দমন নয়, হেফাজতকে মূল ধারায় আনার চেষ্টা চলছে
যারা হেফাজতে ইসলামের নেতা, তারা অধিকাংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক দলের নেতারাই হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করছে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদেরকে দমন না করে, তাদের পিষ্ট না করে, বাংলাদেশের যে মৌলিক চেতনা আছে সেটা যেন তারা ধারণ করে...
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। আওয়ামী লীগের চারবারের সাংগঠনিক সম্পাদক। জয়পুরহাট- ২ আসন থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদে দায়িত্ব পেয়েছেন সরকারদলীয় হুইপ হিসেবে। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে উঠে এসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি ঢাকা পোস্টে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন দলীয় রাজনীতির বিভিন্ন চিত্র, বিরোধীপক্ষের ষড়যন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ নিয়ে তার নিজস্ব ভাবনা। আলোচনায় উঠে এসেছে সংসদীয় রাজনীতির অংশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ভাবনাও। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষটি থাকছে আজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আমানউল্লাহ আমান।
ঢাকা পোস্ট : অভিযোগ রয়েছে, আজ যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন করছে আওয়ামী লীগ তাদেরই ভোটের জন্য ব্যবহার করে আস্কারা দিয়েছিল। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন : যারা হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত তারাও এই সমাজের মানুষ, দেশের মানুষ। তারা একটা দাবি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আমরা যদি তাদের দমন করতে যাই তাহলে বিষয়টা যুক্তিযুক্ত হবে না, ন্যায়সঙ্গত হবে না। আমরা তাদের অ্যাকোমডেট (উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা) করার চেষ্টা করেছি। তাদেরও মূলধারায় আনার চেষ্টা করেছি। তাদের নিয়ে আমাদের ভোটের হিসাব ছিল না। ভোটের হিসাবটা ভিন্ন। যারা হেফাজতে ইসলামের নেতা, তারা অধিকাংশই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এখন পুরোপুরি রাজনৈতিক দলের নেতারাই হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করছে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদেরকে দমন না করে, তাদের পিষ্ট না করে, বাংলাদেশের যে মৌলিক চেতনা আছে সেটা যেন তারা ধারণ করে।
পার্লামেন্ট ফর বিরোধী দল, পার্লামেন্ট নট ফর গভর্নমেন্ট দল। এটা কিন্তু বাস্তবতা। আমরা যারা সরকারি দল করি পার্লামেন্টে তেমন কথা বলার সুযোগ থাকে না। সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলার সুযোগ আমার নাই। সরকারের যে ভুল হয় না, বিষয়টা এ রকমও নয়। ভুল হবেই, ভুলের পরিমাণটা কম হবে। ভুলটা সংশোধন করে চলতে পারাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
এই জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে একটা সময় গিয়ে তারা আরও বেশি জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হতে পারে। আমাদের প্রতিটা সময় মাথায় রাখতে হচ্ছে জঙ্গি বিষয়টা, কারণ এটা একটা রোগ। এই ভূমিটা জঙ্গি বানানোর জন্য উর্বর। এজন্য তাদের ন্যূনতম অ্যাকোমডেট না করলে ওই (জঙ্গিবাদের) দিকে ধাবিত হতে পারত। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা বিভক্ত জাতি চাই না। আমরা চাই রাজনৈতিক মতবাদ ভিন্ন থাকবে, রাজনৈতিক দল অসংখ্য থাকতে পারে কিন্তু বাংলাদেশকে যেন সবাই ধারণ করে। ওই জায়গায় আসার জন্য আমাদের একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হেফাজতে ইসলামকে আমরা ওইভাবে বর্জন না করে তাদের অ্যাকোমডেট করার চেষ্টা করছি।
ভোটের হিসাব নয়, আমাদের হিসাবটা হচ্ছে দেশের হিসাব, জাতির হিসাব। তারা (হেফাজত) তাদের মতবাদ প্রচার করবে, কিন্তু মানুষ গ্রহণ করবে কোনটি উত্তম, কোনটি মধ্যম আর কোনটি নিকৃষ্ট। মানুষের ওপর তা ছেড়ে দিতে হবে
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
তারা মোটামুটি একটা জায়গায় এসেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শফি সাহেবের মৃত্যুর পর এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের একটা প্রক্রিয়া চলছে। যারা এই প্রক্রিয়ায় জড়িত তাদের অতীত ইতিহাস বলে, তারা পরিবারিকভাবে পাকিস্তানপন্থী। তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছেন একাত্তর সালে। তারা অনেকে রাজাকার ছিলেন, অনেকে ছিলেন না। কিন্তু তারা পাকিস্তানকেই ধারণ করেছেন, তারা কেউ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। এখন এটাকে যখন রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে তখন আমরা কিন্তু দমন-পীড়ন করছি না। আমরা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো বিশৃঙ্খলা চাচ্ছি না। আমরা এয়ারপোর্টের রানওয়েটা তৈরি করে ফেলেছি, এখন আমরা ফ্লাই করব। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। এ সময়ে আমরা দেশটাকে নেতিবাচক ধারায় নিতে চাচ্ছি না। এ কারণেই আমরা অনেক কিছু সহ্য করছি, সহ্য করতে হচ্ছে।
