শারমীন (বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে কর্মরত) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতির বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারীকৃত বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ এর সংশোধন সম্পর্কিত এস.আর ও নং ২৯৯-আইন/২০২০ এর উপর বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগে মামলা চলমান ছিল/রয়েছে। আইএমইডি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। একনেক সভায় যেসব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, সেসব প্রকল্প এ বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন প্রণয়ন করে। এছাড়া প্রতিবছর তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (আউটসোর্সিং) চলামান প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ ও সমাপ্ত প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়নের কর্মপরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আইএমইডি বিভাগের পদোন্নতিযোগ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তার ৮টি পদ এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ২৭টি পদসহ মোট ৩৫টি পদ শূন্য রয়েছে। উক্ত পদগুলো শূন্য থাকায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ দাপ্তরিক কার্যক্রমসমূহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পসহ দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে শূন্য পদসমূহ পূরণের জন্য পদোন্নতি প্রদান করা প্রয়োজন।

এমতাবস্থায়, উপরোক্ত বিষয়াদি বিবেচনা করে “বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪” এর সংশোধনীর ৫(ক) বিধিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ৩৫টি পদ পূরণের লক্ষ্যে পদোন্নতির কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

আইএমইডির এই চিঠির প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় জানায়, যেহেতু রিট পিটিশনকারীরা রিট মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে মর্মে আইএমইডি সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এবং অপরদিকে হাইকোর্ট বিভাগে উল্লিখিত মামলা সংক্রান্ত আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই, সেহেতু ৩৫টি শূন্য পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধা নেই।

আইএমইডিকে দেওয়া এই মতামতে আইন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (মতামত-১) মাকসুদা পারভীন, যুগ্মসচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার এবং খোদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্বাক্ষর করেন। 

চলমান মামলা এবং আইএমইডির তথ্য গোপন
আইন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আইএমইডির প্রথম মামলা সংক্রান্ত তথ্য : আইএমইডি বিভাগের ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর আবু আলেম মিয়া গং বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদানের বিষয়ে ঢাকার প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (১০৪/২০২০) করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন আছে এবং ৩ নং বিবাদী পক্ষভুক্ত হিসেবে আইএমইডি কর্তৃক আদালতে জবাব দাখিলও করা হয়েছে। 

তথ্য গোপন আইএমইডি আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল হাইকোর্টে উল্লিখিত মামলাসমূহ সংক্রান্ত আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। তবে ২০২০ সাল থেকে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান রয়েছে এবং বিবাদী হিসেবে আইএমইডি বিভাগের সচিব এই মামলার জবাব দিয়েছেন আদালতকে।

প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মামলা প্রসঙ্গে আইএমইডির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এ এম মনিরুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাদীরা যেই বিষয়ে মামলা করেছে, সেই আইনটা সরকার অলরেডি গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। এজন্য মামলাটি আর চলে না। এখন বাদীরা মামলা প্রত্যাহারও করছে না। বর্তমানে এই অবস্থায় আছে।’

মামলা থাকা অবস্থায় তারা পদোন্নতি দিতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনারা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেই বিধি মোতাবেক আইএমইডি তাদের পদোন্নতি দিয়ে দিতে পারবে। মামলা প্রত্যাহার করে নিলেই যেই বিধি হয়েছে, সে অনুযায়ী পদোন্নতি দিতে পারে। আইন মন্ত্রণালয় বলতে পারে, মামলা প্রত্যাহার সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক পদোন্নতি চলমান থাকবে। এই মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আইএমইডি কোনো প্রকার পদোন্নতি দিতে পারবে না বা সরাসরি আইন মন্ত্রণালয় পদোন্নতি দেওয়ার ব্যাপারে মতামত দিতে পারবে না।’  
 
আইন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আইএমইডির দ্বিতীয় মামলা সংক্রান্ত তথ্য : আইএমইডির অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক নয়ন মিয়া গং বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ এর সংশোধন সম্পর্কিত এস.আর ও নং ২৯৯-আইন/২০২০ অনুযায়ী কোনো পদোন্নতি প্রদান থেকে বিরত থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে  ‘কনটেম্পট’ মোকদ্দমা (০৪/২০২১) রুজু করেন। সুপ্রিম কোর্টের আদেশে সেটি খারিজ হয়েছে। 

আসলে যা হয়েছে : আইএমইডির তথ্যানুযায়ী এই মামলাটি বাতিল হয়েছে। বর্তমানে মামলাটির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে ঢাকা পোস্ট খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে, আইন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আইএইডির এই তথ্যে গলদ রয়েছে। আইএমইডি ০৪/২০২১ ‘কনটেম্পট’ পিটিশনটি রিজেক্ট হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ‘কনটেম্পট’ পিটিশনটি রিজেক্ট হয়নি। কনটেম্পট পিটিশনের স্থগিতাদেশ আবেদনের শুনানির দিন বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতে উপস্থিত না থাকায় সম্পূরক আবেদনটি রিজেক্ট হয়েছিল। আলোচ্য ‘কনটেম্পট’ পিটিশনটি ২৭ জুন আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ আইএমইডি তথ্য গোপন করে ‘কনটেম্পট’ পিটিশনটি রিজেক্ট হয়েছে বলে আইন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আইএমইডির তৃতীয় মামলা সংক্রান্ত তথ্য : গত বছরের ১৩ মার্চ আইএমইডির কম্পিউটার অপারেটর মো. মোখলেছুর রহমান বসুনিয়া ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট মোকদ্দমা (৪২৫০/২০২১) দায়ের করেন। বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ (২০২০ সালে সংশোধিত) এর ৫ (ক) বিধিতে ব্যক্তিগত কর্মকর্তার ফিডার পদে ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটরদের অন্তর্ভুক্ত করায় বাদীরা যারা পদোন্নতির জন্য অপেক্ষমান ছিলেন তাদের চাকরির অধিকার ক্ষুন্ন/ক্ষতি হওয়ায় উক্ত রিট মোকদ্দমাটি দায়ের করেন। তাদের এই মোকদ্দমায় আইএমইডি সচিবকে ১ নং বিবাদীভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত চার সপ্তাহের রুল জারি করেন। রুলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সলিসিটর বরাবর চিঠিও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ১১ আগস্ট কম্পিউটার অপারেটর মো. মোখলেছুর রহমান বসুনিয়া ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলাম আইএমইডি সচিবকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ৪২৫০/২০২১নং রিট পিটিশনটি করা তাদের সমীচীন হয়নি বিধায় রিট পিটিশনটি তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। 

