ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণি গ্রেফতার হয়েছেন মাদক মামলায়। গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তাকে বনানীর বাসা থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। ওই সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসছে আরও নানা তথ্য।

এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সিংহভাগ মানুষ পরীমণিকে তুলোধুনা করছেন। যে যেভাবে পারছেন, কথ্য-অকথ্য ভাষায় তার সম্পর্কে মন্তব্য করছেন। কেউ কেউ তো তাকে চরিত্রহীনা দাবি করে পাথর মেরে হত্যা করার কথা পর্যন্ত বলে ফেলছেন।

তবে পরীমণির জীবনের গভীরে গিয়ে একটু ভিন্নভাবে কথা বলেছেন জনপ্রিয় রেডিও জকি ও লেখক আশীফ এন্তাজ রবি। তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, পরীর সম্পর্কে আড়ালে থেকে যাওয়া কিছু সত্য।

আশীফ লিখেছেন, ‘আমার সকল ভালোবাসা পরীমণির জন্য। মানুষ খাল কেটে কুমির আনে। আমি এই স্ট্যাটাস লিখছি। পরীমণিকে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে দিতে যারা বোর হয়ে গেছেন, তারা যেন একটু বৈচিত্র্যর জন্য আমাকে গালি দিতে পারেন।’

সম্প্রতি পরীমণির বেড়ে ওঠা সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। সেই রেফারেন্স দিয়ে আশীফ লিখেছেন, ‘পরীমণির আসল নাম স্মৃতি। ছোট বেলায় তার মা আগুনে পুড়ে মারা যায়। আগুনে পোড়ার সাথে সাথে সে মারা যায়নি। দীর্ঘ দুই মাস ভুগে- তারপর সে মারা গেছেন। এরপর মারা যায় পরীমণির বাবা। তার মৃত্যুও স্বাভাবিক নয়। ব্যবসায়িক কারণে সে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। অতএব বাংলা সিনেমার মতো পরীমণি খুব শৈশবে এতিম হয়ে যায়। পরীমণি পালিত হয় নানার সংসারে। মজার ব্যাপার কি জানেন? বরিশালের একটি স্কুল থেকে সে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এর আগে কেউ এই স্কুল থেকে বৃত্তি পায়নি। শুধু তাই নয়, এখন পর্যন্ত ওই স্কুল থেকে আর একজন শিক্ষার্থীও বৃত্তি পায়নি।

ঢাকা পোস্টকে সাধুবাদ জানিয়ে আশীফ লিখেছেন, ‘ঢাকা পোস্টের সাংবাদিকরা একটি ভালো কাজ করেছেন। তারা পরীমণির স্কুলের শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা পরীমণিকে এখনো স্নেহ করেন। শৈশবে পরীমণি ছিলো নম্র, ভদ্র এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এক মেয়ে। এরপর যা হয়। পরীমণিকে বিয়ে দেয়া হয় ওই গ্রামের একজনের সাথে। সেই সংসার দুই বছরের বেশি টেকেনি। না, যা ভাবছেন, তা নয়। সংসার পরীমণির কারণে ভাঙেনি। স্বামী যৌতুকের জন্য দুই লাখ টাকা চেয়েছিলেন পরীমনির নানার কাছে। সে টাকা না দেয়ায় স্বামী পরিমণিকে তালাক দেন। এই পর্যন্ত লেখাটি পড়ে একটু ভাবেন। একটি মেয়ের জীবনে এর চাইতে ভয়াবহ, ধারাবাহিক দূর্ঘটনায় পূর্ণ , অভিশপ্ত জীবন আর কী হতে পারে?’