আমরা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কোনো বিশৃঙ্খলা চাচ্ছি না। আমরা এয়ারপোর্টের রানওয়েটা তৈরি করে ফেলেছি, এখন আমরা ফ্লাই করব। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। এ সময়ে আমরা দেশটাকে নেতিবাচক ধারায় নিতে চাচ্ছি না। এ কারণেই আমরা অনেক কিছু সহ্য করছি, সহ্য করতে হচ্ছে
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
রাষ্ট্রযন্ত্র যদি মনে করে দমন-পীড়ন করবে, রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য খুব বেশি কঠিন নয়। সেই জায়গায় গিয়ে আমরা কেন একটা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করব? আমাদের তারা ভোট দেবে— এই আশায় আমরা কাজ করছি না। আমরা যা বিশ্বাস করি তার সঙ্গে তাদের কোনো মিল নাই। একাত্তর সালেও ৩০ শতাংশ মানুষ আমাদের ভোট দেয়নি। আমরা ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় এসেছি তখনও সব মানুষ আমাদের ভোট দেয়নি। সব মানুষ আমাদের ভোট দেবে— এই আশা করাটাও একধরনের বোকামি। ভোটের হিসাব নয়, আমাদের হিসাবটা হচ্ছে দেশের হিসাব, জাতির হিসাব। তারা (হেফাজত) তাদের মতবাদ প্রচার করবে, কিন্তু মানুষ গ্রহণ করবে কোনটি উত্তম, কোনটি মধ্যম আর কোনটি নিকৃষ্ট। মানুষের ওপর তা ছেড়ে দিতে হবে।
ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে যদি বলতেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন : করোনাকালীন আমি মনে করি, আমাদের সাংগঠনিক কাজটা বৃদ্ধি পেয়েছিল। রাজনীতির যে মূলমন্ত্র মানবসেবা, সেই কাজটা আমরা চমৎকারভাবে করতে পেরেছি করোনার সময়ে। আমাদের এই প্রজন্ম কিন্তু ১৯৭১ পাবে না। হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের জীবনটা দেশের জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না। সেই সুযোগটা আমাদের জীবনে কখনও আসবে না। কিন্তু করোনাকালীন আমরা চমৎকার সুযোগ পেয়েছি। একদিকে এটার একটা নেতিবাচক দিক রয়েছে, অন্যদিকে আমাদের রাজনৈতিককর্মীদের জন্য একটা চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এখন কথা হচ্ছে আল্লাহ না করুন, বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি চলে যান তাহলে তো আমাদের বিকল্প লাগবে। সেখানেও তৃণমূলের অনুভূতিটা আমরা যেটা বুঝি, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রীকই। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে কে সামনে আসবেন, কাকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব— এটা তখন সিদ্ধান্ত হবে
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
একটা অদেখা শত্রুর সঙ্গে, প্রতি মুহূর্তে জীবননাশের আশঙ্কা, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাব। কোনো পরিবারের স্ত্রীরা চাননি তাদের স্বামীরা বাইরে যাক। কোনো পরিবারের পিতা-মাতা চাননি তার সন্তান বাড়ি থেকে বের হোক। কোনো স্বামী চায়নি তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হোক। এই প্রেক্ষাপটেও আমাদের দলের নেতাকর্মীরা মানবসেবা করে যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আমার মনে হয়েছে এর ফলে দুটো কাজ হয়েছে। একটা হচ্ছে, রাজনীতির যে মূলমন্ত্র মানবসেবা, সেই জায়গাটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা করতে পেরেছি। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, আমাদের রাজনৈতিককর্মীরা সেবাটা নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়েছেন। এতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মানুষের গণসংযোগটা হয়েছে।
একটা মানুষের দুঃসময়ে একজন রাজনৈতিককর্মীর পাশে দাঁড়ানো আর ভোট প্রার্থনার সময় পাশে দাঁড়ানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের নেতাকর্মীরা এই দুঃসময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের বাড়ি গিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে, এই মানুষগুলো যে আমাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, এটা তো আমাদের অনেক রাজনৈতিক কাজে লাগবে। ভোটের রাজনীতিতে আমাদের অনেক কাজে লাগবে। এর থেকে বড় সাংগঠনিক কাজ আর কী হতে পারে?