এটি ভুল তথ্য আইএমইডি আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য চিঠি লেখে গত বছরের পহেলা নভেম্বর। আইএমইডির চিঠিতে জানানো হয়, বাদীরা তাদের রিট পিটিশন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেয় চলতি বছরের ৬ এপ্রিল। মতামতে আইন মন্ত্রণালয় রিট প্রত্যাহার করায় এবং হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ না থাকায় পদোন্নতি প্রদানে আইনগত কোনো বাধা নেই মর্মে মতামত দেয়। অথচ চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত মো. মোখলেছুর রহমান বসুনিয়া ও মোহাম্মদ হাসিবুল ইসলামের রিট সংক্রান্ত রুলটি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় ছিল। ৩১ মে বাদীরা আদালতের শুনানিতে অংশ না নেওয়ায় রিটটি খারিজ হয়ে যায়।  

আইন মন্ত্রণালয়কে দেওয়া আইএমইডির চতুর্থ মামলা সংক্রান্ত তথ্য : আইএমইডির সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর ইয়াসমিন সুলতানাসহ মোট ১১ জন বাদী হয়ে “বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪” এর সংশোধনীর ৫(ক) বিধিতে 'ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর' পদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট পিটিশন নং ৯৫৬৮/২০২০ দায়ের করেন। এই রিট পিটিশনে আইএমইডি সচিবকে ১নং বিবাদীভুক্ত করা হয়। রিট পিটিশন নং ৯৫৬৮/২০২০ মোকদ্দমায় ও সরকার পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আইএমইডি মোকদ্দমার প্যারাভিত্তিক জবাব বিজ্ঞ সলিসিটর বরাবর প্রেরণ করে। গত ১১ এপ্রিল এই মামলার এক সম্পূরক রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ সমস্ত সচিবালয়ে ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর পদ থেকে ‘ব্যক্তিগত কর্মকর্তা’ পদে পদোন্নতি প্রদানের ক্ষেত্রে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। এই আদেশের ফলে সচিবালয়ে নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই স্থগিতাদেশ ভ্যাকেট করার জন্য ১২ মে আইএমইডির সিনিয়র সহকারী সচিব নাজনীন সুলতানা স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে সলিসিটর উইংকে অনুরোধ জানানো হয়। এরই মধ্যে আপিল বিভাগে আইএমইডির সচিবকে ১নং বাদী দেখিয়ে ইয়াসমিন সুলতানা এন্ড গংদের বিপক্ষে ১৩১৯/২০২২ শীর্ষক লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়।

আইএমইডি বলছে, তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সলিসিটর উইং আপিল বিভাগে ১৩১৯/২০২২ লিভ টু আপিল দায়ের করেছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট এভিডেভিট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই লিভ টু আপিল দায়ের হয়েছে ১১ মে, যেখানে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শাখার আইনজীবী হিসেবে হরিদাস পাল এর নাম রয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইএমইডি যদি ১২ মে চিঠি দেয় তাহলে ১১ মে তারিখে লিভ টু আপিল মামলা কে দায়ের করল? এফিডেভিটই বা কে করল? এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে শুধুমাত্র ডাটা এন্ট্রি/কন্ট্রোল অপারেটর পদ থেকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পদে পদোন্নতিতে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে আইএমইডির অন্যান্য পদের কর্মচারী যারা পদোন্নতির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাদের কেন পদোন্নতি দেওয়া হলো না?  

এসব বিষয়ে জানতে আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম-সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুমকে টেলিফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ফোনে কোনো মতামতের বিষয়ে কথা বলব না, স্যরি।’  

ভুল তথ্য ও আদালতে চলমান মামলার  তথ্য গোপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে আইএমইডি সচিব মো. আবু হেনা মোরশেদ জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রথমে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে একটা মামলা ছিল। মামলা থাকার সময় বাদীপক্ষ আইএমইডিকে জানিয়েছিল তারা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বাদীপক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছিল। এরপর মামলাটি প্রত্যাহার হয়েছে কি না তা আইএমইডি জানে না।’
 
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মামলা প্রত্যাহার হয় এবং আইএমইডি যখন পদোন্নতির উদ্যোগ নেয়, তখনই আরেক পক্ষ হাইকোর্টে পদোন্নতি না দিতে রিট করে। যেহেতু বিষয়টি হাইকোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় আছে, সেহেতু আইএমইডি আর উদ্যোগ নিতে পারেনি। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, গত ৬ জুন একটা শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শুনানি হয়েছে কি না বা কী ফল হয়েছে সেটা জানতে পারিনি। তবে আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবে, সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’  

এ প্রসঙ্গে জানতে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।

এসআর/এনএফ