টলিগঞ্জের অচলাবস্থা গত দুইদিন থেকে শুটিং বন্ধ রয়েছে, এখন পর্যন্ত পরিচালকদের সঙ্গে ফেডারেশনের ঝামেলার কোন সমাধান হয়নি। এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতেই সোমবার সকালে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জের বাড়িতে বৈঠক বসে।

রাজ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে হরনাথ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, অরিন্দম শীলরা এক সঙ্গে বসে বৈঠক করেছেন। বেশ কয়েক দশক ধরে টলিগঞ্জের যাবতীয় ওঠা-পড়ার সঙ্গে প্রসেনজিৎ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অতীতেও যখনই সমস্যা তৈরি হয়েছে অভিভাবক হয়ে এগিয়ে এসেছেন তিনি। এবারও অন্যথা হল না। 

সপ্তাহখানেক ধরে চলতে থাকা সিনে পাড়ায় জটিলতা কাটাতে উদ্যোগী হয়ে নিজের বাড়ি ‘উৎসব’-এ ডেকে নিয়েছিলেন নবীন থেকে প্রবীণ পরিচালকদের। সেই ঘরোয়া বৈঠক শেষে এ অভিনেতা বলেন, ‘এটা মান-সম্মানের লড়াই চলছে।’

প্রজেনজিৎ বলেন, ‘নমস্কার, এটা আমার বাড়ি। এখানে কোনও সাংবাদিক সম্মেলন হচ্ছে না। এটা একটা আলোচনা। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে রয়েছেন ২০০ জন পরিচালক। সঙ্গে আমাদের কলাকুশলীরা, টেকনিশিয়ান বন্ধুরাও রয়েছেন, সর্বোপরি আমাদের শিল্পীরা। দেবও (দীপক অধিকারী) আমাদের সঙ্গেই রয়েছে সব সময়। ঘাটাল থেকে ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ রাখছে সকাল থেকে। আমরা চেষ্টা করছি। 

তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের ভূমিকাটা কী? ইন্ডাস্ট্রিতে ৩০-৪০ বছর কাজ করে একটা পরিবারে পরিণত হয়েছি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু নিয়ম আছে, নীতি আছে, যেগুলোকে পালটানো প্রয়োজন। আমরা সারাজীবন লড়াই করেছি টেকনিশিয়ানদের জন্য। পাশাপাশি শিল্পীদের আর্টিস্ট ফোরাম, যেখান প্রচুর শিল্পী রয়েছেন। তবে আমার মনে হয়, এখন যে জায়গাটায় আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি, সেটা কোনও লড়াই নয়, এটা মানসম্মানের লড়াই চলছে। একটা পরিবারে যদি আমরা সবাই বাস করি, সেখানে মান-সম্মান সবই থাকবে। তার জন্য পরিবারটা তো ভেঙে যায় না। আমরা চাই উন্নয়ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বলছি প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম,তবে প্যান ইন্ডিয়া ছবি বানাতে গেলে বাইরের লোকেদের এখানে আনতে হবে। কাজ কখনও বন্ধ হওয়া উচিত নয়। আমার ছবি বলে বলছি না, আমি এখানে অভিনেতা নই। সমস্যা থাকলে আলোচনা হোক, তবে কাজটা চলুক। বুঝতে হবে, এই কাজটার পেছনে শুধু কোনও প্রযোজক নেই, প্রচুর মাথা কাজ করে। সব পরিশ্রমটা বন্ধ হয়ে গেল, আর বানাচ্ছি কাদের জন্যে? দর্শকদের ভাল কিছু দেওয়ার জন্য। আমি বুঝতেই পারছি না বিরোধিতাটা কোথায়? আজ বাইরের লোকেরা এখানে এসে কাজ করলে উপকারটা কারা পাবে? আমি একদিনে অনেকটা খেয়ে পেটটা খারাপ করব, না একটু একটু করে রোজ খাব? এটা ভাবার সময় এসে গিয়েছে। কারণ, সত্যি অনেকে কাজ করতে চাইছে এখানে। হয়ত সমস্যা হচ্ছে, কিন্তু এই সমস্যাগুলোকে কি মেটানো যায় না? এটা অনেক বছর আগেই বসা উচিত ছিল, কিছু জিনিস সকলে মিলে আলোচনা করে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে কেউ থাকলেন, যারা সাহায্য করলেন, এগুলো মিলিয়ে একটা সুস্থ পরিবেশে আসা উচিত।’

পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের একটি ছবির বেশ কিছু অংশ বাংলাদেশে শুটিং হওয়া নিয়েই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। কলাকুশলীদের সংগঠন ‘টেকনিশিয়ান গিল্ড’-এর মতে সংশ্লিষ্ট ছবির শুটিংয়ে বাংলাদেশের কলাকুশলীরা কাজ করায় বঞ্চিত হয়েছেন এ রাজ্যের সিনে-কর্মীরা। যদিও, রাহুল ও ছবিটির বাংলাদেশি প্রযোজকের পক্ষ থেকে দাবি, কলকাতায় কাজ করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ছবিকে বিদেশি তকমা দিয়ে নির্ধারিত পারিশ্রমিকের বেশি টাকা ধার্য করা হয় যা প্রযোজকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়নি। 

এমআইকে/