পরীমণি ইস্যুতে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কোনাল
গত ৪ আগস্ট ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণিকে বনানীর বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর দুই ধাপে ৬ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় তাকে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন এই অভিনেত্রী।
এই ঘটনায় গত কয়েক দিনে শোবিজ অঙ্গনের অনেকেই পরীমণির পক্ষে এগিয়ে এসেছেন। যার যার অবস্থান থেকে আওয়াজ তুলছেন নায়িকার মুক্তির জন্য। এবার পরীর পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সোমনূর মনির কোনাল। যিনি শুরু থেকেই এই নায়িকাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
পরীমণির ঘটনায় প্রয়াত ভারতীয় অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রসঙ্গ টেনে কোনাল তার পোস্টে লেখেন, ‘খবর পড়ছিলাম বসে বসে। হঠাৎ মনে পড়ে গেল গত বছরের সেই ঘটনার কথা। সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুকে ঘিরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ব্যুরো যখন মাদক মামলায় দীপিকা পাড়ুকোনকে তলব করলেন (বলা হয় মাদক সংশ্লিষ্ট একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন দীপিকা) দীপিকা তখন ছিলেন মুম্বাইয়ের বাইরে, শুটিংয়ে ব্যস্ত। তাই তিনি পরদিন চার্টার্ড বিমানে করে ফিরলেন মুম্বাই (তাঁকে সম্মানসূচক সেই সময় এবং স্পেস দেয়া হয়েছিল এবং সেই সময়টুকু দীপিকা কাজে লাগিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতে)। পুলিশের মনে হলো, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীপিকার বাসায় এবং থানার সামনে হতে পারে হট্টগোল, দীপিকাকে হেয় করতে পারে জনগণ, তার সম্মানহানি হতে পারে, পড়তে হতে পারে বাড়তি ঝামেলায়। তাই তখন দাদার (দাদার, মুম্বাই) পুলিশ স্টেশন থেকে একটা টিম মোতায়েন করা হলো দীপিকার বাড়ির সামনে। তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সম্মান দিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। দীপিকা ওই মামলার সঙ্গে আদৌ জড়িত কি না, বা কতটুকু জড়িত, তা জানবার আগ পর্যন্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সম্মান তাকে দেয়া হয়েছিল। এটা একজন সাধারণ নাগরিকেরই প্রাপ্য; সেখানে দীপিকা তাদের দেশের সম্পদ!’
‘মনে প্রশ্ন জাগে’ টাইটেলে পোস্টে কয়েকটি প্রশ্নও করেন এই গায়িকা। এগুলো হলো-
১. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি পরীমণিকে ডাকত, সে কি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যেত না থানায়? এদিকে পরীমণির ১০৫ বছরের বৃদ্ধ নানা (নানা) আদালত প্রাঙ্গনে ছুটে গিয়েছিলেন এই কঠিন সময়েও! অথচ তাকে দেখা করতেই দেয়া হয়নি পরীর সাথে। টেনে হেঁচড়ে পরীকে জাকড়ে ধরে নেয়া হচ্ছে, আনা হচ্ছে, যেন তিনি দেশ ও জাতির বিশল কোনো ক্ষতি করে ফেলেছেন!
২. পরীর পার্সোনাল ভিডিও জনসমুক্ষে এসেছে। কীভাবে আসলো? যে ইউটিউব চ্যানেল থেকে এই ভিডিও প্রকাশ করা হলো, সেই চ্যানেল মালিক কি করে পেলো এই ভিডিও? তার মানে শুধু এই ভিডিও নয়, আরও কিছু পৌঁছেছে তার কাছে! উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই ঘৃণিত কাজ কারা করছে? জানতে পারব কি কোনোদিন?
৩. আমার পরিবার রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পরিবার। জন্মের পর থেকেই দেখছি সংগঠন বা সমিতি, কীভাবে তাদের সদস্যদের পাশে দাঁড়ায়, সদস্যদের জন্য সংঘবদ্ধ থাকেন। অথচ চলচিত্রের সেই সমিতি পরীর সদস্যপদই সাময়িক স্থগিত করে দিলো। তা হয়তো তাদের সংবিধান অনুযায়ী যা আছে করুক। কিন্তু তাদের সংবিধানে কি নেই যে, একজন শিল্পীর মন্দ যেমন দেখব, ভালোটাও দেখতে হবে! পরীর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা, ওর সঙ্গে কোনো অবিচার হচ্ছে কিনা, পরী ঠিক মতো আইনের সহযোগিতা পাচ্ছে কিনা, এটা দেখাও কি সমিতি বা সংগঠনের বিধানে নেই? তাহলে কেন, এবং কাদের স্বার্থে এই সমিতি/সংগঠন?
৪. তালি এক হাতেই বেজেছে এতদিন? তবে তো সেটা বিশ্ব রেকর্ড! পরীর দিকে আঙ্গুল উঁচানো এতো এতো খারাপ কাজ, সেগুলো সে একা করেছে? একা করলে তো আর কথাই নেই। নিজের ক্ষতি নিজে করছে, অন্যকে ডিসটার্ব করেনি! কিন্তু তালি তো আসলে এক হাতে বাজে না! সেই তালির আরেক হাত কোথায়? তালির এই হাতগুলো কারা? কেন তাঁদের নাম গোপন রাখা হচ্ছে? মান-সম্মানের স্বার্থে? তাহলে পরীর যে মান-সম্মান বিকি–কিনি হয়ে গেলো, সেটার কি হবে?
প্রশ্নগুলো রয়ে গেল। উত্তর?
কোনাল আরও লেখেন, ‘আমি এই দেশের একজন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র শিল্পী হয়ে, তার সহকর্মী হয়ে, একজন নারী হয়ে, এ দেশের একজন নাগরিক হয়ে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, বাবা-মা হারা পরী যেন ন্যায় বিচার পায়। তাকে আলাদা করে সহযোগিতা করতে হবে না। তার প্রাপ্যটুকু যেন নিরপেক্ষভাবে তাকে দেওয়া হয়। আমার দেশের বিচার বিভাগের ওপর আমি আশাবাদী। এটুকু হতেই চাই। এটুকু হতেই হবে!
আরআইজে