বিমানের বকেয়া ৩০৯২ কোটি, আদায়ে দুদকের তোড়জোড়
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বকেয়া অর্থের পরিমাণ দিনদিন বাড়ছে। উড়োজাহাজ সংস্থাটির কাছে বছরের পর বছর আটকে থাকা বকেয়ার তিন হাজার ৯২ কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫২ টাকা আদায় এবং এর পেছনের কারণ জানতে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বকেয়া কেন আদায় হচ্ছে না— সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে দুদক।
বিজ্ঞাপন
বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানানোর জন্য কমিশন কর্তৃক চিঠি পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার জবাব পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো
২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম দফায় চিঠি দেওয়া হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া বা জবাব দেয়নি মন্ত্রণালয়। প্রায় ১৯ মাস অপেক্ষার পর দ্বিতীয় দফায় গত ১১ মে চিঠি দেয় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমনের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানটি।
দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খানের স্বাক্ষরে দেওয়া চিঠি বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুঞ্জিভূত বকেয়ার কারণ, বকেয়া আদায়ের জন্য গৃহীত ব্যবস্থার বিবরণ ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিত করার জন্য সূত্রস্থ স্মারকমূলে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু অদ্যাবধি কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ওই বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা জানানোর জন্য কমিশন কর্তৃক চিঠি পাঠানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সাত কার্যদিবসের মধ্যে বকেয়া আদায়ের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার জবাব পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হলো।’
দ্বিতীয় দফায় দেওয়া চিঠিতে সাত কর্মদিবসের কথা বলা হলেও সেই সময় পার হয়েছে। তারপরও জবাব পাওয়া যায়নি বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে দুদক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দুদক।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদক থেকে দুই দফা চিঠি দেওয়া হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ কয়েকটি বিমান সংস্থার দীর্ঘদিনের বকেয়া আদায় কেন হচ্ছে না, এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি আছে কি না— এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। ইতোমধ্যে কমিশনে এ সংক্রান্ত ফাইল পুনরায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি।
বকেয়া আদায় এবং দুদকের চিঠির বিষয়ে জানতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের অফিসিয়াল ফোনে কল করলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুদকের চিঠি আমরা পেয়েছি। যেহেতু বিষয়টি সিভিল এভিয়েশন অথরিটির দায়িত্ব, তাই আমরা চিঠিসহ বিষয়টি তাদের দেখার জন্য বলেছি। সিভিল এভিয়েশন মূলত আমাদের কাছে রিপোর্ট পাঠায়, ওরাই ভালো বলতে পারবে কোন কোন খাতে বকেয়া এবং বকেয়ার বর্তমান অবস্থা কী।
সিভিল এভিয়েশন অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘দুদকের চিঠিতে যে বকেয়ার কথা বলা হয়েছে আসলে তা বেড়ে বর্তমানে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ টাকা দিচ্ছে না, ফলে বকেয়া বেড়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের রিপোর্ট শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।’
বকেয়া কেন বেড়ে যাচ্ছে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠান, আমরা তাদের বলেই যাচ্ছি। আমরা আইন ও বিধি অনুযায়ী চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছি। তবে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে যাচ্ছে।’
‘আমরা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, আমাদেরও তো চলতে হয়। আমাদের অর্থের প্রয়োজন আছে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমরা তো বন্ধ করতে পারব না। এখানে প্যাসেঞ্জারসহ রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জড়িত। তারপরও টাকা আদায়ের চেষ্টা চলছে, প্রতি মুহূর্তে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তলব করে জানতে চাওয়া হচ্ছে। যদিও এর আগে একবার (২০১৭ সাল) সরকার বিমানের বকেয়ার ১৭০০ কোটি টাকা মাফ করে দিয়েছিল।’
এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি তিনি।
দুদকের চিঠি ও অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিমানের কাছে বেবিচকের বর্তমান পাওনা প্রায় চার হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল বিল ৯৮৬ কোটি ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ টাকা। ভ্যাট ও আয়কর ২৭১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ২৯৯ টাকা। এর বাইরে বকেয়ার ওপর অতিরিক্ত চার্জ (সারচার্জ) তিন হাজার ১৯২ কোটি ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।
আরএম/এসএম