জয়া আহসান: চিরযৌবনা কিংবা অভিনয়ের দেবী!
‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে’- আক্ষরিক অর্থে যেন তার জন্যই এই গান। কারণ ক্যালেন্ডারের পাতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবার রূপ-যৌবনে ভাটা পড়ে, কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেই চিরায়ত নিয়ম একটু ব্যতিক্রম। কেননা বয়সের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তার রূপ-লাবণ্য ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে! যেন কোনো জাদুকরী উপায়ে বয়সটাকে আটকে রেখেছেন তিনি।
আর অভিনয়ের প্রসঙ্গ যদি আসে, তাহলে তিনি হয়ে ওঠেন এ প্রজন্মের আদর্শ। নিপুণ অভিনয়ের কারুকাজে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের দর্শকদের মাতিয়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
বিজ্ঞাপন
হ্যা, তিনি জয়া আহসান। বর্ণিল অভিনয় জীবনে তিনি ঝলমলে দ্যুতিতে সমৃদ্ধ করেছেন দেশের সিনেমা অঙ্গন। উজ্জ্বল করেছেন ভাবমূর্তি। গুণী এই অভিনেত্রীর জন্মদিন আজ। শুভ জন্মদিন জয়া আহসান।
১৯৮৩ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার আসল নাম জয়া মাসউদ। ছোটবেলা থেকেই নাচ, গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকাও শিখেছিলেন।
ছোট পর্দা দিয়েই শুরু হয়েছিলো জয়ার ক্যারিয়ার। বহু নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন, আবার বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে কেড়েছেন দর্শকদের নজর।
জয়া আহসান অভিনীত ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে-‘এনেছি সুর্যের হাসি’, ‘শঙ্খবাস’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘কফি হাউজ’, ‘দরজার ওপাশে’, ‘লাবণ্য প্রভা’, ‘মানুষ বদল’ ও ‘সম্পর্কের গল্প’ ইত্যাদি। এছাড়া তিনি ‘হাটকুঁড়া’, ‘জাল’, ‘জননীর কান্না’, ‘কুহক’, ‘পাঞ্জাবীওয়ালা’, ‘হ্যালোউইন’, ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’, ‘অফ বিট’, ‘আমাদের গল্প’ এবং ‘তারপরেও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’ ইত্যাদি একক নাটকে অভিনয় করেছেন।
২০০৪ সালে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘ব্যাচেলর’ সিনেমা দিয়ে জয়ার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। এই ফাঁকে বলে রাখা প্রয়োজন, জয়া বরাবরই সময় নিয়ে সিনেমা করেছেন। যার ফলে তার একটি সিনেমা থেকে অন্যটির মধ্যকার সময় বেশ লম্বা। ‘ব্যাচেলর’-এর পর ৬ বছর বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সিনেমায় কাজ করেন তিনি। সেটি ছিল নুরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘ডুবসাঁতার’।
অবশ্য প্রথম দুটি সিনেমার কোনোটিই সেভাবে সাফল্য পায়নি। জয়া মূলত জনপ্রিয়তার সারিতে আসেন ২০১১ সালে। সে বছর মুক্তি পাওয়া ‘গেরিলা’ সিনেমায় তার অনবদ্য অভিনয় জয় করে নেয় দর্শক-সমালোচকদের মন।
দেশের ইন্ডাস্ট্রিতে জয়া অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- ‘চোরাবালি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’, ‘জিরো ডিগ্রি’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’, ‘পুত্র’, ‘খাঁচা’ ও ‘দেবী’।
বর্তমানে কলকাতার সিনেমায় জয়া আহসানের জয়জয়কার। এই পথচলার শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে ‘আবর্ত’ সিনেমা দিয়ে। যেটি নির্মাণ করেছিলেন অরিন্দম শীল। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু সফল ও প্রশংসিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন জয়া। এগুলো হলো-‘রাজকাহিনী’, ‘ক্রিসক্রস’, ‘ভালোবাসার শহর’, ‘বিসর্জন’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’ ও ‘রবিবার’।
অভিনয়ের নৈপুণ্যে জয়া যেমন মুগ্ধ করেছেন সবাইকে, তেমনি ভারী হয়েছে তার পুরস্কারের পাল্লা। এ পর্যন্ত তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুইবার বাচসাস পুরস্কার, সাতবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, দুইবার ভারতের ফিল্মফেয়ার (পূর্ব) এবং একবার টেলি সিনে পুরস্কার অর্জন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে জয়া আহসান বিয়ে করেছিলেন মডেল-অভিনেতা ফয়সাল আহসানকে। তবে ২০১১ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
কেআই/আরআইজে