অটোপাসের কারণে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান ও ব্যবসা বিভাগে ভর্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা

করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২০২০ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে সব শিক্ষার্থীকে পরের ক্লাসে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অটোপ্রমোশনে সবাই সনদ পেলেও বিষয়ভিত্তিক নম্বরপত্র দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান ও ব্যবসা বিভাগ কিসের ভিত্তিতে দেওয়া হবে তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান বিভাগ দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উৎকোচ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে বিভাগভিত্তিক বই বিতরণ আটকে গেছে। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

দেশের তিন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ ঢাকা পোস্টকে জানান, জেএসসি-জেডিসি অটোপাসের কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির জটিলতার বিষয়টি জানতে পেরেছি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সমাধান চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রী জেএসসির অ্যাসাইনমেন্ট ও সপ্তম শ্রেণির ফলের ভিত্তিতে বিভাগ দেওয়ার কথা বলেছেন। এতেও যদি জটিলতা দেখা দেয়, তবে স্কুল খোলার পর তিন মাস পর্যবেক্ষণ করে বিভাগ দেওয়া কথা জানিয়েছেন মন্ত্রী।

যেহেতু জেএসসি হয়নি তাই আগের ক্লাস সপ্তম শ্রেণির ফল ও অষ্টম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে বিভাগ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যদি জটিলতা দেখা যায়, তবে স্কুল খোলার পর তিন মাস পর্যবেক্ষণ করে তারপর বিভাগ দেবেন

নির্দেশনা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির

জানা গেছে, গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে এসএসসি-এইচএসসি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান, এনসিটিবির কারিকুলাম শাখার কর্মকর্তা ও রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্দেশনা, সপ্তম শ্রেণির ফল ও অষ্টম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে বিভাগ দেওয়া

সেখানে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমির হোসেন বিষয়টি উত্থাপন করে শিক্ষামন্ত্রীকে জানান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভাগ দিতে শিক্ষকদের ওপর চাপ আসছে। তাদের নানা ধরনের জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। জেএসসি পরীক্ষা না হওয়ার এবার কিসের ভিত্তিতে বিজ্ঞান-ব্যবসা বিভাগ দেবে, তার সমাধান চেয়েছেন আমাদের কাছে।

পরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেহেতু জেএসসি হয়নি তাই আগের ক্লাস সপ্তম শ্রেণির ফল ও অষ্টম শ্রেণির অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করে বিভাগ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যদি জটিলতা দেখা যায়, তবে স্কুল খোলার পর তিন মাস পর্যবেক্ষণ করে তারপর বিভাগ দেবেন। নবম শ্রেণিতে যেহেতু জেএসসির ইংরেজি-গণিতের নম্বরকে মূল ভিত্তির ধরে বিজ্ঞান দেওয়া হতো তাই সপ্তম শ্রেণির এ দুটি বিষয়ের নম্বর দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।

বিষয়টি স্বীকার করে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, তাদের সন্তান মেধাবী হলেও টাকার বিনিময়ে, স্বজনপ্রীতি করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানদের বিজ্ঞান বিভাগ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করার পর তিনি আমাদের একটি নির্দেশনা দিয়েছেন।

সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার মূল্যায়ন ও জেএসসিতে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিভাগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হলে স্কুল খোলার পর দুই-তিন মাস ক্লাসে শিক্ষার্থীর ইংরেজি-গণিত বিষয়ের পর্যবেক্ষণ করে শ্রেণিশিক্ষক তার বিভাগ ঠিক করে দেবেন

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, চেয়ারম্যান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তিতে আগ্রহীদের অতীতের অ্যাসাইনমেন্ট ও সপ্তম শ্রেণির ফলাফল দেখে মেধাবীদের সাময়িকভাবে বিজ্ঞান বিভাগ দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রী। স্কুল খোলার পর দুই বা তিন মাস ক্লাস নিয়ে টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হবে। যারা গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ভালো করবে তাদের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হবে।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালীদের ছেলে-মেয়েদের পছন্দের বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে | ছবি- সংগৃহীত 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষে ভবিষ্যতে কোন পেশায় যুক্ত হবেন তা নির্ধারিত হয় নবম শ্রেণিতে। অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের কোনটিতে পড়বেন তা নির্ধারণ করতে হয়। অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীর অভিভাবকও চান তার সন্তান বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু দেশের নামকরা স্কুল ছাড়াও জেলা-উপজেলার স্কুলগুলোতে নবম শ্রেণির আসন সংখ্যা সীমিত। প্রতি বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বিভাগ নির্ধারণ করা হয়। এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না হওয়ায় বিভাগ বিতরণ নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা হচ্ছে।

বিপাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো 

জেএসসি পরীক্ষা না নিয়ে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করায় বিপাকে পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কাকে বাদ দিয়ে কাকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করবেন তা নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ সুযোগে অনেক প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীদের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করছে বলে অভিযোগ আসছে। বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শিক্ষা বোর্ডে এমন অভিযোগ করায় বোর্ড কর্মকর্তারা বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে জানান।

