তরুণীদের অসামাজিক কাজে বাধ্য করেন অভিনেতার বান্ধবী
বিলাসিতায় পরিপূর্ণ ছিল তার জীবন। হলিউড তারকাদের থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গেও ছিল সুসম্পর্ক। দুঃস্থ তরুণীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা মূলক ভিডিও পোস্ট করতেন নিয়মিত।
এসব কিছুই ছিল তার ফাঁদ। যেই ফাঁদে পা দেওয়া তরুণীদের ‘ক্রীতদাসে’ পরিণত করতেন তিনি। এরপর দেহব্যবসায় বাধ্য করতেন। ক্যাট টরেস নামের এই নারীকে ৮ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত। যার সঙ্গে জনপ্রিয় অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিয়োর সুসম্পর্ক ছিল।
বিজ্ঞাপন
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দক্ষিণ ব্রাজিলে শৈশব কাটিয়েছিলেন ক্যাট। ছোটবেলা থেকেই নানা রকম হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন তিনি। তাই খুব কম বয়সে ব্রাজিল থেকে আমেরিকায় চলে যান। অর্থের কোনও সমস্যা কোনও দিনই ছিল না। আমেরিকায় গিয়ে নিউইয়র্কে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতে শুরু করেন তরুণী।
নিউইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে ক্যাটের সঙ্গে থাকতেন তার রুমমেট লুজ়ার টোয়ারস্কাই। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লুজ়ার বলেন, ‘ক্যাটের বহু খ্যাতনামী ব্যক্তির সঙ্গে আলাপ ছিল। তাদের সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানোর জন্য টাকা পেতেন। বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচও ওই খ্যাতনামীরাই দিতেন।’
লুজ়ারের দাবি, হলি তারকাদের সংস্পর্শে থাকার পর আয়াহুয়াস্কা নামে এক নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ করতে শুরু করেন ক্যাট। ওই মাদকের নেশায় ধীরে ধীরে তার আচার-আচরণেও পরিবর্তন হয়।
খুব কম সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ক্যাট। আত্মজীবনীও লিখে ফেলেন তিনি। শৈশবে তিনি কতটা ভয়াবহতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছেন সে কথা বইয়ে উল্লেখ করেন। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে শুরু করে টেলিভিশন চ্যানেলের শোয়েও তার মুখ নিয়মিত দেখা যেত।
আরও পড়ুন
কানাঘুষো শোনা যায়, জনপ্রিয় হলি অভিনেতা লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিয়োর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন ক্যাট। সামাজিক মাধ্যমে ক্যাট তার অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। জীবনদর্শন নিয়ে নানা ধরনের উপদেশ দিতেন। সবই করতেন অর্থের বিনিময়ে।
শৈশবে কঠিন পরিস্থিতি পার করার পর ক্যাট যে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছেন, সেই কাহিনি থেকেই অনুপ্রাণিত হতে শুরু করেন অন্য নারীরা। আর এই অবস্থারই সুযোগ নিতে শুরু করেন তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়ায় জ্যাক নামে এক তরুণের সঙ্গে আলাপ হয় ক্যাটের। তাকে বিয়ে করে টেক্সাসে পাঁচ বেডরুমবিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেন। সেখানে সচেতনতামূলক ভিডিও বানানোর নামে অন্য তরুণীদের সঙ্গে আলাপ করতেন। এরপর তাদের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন।
ব্রাজিলের বাসিন্দা অ্যানা ছিলেন ক্যাটের অনুগামী। বস্টনের একটি ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন তিনি। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমি পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলাম। ক্যাটের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতাম। ক্যাটের কথায় ২০১৯ সালে ওর সহকারী হিসাবে কাজ করার জন্য পড়াশোনা ছেড়ে নিউ ইয়র্ক চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর আমার স্বপ্নের দুনিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।’
অ্যানা বলেন, ‘জামাকাপড় কাচা থেকে শুরু করে রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, ক্যাটের পোষ্যদের যত্ন নেওয়া আমার কাজ ছিল। তার পরিবর্তে আমায় পারিশ্রমিক দেওয়া কথা ছিল ক্যাটের। কিন্তু সে আমায় কোনও টাকা দেয়নি। যা ভেবেছিলাম, বাস্তব তার বিপরীত ছিল। সহ্য করতে না পেরে তিন মাস পর প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাই।’
অ্যানা একাই ক্যাটের অত্যাচারের শিকার হননি। ২০২২ সালে ব্রাজিলের দুই তরুণীর নিখোঁজ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাদের পরিবারের সদস্যেরা তদন্তকারী সংস্থা এফবিআইকে জানান, ক্যাট ওই দুই তরুণীকে বন্দি করে রেখেছেন।
খবর পাওয়ামাত্র ওই দুই তরুণীকে নিয়ে টেক্সাস ছেড়ে মেইনে চলে যান ক্যাট। অভিযোগ, সেখানে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে দুই তরুণীকে দিয়ে জোর করে একটি ভিডিও পোস্ট করান তিনি। ক্যাটের সঙ্গে তারা যে ভালো রয়েছেন, ভিডিওতে সেই দাবি করেন দু’জন।
পার্লনামে এক তরুণীকে বন্দি করে রেখেছিলেন ক্যাট। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ক্যাটের নির্দেশ না মানলে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভয় দেখাতেন তিনি। পার্ল বলেন, ‘ঘর থেকে বেরনোর জন্য, এমনকি শৌচালয় যাওয়ার জন্যও ক্যাটের অনুমতি নিতে হত।’
পার্লের অভিযোগ, ‘আমায় জোর করে দেহব্যবসায় নামিয়েছিল ক্যাট। প্রতিদিন দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকা উপার্জন না করলে আমায় বাড়ি ঢুকতে দিত না। ভয়ঙ্কর তন্ত্রের চর্চা করত ক্যাট। আমি প্রতিবাদ জানালেই ভয় দেখাতে শুরু করত। এমন বহু রাত গিয়েছে, যখন আমি রাস্তায় ঘুমিয়েছি।’
তদন্তে নেমে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুই তরুণীকে উদ্ধার করে ব্রাজিলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাটকেও আট বছর বছর জেলের নির্দেশ দেয় আদালত।
ব্রাজিলের এক কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন ক্যাট। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘লোকে বলেন আমি নাকি ভুয়া গুরু। কথার জালে ফাঁসিয়ে কাউকে দিয়ে আমার যা খুশি করানোর ক্ষমতা রয়েছে। এসব মিথ্যা কথা শুনলে হাসি পায় আমার। তোমার যা ইচ্ছা, তুমি তাই বিশ্বাস করবে। আমি যদি বলি আমার মধ্যে যিশুর বাস, তুমি তাই মানবে। আমার ভিতর শয়তানকে দেখার ইচ্ছা থাকলে তুমি তাই দেখবে। সবই মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে।’
এনএইচ