বছরখানেক আগের কথা, কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা ও সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদ। পরে তাকে ভর্তি করানো হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে করোনারি কেয়ার ইউনি-সিসিইউতে। চিকিৎসক ও সেবিকাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেবারের মতো প্রাণে বেঁচে যান এই সঙ্গীতশিল্পী।

চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরে কোনো পালস না পাওয়ায় ইলেকট্রিক শক্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তারা। একপর্যায়ে শরীরের পালস ফিরে পান এই সংগীততারকা। নিশ্বাস নিতে শুরু করেন। 

সেবার বেঁচে ফিরলেও এবার আর ফিরতে পারলেন না শাফিন আহমেদ। আমেরিকার ভার্জিনিয়ার সেন্টার হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় আজ (২৫ জুলাই) সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। এই সংগীতশিল্পীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ভাই হামিন আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, শাফিনের ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

হামিন আহমেদ বলেন, ‘হয়তো বেশ চাপ গেছে শাফিনের ওপর দিয়ে। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়াতে তার একটা কনসার্ট ছিল। শোয়ের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। যে কারণে শো ক্যানসেল করেন। সেদিনই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর শাফিনের নানা অর্গান অকার্যকর হতে থাকলে তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়। তবুও তাকে আর ফেরানো গেল না।’

শাফিন আহমেদের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মা কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী ফিরোজা বেগম এবং বাবা সংগীতঙ্গ কমল দাশগুপ্ত। এই পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে ছোটবেলা থেকেই শাফিন আহমেদ গানের ভেতরেই বড় হন। শৈশবে বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখেছেন আর মায়ের কাছে শিখেছেন নজরুল।

এরপর বড়ভাই হামিন আহমেদসহ যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার সুবাদে পাশ্চাত্য সংগীতের সংস্পর্শে এসে ব্যান্ডসংগীত শুরু করেন। দেশে ফিরে গড়ে তোলেন মাইলস। যা দেশের শীর্ষ ব্যান্ডের একটি এখনও। এই ব্যান্ডের ৯০ ভাগ গান শাফিন আহমেদের কণ্ঠে সৃষ্টি হয়েছে। পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তিনি কণ্ঠের পাশাপাশি ব্যান্ডটির বেজ গিটারও বাজাতেন।

সংগীতের পাশাপাশি শেষ দিকে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এ গায়ক। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (এনডিএম) যোগ দেন। এরপর ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টিতে যুক্ত হন। দুই দলেই গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন শাফিন।

শাফিন আহমেদের কণ্ঠে তুমুল জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে চাঁদ তারা সূর্য, জ্বালা জ্বালা, ফিরিয়ে দাও, ফিরে এলে না, আজ জন্মদিন তোমার প্রভৃতি।

এনএইচ