আরজে আশীফ আরও লিখেছেন, ‘তখনো কিন্তু পরীমণির নাম স্মৃতি। যেহেতু স্মৃতির রূপ ছিলো, একই সাথে ছিলো এক সাগর দুঃখ। একজন রূপবতী দুখী মেয়ে, শিকারের জন্য এর চেয়ে ভালো হরিণ আর কী হতে পারে? কাজেই স্মৃতি ক্রমান্বয়ে পরীমণিতে পরিণত হয়। একবারও জিজ্ঞাসা করেছেন, কারা স্মৃতিকে পরীমণি বানালো? পরীমণির নানার নাম, বাপের নাম পত্রিকাওয়ালারা ছবিসহ ছাপাচ্ছে। কিন্তু পরীমণির গডফাদারদের ক্ষেত্রে কেন পত্রিকাওয়ালারা লিখছে, জনৈক ব্যবসায়ী, জনৈক ব্যাংকার, জনৈক রাজনীতিবিদ, জনৈক আমলা, জনৈক পুলিশ কর্মকর্তা?

আড়ালে থাকা প্রভাবশালীদের ইঙ্গিত করে আশীফ লিখেছেন, ‘এই সমাজের জনৈকরা একজন স্মৃতিকে একটা ভালো সিনেমা দিতে পারতো। একটা ভালো গল্প দিতে পারতো। ভালো লেখাপড়ার সুযোগ দিতে পারতো। তা না করে, স্মৃতিকে তারা পরীমণি বানিয়েছেন, দেশ-বিদেশে ঘুরিয়েছেন। তাকে নিয়ে লোফালুফি করেছেন। পরীমণির বাসায় যে মদের ভাণ্ডার, সেই মদ কি পরীমণি একাই খেতো? নাকি অন্য খদ্দের ছিলো? তারা কারা? পরীমণি কাদের জন্য এত মদ জমিয়েছিলো? গালি না দিয়ে প্রশ্ন করতে শিখুন। গত কয়েকদিনে যেভাবে পশুর মতো আপনারা পরীমণিকে গালিগালাজ করছেন, কেউ কেউ পাথর ছুঁড়ে তাকে হত্যা করার দাবি জানাচ্ছেন, বিশ্বাস করুন, এটি একটি অসুখ। করোনার চেয়ে হাজার গুণ বড় ভাইরাস, যার নাম ঘৃণা।’

দেশের নানা অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে আশীফ লেখেন, ‘আজকে শাহেদকে ঘৃণা করবেন, কাল হেলেনাকে ঘৃণা করবেন, পরশু পাপিয়াকে ঘৃণা তরশু করবেন পরীমণিকে। ঘৃনা করতে করতে আপনারা ভুলে যাবেন, দেশে ডেঙ্গু বাড়ছে। ডেঙ্গুতে শিশুরা মারা যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা খুব সহজ। খালি মশা মেরে ফেলতে হবে। ঘৃণা করতে করতে আপনারা ভুলে গেছেন, সিঙ্গাপুরের সবাই টিকা পেয়ে গেছেন, কিন্তু নয়া সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনো টিকা পায়নি। ঘৃণা করতে করতে আপনারা ভুলে গেছেন, দেশে সাবমেরিন আছে, কিন্তু আইসিইউ নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক। আপনি ফেসবুক খুলবেন। পরীমণিকে গালি দেবেন, চয়নিকা চৌধুরিকে মম বলে টিজ করবেন। একটু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকান। শোবার ঘরে আপনার বাবা কাশছেন,তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এই কাশি, এই শ্বাসকষ্ট তার প্রাপ্য না। তার দরকার সুচিকিৎসা, টিকা এবং অক্সিজেন। বাবার পাশে গিয়ে বসুন। পরীমণি বা হেলেনা জাহাঙ্গীরে তার কিছু আসে যায় না। একশ পরীমণিকে ফাঁসি দিলেও তার কোনো আরাম হবে না। তার দরকার একটি সংবেদনশীল সমাজ। সেই সমাজ গড়ার দায়িত্ব আপনার। তাহলে আপনি এবং পুরো দেশে ভালো থাকবে।’

কেআই