আমাদের প্রচলিত সাংগঠনিক কাজ সভা করা, মিছিল করা, সমাবেশ করা— এগুলো আমাদের কম হয়েছে। কিন্তু দলের যে মূল কাজ, সেটা কিন্তু বেশি হয়েছে। আমি মনে করি, এই করোনাকালে যে কাজ হয়েছে সে কাজটা আওয়ামী লীগের জন্য ভালো ফল আনবে।
ঢাকা পোস্ট : বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে। দলের শীর্ষনেতারাও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ সম্পর্কে আপনার কী মত?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন : অনুপ্রবেশ হবেই, অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ তো কমিউনিস্ট পার্টি না, জামায়াতে ইসলামীও না। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। প্রতিনিয়তই এই দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ আসবে। মানুষ যোগদান করবে, মানুষ আমাদের সদস্য হবে। কিছু মানুষ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আসবে। কিন্তু দুষ্টুপ্রকৃতির মানুষ সুযোগ নেওয়ার জন্য আসবে। দুটাই আসবে। আমরা যদি দরজা বন্ধ করে দেই তাহলে তো আওয়ামী লীগ কমিউনিস্ট পার্টি অথবা জামায়াতে ইসলামীতে পরিণত হবে। এটা তো কখনও কাম্য নয়।
অনুপ্রবেশ হবেই, অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ তো কমিউনিস্ট পার্টি না, জামায়াতে ইসলামীও না। আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। প্রতিনিয়তই এই দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানুষ আসবে। কিছু মানুষ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আসবে। কিন্তু দুষ্টুপ্রকৃতির মানুষ সুযোগ নেওয়ার জন্য আসবে। আমরা যদি দরজা বন্ধ করে দেই তাহলে তো আওয়ামী লীগ কমিউনিস্ট পার্টি অথবা জামায়াতে ইসলামীতে পরিণত হবে
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
যে দুষ্টু মানুষটি আসছে তাকে আমি রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করে, তার মাথা থেকে দুষ্টুপনাটা যদি আমি ঝেড়ে ফেলতে পারি তাহলে সে আমার সম্পদ হবে। যদি তাকে আমি রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে না পারি তাহলে সে আমার বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা বোঝা চাচ্ছি না, আমরা সম্পদ চাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করি যাদের রাজনীতির অতীত ইতিহাস আছে, যারা প্রকৃতই আওয়ামী লীগার, তারা যেন কমিটিতে আসেন। তারাই আসছেন। এর মধ্যে ১০ শতাংশ ব্যতিক্রম হতে পারে। প্রত্যেকটা পরীক্ষায় তো শতভাগ নম্বর পাওয়া যায় না। কিছু ত্রুটি থাকবেই, এর মধ্য দিয়ে আমাদের, আমাদের দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে ভালো মানুষ দ্বারা।
আমরা অনেক সময় নির্বাচন করার জন্য ভাড়ায় প্লেয়ার আনি। কিন্তু দলের মূল কাঠামোতে কখনও হাইব্রিডদের জায়গা দেই না। আমরা চেষ্টা করি, দু-একটা জায়গায় হয়তো ভুল হয়। ভুল হলে আমরা সেটা সংশোধনের চেষ্টা করি। এসব কিছু মিলিয়ে দলের কর্মকাণ্ড সঠিক পথেই আছে। গণমাধ্যমে সংবাদ হওয়ার মতো কর্মকাণ্ড হয়তো কম। এখন একটা নীরব বিপ্লব হয়েছে রাজনীতিতে— সেটা হচ্ছে মানবসেবা।
ঢাকা পোস্ট : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার যোগ্য উত্তরসূরি কাকে মনে করেন?