২০১৫ সালের ঘটনা। তখনো পরীমণির কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। অথচ ওই সময়েই তার হাতে ২৩টি সিনেমার কাজ! রাতারাতি ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিকে নাড়িয়ে দেন সুদর্শনা এ তরুণী। প্রথম সিনেমা মুক্তির আগেই কোনো নায়িকার হাতে দুই ডজন সিনেমা আসার ঘটনা ইতিহাসে বিরল।

পরীমণি অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’। শাহ আলম মণ্ডল পরিচালিত ওই সিনেমায় জায়েদ খান ও আনিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। মুক্তির পর সিনেমাটি বক্সঅফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু তাতে কী, পরীর হাতে যেন বৃষ্টিধারার মতো সিনেমার প্রস্তাব আসতে থাকে।

এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি সিনেমায় কাজ করেছেন পরী। এর মধ্যে কোনো সিনেমাই ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি। কেবল কয়েকটি সিনেমা আলোচনার টেবিলে ছিল। এগুলো হলো ‘স্বপ্নজাল’ ‘অন্তর জ্বালা’ ‘আরো ভালোবাসব তোমায়’ রক্ত’ ও ‘বিশ্বসুন্দরী’। সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গণমাধ্যমে সিনেমাগুলো নিয়ে চর্চা হলেও প্রেক্ষাগৃহ ছিল ফাঁকা। এসবের কারণে পরীকে বলা হয়ে থাকে ‘ফ্লপের রানি’।

প্রশ্ন হলো, প্রতিটি সিনেমা ফ্লপ হওয়ার পরও নির্মাতা-প্রযোজকরা কেন পরীমণিকে নিয়ে মরিয়া ছিলেন? কেন একের পর এক নতুন সিনেমায় তাকে নেওয়া হতো? শোনা যায়, সিনেমার আড়ালে মূলত ‘বিশেষ’ উদ্দেশ্যেই এই নায়িকাকে চুক্তিবদ্ধ করতেন নির্মাতা-প্রযোজকরা।

বুধবার (৪ আগস্ট) বিকেলে পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র‍্যাব। মাদক আইনে তার বিরুদ্ধে মামলাও প্রক্রিয়াধীন।

এই ঘটনার পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। র‍্যাব সূত্রে জানা গেছে, মিশু নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল পরীর। তিনিই পরীমণিকে বিভিন্ন পার্টিতে নিয়ে যেতেন এবং উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচয় করিয়ে দিতেন। সেসব ব্যক্তির সঙ্গে ‘বিশেষ সঙ্গ’ ও পার্টিতে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতেন পরী।

সিনেমা অঙ্গনে কান পাতলে শোনা যায়, কথিত কিছু চিত্রপরিচালকও পরীমণির জন্য এমন কাজ করতেন। তাদের মাধ্যমে সম্পদশালী প্রযোজক ও ব্যক্তিদের সঙ্গে পরীর সখ্য হতো। এ থেকে পরীর যেমন বিপুল অর্থ আয় হতো, মাধ্যম হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিরাও পেতেন এর অংশ। আর এসব কারণেই ফ্লপের পর ফ্লপ হলেও পরীকে সিনেমায় নেওয়ার জন্য আগ্রহী ছিলেন তারা।

ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির নায়িকাদের পারিশ্রমিক ১ থেকে ৫ লাখের মধ্যে ওঠা-নামা করে। দু-একজন নায়িকা মাঝেমধ্যে সিনেমাপ্রতি ৭-৮ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার কথা শোনা যায়। এ থেকে অবশ্য পরীমণি অভিনীত সিনেমার সংখ্যা এবং তার অর্থ-সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবনের সমীকরণ মেলানো সম্ভব নয়। কেননা সিনেমা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এমন বিলাসী জীবন যাপন অকল্পনীয়ই বটে।

কেআই/জেএস