তাদের শিক্ষার্থী মেধাবী হলেও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়নি। প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে
অভিযোগ অভিভাবকদের

বিভাগ বাছাইয়ে জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাভাবিক সময়ে বিভাগ নিয়ে স্কুলগুলোকে নানা চাপ পোহাতে হয়। সবাই বিজ্ঞান বিভাগ নিতে চায়। কিন্তু এ বিভাগে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় শিক্ষকদের হিমশিম খেতে হয়।

এবার যেহেতু জেএসসি পরীক্ষা হয়নি ফলে জটিলতা বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, সপ্তম শ্রেণির পরীক্ষার মূল্যায়ন ও জেএসসিতে অ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিভাগ দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হলে স্কুল খোলার পর দুই-তিন মাস ক্লাসে শিক্ষার্থীর ইংরেজি-গণিত বিষয়ের পর্যবেক্ষণ করে শ্রেণিশিক্ষক তার বিভাগ ঠিক করে দেবেন।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা

অতীত অ্যাসাইনমেন্টের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোল্লা আমির হোসেন বলেন, সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার ফল বিবেচনার পাশাপাশি স্কুল বন্ধের আগে অষ্টম শ্রেণিতে যে ক্লাস হয়েছে এবং বন্ধের পর শিক্ষার্থীদের যে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে তাতে যারা ভালো করেছে তাদের বিজ্ঞান বিভাগ দেওয়া হবে।

দুই বা তিন মাস ক্লাস শেষে পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর ইচ্ছার ওপর পরীক্ষা হবে। কাউকে জোর করা হবে না। কোনো শিক্ষার্থী আগ্রহী হলেই পরীক্ষায় অংশ নেবে। আর যদি মনে করে দুই মাস পড়েছি এখন বিজ্ঞানে যাব না, সেটা শিক্ষার্থীর সিদ্ধান্ত। মেধাবী প্রমাণ করতে পারলে বিজ্ঞান নেবে। না হলে মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হবে।

শিক্ষার্থীর ইচ্ছার ওপর পরীক্ষা হবে। কাউকে জোর করা হবে না। কোনো শিক্ষার্থী আগ্রহী হলেই পরীক্ষায় অংশ নেবে

অধ্যাপক ড. মোল্লা আমির হোসেন, চেয়ারম্যান, যশোর শিক্ষা বোর্ড

রাজধানীর তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ঢাকা পোস্টের কাছে অভিযোগ করেন, তাদের শিক্ষার্থী মেধাবী হলেও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়নি। প্রভাবশালীদের সন্তানদের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের আসন সীমিত। এ বিভাগে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সপ্তম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ফল ও অ্যাসাইনমেন্ট বিবেচনা করে বিভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা জানেন কোন শিক্ষার্থী মেধাবী।

এ ব্যাপারে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ ড. শাহান আর বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা নিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই আপাতত বিভাগ ছাড়াই কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। স্কুল খোলার পর নানা মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের বিভাগ দেওয়া হবে।


 
বই বিতরণ নিয়ে জটিলতা

বছরের প্রথম দিন থেকে সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের বই বিতরণ করলেও জটিলতার কারণে অনেক শিক্ষার্থীর বিভাগ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে তাদের বিভাগভিত্তিক বইগুলো এখনও প্রতিষ্ঠানে পড়ে আছে। তবে যারা স্বেচ্ছায় মানবিক ও ব্যবসা শাখা নিয়েছে তাদের সব বই দেওয়া শেষ। বিজ্ঞান বিভাগের বইগুলো স্কুলের স্টোর রুমে রাখা আছে। যখন শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিতরণ শেষ হবে তখন তাদের বই দেওয়া হবে।

নবম শ্রেণির বিজ্ঞান ও ব্যবসা শিক্ষা নিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তাই আপাতত বিভাগ ছাড়াই কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। স্কুল খোলার পর নানা মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের বিভাগ দেওয়া হবে

ড. শাহান আর বেগম, অধ্যক্ষ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল

বই দেওয়া প্রসঙ্গে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহারা আর বেগম বলেন, যাদের বিভাগ দেওয়া হয়নি, তাদের বইগুলো স্কুলে রয়েছে। যখন বিভাগ চূড়ান্ত হবে তখন তাদের বই দেওয়া হবে।

স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, মার্চ-এপ্রিল মাসে শিক্ষা বোর্ডগুলো থেকে রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়। ওই সময়ের আগে শিক্ষার্থীদের বিভাগ চূড়ান্ত করতে হবে। এর আগে যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না হয় তবে কিসের ভিত্তিতে বিভাগ দেওয়া হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এছাড়া স্কুল খোলার পর যদি দুই-তিন মাস ক্লাসে পর্যবেক্ষণ করতে হয় সেটা কবে গিয়ে শেষ হবে তা স্কুল খোলার ওপর নির্ভয় করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন অন্যান্য বছরের মতো মার্চ-এপ্রিলে নাও হতে পারে। এটা স্কুল খোলা ও পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এটা বলতে পারি।

এনএম/ওএফ/এমএআর/