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট বয়স হয়েছে, তিনি বারবারই চেষ্টা করছেন আমরা যেন তাকে বাদ দিয়ে বিকল্প চিন্তা করি। কিন্তু আমাদের সামনে বিকল্প নেই, বিকল্প সৃষ্টি হয়নি। তার যে অভিজ্ঞতা, তার যে জ্ঞানের বহর, তার যে দক্ষতা এবং তিনি যেভাবে সারা বাংলাদেশের উপজেলাপর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে চেনেন, এমন এমন মানুষের নাম উনি বলেন, যাদের আমরা চিনিই না। বঙ্গবন্ধুর সময়ে তিনি কিন্তু পাশে থেকে বঙ্গবন্ধুসম্পৃক্ত মানুষজনের সম্পর্কে জানেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্কটা অত্যন্ত মধুর ছিল। বড় সন্তান হিসেবে বাবার সেবা করতে গিয়ে সবসময় পাশে থেকে উনি দেখেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, ওই দুঃসময়ে কারা কারা বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, এটাও তিনি জানতেন। ফলে উনি যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের ধারণ করে দলটা পরিচালনা করছেন ওই সক্ষমতা আমাদের কারও নেই। এই কারণে আমরা উনাকেই বারবার চাপিয়ে দিচ্ছি। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনুভূতি ওনাকে কেন্দ্র করেই।
কিছু মানুষের পদ লাগে না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের পদ লাগে না, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অথবা ববি সাহেব; তাদের পদের দরকার হয় না। তারা তো জন্মগতভাবেই আমাদের নেতা। আমরা স্বীকার করি আর না করি, সমাজ স্বীকার করুক আর না করুক
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের সম্পদ দুটা। একটা, আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা। আরেকটা হচ্ছে, তৃণমূলের নেতাকর্মী। মাঝখানে আমরা যারা আছি তারা কখনও কখনও বোঝা। তৃণমূলের প্রত্যাশা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা ওই জায়গায় থাকবেন। এখন কথা হচ্ছে আল্লাহ না করুন, বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি চলে যান তাহলে তো আমাদের বিকল্প লাগবে। সেখানেও তৃণমূলের অনুভূতিটা আমরা যেটা বুঝি, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকেন্দ্রীকই। ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে কে সামনে আসবেন, কাকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব— এটা তখন সিদ্ধান্ত হবে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, কিছু মানুষের পদ লাগে না। সজীব ওয়াজেদ জয়ের পদ লাগে না, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অথবা ববি সাহেব; তাদের পদের দরকার হয় না। তারা তো জন্মগতভাবেই আমাদের নেতা। এটা আমরা স্বীকার করি আর না করি, সমাজ স্বীকার করুক আর না করুক, আমরা মনে করি, তারাই আগামীদিনে আমাদের নেতা হবেন। সেটা সময়ই বলে দেবে কে আসবেন। তারা কেউই রাজনীতির বাইরে নন।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমান সংসদের শুরু থেকেই আপনি হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত ১০টি সংসদের তুলনায় সবকিছু মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ কতটা প্রাণবন্ত?
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন : দশম সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব ছিল না। এটা কোনো ইতিবাচক বিষয় নয়। একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, একটা মতাদর্শে বিশ্বাসী বেশকিছু মানুষের প্রতিনিধিত্ব সংসদে ছিল না। নির্বাচনটা বয়কট করে তারা এই ভুলটা করেছে, আমরা কিন্তু করিনি। নির্বাচনে তাদের আনার দায়িত্ব আমাদের না, তবে আমরা চেষ্টা করেছি। তারা তাদের সিদ্ধান্তে নির্বাচনে আসে নাই। তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না, এটা সত্য কথা।
একাদশ সংসদে একটা জায়গা তৈরি হয়েছে, সংসদীয় চর্চাটা তৈরি হয়েছে। সংসদে যে বিরোধী দল থাকবে, বিরোধী দল সংসদে ভুল ধরবে, বিরোধী দল আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে, বিরোধী দল জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলবে, বিরোধী দল সরকারের সমালোচনা করবে, সরকারের তুলোধোনা করবে— এজন্যই তো সংসদ। সেই চর্চাটা এখন বেশ ভালো হচ্ছে।
একাদশ সংসদে বিএনপি এসেছে, সংখ্যায় তারা কম। কিন্তু প্রতিনিধিত্ব তো আছে। বিএনপির যারা এমপি আছেন তারা কিন্তু বেশ ভোকাল। তারা প্রায়শই পয়েন্ট অব অর্ডারে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তাদের প্রটেকশন নিয়ে কথা বলেন। আমরাও তাদের যথাযথভাবেই সম্মান করি। আমি সরকারি দলের হুইপ। কিন্তু আমি অ্যাক্ট করি অ্যাজ অ্যা পার্লামেন্টের হুইপ। আমিও চেষ্টা করি আমার অবস্থান থেকে তাদের অ্যাকোমডেট করার। একজন হুইপ হিসেবে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এবং দলের দায়িত্বশীল পদে থাকার কারণে আমি চেষ্টা করি সংসদে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ যারা আছেন তারা যেন থাকেন এবং কথা বলতে পারেন।
বড় সন্তান হিসেবে বাবার সেবা করতে গিয়ে সবসময় পাশে থেকে উনি দেখেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, ওই দুঃসময়ে কারা কারা বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন, এটাও তিনি (শেখ হাসিনা) জানতেন। ফলে উনি যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের ধারণ করে দলটা পরিচালনা করছেন ওই সক্ষমতা আমাদের কারও নেই
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
টাইম ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে, বিভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু বিরোধী দলকে তাদের সংখ্যানুপাতিক ভাগের চেয়ে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু আমরা মেজরিটি, সেহেতু যদি সংখ্যানুপাতিক ভাগ করতে যাই তাহলে অনেক বেশি সময় পেয়ে যাব আমরা, আর ওরা কিন্তু সুযোগ পাবেন না। তারা যেন অধিকতর সুযোগ পান, সে চেষ্টা আমরা করি।
পার্লামেন্ট ফর বিরোধী দল, পার্লামেন্ট নট ফর গভর্নমেন্ট দল। এটা কিন্তু বাস্তবতা। আমরা যারা সরকারি দল করি পার্লামেন্টে তেমন কথা বলার সুযোগ থাকে না। সরকারের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলার সুযোগ আমার নাই। সরকারের যে ভুল হয় না, বিষয়টা এ রকমও নয়। ভুল হবেই, ভুলের পরিমাণটা কম হবে। ভুলটা সংশোধন করে চলতে পারাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
আমরা অনেক সময় নির্বাচনের জন্য ভাড়ায় প্লেয়ার আনি। কিন্তু দলের মূল কাঠামোতে কখনও হাইব্রিডদের জায়গা দেই না। আমরা চেষ্টা করি, দু-একটা জায়গায় হয়তো ভুল হয়। ভুল হলে আমরা সেটা সংশোধনের চেষ্টা করি। এসব কিছু মিলিয়ে দলের কর্মকাণ্ড সঠিক পথেই আছে
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ
আমি ইচ্ছা করলেই আমার দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব না। কিন্তু বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা, তরিকত ফেডারেশন— তাদের কথা বলার সুযোগ আছে। তারা কিন্তু কথা বলছেন, এই প্র্যাকটিসটা যদি কন্টিনিউ করেন তাহলে আমার ধারণা ভালো করবে সবাই। সংসদ আরও ভালো করবে। সবকিছুর পরও বিএনপির যে কয়জন সংসদ সদস্য আছেন, তারা ওয়াক আউট করেছেন। তারা কিন্তু দীর্ঘদিনের জন্য বয়কট করেন নাই। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে করবেন কিনা, জানি না। তারা কথা বলছেন এবং তাদের কথা আমরা অ্যাডমিট (স্বীকার করি) করছি।
মাননীয় সংসদ-নেতা তো খুব গুরুত্বসহকারে তাদের কথা শোনেন। অনেক সময় বিএনপি বা জাতীয় পার্টির একজন সংসদ সদস্যের কথারও প্রাসঙ্গিক উত্তর দেন তিনি (সংসদ-নেতা)। ওনার বক্তব্য হচ্ছে, আমি সংসদের নেতা, আমি সবার প্রতি সম-আচরণ করব। আমি মনে করি, একাদশ সংসদ খুবই ভালো করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, এই করোনার সময় অধিবেশনগুলো সীমিত হচ্ছে, আরও একটু বড় হতে পারত। সবমিলিয়ে এটা বলা যায়, সংসদে বিরোধী দলের কথা বলার বিষয়ে সংসদ-নেতা বেশ আন্তরিক।
এইউএ/এমএআর/এমএইচএস